দাউদকান্দি (কুমিল্লা) প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৪ এপ্রিল ২০২৩ ১৫:৪৯ পিএম
আপডেট : ১৪ এপ্রিল ২০২৩ ১৫:৫৩ পিএম
ঈদ ঘনিয়ে আসায় ব্যাপক ব্যস্ততা মাথায় নিয়ে কাজ করছেন দাউদকান্দির দর্জিরা -প্রবা
ঈদ এলেই দর্জিপাড়ায় কাজের চাপ বাড়ে। ক্রেতার চাহিদা অনুযায়ী পোশাক সরবরাহ করতে গিয়ে এ সময় কারিগরদের ঘুম হারাম হয়ে যায়। দিনরাত সেলাই মেশিনের শব্দে মুখর হয়ে ওঠে দর্জিপাড়া।
ঈদ ঘিরে কুমিল্লার দাউদকান্দির দর্জি কারিগরদের ব্যস্ততা এখন তুঙ্গে। গ্রাহকের রুচি আর পছন্দের সঙ্গে তাল মেলাতে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন পোশাকের কারিগররা। সময় আর আধুনিকতার সঙ্গে তাল মিলিয়ে নতুন পোশাক বানাতে দর্জির দোকানে ভিড় করছেন অসংখ্য গ্রাহক। সালোয়ার-কামিজ, পাঞ্জাবি অথবা প্যান্ট-শার্ট বানাতে সেলাই মেশিনের অবিরাম খরখর শব্দ দর্জি কারিগরদের তুমুল ব্যস্ততারই সাক্ষ্য দিচ্ছে।
দাউদকান্দি উপজেলার পৌর বাজারে চৌধুরী সুপার মার্কেট, নূর সুপার মার্কেট, আহম্মদিয়া প্লাজার প্রত্যেকটি দর্জির দোকানের কারিগররা ব্যস্ত ঈদের নতুন জামা বানাতে। আর উৎসব সামনে এলেই বিপণিবিতানগুলোয় নারী-পুরুষের আনাগোনা বাড়তে থাকে।
সরেজমিন দেখা যায়, কারখানাগুলোয় সমানতালে হাত-পা চালিয়ে যাচ্ছেন কারিগররা। দর্জিপাড়ার পাশ দিয়ে গেলেই বোঝা যায় কারিগরদের কথা বলার মতো সময় নেই। চারপাশে সারাক্ষণ সেলাই মেশিন আর কাঁচির শব্দ ভেসে বেড়াচ্ছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, পছন্দের এসব পোশাক চাঁদ রাতের আগেই ক্রেতাদের ডেলিভারির স্লিপ ধরে ধরে বুঝিয়ে দিতে হবে। তবেই স্বস্তি তাদের। না হলে মালিকের বকুনি আর ক্রেতার ধমকানিতে মাটি হয়ে যাবে তাদের ঈদ। তাই এখন থেকেই রাতদিন একাকার করে কাজ করে যাচ্ছেন তারা। গত বছরের তুলনায় এবার কাজের অর্ডার বেড়েছে।
জানা যায়, করোনাকালীন বিগত কয়েক বছরের চেয়ে এবার ব্যতিক্রম পরিস্থিতি দেখা যাচ্ছে। কেননা ২০২০ সালে করোনার প্রথম বছর সবকিছুই বন্ধ ছিল। এরপর ২০২১ সালে ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে মানুষের জীবন-জীবিকার কথা চিন্তা করে সরকারের পক্ষ থেকে বেশ কয়েকটি শর্তে নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত দোকানপাট ও মার্কেট খোলা রাখার অনুমতি দেওয়া হয়। সে সময় করোনার কারণে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে দর্জিপাড়ায় খুব অল্প পরিসরে অর্ডার নিয়ে কাজে হাত দেন শ্রমিকরা। কিন্তু ২০২২ থেকে করোনার প্রভাব কাটিয়ে শহরের দর্জিপাড়ায় ফিরেছে আগের সেই ব্যস্ততা।
তবে দর্জির দোকানগুলোতে তরুণী ও বিভিন্ন বয়সের নারীদের উপস্থিতি বেশ লক্ষণীয়। রেডিমেড পোশাক অনেক সময় শরীরের সঙ্গে পুরোপুরি মানানসই হয় না বলে দর্জির দোকানে যান অনেকে। নিজের মতো অর্ডার করে তৈরি করিয়ে নেওয়া পোশাকের প্রতি তাদের আগ্রহ থাকে বেশি।
আহম্মদিয়া প্লাজায় আসা ক্রেতারা জানান, তারা ছেলে-মেয়েদের চাহিদা অনুযায়ী ভালো কাপড় কিনে পছন্দের পোশাক বানাতে দর্জির দোকানে এসেছেন। তারা চান ঈদের আগে নিজের পছন্দ অনুযায়ী পোশাক বানিয়ে নিতে।
শিলামনি টেইলার্সের মালিক মিজান জানান, ক্রেতারা কাপড় কিনে বিভিন্ন দর্জির দোকানে গিয়ে তাদের পছন্দের পোশাক বানাচ্ছেন।
এদিকে কয়েকটি দোকানের মালিক অতিরিক্ত কারিগর নিয়োগ করে দিনরাত ক্রেতাদের চাহিদা মোতাবেক পোশাক বানিয়ে যাচ্ছেন, যাতে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে পোশাক ডেলিভারি দেওয়া যায়। কারিগরদের নিপুণ হাতের ছোঁয়ায় মানসম্পন্ন পোশাক তৈরির জন্য গ্রাহকরাও ছুটছেন পৌরবাজারসহ আশপাশের বিভিন্ন দর্জির দোকানে।
শিলামনি টেইলার্স, স্বপন টেইলার্স, নিউ জামান টেইলার্স, মিতালী টেইলার্স ও রাজিব টেইলার্সে সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, তারা ক্রেতাদের অর্ডার নিতে ব্যস্ত। কেউ কেউ অর্ডার নিচ্ছে আবার অনেক দোকান অর্ডার নেওয়া কমিয়ে দিয়েছে।
কারিগররা জানান, তরুণ-তরুণীদের অর্ডার বেশি পাওয়া যাচ্ছে। তারা পছন্দের কাপড় ও ডিজাইনের কারুকাজের অর্ডার দিচ্ছেন। রোজা শুরু হওয়ার আগে থেকেই অর্ডার নেওয়া হচ্ছে।
এদিকে চৌধুরী সুপার মার্কেটের স্বপন টেইলার্সের মালিক স্বপন মিয়া জানান, এবার রমজানের আগে থেকে কাজের চাপ বেড়েছে। এখনও অর্ডার নেওয়া বন্ধ করা হয়নি। তবে মজুরি নেওয়া হয় ডিজাইন ও কাজ অনুযায়ী।
রাজিব টেইলার্সের মালিক মেহেদি হাসান রাজিব জানান, রোজার কয়েক দিন আগে থেকেই গ্রাহকদের কাছ থেকে অর্ডার পাওয়া শুরু হয়। যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আধুনিক ফ্যাশনের পোশাক বানাতে ক্রেতারা এখানে আসেন। রোজার ঈদে পোশাকের অর্ডারের বাড়তি চাপ থাকে। এদিকে দর্জির দোকানে আসা কয়েকজন গ্রাহক জানান, অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার পোশাক তৈরির মজুরি কিছুটা বেড়েছে।