প্রবা প্রতিবেদন
প্রকাশ : ২৬ এপ্রিল ২০২৩ ১২:৩৩ পিএম
আপডেট : ২৬ এপ্রিল ২০২৩ ১২:৫৪ পিএম
ছবি : সংগৃহীত
অসময়ে বৃষ্টিপাতে ভারতের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের গম উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে। কৃষি মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়, চলতি বছর এ অঞ্চলজুড়ে ১১ কোটি ২০ লাখ টন গম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে এ লক্ষ্যমাত্রা অর্জন নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে।
উত্তর ভারতের হরিয়ানা রাজ্যের কৃষক রাজেশ গিল জানান, বৈরী আবহাওয়ার কারণে তার জমির ৫০ শতাংশেরও বেশি গম নষ্ট হয়ে গেছে। গত মার্চে তীব্র শিলাবৃষ্টির কারণে তিনি এ ক্ষতির মুখে পড়েছেন।
তিনি বলেন, ‘গমের প্রতিটি শুঁটিতে সাধারণত ৬৫ থেকে ৭০টি শস্যদানা থাকে। কিন্তু আমরা দুটি শুঁটি থেকে মাত্র ১৫ থেকে ১৭টি দানা পাচ্ছি। অর্থাৎ ফসলের এক-পঞ্চমাংশ শস্যও জমিতে অবশিষ্ট নেই। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে ফসল কাটার অতিরিক্ত খরচ। বেঁচে থাকার জন্য আমরা কী করতে পারি বলুন।’
এ বিষয়ে সমাজকর্মী সুমিত দালাল বলেন, ‘কৃষকের ক্ষতি বিবেচনা করে সরকার প্রতি কুইন্টাল গম ৩১ রুপি দিয়ে কেটে নিচ্ছে। তবে আমরা বলছি দাম কমানোটা অন্যায়। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে ইতোমধ্যে কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এখন সরকারের দায়িত্ব গম সংগ্রহের সময় কমানোর শর্ত শিথিল করা।’
তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাজারে নতুন ফসল আসতে শুরু করলেও এখনও গমের চাহিদা কম। এর প্রভাব পড়ছে কৃষকদের ওপর। তারা দাম কম পাচ্ছেন। সরকারের উচিত রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা বহাল রাখা।
কৃষি অর্থনীতিবিদ ড. লখবিন্দর সিং বলেন, ‘ভারত গম রপ্তানি করলে অভ্যন্তরীণ দাম বাড়বে। বর্তমান পরিস্থিতি এমন যে ক্ষতির কারণে আমরা খাদ্যশস্যের কিছুটা ঘাটতির আশঙ্কা করছি।’
আশা করা হয়েছিল ভারত তাদের গম রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়ে বিশ্ববাজারের চলমান খাদ্য সংকট সামাল দিতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে।’
ভারতের গমে নিষেধাজ্ঞা আরোপ নিয়ে জার্মানির খাদ্য ও কৃষিমন্ত্রী জেম অসডেমির বলেন, ‘যদি সবাই রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ শুরু করে তবে বিশ্বজুড়ে খাদ্য সংকট বাড়বে।’
ভারতের বাণিজ্যমন্ত্রী পীযূষ গয়াল অবশ্য এ কথা মানতে নারাজ। বরং তার যুক্তি, যেহেতু ভারত বিশ্বের বৃহৎ গম রপ্তানিকারক দেশ নয়, তাই ভারতের গম রপ্তানি বন্ধ করার প্রভাব বিশ্ববাজারে পড়বে না। ইতোমধ্যে গম রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞার সময় বাড়িয়েছে ভারত, যা দেশের বাজারে গমের দাম কম রাখতে সাহায্য করছে। তবে এখন সবার দৃষ্টি গমের চূড়ান্ত ক্রয় মূল্যের দিকে। যা পরে নীতিনির্ধারণে ভূমিকা রাখবে।
এদিকে ইউক্রেন বিশ্বের শীর্ষ খাদ্যশস্য রপ্তানিকারক দেশগুলোর অন্যতম। যুদ্ধের কারণে একদিকে যেমন দেশটিতে কৃষিকাজ বিঘ্নিত হচ্ছে; অন্যদিকে রাশিয়ার সেনাবাহিনী দেশটির প্রধান প্রধান সমুদ্রবন্দর দখল নেওয়ায় সমুদ্রপথে ইউক্রেনের রপ্তানি বাণিজ্য অনেকটাই বন্ধ হয়ে গেছে।
ইউক্রেনে আগ্রাসনের জেরে পশ্চিমা বিশ্ব রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করার কারণেও বিশ্ববাজারে খাদ্যশস্যের দাম বেড়ে গেছে।
ফলে যুদ্ধের কারণে অপ্রত্যাশিতভাবে কৃষ্ণসাগরীয় অঞ্চল থেকে গম রপ্তানি থমকে যাওয়ায় আন্তর্জাতিক ক্রেতারা ভারতের গমের দিকে তাকিয়ে ছিলেন বলে জিআরও ইনটেলিজেন্স গ্রুপের পক্ষ থেকে জানানো হয়।
সূত্র : সিজিটিএন