হুমায়ুন মাসুদ, চট্টগ্রাম
প্রকাশ : ৩০ এপ্রিল ২০২৩ ১৯:৩০ পিএম
ঈদের আগের বৃহস্পতিবার মানভেদে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছিল ২৬ থেকে সর্বোচ্চ ৩০ টাকায়। ঈদের পর এক সপ্তাহ পার না হতেই কেজিতে বেড়েছে অন্তত ২০ টাকা। ভোগ্যপণ্যের অন্যতম পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জে এখন প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৪৬ থেকে সর্বোচ্চ ৫০ টাকায়।
আড়তদাররা বলছেন, কৃষক পর্যায়ে দাম বেড়ে যাওয়ায় বাজারে এখন পেঁয়াজের দাম ঊর্ধ্বমুখী। তবে ক্রেতারা বলছেন ভিন্ন কথা। তাদের দাবি, সরকার ভারত থেকে পণ্যটি আমদানিতে ইমপোর্ট পারমিট ইস্যু বন্ধ করে দেওয়ায় বাজারে এখন দেশটির পেঁয়াজ নেই। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে অসাধু ব্যবসায়ীরা পেঁয়াজের দাম বাড়িয়ে দিচ্ছেন। কৃষকদের নাম দিয়ে দাম বাড়ালেও অভিযোগ রয়েছে, কৃষকরা প্রকৃত দাম পাচ্ছেন না। কৃষক পর্যায়ে ৫ টাকা বাড়লে পাইকারিতে বাড়ছে ১০ টাকা।
গতকাল শনিবার ভোগ্যপণ্যের অন্যতম পাইকারি বাজার চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জে গিয়ে দেখা যায়, বাজারে ভারতের কোনো পেঁয়াজ নেই। ট্রাকে করে এখানে যেসব পেঁয়াজ আনা হয়েছে এর প্রায় সবগুলোই দেশি। বাজারে পর্যাপ্ত পেঁয়াজের সরবরাহ থাকলেও দাম ঊর্ধ্বমুখী। খাতুনগঞ্জের মেসার্স চৌধুরী ট্রেডিংয়ের টটন বিশ্বাস বলেন, সকালে ফরিদপুরের ভালো মানের প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি করেছিলাম ৪৬ টাকায় আর দুপুর ২টায় করেছি ৫০ টাকায়।
খাতুনগঞ্জের হামিদুল্লাহ মিয়া মার্কেট কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ইদ্রিস প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘ঈদের পর থেকে পেঁয়াজের বাজার একটু ঊর্ধ্বমুখী। বাজারে এখন মানভেদে প্রতি কেজি পেঁয়াজ ৪৫ থেকে সর্বোচ্চ ৫৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কৃষক পর্যায়ে পেঁয়াজের দাম বেশি, তাই বাজারে এখন এর দাম বাড়ছে। বুকিং রেট বেশি পড়ায় এখন চায়না এবং দেশি রসুনের দাম ঊর্ধ্বমুখী। সামনে চায়না রসুনের দাম আরও বেড়ে যেতে পারে।’
তিনি আরও বলেন, ‘বাজারে এখন ভারতীয় পেঁয়াজ নেই। তাই দাম বাড়লেও এই বাড়তি দামটা আমাদের কৃষকরাই পাচ্ছেন। দেশের টাকা দেশেই থাকছে।’
তবে ভিন্ন বক্তব্য দিয়েছেন ফরিদপুরের পেঁয়াজ চাষি মামুন হোসাইন। প্রতিদিনের বাংলাদেশকে তিনি বলেন, ‘গত কয়েক দিনে দাম কিছুটা বেড়েছে। ফরিদপুরের বিভিন্ন মোকামে এখন প্রতি মণ হালির পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৩০০ থেকে ১ হাজার ৪০০ টাকায়।’
এ হিসেবে ফরিদপুরে কৃষক পর্যায়ে প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৩২ থেকে ৩৫ টাকায়। ওই পেঁয়াজ খাতুনগঞ্জে পাইকারিতে বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৪৬ থেকে সর্বোচ্চ ৫০ টাকায়।
পেঁয়াজের মতো বাজারে এখন আদা ও রসুনের দামও ঊর্ধ্বমুখী। ঈদের পর এ দুটি মশলাজাতীয় পণ্যের দামও বাড়ছে। বাজারে প্রতি কেজি চায়না রসুন বিক্রি হচ্ছে ১২৫ থেকে ১৩০ টাকায়। মিয়ানমারের প্রতি কেজি আদা বিক্রি হচ্ছে ১২০ থেকে ১৩০ টাকায়। অন্যদিকে ভিয়েতনামের প্রতি কেজি আদা বিক্রি হচ্ছে ১৮০ টাকায়। আদা-রসুনের দাম ঊর্ধ্বমুখী হলেও বাজারে পর্যাপ্ত সরবরাহ নেই। শনিবার খাতুনগঞ্জের বিভিন্ন আড়ত ঘুরে দেখা গেছে, ৫০ শতাংশের বেশি আড়তে রসুন নেই। আদা নেই ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ আড়তে।
আড়তদাররা বলছেন, বাজারে এখন আদা এবং রসুনের সংকট। দেশি রসুন এখনও পুরোপুরি বাজারে আসেনি। তাই বাজারে এর সরবরাহ কম। এলসি জটিলতাসহ বিভিন্ন কারণে চায়না রসুনের সরবরাহ কিছুটা কম। তাই এর দাম বাড়ছে। অন্যদিকে চীনে বুকিং রেট বেড়ে যাওয়ায় পাঁচ থেকে ছয় মাস ধরে চায়না আদা আমদানি বন্ধ রেখেছেন আমদানিকারকরা। তাই ছয় মাস ধরেই বাজারে এর দাম বাড়ছে। চায়না আদার বিকল্প হিসেবে মিয়ানমার এবং ভিয়েতনাম থেকে আমদানি করা হলেও সেটি পরিমাণে অনেক কম।
গতকাল খাতুনগঞ্জের বিভিন্ন আড়ত ঘুরে বেশ কয়েকটি আড়তে ভিয়েতনামের আদা দেখা গেলেও মিয়ানমারের আদা ছিল পরিমাণে অনেক কম। আড়তদাররা বলছেন, মিয়ানমার থেকে এখন আদা আমদানি কমেছে। তাই ভিয়েতনামের আদা বেশি পাওয়া যাচ্ছে।
খাতুনগঞ্জের ভাই ভাই বাণিজ্যালয়ের মালিক দোলন দাশ প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, চায়না আদা আমদানি কমিয়ে দেওয়ার পর থেকে বাজারে এর সরবরাহ সংকট। মাঝখানে ভারতীয় আদা ছিল। এখন ভারতের আদাও নেই। মিয়ানমার থেকে কিছু আদা আসছে। সেগুলোর মান তুলনামূলক খারাপ। ভিয়েতনামের আদার মান কিছুটা ভালো। ওই আদা এখন বাজারে বেশি বেচাকেনা হচ্ছে। তবে কিছুটা বেশি। প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৮০ টাকায়।