মুজিবনগর স্মৃতি কমপ্লেক্স। ফাইল ফটো
ঐতিহাসিক মুজিবনগরের অধিকতর উন্নয়নের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক মানের স্মৃতিকেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে ৪৪৮ কোটি ৮৬ লাখ টাকা ব্যয়ে ‘মুজিবনগর মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিকেন্দ্র স্থাপন প্রকল্প’ হাতে নিয়েছে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়। এ প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে বদলে যাবে মুজিবনগর স্মৃতিসৌধ ও তার চারপাশ।
প্রকল্প প্রস্তাবনা সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে স্থাপিত স্মৃতিকেন্দ্রে বছরের সব সময়ই মানুষ ভ্রমণ করেন। তারা মুজিবনগর স্মৃতিসৌধ ও আমবাগান পরিদর্শন করেন; স্মৃতিকেন্দ্রের অন্যান্য স্থাপনাও ঘুরে দেখেন। এ ছাড়া মুজিবনগর দিবসসহ অন্যান্য জাতীয় দিবসে এখানে অনেক রাজনৈতিক নেতার আগমন ঘটে।
এ স্থানটি মুজিবনগর সরকারের সূতিকাগার; দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে এই স্থানের ভূমিকা অপরিসীম। কিন্তু দীর্ঘদিন সংস্কার না হওয়ায় অনেক স্থাপনা জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে। এ প্রেক্ষাপটে বিদ্যমান স্মৃতিসৌধকে কেন্দ্র করে এ স্থানটির অধিকতর উন্নয়নের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক মানের স্মৃতিকেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা নেওয়া হয়।
প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, এ প্রকল্পের মাধ্যমে বিদ্যমান বাংলাদেশ ম্যাপ স্থাপনা সংলগ্ন ৫১ একর জমি অধিগ্রহণ করে বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় চার নেতার মেমোরিয়াল প্লাজা, অ্যাডমিন ব্লক, ওয়াচ টাওয়ার, বোট ক্লাব, মাল্টিপারপাস ব্লক, স্কাল্পচার গার্ডেন, ভাস্কর্য, ম্যুরাল, শিশুপার্ক, চিলড্রেন রাইড, স্যুভেনির শপ, পার্কিং স্পেস ইত্যাদি কাজের প্রস্তাব করা হয়েছে।
এ ছাড়া পিএটিসি, এনডিসি ও অন্যান্য কর্মকর্তার জন্য ডরমেটরি ও প্রশিক্ষণকেন্দ্র নির্মাণ; প্রাথমিক বিদ্যালয়, সরকারি শিশু পরিবার, পোস্ট অফিস, আনসার শেড ইত্যাদি স্থানান্তর কার্যক্রম অন্তর্ভুক্তির প্রস্তাব করা হয়েছে। আমবাগানের গাছগুলোর পরিচর্যা করার কাজও প্রকল্পে প্রস্তাব করা হয়েছে।
প্রকল্পের উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য সম্পর্কে বলা হয়েছে, স্বাধীনতাযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস দেশে-বিদেশে সবার কাছে উপস্থাপন; অবকাঠামো ও অন্যান্য সুবিধা সৃষ্টির মাধ্যমে দেশি-বিদেশি পর্যটক আকর্ষণ এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সর্বস্তরে ছড়িয়ে দেওয়া।
প্রকল্পের ব্যয় বিভাজনে দেখা যায়, ৫১ একর ভূমি অধিগ্রহণে ব্যয় ধরা হয়েছে ৫৩ কোটি ৯২ লাখ টাকা। ১২ হাজার ৩৭০ বর্গমিটার আবাসিক ভবন নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ৬০ কোটি ৬৬ লাখ টাকা। ১ লাখ ৪৫ হাজার ৫৭৫ বর্গমিটার অনাবাসিক ভবন নির্মাণে খরচ পড়বে ২১০ কোটি ৫৮ লাখ টাকা। আটটি গুচ্ছ ভাস্কর্য, স্বাধীনতা স্মারক ভাস্কর্য ও মুক্তিযুদ্ধ স্মারক ভাস্কর্য নির্মাণে ২২ কোটি ৭০ লাখ টাকা খরচ হবে। ৩০টি ইতিহাস পরিক্রমা ভাস্কর্য নির্মাণে খরচ ধরা হয়েছে ২৫ কোটি ৮৯ লাখ টাকা।
৭৯টি ম্যুরাল, ডিওরোমা, মানচিত্র পেইন্টিংয়ে খরচ ধরা হয়েছে ১৫ কোটি ২৭ লাখ টাকা। ছয়টি ভাস্কর্য উদ্যান তৈরিতে খরচ পড়বে ৫ কোটি ৬০ লাখ টাকা। সাতটি চিলড্রেন পার্ক রাইড তৈরিতে খরচ হবে ৩ কোটি ৫২ লাখ টাকা। একটি আরবরিকালচারে (বৃক্ষ-গুল্মাদির চাষ পদ্ধতি) ১ কোটি ২০ লাখ টাকা এবং উদ্ভিদ সংরক্ষণে খরচ ধরা হয়েছে ৩ কোটি ১৬ লাখ টাকা।
প্রস্তাবনায় আরও বলা হয়েছে, প্রকল্পটি বিদ্যমান মুজিবনগর স্মৃতিসৌধ সংলগ্ন স্থানে বাস্তবায়িত হবে। বিদ্যমান কিছু স্থাপনা যেমন প্রাথমিক বিদ্যালয়, সরকারি শিশু পরিবার, পোস্ট অফিস, আনসার শেড ইত্যাদি স্থানান্তর করা হবে। বিদ্যমান মানচিত্রটির অধিকতর উন্নয়নের পরিকল্পনা আছে। আমবাগানের আমগাছগুলোর পরিচর্যা করার কাজ হাতে নেওয়া হবে।
প্রকল্পটির বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশনের আর্থ-সামাজিক অবকাঠামো বিভাগের স্কাইসোয়াম উইংয়ের যুগ্ম প্রধান মোহাম্মদ আশরাফুল ইসলাম প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, মুজিবনগর স্মৃতিসৌধকে আধুনিকায়নে প্রকল্পটি প্রস্তাব করেছে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়। প্রকল্পটির প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা হয়ে গেছে। এই প্রকল্পের প্রত্যেকটি খাতে ব্যয় যাচাই করা হয়েছে। তারাই কী ভিত্তি ধরে ব্যয় ধরেছে এবং সেটা ঠিক আছে কি না, যেগুলো আমরা পর্যবেক্ষণে দিয়েছিলাম। পরে তারা ঠিক করে পাঠিয়েছে।
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের শুরুতে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের প্রবাসী সরকার মেহেরপুর জেলার বৈদ্যনাথতলা গ্রামে ১৭ এপ্রিল শপথগ্রহণ করে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামে বৈদ্যনাথতলা গ্রামের নামকরণ হয় মুজিবনগর।
মুজিবনগর সরকারের শপথগ্রহণের স্থানকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য পরবর্তী সময়ে সেখানে নির্মিত হয় একটি স্মৃতিসৌধ। ১৯৭৩ সালের ৩১ আগস্ট সরকার মুজিবনগরে একটি স্মৃতিসৌধ নির্মাণের নির্দেশ দেয়। ১৯৭৪ সালের ১৭ এপ্রিল মুজিবনগর দিবসে মুক্তিযুদ্ধকালীন ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম এ প্রকল্পের কাজের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন।
কিন্তু ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মধ্য দিয়ে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর প্রকল্পের কাজ স্থবির হয়ে যায়। তবে ১৯৮৬ সালে প্রায় ২ কোটি টাকা ব্যয়ে মুজিবনগরে স্মৃতিসৌধের কাজ সমাপ্ত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি
প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু
রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯
যোগাযোগ
প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]
বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]
বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯, +৮৮০১৮১৫৫৫২৯৯৭ । ই-মেইল: [email protected]
সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]
2023 Protidiner Bangladesh All Rights Reserved. Developed By Protidiner Bangladesh Team.