প্রবা প্রতিবেদন
প্রকাশ : ২৬ মে ২০২৩ ০৯:৩১ এএম
আপডেট : ২৬ মে ২০২৩ ১৩:০৩ পিএম
ফাইল ফটো
কৃষ্ণসাগর ব্যবহার করে ইউক্রেনের খাদ্যশস্য সরবরাহের মেয়াদ বেড়েছে। ১৮ মে আগের মেয়াদ শেষ হলেও আরও দুই মাস কৃষ্ণসাগর ব্যবহারের চুক্তির মেয়াদ বাড়াতে সম্মত হয়েছে রাশিয়া। এতেই বিশ্ববাজারে খাদ্যশস্যের দাম আগের মাসের তুলনায় ৩ শতাংশ কমেছে। একই সঙ্গে এক বছর আগের তুলনায় খাদ্যশস্যের দাম কমেছে ১ তৃতীয়াংশ।
এদিকে ইউক্রেনের খাদ্যশস্য আটকে পড়ার সংবাদে দুশ্চিন্তার ভাঁজ পড়েছিল যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপের দেশগুলোয়। কারণ প্রতিকূল আবহাওয়ায় ফসলের ভালো উৎপাদন হয়নি যুক্তরাষ্ট্রে। একই জায়গায় ইউরোপের দেশগুলো ইউক্রেনের খাদ্যশস্যের ওপর অধিক নির্ভরশীল হওয়ায় তাদের সংকটের আশঙ্কা ছিল আরও তীব্র।
খাদ্যশস্য সরবরাহ চুক্তির মেয়াদ বাড়ার খবর সম্প্রতি নিউইয়র্কে জাতিসংঘের নিয়মিত প্রেস ব্রিফিংয়ে ঘোষণা করেন সংস্থাটির মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। তিনি এটিকে বিশ্বের জন্য সুসংবাদ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। আন্তোনিও গুতেরেস বলেন, ‘আমরা আশা করি আমরা বিস্তৃত চুক্তিতে পৌঁছাতে পারব; যা আমাদের পদক্ষেপকে আরও বেশি উন্নত ও সম্প্রসারিত করবে।’
আগামী দিনগুলোর দিকে তাকিয়ে রাশিয়া ও ইউক্রেন যথাযথ সিদ্ধান্ত নেবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন জাতিসংঘ মহাসচিব। তিনি বলেন, ‘ভবিষ্যতে বিশ্বব্যাপী খাদ্য, সার ও অ্যামোনিয়া সরবরাহ নিরাপদভাবে পৌঁছাতে অবদান রাখবে রাশিয়া ও ইউক্রেন।’
কৃষ্ণসাগরের এ রাস্তাকে বিশ্বের রুটির বাক্স হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ইউক্রেন ও রাশিয়া থেকে বিপুল পরিমাণ খাদ্যশস্য যায় আফ্রিকার দেশগুলোয়। ওই খাদ্যশস্যের ওপর আফ্রিকার বহু দেশ শতভাগ নির্ভরশীল।
যুদ্ধ শুরুর পর রাশিয়া কৃষ্ণসাগর অবরোধ করেছিল। ইউক্রেনের কোনো জাহাজকে তারা বের হতে দেয়নি; যার প্রভাবে বিশ্বজুড়ে খাদ্যসংকট তৈরি হয়েছিল এবং আফ্রিকার কিছু দেশে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়। এর পরই জাতিসংঘ ও তুরস্কের মধ্যস্থতায় দুই দেশ আলোচনায় বসে। সেখানেই খাদ্যশস্যের চুক্তি সই হয়। দুই দেশই জানায়, ইউক্রেন ও রাশিয়ার খাদ্যশস্য বোঝাই জাহাজ যাতে কৃষ্ণসাগর দিয়ে যাতায়াত করতে পারে, তা নিশ্চিত করা হবে। সেই চুক্তিরই মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে।
এ বিষয়ে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান জানিয়েছিলেন, কৃষ্ণসাগরে ইউক্রেন ও রাশিয়ার খাদ্যশস্য চুক্তির মেয়াদ আরও দুই মাস বাড়ানো হয়েছে। দুই দেশই এ বিষয়ে একমত হয়েছে। এর অর্থ, ইউক্রেনের বন্দর থেকে খাদ্যশস্য বোঝাই জাহাজ কৃষ্ণসাগর দিয়ে আফ্রিকা ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশে পৌঁছাতে পারবে।
এদিকে ১৮ মে গ্রেইন মার্কেটের প্রতিবেদনে ইন্টারন্যাশনাল গ্রেইন কাউন্সিল (আইজিসি) জানিয়েছে, রপ্তানি বাণিজ্যে টেকসই প্রতিযোগিতা এবং বহিরাগত বাজারের নেতিবাচক প্রভাবের কারণে মে’র শুরুতে বাণিজ্য প্রায় দুই বছরের মধ্যে সর্বনিম্নে নেমে গিয়েছিল। এর পরই নড়েচড়ে বসেন ব্যবসায়ীরা। ফলে নতুন করে উত্তর আমেরিকার উৎপাদন সমস্যা এবং ইউক্রেন থেকে সমুদ্রবাহিত চালান নিয়ে ঝুঁকি সমাধান করতে পুনরায় মনোনিবেশ করেন তারা।
তবে এর আগে সরবরাহ প্রক্রিয়ায় জটিলতা দেখা দেওয়ায় যুক্তরাষ্ট্রে খাদ্যশস্যের দাম বেড়েছিল। ইংল্যান্ডভিত্তিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের সমভূমিতে প্রতিকূল আবহাওয়া এবং বসন্তের ফসল রোপণে বিলম্ব হওয়ায় দীর্ঘস্থায়ী উদ্বেগ তৈরি হয়েছিল। এ ছাড়া ইউক্রেনের শস্য সরবরাহ নিয়ে জটিলতা তৈরি হওয়ায় সে সংকট আরও তীব্র হয়েছিল। তবে পর্যাপ্ত সরবরাহের প্রেক্ষাপটে ইউরোপের দেশগুলোয় খাদ্যশস্যের দাম কমে এসেছে।
এ ছাড়া আইজিসি জানিয়েছে, অস্ট্রেলিয়ায়ও মূল্য কমার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। তবে এশিয়ার অনেক দেশে খাদ্যশস্য কেনার প্রক্রিয়া মন্থর হয়েছে।
এদিকে চলতি মাসের শুরুতে ইউএস ডিপার্টমেন্ট অব এগ্রিকালচারের ফরেন এগ্রিকালচারাল সার্ভিস (এফএএস) তার গ্রেইন : ওয়ার্ল্ড মার্কেটস অ্যান্ড ট্রেড রিপোর্টে জানায়, যুক্তরাষ্ট্রে শীতকালীন গমের দাম গত এপ্রিল থেকে কমছে। এ ছাড়া খাদ্যশস্য সরবরাহ চুক্তির ফলে ভবিষ্যতের অনিশ্চয়তা কমে এসেছে।
সূত্র : ওয়ার্ল্ড গ্রেইন ডটকম