প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৪ জুন ২০২৩ ২১:৪৩ পিএম
প্রবা ফটো
বাংলাদেশের প্রথম পরিকল্পনা কমিশনের ডেপুটি চেয়ারম্যান অধ্যাপক নুরুল। ৬ দফার পিছনে রয়েছে উনার চিন্তা চেতনা। তবে রাজনৈতিক ও আমলাতন্ত্রিক জটিলতায় কিছুটা অভিমান নিয়ে ১৯৭৫ সালের জানুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান তিনি।মধ্যপন্থী এ অর্থনীতিবিদ কোন জাতীয় স্বাকৃতি না পাওয়ায় আক্ষেপ প্রকাশ করছেন দেশের অর্থনীতিবিদরা।
রোববার (৪ জুন) দেশের অন্যতম এ অর্থনীতিবিদের অবদান নিয়ে আলোচনা করতে স্মরণসভা আয়োজন করে গবেষণা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বিআইডিএস)। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান এমপি। দেশের বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদদের মধ্যে ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ, সাবেক গভর্নর ড. ফরাসউদ্দীন আহমেদ, প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ড. মশিউর রহমান, ড. কামাল হোসনেসহ আরো অনেকে উপস্থিত ছিলেন। রাশেদ খান মেনন এমপি এবং প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমানও আলোচনা বক্তব্য রাখেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান এমপি বলেন, ৬০-৭০’এর দশকে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে যাদের নাম খুব উচ্চারিত হতো তাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন অধ্যাপক নুরুল ইসলাম। পরিকল্পনা কমিশন উচু পতাকা নিয়ে যাত্রা শুরু করলেও ধীরে ধীরে তা নেমে আসে। এটা হয়তো উনাকে ব্যথিত করেছিল। এখন কমিশন আগেও সেই মর্ত্যাদায় নেই। তবে সবাই কেন ১৯৭৫ সালের আগে ধীরে ধীরে দেশত্যাগ করে চলে গেলেন-সেই প্রশ্নটা আমি রেখে গেলাম।
ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, উন্নয়ন অর্থনীতিকে বার্ডস আই ভিউতে দেখায় ওনার মতো কেউ ছিল না। আন্তর্জাতিক সেমিনারে অনেক নোবেল লরিয়েটকেও তিনি ছাড়িয়ে যেতেন। তার সাথে দ্বিমত করে পার পাওয়া যেত না। তবে ২১ পদক না পাওয়া তার কোন আক্ষেপ ছিল না।
আলোচনায় অংশ নিয়ে সাবেক গভর্নর ড. ফরাসউদ্দীন আহমেদ বলেন, ৬ দফা প্রণয়নের সময় বঙ্গবন্ধু অধ্যাপক নুরুল ইসলামকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, কী মনে হয়- এগুলো খাবে ত? বাম বা ডান নয়, তিনি কল্যাণ অর্থনীতিতে বিশ্বাসী ছিলেন। তাই বঙ্গবন্ধু উনাকে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দিয়েছিলেন। বাণিজ্যিক এবং কৃষি অর্থনীতিতে উনার মতো আর কেউ আসবেন কিনা জানিনা।
প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান বলেন, অধ্যাপক নুরুল ইসলাম ৯০ বছর বয়সেই ৪টি বই লিখেছেন। ২০১৪ সালে দেশে এসে তরুণ গবেষকদের সেমিনারে বলেছিলেন, জ্ঞান অর্জনের জন্য ঘাম ফেলার মাধ্যমে একটি মধ্যবিত্ত শ্রেণী দরকার।বঙ্গবন্ধুর বিশেষজ্ঞ দলে তিনি করাজ করেছেন। যদিও বিশ্বব্যাংকের গবেষণা পরেচালক পদে যুক্ত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু পরিবারের আপত্তি সত্বেও দেশ গঠনে তিনি এসেছিলেন। সঠিক সংখ্যা, গবেষণা এবং পরিকল্পনায় জোর দিতেন তিনি। যদিও এখনো আমরা বিবিএসের তথ্য সংখ্যা নিয়ে সংকটে পড়ি। শেষ দিকে দেশের মত প্রকাশের স্বাধীনতা নিয়ে চিন্তত ছিলেন। অনুদার গণতান্ত্রিক পরিস্থিতি নিয়ে ভাবতেন। এখনন একটি ভয়ের সংস্কৃতি তৈরি হয়েছে। লিখতে- বলতে আমাদের ৩/৪ বার ভাবতে হয়।
রাশেদ খান মেননের সরাসির শিক্ষক ছিলেন অধ্যাপক নুরুল ইসলাম। এ বিষয়ে মেনন এমপি বলেন, কুবই ভালো হতো যদি আমরা তাকে রাষ্ট্রীয় সম্মাননা দিতে পারতাম। উপযাজক হয়ে কিছু করতে চাননি বলে পরে তিনি আর দেশে আসেননি। স্বাধীনতার আগে ছাত্র রাজনীতির উত্তাল সময়ে তিরি আমার পরীক্ষা দেওয়ার ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ড.প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ড. মশিউর রহমান বলেন, স্বাধীনতার পূর্বে অর্থনৈতিক বৈষম্যকে রাজনৈতিক অঙ্গনে যুক্ত করার দারুণ ভূমিকা ছিল অধ্যাপক নুরুল ইসলামের। তবে দীর্ঘদিন দেশের বাইরে থাকায় অপ্রসঙ্গিক হয়ে যাওয়ায় হয়তো তিনি জাতীয় স্বীকৃতি পাননি। শুরুতে পরিকল্পনা কমিশনের কর্মপরিধি অনেক ব্যাপক ছিল। বজেট প্রণয়নের সময় অর্থবিভাগের সঙ্গে তাদের বিতর্ক হতো। ব্যয় বাড়াতে মন্ত্রীদের সঙ্গেও ঝগড়া-বিবাদ হতো। তখন বঙ্গবন্ধু এসব ঝামেলা মিটাতে গিয়ে ব্যয় বাড়িয়ে দিতে বলতেন।
প্রশাসনের সঙ্গেও ঝামেলা হয়েছিল কমিশনের। তাৎক্ষণিক এডহক ভিত্তিতে কশিমনে অধ্যাপক নুরুল ইসলাম বেশ প্রফেশনাল লোকজনকে নিয়োগ করেছিলেন। তবে প্রশাসতিক বিভাগ থেকে আমলাতন্ত্রের নিয়োগের ভিত্তিতে লোকবল নেওয়ার কথা হয়। কিন্তু অধ্যাপক নুরুল ইসলাম বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে আলোচনা করে বিশেষভাবে সেটাও অনুমোদন নিয়ে নিলেন। ইআরডিতেও জামেলা হচ্ছিলো। পরে তিনি দেশ ছেড়ে চলে যান।
একানমিক ক্যাডার এখন এডমিন ক্যাডারের সঙ্গে একীভূত করার বিষয়ে তিনি বলেন, এটা সরকারের উদ্যোগ ছিল না। প্রশোমন পেতে এটা ইকনোমিক ক্যাডারদির দাবি ছিল। সরকার এটা দীর্ঘদিন ঠেকিয়ে রেখেছিল। কিন্তু শেষ পর্যোন্ত এটা করতে হয়েছিল। তবে ক্যাডার সার্ভিস নিয়ে এখন রিভিউ হওয়া উচিত বলে মনে করেন তিনি।
সঞ্চালনায় থাকা বিআইডিএস-এর মহাপরিচালক ড, বিনায়েক সেন বলেন, অধ্যাপক নূরুল ইসলাম সমাজতন্ত্রী ছিলেন না। রাজনৈতিক আগ্রহ থেকে তিনি বিভিন্ন লোকের সঙ্গে কথা বলতেন। তিনি স্বাদীনতার জন্যও কাজ করেছেন্ কিন্তু কেন তিনি একুশে পদক পাননি তা আমার বোঝে আসেনা।