প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৮ জুন ২০২৩ ২১:১০ পিএম
কারওয়ান বাজারের একটি মুদি দোকান। প্রবা ফটো
সরকার চিনির দাম বেঁধে দেওয়ার পরও কোনোভাবেই তার সুফল পাচ্ছেন না ক্রেতারা। বেঁধে দেওয়া দামকে উপেক্ষা করেই চলছে বিক্রয় কার্যক্রম। বাজারে প্রতি কেজি খোলা চিনি ১২০ টাকার বিপরীতে বিক্রি হচ্ছে ১৩৫ টাকায়। খুচরা দোকানগুলোতে পাওয়াই যাচ্ছে না প্যাকেটজাত চিনি। তবে দুয়েকটি দোকানে পাওয়া গেলেও তা বিক্রি হচ্ছে ১৩০ থেকে ১৫০ টাকা পর্যন্ত।
বৃহস্পতিবার (৮ জুন) রাজধানীর কারওয়ান বাজার, মোহাম্মদপুর টাউন হল কাঁচাবাজার ও যাত্রাবাড়ীর শনির আখড়া কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা যায়, বাজারে খোলা চিনি পাওয়া গেলেও বিক্রি হচ্ছে আগের বর্ধিত দর ১৩৫ টাকায়। এ ছাড়া কাটেনি প্যাকেটজাত চিনির সংকট। খুচরা দোকানগুলোতে খুব একটা মিলছে না প্যাকেটজাত চিনি।
এ বিষয়ে শ্যামলী কাঁচাবাজারের বিক্রেতা কাওসার মিয়া বলেন, ‘খোলা চিনি কেনা পড়ে বেশি দামে। এখনও তো চিনির বাজার স্বাভাবিক হচ্ছে না। আমরা ১৩৫ টাকায় পণ্যটি বিক্রি করছি। আর প্যাকেটজাত চিনি পাই না দোকানে, রাখিও না।’
মোহাম্মদপুর টাউন হল কাঁচাবাজারের আরেক বিক্রেতা আলমগীর হোসেন বলেন, ‘আমি খোলা চিনি এখন আর বিক্রি করি না। কেনা দাম বেশি হয়ে যায়। তাই এখন দুয়েক কেজি প্যাকেটজাত চিনি বিক্রি করি। প্যাকেট চিনি আমার কেনা পড়ে ১২৫ থেকে ১৩০ টাকা। বিক্রি করি ১৩০ থেকে ১৩৫ টাকা।’
চিনির ঊর্ধ্বমুখী দাম নিয়ে কারওয়ান বাজারের ক্রেতা জাহিদুল হক ক্ষুব্ধ কণ্ঠে প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘ভাই বাজারের যে অবস্থা এতে আর চলন যায় না। চিনির দাম সরকার বেঁধে দিল। কই সে দামে তো বিক্রি হচ্ছে না। যে যার মতো বাজারটারে চালাইতেছে। এভাবে চলতে পারে না। একটা সমাধানে আসা উচিত।’
এদিকে ক্রমেই স্বাভাবিক হচ্ছে পেঁয়াজের দাম। বাজারে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৬০-৬৫ টাকায়। আর আমদানিকৃত পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৫৫ টাকা দরে।
পেঁয়াজের সরবরাহ পরিস্থিতি নিয়ে রাজধানীর বৃহত্তম পাইকারি বাজার পুরান ঢাকার শ্যামবাজারে খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, পেঁয়াজে ভরপুর হয়ে উঠেছে বাজার।
শ্যামবাজারের পাইকারি বিক্রেতা রাকিব হোসেনের কাছে বিস্তারিত জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘পেঁয়াজের সংকট নেই। বাজারে ভরপুর আছে। দেশি পেঁয়াজ বিক্রি করছি ৫৫ থেকে ৫৮ টাকা কেজি দরে। আর আমদানিকৃত পেঁয়াজ বিক্রি করছি ৪৫ থেকে ৪৭ টাকা দরে। দাম আরও কমবে আশা করি।’
দামের এমন ওঠানামার বিষয়ে জানতে চাইলে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, ‘ব্যবসায়ীরা সুযোগ নেওয়ার চেষ্টায় থাকেন। এবারও তাই করলেন। সংকট দেখিয়ে দেখিয়ে ভোক্তার পকেট ফাঁকা করলেন। এক্ষেত্রে সরকারকে বাজার ব্যবস্থার দিকে নজর দিতে হবে। সরকারকে শক্ত অবস্থানে থাকতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘পেঁয়াজের দর ৪০ টাকা পর্যন্ত থাকা উচিত। এতে ভোক্তার স্বার্থ রক্ষা পাবে। কৃষকও যেন ন্যায্যমূল্য পায় সেদিকেও লক্ষ রাখতে হবে। অর্থাৎ দাম যৌক্তিক পর্যায়ে না থাকলে ভোক্তার স্বার্থ ক্ষুণ্ন হবে। ৪০ টাকার ওপরে গেলেই আমদানির অনুমতি দিয়ে দিতে হবে। ব্যবসায়ীরা যেন ভোক্তাদের ক্ষতি করতে না পেরে এজন্য বাজার পর্যালোচনা সঠিকভাবে চালিয়ে যেতে হবে। এসব সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য না কমাতে পারলে সারা জীবন ক্ষতিগ্রস্ত হবে ভোক্তাই। দীর্য়মেয়াদি পরিকল্পনায় আগাতে হবে। একই সঙ্গে উৎপাদন কার্যক্রমের ওপরও জোর দিতে হবে।’
বাজারে অপরিবর্তিত রয়েছে সবজি এবং মাছের দাম। প্রতি কেজি টমেটো ৪০ থেকে ৬০ টাকা, বেগুন ৬০ থেকে ৭০, পটোল ৭০ থেকে ৮০, শসা ৪০ থেকে ৫০, ধন্দুল ৭০, করলা ৭০ থেকে ৮০, ঢ্যাড়স ৬০ থেকে ৮০ টাকায়, পেঁপে ৬০ থেকে ৭০, চিচিঙ্গা ৬০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। আর প্রতি কেজি কাঁচা মরিচ বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ১১০ টাকা পর্যন্ত।
আকারভেদে প্রতি কেজি শিং মাছ ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা, ট্যাংরা ৫০০ থেকে ৫৫০, পাঙাশ ১৮০ থেকে ২০০ টাকা, সিলভার কার্প ১৭০-২০০, তেলাপিয়া ১৮০ থেকে ২০০, রুই ২৮০ থেকে ৩৫০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।