প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২০ জুন ২০২৩ ১৪:১৩ পিএম
হাতের মুঠোয় থাকা মোবাইল ফোনটিই এখন আর্থিক লেনদেনের অন্যতম মাধ্যম। এক যুগ আগেও যা ছিল অকল্পনীয়। বর্তমানে ঘরে বসেই টাকা লেনদেন কিংবা ব্যাংক হিসাব খোলা যাচ্ছে। ফলে দিন দিনই লেনদেন বাড়ছে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের। সর্বশেষ চলতি বছরের এপ্রিলে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ১ লাখ ২৪ হাজার ৯৫৪ হাজার কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে, যা এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ লেনদেন।
এক মোবাইল ফোনের সাহায্যে অন্যকে টাকা পাঠানো, মোবাইল রিচার্জ, বিভিন্ন পরিষেবা ও কেনাকাটার বিল পরিশোধ, টিকিট কেনাসহ কত ধরনের সেবা মিলছে, তা এক দমে বলা কঠিন। সব মিলিয়ে বিকাশ, রকেট, নগদ ও উপায়ের মতো মোবাইলে আর্থিক সেবা (এমএফএস) বাংলাদেশের সাধারণ মানুষকে আর্থিক স্বাধীনতা এবং স্বাচ্ছন্দ্য এনে দিয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের এপ্রিল মাসে ১ লাখ ২৪ হাজার ৯৫৪ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে। এর আগের বছরের একই মাসে লেনদেনের পরিমাণ ছিল ১ লাখ ৭ হাজার ৪৬০ কোটি টাকা। অর্থাৎ গত বছরের একই সময়ের তুলনায় লেনদেন বেড়েছে ১৭ হাজার ৪৯৪ কোটি টাকা।
এদিকে চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম মাস অর্থাৎ জুলাইয়ে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে লেনদেন হয়েছিল ৮৯ হাজার ১৬৯ কোটি টাকা। আগস্টে কিছুটা কমে লেনদেন হয়েছিল ৮৭ হাজার ৪৪৬ কোটি টাকা। এর পরের মাস সেপ্টেম্বরে ৮৭ হাজার ৬৩৫ কোটি, অক্টোবরে ৯৩ হাজার ১৩ কোটি, নভেম্বরে ৯২ হাজার ১২৫ কোটি এবং ডিসেম্বরে লেনদেন হয়েছিল ৯৬ হাজার ১৩২ কোটি টাকা।
চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে ১ লাখ ৫৯৩ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে। এরপর ফেব্রুয়ারিতে লেনদেন ৩ হাজার ২৮৬ কোটি টাকা কমেছে। এই মাসে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে লেনদেন হয়েছে ৯৭ হাজার ৩০৭ কোটি টাকা। এ ছাড়া মার্চ মাসে ১ লাখ ৮ হাজার ৪৬৭ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছিল।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে (জুলাই-এপ্রিল) দেশে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে গ্রাহক সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২ কোটি ২০ লাখ ৪৯ হাজার ৫৬৮টি। এপ্রিল শেষে নিবন্ধিত হিসাব বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২০ কোটি ৬৮ লাখ ৯ হাজার ২১০টি। গত বছরের জুন শেষে যার সংখ্যা ছিল ১৭ কোটি ৮৬ লাখ ৩৯ হাজার ৬৪২টি।
এদিকে গত ডিসেম্বর শেষে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে নিবন্ধিত হিসাবের সংখ্যা ছিল ১৯ কোটি ১০ লাখ ৬৩ হাজার ৫৭৩টি। অর্থাৎ চলতি বছরের চার মাসের ব্যবধানে হিসাব বেড়েছে ৯৬ লাখ ২৫ হাজার ৬৩৭টি। এপ্রিল শেষে পুরুষ গ্রাহক দাঁড়িয়েছে ১১ কোটি ৬০ লাখ ২৯ হাজার ৯২৫ জন। অপরদিকে নারী গ্রাহক ৮ কোটি ৪১ লাখ ৪৬ হাজার ৩০২ জন। এ ছাড়া মোবাইল ব্যাংকিং এজেন্টের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৫ লাখ ৫৫ হাজার ৭৯১ জন।
অতিদ্রুত শহর থেকে গ্রামে, গ্রাম থেকে শহরে সর্বত্রই টাকা পাঠানোর সুযোগ তৈরি হওয়ায় মোবাইল ব্যাংকিং দেশের ব্যাংকিং সেবায় নতুন সম্ভাবনা এনে দিয়েছে। দেশের অর্থনীতিতে বিরাট এক গতি সঞ্চার করেছে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের এই সেবা। একই সঙ্গে নতুন কর্মসংস্থান যোগ হয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
এদিকে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে প্রতিদিনের লেনদেন ছাড়াও বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানির বিল পরিশোধ করা যায়, সেই সঙ্গে করা যায় কেনাকাটা। সেবামূল্য পরিশোধ, বেতন-ভাতা প্রদান, প্রবাসী আয় পাঠানোসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে মোবাইল ব্যাংকিং সেবা এখন পছন্দের শীর্ষে। কম খরচ ও দ্রুত দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে টাকা পাঠাতে প্রতিদিনই মোবাইল ব্যাংকিংয়ের জন্য হিসাব খুলছেন বিপুলসংখ্যক গ্রাহক। প্রতি মাসেই বাড়ছে গ্রাহকসংখ্যা।
এমএফএসে এপ্রিল মাসে ব্যক্তি থেকে ব্যক্তি হিসাবে ৩৪ হাজার ৩৫৭ কোটি টাকা লেনদেন হয়। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বেতন-ভাতা বাবদ বিতরণ হয় ৪ হাজার ৩৮৮ কোটি টাকা। এ ছাড়া বিভিন্ন পরিষেবার ২ হাজার ৪৩৭ কোটি টাকার বিল পরিশোধ হয় এবং কেনাকাটায় ৫ হাজার ৫০৪ কোটি টাকা লেনদেন হয়।
বাংলাদেশ ব্যাংক ২০১০ সালে মোবাইল ব্যাংকিং কার্যক্রম চালু করে। ২০১১ সালের ৩১ মার্চ বেসরকারি খাতের ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের মোবাইল ব্যাংকিং সেবা রকেটের মধ্য দিয়ে দেশে মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসের যাত্রা হয়। এরপরই ব্র্যাক ব্যাংকের সহযোগী প্রতিষ্ঠান হিসেবে মোবাইল ব্যাংকিংসেবা চালু করে বিকাশ। এ ছাড়াও নগদসহ বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান মোবাইল ব্যাংকিংয়ের সেবা দিচ্ছে।
দেশে এমএফএস সেবার বড় অংশ দখল করে আছে ‘বিকাশ’। সেবার পরিধিও তাদের সবচেয়ে বেশি। প্রতিষ্ঠানটির হেড অব করপোরেট কমিউনিকেশনস শামসুদ্দিন হায়দার ডালিম বলেন, এখন মোবাইল আর্থিক সেবার ওপর সাধারণ মানুষের আস্থা বেড়েছে। এর সঙ্গে উদ্ভাবনী প্রযুক্তি, সৃজনশীল ও সময়োপযোগী নানা সেবা-পরিষেবা যুক্ত হচ্ছে। আর্থিক অন্তর্ভুক্তিকরণের পাশাপাশি সরকারের