প্রবা প্রতিবেদন
প্রকাশ : ০৬ জুলাই ২০২৩ ১৩:৫৫ পিএম
ছবি : সংগৃহীত
উচ্চ মূল্যস্ফীতির চাপে নাকাল বিশ্ব অর্থনীতি। তবে এবার যুক্তরাজ্যে কমেছে খাদ্যমূল্য স্ফীতি। ব্রিটেনের অফিস ফর ন্যাশনাল স্ট্যাটিস্টিক্সের পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, খাদ্য ও পানীয়ের দাম বৃদ্ধির হার যেখানে গত এপ্রিলে ১৯ শতাংশ ছিল, তা মে মাসে কমে দাঁড়িয়েছে ১৮ দশমিক ৩ শতাংশে।
দাম কমায় আগের তুলনায় দোকানগুলোতে বিক্রি বেড়েছে। যুক্তরাজ্যের দ্বিতীয় বৃহত্তম সুপার মার্কেট সেন্সবারি তাদের এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, ২৪ জুন পর্যন্ত গত চার মাসের হিসাবে জ্বালানি ব্যতীত অন্য সকল পণ্য বিক্রি ৯ দশমিক ৮ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
সেন্সবারির পক্ষ থেকে আরও জানানো হয়, সুপারমার্কেটগুলোতে মুদিপণ্য বিক্রি বেড়েছে ১১ শতাংশ, গৃহস্থালির পণ্য ৪ শতাংশ এবং আর্গোসের ইলেকট্রনিক্স, ফার্নিচার, প্রযুক্তিসহ অন্যান্য পণ্য বিক্রি বেড়েছে ৫ দশমিক ১ শতাংশ। তবে একই জায়গায় বস্ত্র বিক্রি কমেছে ৩ দশমিক ৭ শতাংশ। এ বিষয়ে সেন্সবারির প্রধান নির্বাহী সাইমন রবার্টস বলেন, ‘খাদ্যমূল্য স্ফীতি বিশেষ করে কিছু মৌলিক পণ্যের দাম কমতে শুরু করেছে। ফলে ক্রেতারা তাদের ঝুড়িতে আরও বেশি পরিমাণে পণ্যসামগ্রী রাখছেন।’
এ মুহূর্তে মূল্যস্ফীতির বিরুদ্ধে লড়াই মূল লক্ষ্য উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘মূল্যস্ফীতির বিরুদ্ধে লড়াই করতে আমরা আমাদের সমস্ত শক্তি এবং মনোযোগ দিয়েছি। কারণ পরিবারগুলো তাদের চাহিদা পূরণ করতে আগের চেয়ে বেশি চাপের মধ্যে রয়েছে। ফলে সামান্য পরিমাণ দাম কমায় আমরা এখনই আত্মতুষ্টিতে ভুগছি না। যেহেতু মূল্যস্ফীতি এখনও একটি চ্যালেঞ্জ হতে চলেছে, তাই আমরা আমাদের স্কিমের অন্তর্ভুক্ত গ্রাহকদের নিশ্চিত করতে চাই, আমরা তাদের পাশে আছি।’
জীবনযাপন ব্যয়ে যে সংকট তৈরি হয়েছে তা দ্রুত সময়ের মধ্যে স্বস্তি আনবে না উল্লেখ করে রবার্টস আরও বলেন, ‘খাদ্য উৎপাদনের খরচ স্পষ্টভাবে বেড়েছে। উচ্চ মজুরি খুচরা বিক্রেতা এবং তাদের সরবরাহকারীদের জন্য শঙ্কা তৈরি করেছে। আমরা সকলেই চাই, দ্রুত সময়ের মধ্যে জ্বালানি খরচ কমে আসুক। তবে এটি কমে আসতেও কিছুটা সময় লাগবে।’
এদিকে উচ্চ খাদ্যমূল্য স্ফীতি কমপক্ষে বছরের শেষ পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে এবং প্যাকেটজাত পণ্যের মূল্যস্ফীতি তাজা খাবারের তুলনায় কমতে বেশি সময় নেবে বলেও মন্তব্য করেছেন রবার্টস।
সেন্সবারি জানিয়েছে, তারা গত মার্চ থেকে রুটি, দুধ, পাস্তা, চিকেন ও টয়লেট টিস্যুসহ মৌলিক জিনিসগুলোর দাম কমাতে ৬ কোটি পাউন্ডের বেশি খরচ করেছে। এ ছাড়াও অন্যান্য প্রতিযোগী প্রতিষ্ঠানের তুলনায় সেন্সবারি কম মাত্রায় তাদের পণ্যের দাম বাড়াচ্ছে উল্লেখ করে রবার্টস বলেন, সরকারি পরিসংখ্যানই দেখাচ্ছে সেন্সবারির ক্রেতারা মূল্যস্ফীতির উত্তাপ কিছুটা কম অনুভব করছেন।
এদিকে সুপারমার্কেটগুলো তাদের প্রয়োজনের চেয়ে বেশি দাম রাখছে কি না তা তদন্ত করছে বাজার পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা। এই সপ্তাহে পৃথক প্রতিবেদনে দেখা যায়, সুপারমার্কেটগুলো মহামারি চলাকালে লাভের পরিমাণ বাড়িয়েছিল। তবে জ্বালানিতে সেন্সবারি কী পরিমাণ লাভ করেছে সে বিষয়ে সরাসরি মন্তব্য করেননি রবার্টস। কিন্তু তিনি ইঙ্গিত দিয়ে বলেছেন, জ্বালানিতে যে পরিমাণ লাভ হয়েছে সেখান থেকে কিছুটা নিয়ে খাবারের দাম সর্বনিম্ন রেখে গ্রাহকদের কাছে পৌঁছে দিচ্ছে সেন্সবারি।
খাদ্যের দাম বাড়াতে উৎপাদকরা ভূমিকা রাখছে কি নাÑ এমন প্রশ্নের জবাবে উত্পাদকদের দিকে আঙুল তুলতে নারাজ রবার্টস। তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি না যে সাপ্লাই সিস্টেমের বিভিন্ন অংশকে দোষারোপ করে খুব বেশি লাভ হবে। বরং এখন মূল্যস্ফীতির সমস্যা সমাধানের একমাত্র উপায় হলো একসঙ্গে কাজ করা।’
গ্রাহকদের খরচ কমাতে সেন্সবারি বদ্ধপরিকর জানিয়ে রবার্টস আরও বলেন, ‘খাদ্যমূল্য স্ফীতি কমতে শুরু করেছে। আমরা আমাদের গ্রাহকের খরচ কমাতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’ সূত্র : দ্য গার্ডিয়ান