× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

কাঁঠালের বাম্পার ফলনেও ন্যায্যমূল্য মিলছে না

ফটিকছড়ি (চট্টগ্রাম) প্রতিবেদক

প্রকাশ : ০৭ জুলাই ২০২৩ ১৮:৪১ পিএম

ফটিকছড়ির হেঁয়াকো বাজারে সপ্তাহের প্রতি রবি ও বুধবারে হাট বসে।  প্রবা ফটো।

ফটিকছড়ির হেঁয়াকো বাজারে সপ্তাহের প্রতি রবি ও বুধবারে হাট বসে। প্রবা ফটো।

ফেনী-খাগড়াছড়ি মহাসড়কের রাস্তা ধরে এগোলে এখন দেখা মেলে ছড়ানো-ছিটানো ছোট-বড় কাঁঠালের স্তূপ। রাস্তার দুপাশে বিক্রির জন্য কাঁঠাল নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন কেউ কেউ। আবার কেউ ট্রাক, পিকআপ ও সিএনজি অটোরিকশায় করে কাঁঠাল নিয়ে এসে স্তূপ সাজাচ্ছেন। কেউ গাড়িতে তুলে নিয়ে যাচ্ছেন কাঁঠাল। হাটজুড়ে হাওয়ায় ভাসছে পাকা কাঁঠালের মিষ্টি ঘ্রাণ। চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলার দাঁতমারা হেঁয়াকো বাজারেও এমনই দৃশ্যের দেখা মেলে। 

সপ্তাহের প্রতি রবিবার ও বুধবার বসে চট্টগ্রামের এ বৃহত্তর মৌসুমি ফলের হাট। যে হাটে ভোরের আলো ফোটার মুহূর্ত থেকে গভীর রাত পর্যন্ত বেচাকেনা চলে। হেঁয়াকো বাজার ছাড়াও উপজেলার পাইন্দং, দাঁতমারা, বাগানবাজার ইউনিয়নের অসংখ্য স্থায়ী ও অস্থায়ী হাট-বাজারে বিক্রি হয় রসালো কাঁঠালসহ বিভিন্ন জাতের মৌসুমি ফল।

ব্যবসায়ী ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রায় শত বছরের পুরোনো হেঁয়াকো বাজার। কাঁঠালের মৌসুমে ভিন্ন আমেজ তৈরি হয় এখানকার ক্রেতা-বিক্রেতাদের মাঝে। উপজেলার দাঁতমারা ইউনিয়নের দাঁতমারা বাজার, বালুটিলা, শান্তিরহাট, নারায়ণহাট, বাগান বাজার ইউনিয়নের গজারিয়া, পেনুয়া, রহমতপুর, মুহাম্মদপুর, তাকিয়া, গার্ডের দোকানসহ আশপাশের বিভিন্ন টিলা ও চা-বাগান থেকে এখানে কাঁঠাল আসে। স্বাদ ও ঘ্রাণের জন্য ফটিকছড়ির কাঁঠালের বিশেষ চাহিদা আছে দেশজুড়ে। এই কাঁঠাল বিক্রির আয় দিয়েই কারও কারও সারা বছরের খরচাপাতি চলে যায়। 

সরেজমিনে ফটিকছড়ির হেঁয়াকো বাজারে গিয়ে দেখা যায়, বাজারের বিভিন্ন দিকের সড়ক দিয়ে হাটে কাঁঠাল নিয়ে আসছেন চাষি ও ব্যবসায়ীরা। কেউ বাইসাইকেলে, কেউ ঠেলাগাড়িতে, কেউ সিএনজিচালিত অটোরিকশায়, কেউ পিকআপ ভ্যানে করে কাঁঠাল নিয়ে হাটে আসছেন। বাজারের পশ্চিম দিকের ব্রিজ থেকে উত্তর দিকের ব্রিজ পর্যন্ত ব্যস্ততম ফেনী-খাগড়াছড়ি মহাসড়কের প্রায় আধা কিলোমিটারের দুই পাশে কাঁঠাল নিয়ে বসেন স্থানীয় বিক্রেতারা। হাটে আসছেন পাইকাররা। কাঁঠালের দরদাম করছেন। ক্রেতা-বিক্রেতার কথাবার্তায় গমগম করছে স্থানটি। এই ক্রেতাদের মধ্যে পাইকার ও খুচরা ক্রেতা উভয়েই আছেন। দাম ঠিক হলে যার যার মতো করে তুলে নিয়ে যাচ্ছেন কাঁঠাল। একটা স্তূপ খালি হলে অন্য কেউ সেখানে আবার কাঁঠাল নিয়ে বসছেন। 

উপজেলার নারায়ণহাট থেকে টমটমে করে কাঁঠাল নিয়ে আসা কবির আহমদ বলেন, এবার কাঁঠালের দাম অনেক কম। গত বছর যা ছিল প্রতি পিস ৮০-১০০ টাকা। এ বছর তা বিক্রি হচ্ছে প্রতি পিস ৪০-৫০ টাকায়। তবে বৃষ্টি হলে একটু দাম বাড়ে।

দাঁতমারা ইউনিয়নের বেতুয়া থেকে কাঁঠাল নিয়ে আসা জহির বলেন, গরম বেশি থাকায় গত হাটগুলোয় কাঁঠালের দাম ভালো দাম মেলেনি। গত হাটে ১২টি কাঁঠালের দাম উঠেছে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা।

দাঁতমারা বাজার থেকে হেঁয়াকো বাজারে বাইসাইকেলে করে কাঁঠাল নিয়ে আসা আবুল কালাম বলেন, ‘দামের কোনো স্টেশন নাই। একেক হাটে একক রকম বিক্রি হয়। যে যত বেচতে পারে। আমার বাড়িতে ৮টি গাছ আছে।’ তিনি ১১টি কাঁঠালের দাম চাইছেন ১ হাজার টাকা। দাম বলা হচ্ছে ৫০০ টাকা।

ফেনী বাজার থেকে আব্দুল কাদের কাঁঠাল কিনতে এসেছেন। তিনি জানান, ৭ হাজার ৫০০ টাকায় ১১০টি কাঁঠাল কিনেছেন। একসঙ্গে আরেকজন পাইকারের সঙ্গে একই গাড়িতে করে কাঁঠাল নেবেন। তার কাঁঠাল যাতে অন্য পাইকারের কাঁঠালের সঙ্গে মিশে না যায়, সেজন্য প্রতিটি কাঁঠালে সবুজ রঙের চিহ্ন এঁকে পৃথক করছিলেন।

মিরসরাই থেকে ট্রাক নিয়ে কাঁঠাল কিনতে আসা মো. মামুন বলেন, ‘আমরা এখান থেকে কাঁঠালসহ অন্যান্য মৌসুমি ফল কিনে নিয়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিক্রি করি। তবে কাঁঠালের দামের চেয়ে গাড়িভাড়া, লোড-আনলোডসহ (পণ্য ওঠানো-নামানো) সড়কের মোড়ে মোড়ে চাঁদা দিতে দিতে খরচ বেড়ে যাচ্ছে।

হেঁয়াকো বাজারের ইজারাদার রশিদ সরকার প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, একটা সময় সবচেয়ে বড় কাঁঠালের বাজার বসত হেঁয়াকো বাজারে। এখন যোগাযোগব্যবস্থা উন্নত হয়েছে। সে কারণে এখন বিভিন্ন জায়গায় জায়গায় বাজার মিলতেছে। পাইকাররা এখন বিভিন্ন বাজারে গিয়ে কাঁঠাল কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। যার ফলে হেঁয়াকো বাজারের চাপ কমছে।

দাঁতমারা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. জানে আলম বলেন, চট্টগ্রামের সবচেয়ে বড় আম-কাঁঠালের বাজার হেঁয়াকো বাজার। এই বাজারের আম-কাঁঠাল স্থানীয়দের চাহিদা মিটিয়ে সারা দেশেও যায়। এখানকার কাঁঠাল বেশ সু্স্বাদু। তাই দেশজুড়ে এর চাহিদাও। 

উপজেলা কৃষি অফিসের দেওয়া তথ্যমতে, চলতি মৌসুমে পুরো উপজেলাজুড়ে পাঁচটি জাত মিলে প্রায় ১ হাজার ২৬০ হেক্টরের মতো কাঁঠালের আবাদ হয়েছে। যার মধ্যে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে প্রায় ৭ হাজার ৮৫৫ মেট্রিক টন।

ফটিকছড়ি উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. হাসানুজ্জামান প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, অন্যান্য বছরের তুলনায় চলতি মৌসুমে ফটিকছড়িতে কাঁঠালের ভালো ফলন হয়েছে। তবে গরমের কারণে কাঁঠালের আকার ছোট হয়েছে। কাঁঠাল ছোট হলেও ঘ্রাণ ও স্বাদটা ভালো। এখানকার কাঁঠালের চাহিদা দেশজুড়ে।


শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা