প্রবা প্রতিবেদন
প্রকাশ : ০৮ জুলাই ২০২৩ ২১:১০ পিএম
ছবি: সংগৃহীত
ভারতজুড়ে হু হু করে বাড়ছে টমেটোর দাম। টানা বৃষ্টিপাতের জেরে কোথাও প্রতি কেজি টমেটো বিক্রি হচ্ছে ১৫০ রুপি আবার কোথাও ২৫০ রুপি। এবার টমেটোর অস্বাভাবিক দামের প্রভাব পড়ল ফাস্টফুড চেইন ম্যাকডোনাল্ডসের জনপ্রিয় খাবার বার্গারেও।দাম নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ায় বার্গার তৈরিতে আর টমেটো ব্যবহার না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। ইতোমধ্যেই রাজধানী দিল্লিতে ম্যাকডোনাল্ডসের একটি আউটলেটে এ সংক্রান্ত নোটিসও দেওয়া হয়েছে।
দেশটির বেশ কিছু অঞ্চলে টমেটোর পাইকারি দাম এক মাসে ২৮৮ শতাংশ বেড়েছে। গত শুক্রবার প্রতি কেজি ১৪০ রুপি বা ১ দশমিক ৭ ডলারে পৌঁছেছে, যেখানে খুচরা দাম এখনও বেশি রয়েছে। এতে সাধারণ ভোক্তাদের নাগালের বাইরে চলে গেছে টমেটো।
সম্প্রতি দেশটিতে মৌসুমি বৃষ্টিপাতের ফলে টমেটোর উৎপাদন, পরিবহন ও সরবরাহ সংকট তৈরি হয়েছে। এদিকে চলতি বছরের কয়েক মাসে দেশটিতে দুধ থেকে শুরু করে মসলা পর্যন্ত সব ধরনের নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে।
ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে দুটি ম্যাকডোনাল্ডের দোকানে পোস্ট করা বিজ্ঞপ্তিগুলোতে বলা হয়েছে, ‘আমাদের সর্বাধিক প্রচেষ্টা সত্ত্বেও, চাহিদা অনুসারে সরবরাহ বাড়ছে না। এতে আমাদের আইটেমভিত্তিক খাবারের মান ধরে রাখতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। তাই আমরা টমেটো ছাড়াই আপনাকে খাবার পরিবেশন করতে বাধ্য হচ্ছি।’
স্টোর ম্যানেজাররা জানিয়েছেন, দাম বৃদ্ধি ও সাপ্লাই চেইনের সরবরাহ সমস্যার কারণে এই সমস্যার মুখে পড়তে হচ্ছে।
মিডিয়ার একটি বিবৃতিতে বলা হয়েছে, কনট প্লাজা রেস্তোরাঁ, যারা ভারতের উত্তর ও পূর্বে ম্যাকডোনাল্ডস ফ্র্যাঞ্চাইজি হিসেবে প্রায় ১৫০টি আউটলেট পরিচালনা করে আসছে। তারা সিদ্ধান্তটিকে ‘অস্থায়ী’ মৌসুমি সমস্যা হিসেবে দায়ী করেছে।
তারা বলছে, সবরকম চেষ্টা করা সত্ত্বেও আমরা পর্যাপ্ত পরিমাণে টমেটো পাইনি, যা বিশ্বমানের গুণমান পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়। তাই আপাতত আমরা টমেটো ছাড়াই পণ্য পরিবেশন করতে বাধ্য হচ্ছি। তবে টমেটোর আগের মতো সরবরাহ ফিরে পাওয়ার জন্য আমরা কাজ করছি।
উত্তর ও পূর্ব ভারতের ম্যাকডোনাল্ডস ইন্ডিয়ার এক মুখপাত্র জানিয়েছেন, মেন্যু থেকে টমেটো বাদ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তা দাম বৃদ্ধির জন্য নয়। কোম্পানি শিগগিরই এটিকে মেন্যুতে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছে। তার কথায়, কেবল গুণমানের বৈশিষ্ট্য পূরণ করে এমন টমেটো পাওয়া যাচ্ছে না। আমরা জানাতে চাই যে, পাঞ্জাব-চণ্ডীগড় এলাকায় যেখানে পর্যাপ্ত পরিমাণে সরবরাহ করা যাচ্ছে, সেই এলাকায় আমরা মেন্যুতে টমেটো পরিবেশন করছি।
ওই মুখপাত্র আরও বলেছেন, কয়েকটি অঞ্চলে ক্ষেত থেকে পাওয়া মৌসুমি ফসলের সমস্যাগুলোর জন্য আমাদের মানের পর্যাপ্ত টমেটো পাওয়া যাচ্ছে না। গ্রাহকদের সর্বোত্তম গুণমানের পরিবেশন নিশ্চিত করার জন্য আমরা পরিচিত। দেশের পশ্চিম ও দক্ষিণ অঞ্চলে ওয়েস্টলাইফ গ্রুপ ম্যাকডোনাল্ডসের ফ্র্যাঞ্চাইজি পেয়েছে। এই সংস্থার হাতে রয়েছে ৩৫৭টি রেস্তোরাঁ। এই সংস্থার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, টমেটো সম্পর্কিত কোনো গুরুতর সমস্যা নেই। সমস্যাটি মৌসুমি ছিল। ১০-১৫ শতাংশ রেস্তোরাঁ সাময়িকভাবে খাবারে টমেটো পরিবেশন বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছে।
দেশজুড়েই টমেটোর দাম বেড়েছে। এর মূল কারণ হিসেবে উঠে এসেছে, বৃষ্টিপাতের জেরে সরবরাহ কমে যাওয়া। অনেক শহরেই এই সবজির কেজিপ্রতি দাম রয়েছে ১৫০ রুপি। অনলাইনে একাধিক প্ল্যাটফর্মেও টমেটোর দাম বিক্রি হচ্ছে প্রতিকেজি ১৬০ টাকা। সাধারণত, জুলাই-আগস্ট মাসে টমেটোর দাম বেড়ে যায়। কারণ এই ফসল অত্যন্ত পচনশীল। বর্ষার জেরে এই সবজি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
মুম্বাইয়ের সবজি বিক্রেতা বিজয় শর্মা বলেছেন, তিনি প্রতিদিন ৪০ কেজি টমেটো বিক্রি করতেন। কিন্তু সরবরাহ সংকটে এখন এর চাইতে কম বিক্রি করছেন।
তিনি আরও বলেন, আমার অধিকাংশ গ্রাহক টমেটো কেনা বন্ধ করে দিয়েছেন। এখন আমি প্রতিদিন মাত্র পাঁচ কেজি নিয়ে আসি।
উল্লেখ্য, ভারতে টমেটোর মোট চাহিদার ৬০ শতাংশ পূরণ করে দক্ষিণ ও পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলো। নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে বাড়তি সবজি অন্য রাজ্যে সরবরাহ করে তারা।
সূত্র : রয়টার্স, ইকোনমিক টাইমস