আনিছুর রহমান
প্রকাশ : ০৩ আগস্ট ২০২৩ ১৩:০৫ পিএম
গত কয়েক বছরের ধারাবাহিকতায় চলতি অর্থবছরের প্রথম মাসে বেনিফেশিয়ারি ওনার্স (বিও) হিসাবের সংখ্যা কমেছে। সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেডের (সিডিবিএল) তথ্য বলছে, গত জুলাই মাসে ১ লাখ ১৭ হাজার ৭৪৯টি বা ৬ দশমিক ৩২ শতাংশ বিও হিসাব কমেছে।
ফলে জুন মাসের শেষ কার্যদিবসে সচল থাকা ১৮ লাখ ৬০ হাজার ৭৭৪টি বিও জুলাই শেষে দাঁড়িয়েছে ১৭ লাখ ৪৩ হাজার ২৫টিতে। মূলত বছর শেষে বিও হিসাব পরিচালনার জন্য নবায়ন ফি প্রদানকে কেন্দ্র করে এসব হিসাব বন্ধ হয়ে থাকে। শেয়ারবিহীন বিও হিসাব রাখতে হলে বিনিয়োগকারীকে প্রতিটি বিওর জন্য নবায়ন ফি হিসেবে ৪৫০ টাকা জমা দিতে হয়। এই টাকা দিতে ব্যর্থ হলে ওই সব বিও বন্ধ করে দেওয়া হয়। এ ছাড়াও অনেকে শেয়ার বিক্রি করে বিও হিসাব বন্ধ করে দেন। সেই অনুযায়ী বিও হিসাব কমে যাওয়াকে বিনিয়োগকারী কমে যাওয়াই নির্দেশ করে।
আগের বছরগুলোর মতো ধারাবাহিকভাবে বিও হিসাব কমে যাওয়ার কারণ সম্পর্কে মিডওয়ে সিকিউরিটিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আশিকুর রহমান বলেন, ভালো মানের কোম্পানি আইপিওতে আনার পাশাপাশি বাজারকে গতিশীল করতে না পারলে নতুন বিনিয়োগকারী আসবে না, বরং কমবে। তাই আইপিওর মাধ্যমে ভালো কোম্পানি বাজারে আনতে হবে। সুশাসন নিশ্চিত করতে হবে।
তবে বিও কমে যাওয়া নিয়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম বলেন, ‘একেকজন আইপিও শিকারি ৮ থেকে ১০টি করে বিও হিসাব রাখত, এখন এগুলোই বন্ধ হচ্ছে। বর্তমানে পুঁজিবাজারে যারা আছেন তারাই মূলত বিনিয়োগকারী।’
সিডিবিএলের তথ্যমতে, গত জুলাইয়ে সবচেয়ে বেশি কমেছে পুরুষ গ্রাহকদের বিও হিসাবসংখ্যা। ওই মাসে ৮৭ হাজার ২৫টি পুরুষ গ্রাহকের বিও হিসাব কমেছে। আর নারী বিনিয়োগকারী কমেছে ৩০ হাজার ২৩১ জন। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিনিয়োগ বাড়াতে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি কর্তৃক রোড শো করলেও কমেছে বাংলাদেশি প্রবাসী বিনিয়োগকারীদের সংখ্যা। গত মাসেই প্রবাসী বাংলাদেশিদের বিও হিসাব কমেছে ৫ হাজার ৯৭৩টি। কিন্তু আশার কথা হলো, কয়েক বছর ধরেই বাড়ছে কোম্পানি বিও হিসাবের সংখ্যা। যদিও গত জুলাই মাসে কোম্পানির বিও হিসাব কমেছে ৪৯৩টি।
ব্রোকারেজ হাউজ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, বিও হিসাবের নবায়ন ফি প্রদান না করার উদ্দেশ্যে অনেক বিনিয়োগকারী জুন মাস থেকেই বিও হিসাব বন্ধ করছেন। তবে এই বিও হিসাব বন্ধের প্রক্রিয়া চলে জুলাই মাস পর্যন্ত। যদিও গত ৩০ জুন বিও হিসাবের জন্য নবায়ন ফি দেওয়ার শেষ দিন ছিল। সিডিবিএল সংশ্লিষ্টরা বলেন, এত বড় সংখ্যার বিও একসঙ্গে বন্ধ করা সম্ভব হয় নয়। তাই সময় নিয়ে এগুলো বন্ধ করে ব্রোকারেজ হাউজ। গত জুন মাসে বিও হিসাব বন্ধ হয়েছে ১১ হাজার ৯১৩টি। ওই মাসের শুরুতে বিও হিসাব ছিল ১৮ লাখ ৭২ হাজার ৬৮৭টি।
এ ছাড়া গত অর্থবছরের সিডিবিএলের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ২০২২ সালের জুলাই-পরবর্তী মাসগুলোতে একটু একটু করে বিও হিসাব বেড়েছে। নতুন করে হিসাব খুলে পুঁজিবাজারে এসেছেন অনেক বিনিয়োগকারী। ওই বছরের আগস্টে নতুন করে বিও হিসাব খোলা হয়েছে ৯ হাজার ৪৫৭টি।
এ ছাড়া সেপ্টেম্বরে ৫ হাজার ৩৩৬, অক্টোবরে ৪ হাজার ৬৮২, নভেম্বরে ৪ হাজার ৯৫৪, ডিসেম্বরে ২ হাজার ৯৮৮, জানুয়ারিতে ৪ হাজার ৩৭১, ফেব্রুয়ারিতে ২ হাজার ২৩৩, মার্চে ২ হাজার ৭০০, এপ্রিলে ১৮৯ এবং মে মাসে ১ হাজার ৮৯৩টি নতুন বিও হিসাব খোলা হয়।
তবে পুরুষ ও নারী গ্রাহকদের বিও হিসাব পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ওই সময়ে পুরুষের তুলনামূলক হারে নারীদের বিও হিসাব বেশি কমেছে। বর্তমানে নারী বিও হিসাব ৪ লাখ ২২ হাজার ৩০১টি এবং পুরুষ বিও হিসাব ১৩ লাখ ৪ হাজার ৩৭টি।
২০১৬ সালের জুন শেষে বিও হিসাব ছিল ৩১ লাখ ৫৩ হাজার ৪৪২টি। যা ২০২৩ সালের জুলাই মাসের শেষ নাগাদ দাঁড়ায় ১৭ লাখ ৪৩ হাজার ২৫টিতে। অর্থাৎ এই সময়ে বিও হিসাব কমেছে ১৪ লাখ ১০ হাজার ৪১৭টি বা ৪৪ দশমিক ৭২ শতাংশ। এই সময়ের মধ্যে শুধু ২০১৮-১৯ অর্থবছর ছাড়া বাকি সবগুলো বছরে পুঁজিবাজারে কমেছে বিনিয়োগকারী।
বিও নবায়ন ফির ৪৫০ টাকার মধ্যে সিডিবিএল পায় ১০০ টাকা, হিসাব পরিচালনাকারী ব্রোকারেজ হাউজ পায় ১০০ টাকা, বিএসইসি পায় ৫০ টাকা এবং সরকারি কোষাগারে যায় ২০০ টাকা। জুনের মধ্যে টাকা না দিলে জুলাই মাসে অ্যাকাউন্ট বন্ধ বা স্থগিত করে সিডিবিএল।