প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২৪ আগস্ট ২০২৩ ২১:২৭ পিএম
প্রবা ফটো
কার্বন নিঃসরণ কমাতে দেশে পরিবেশবান্ধব প্রকল্প বাড়ছে প্রতিনিয়তই। দীর্ঘদিন থেকে এই খাতগুলোতে ঋণ বিতরণে বাড়িয়েছে। গেল বছর রেকর্ড ১২ হাজার কোটি টাকার বেশি ঋণ বিতরণ করা হয়েছিলো খাতগুলোতে। কিন্তু হঠাৎ করেই ভাটা পড়েছে টেকসই ও সবুজ অর্থায়নে। গেল বছরের শেষ প্রান্তিকের তুলনায় এই দুই খাতে চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে আশঙ্কাজনক হারে ঋণ বিতরণ কমিয়েছে দেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সর্বশেষ হালনাগাদ প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
ব্যাংকারা বলছেন, সাম্প্রতিক সময়ে দেশের বেশ কয়েকটি ব্যাংক তারল্য সংকটে পড়েছে। পাশাপাশি সরকার ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ব্যাপক হারে ঋণ নেওয়ায় অন্যখাতে ঋণ বিতরণ কমেছে। তবে দ্রুত সময়ের মধ্যে অবস্থার পরিবর্তন আসবে বলেও জানিয়েছেন তারা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান চলতি ২০২৩ সালের প্রথম তিন মাসে (জানুয়ারি-মার্চ) টেকসই প্রকল্পে মোট ৩৬ হাজার ৬৯৫ কোটি টাকা ঋণ বিতরণ করা হয়েছে। এর মধ্যে ব্যাংক বিতরণ করেছে ৩৫ হাজার ৩৮৮ কোটি টাকা। আর আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিতরণ করেছে ১ হাজার ৩০৭ কোটি টাকা। ব্যাংকগুলো মোট বিতরণকৃত ঋণের ১৩ দশমিক ৫৯ শতাংশ এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠান ২১ দশমিক ৩২ শতাংশ টেকসই উন্নয়ন খাতে বিতরণ করেছে। গেল বছরের শেষ প্রান্তিকে (অক্টোবর-ডিসেম্বর) টেকসই প্রকল্পে বিতরণকৃত ঋণের পরিমাণ ছিলো ৪১ হাজার ১০৪ কোটি টাকা। সে হিসেবে তিন মাসের ব্যবধানে ঋণ বিতরণ কমেছে ৪ হাজার ৪০৯ কোটি টাকা। আলোচিত সময়ে ব্যাংকগুলো এই খাতে ঋণ বিতরণ ৪ হাজার ৬০০ কোটি টাকা কমালেও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বাড়িয়েছে ১৯১ কোটি টাকা।
টেকসই প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে কৃষি, সিএমএসএমই, পরিবেশবান্ধব কারখানা, সামাজিকভাবে দায়িত্বশীল প্রকল্পে অর্থায়ন। যদিও মোট ঋণের ২০ শতাংশ টেকসই প্রকল্পে হওয়ার নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। টেকসই প্রকল্পে বর্তমানে ঋণের স্থিতি ১ লাখ ৮ হাজার ৫১২ কোটি টাকা। এর মধ্যে পুরুষ গ্রাহকরা নিয়েছেন ৭৮ হাজার ১৪৪ কোটি টাকার আর নারী গ্রাহকরা ৩০ হাজার ৩৬৭ কোটি টাকার ঋণ নিয়েছে। এছাড়ার গ্রামের গ্রাহকদের ৫৪ হাজার ৭৩৪ কোটি এবং শহরের গ্রাহকদের ৫৩ হাজার ৭৭৮ কোটি টাকার ঋণ দিয়েছে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান।
গত বছরের ডিসেম্বরের তুলনায় চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে সবুজায়নেও অর্থায়ন কমিয়েছে ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠান। চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে (জানুয়ারি-মার্চ) ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান সবুজায়নে ৩ হাজার ৬১৫ কোটি টাকার ঋণ বিতরণ করেছে। এর মধ্যে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর ঋণের পরিমাণ ২ হাজার ৭৭৬ কোটি টাকা। আর আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো এই খাতে ঋণ দিয়েছে ৮৩৯ কোটি টাকার। এটি ব্যাংকগুলোর মোট ঋণের ৪ দশমিক ১৬ এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মোট ঋণের ১৮ দশমিক ৬৪ শতাংশ। গত বছরের শেষ তিন মাসে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান সবুজায়নে মোট ৪ হাজার ৬৭৮ কোটি টাকার ঋণ বিতরণ করেছে। অর্থাৎ মাত্র তিনমাসের ব্যবধানে এই খাতে ঋণ বিতরণ কমেছে ১ হাজার ৬৩ কোটি টাকা।
পরিবেশবান্ধব প্রকল্পের মধ্যে সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদন, বর্জ্য পরিশোধনাগার বা ইটিপি নির্মাণ, পরিবেশবান্ধব ইট উৎপাদন অন্যতম। এই খাতে মোট মেয়াদি ঋণের ৫ শতাংশ ঋণ দেয়ার শর্ত রয়েছে। টেকসই ও সবুজ অর্থায়নে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে উৎসাহিত করতে দুই বছর ধরে বিভিন্ন মানদণ্ডে দেশের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর (এনবিএফআই) টেকসই বা সাসটেইনেবল রেটিং বা মান প্রকাশ করছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
এদিকে টেকসই অর্থায়নে চলতি বছরের মার্চ শেষে লক্ষ্যমাত্রার ৬৪ দশমিক ৫৭ শতাংশ ঋণ বিতরণ করে শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে রাষ্ট্রের অর্থায়নে গঠিত বিশেষায়িত রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক। এরপরই অবস্থান আরেক বিশেষায়িত বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক। এই ব্যাংক লক্ষ্যমাত্রার ৫৬ দশমিক ৪২ শতাংশ ঋণ বিতরণ করেছে। ৩৯ দশমিক ৮১ শতাংশ ঋণ বিতরণ করে তৃতীয় অবস্থানে শরীয়াহ ভিত্তিক শাহাজালাল ইসলামী ব্যাংক, ৩৫ শতাংশ ঋণ বিতরণ করে চতুর্থ অবস্থানে বেসরকারি ন্যাশনাল ব্যাংক এবং ৩৪ শতাংশ ঋণ বিতরণ করে পঞ্চম অবস্থানে রয়েছে বিদেশি হাবিব ব্যাংক।
আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে লক্ষ্যমাত্রার শতভাগ ঋণ বিতরণ করেছে বাংলাদেশ ইনফ্রাস্ট্রাকচার ফিনান্স ফান্ড, ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি ও দ্যা ইউএই-বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট কোম্পানি। আর ৯০ শতাংশের বেশি ঋণ বিতরণ করেছে বাংলাদেশ ফাইন্যান্স।
এছাড়া সবুজ অর্থায়নে লক্ষ্যমাত্রার সবচেয়ে বেশি ঋণ বিতরণ করে শীর্ষে রয়েছে শরীয়াহ ভিত্তিক এক্সিম ব্যাংক। এই ব্যাংকের বিতরণকৃত ঋণের পরিমাণ ৩৮ দশমিক ১ শতাংশ। দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা শাহাজালাল ইসলামী ব্যাংক লক্ষ্যমাত্রার ৩৩ দশমিক ১৮ শতাংশ ঋণ বিতরণ করেছে এবং ২৮ দশমিক ৩২ শতাংশ ঋণ বিতরণ করে এই খাতে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে সীমান্ত ব্যাংক। সবুজায়নে শতভাগ ঋণ বিতরণ করেছে দুটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান। এগুলো হলো, বাংলাদেশ ইনফ্রাস্ট্রাকচার ফিনান্স ফান্ড ও ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি। তৃতীয় অবস্থানে থাকা দ্যা ইউএই-বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট কোম্পানি ঋণ বিতরণ করেছে লক্ষ্যমাত্রার ৪১ দশমিক ৬৭ শতাংশ।