প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ২২:২৪ পিএম
ফাইল ফটো
নির্ধারিত দরের চেয়ে বেশি দামে প্রধান বৈদেশিক মুদ্রা ডলার কেনা-বেচার প্রমাণ পেয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। নির্দেশনা অমান্য করায় ১০ ব্যাংককে শাস্তি দেয়ার পদক্ষেপ শুরু করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি। ব্যাংক কোম্পানি আইন অনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে কেনো ব্যবস্থা নেয়া হবে না? জানতে চেয়ে মঙ্গলবার ব্যাংকগুলোকে চিঠি দেয়া হয় বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মেজবাউল হক।
তিনি বলেন, ‘‘তদন্ত শেষে তাদের বিরুদ্ধে ব্যাংক কোম্পানি আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়ার পদক্ষেপ গ্রহণ শুরু করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।’’
এই তালিকায় দেশি-বিদেশি ও রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাংক রয়েছে। এর আগে গত জুলাই মাসে ১৩টি ব্যাংকের বিরুদ্ধে ডলার দর নিয়ে কারসাজির অভিযোগ পেয়ে অধিকতর তদন্ত করেছিল বাংলাদেশ ব্যাংক।
ওই ১৩টি ব্যাংকের মধ্যে ১০টির বিরুদেধ অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় শাস্তি দেয়ার প্রক্রিয়া শুরু করলো বাংলাদেশ ব্যাংক।
গত জুলাই মাসে অধিকতর তদন্ত শুরু করার সময়ে মেজবাউল হক বলেন, ‘‘ আমরা অভিযোগ পেয়ে তদন্ত শুরু করেছি। তদন্ত শেষে বলা যাবে তারা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতিমালা ভেঙেছে কিনা। তদন্তে প্রাপ্ত ফলাফলের ভিত্তিতে পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে। তখন বিস্তারিত বলা যাবে।’’
ডলারের দর বেশি রাখা হচেছ এমন অভিযোগের পরপরই তা রোধ করতে শক্ত অবস্থানে গিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার। গভর্নরের কড়া নিদের্শ পেয়েই কর্মকর্তারা তদন্তে নামছেন বলে জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একাধিক কর্মকর্তা।
একই অভিযোগে গত বছরের আগস্টে অতিরিক্ত দরে ডলার কেনা-বেচায় দেশি বিদেশি ছয় ব্যাংকের ট্রেজারি বিভাগের প্রধানকে অপসরাণ করেছিল বাংলাদেশ ব্যাংক।
ওই সময়ে ব্র্যাক ব্যাংক, সিটি ব্যাংক, প্রাইম ব্যাংক, ডাচ বাংলা ব্যাংক, সাউথ ইস্ট ব্যাংক এবং স্ট্যান্ডার্ড চাটার্ড ব্যাংকের নাম প্রকাশ হয়েছিল সংবাদ মাধ্যমে।
তাদের কাছ থেকে কৈফিত চেয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। ব্যাখ্যা পেয়ে আইনি সীমাবদ্ধতার কারণে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে এক মাস পরে ট্রেজারি প্রধানদের পুনর্বহাল করার সুযোগ দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। তখন বাংলাদেশ ব্যাংক নির্দেশনা দিয়েছিল, অতিরিক্ত দরে ডলার বিক্রি থেকে প্রাপ্ত মুনাফার অর্ধেক সিএসআর তহবিলে স্থানান্তর করার।
আর ব্যাংকগুলোর কাছ থেকে লিখিতভাবে নেওয়া হয় পরবর্তীতে আইনি সীমাবদ্দতার সুযোগে যেনো ডলারের দর বাড়ানো না হয়।
দায়িত্ব নেওয়ার এক মাস পুরো হওয়ার আগেই ছয় ব্যাংকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া নিয়ে বিষটিকে ব্যাংকারদের ‘অনৈতিক চর্চা’ বলেছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল-আইএমএফ এর পরামর্শে ডলারের বিনিময় হার একাধিক একক দরে নামিয়ে আনতে কাজ করছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
এজন্য গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে পরামর্শ করে ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলারস অ্যাসোসিয়েশন-বাফেদা এবং ব্যাংক নির্বাহীদের সংগঠন-এবিবি ডলারের দর নির্ধারণ করে ব্যাংকগুলোকে জানিয়ে দিচ্ছে। সদস্য ব্যাংকগুলোকে প্রতিদিন সকালে ডলারের দরগুলো জানিয়ে দিচ্ছে বাফেদা।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতিমালা অনুযায়ী, কোন ব্যাংক কী পরিমাণ বিদেশি মুদ্রা সংরক্ষণ করতে পারবে, তার একটি সীমা (এনওপি-নেট ওপেন পজিশন) নির্ধারণ করে দেওয়া আছে।
আগে ব্যাংকের রেগুলেটরি ক্যাপিটালের ২০ শতাংশ পর্যন্ত বিদেশি মুদ্রা সংরক্ষণ করার সুযোগ ছিল। ডলার বাজারের অস্থিরতা কমাতে ২০২২ সালের ১৫ জুলাই তা কমিয়ে ১৫ শতাংশে নামিয়ে আনে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
এই সীমার বেশি ডলার হাতে থাকলে তা কেন্দ্রীয় ব্যাংক বা অন্য কোনো ব্যাংকের কাছে বিক্রি করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে ব্যাংকগুলোর।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, ডলারের সরবরাহ সংকটে কিছু ব্যাংকও সীমার অতিরিক্ত মুদ্রা জমিয়ে রেখে অতিরিক্ত মুনাফা শুরু করে। সুযোগ থাকলেও তা বাজারে না ছেড়ে কৃত্রিমভাবে দর বাড়ানো হয়। আবার কয়েকটি ব্যাংক ডলার সংরক্ষণের তথ্যও গোপন করেছিল আগেরবার।
এবার বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলারস অ্যাসোসিয়েশন-বাফেদা এবং ব্যাংক নির্বাহীদের সংগঠন-এবিবি এর র্নিধারণ করে দেওয়া দরের চেয়ে বেশি দামে ডলার কেনা বেচা করছে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো।