× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

চার বছরে অগ্রগতি মাত্র ৫ শতাংশ

এম আর মাসফি

প্রকাশ : ০৫ নভেম্বর ২০২৩ ১৭:৫২ পিএম

আপডেট : ০৫ নভেম্বর ২০২৩ ১৭:৫৩ পিএম

চার বছরে অগ্রগতি মাত্র ৫ শতাংশ

দেশে কত মানুষ ক্যানসারে আক্রান্ত তার সঠিক তথ্য নেই। তবে ধারণা করা হয়, ২০২০ সালে দেশে ক্যানসার আক্রান্ত রোগী ছিলেন প্রায় ১ লাখ ৫৭ হাজার। তবে গবেষণা প্রতিষ্ঠান গ্লোবোকান বলছে, ২০২০ সালে ১ লাখ ৯ হাজার রোগী মারা গেছেন। সংস্থাটি বিশ্বের ১৮৫টি দেশে ক্যানসার রোগীদের পরিসংখ্যান তৈরি করে।

দেশে ক্যানসার আক্রান্ত রোগীদের মৃত্যুর মিছিল থামাতে ২০১৯ সালে ‘আট বিভাগীয় শহরে পূর্ণাঙ্গ ক্যানসার, হৃদরোগ ও কিডনি চিকিৎসাকেন্দ্র স্থাপন’ শীর্ষক একটি প্রকল্প অনুমোদন হয়। এর কাজ শেষ হওয়ার কথা ২০২২ সালের জুনে। সে সময় কাজ শুরু করতে না পারায় মেয়াদ বাড়ানো হয়েছিল চলতি বছরের জুন পর্যন্ত। কিন্তু তাতেও লাভ হয়নি। চার বছরের প্রকল্পের আর্থিক অগ্রগতি হয়েছে মাত্র ৫ শতাংশ। যদিও বলা হচ্ছে, কাজের ভৌত অগ্রগতি হয়েছে ২০ শতাংশ। প্রকল্পের কাজ শেষ করতে না পেরে আবারও সংশোধনী প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে পরিকল্পনা কমিশনে।

জানা গেছে, দেশে চিকিৎসা না পেয়ে বিদেশ যাওয়া রোগীর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। প্রতি বছর রেকর্ডসংখ্যক রোগী বাংলাদেশ থেকে বিদেশে চিকিৎসা নিতে যান। দেশে চিকিৎসাসেবার ওপর আস্থাহীনতা, ব্যবস্থাপনায় সমন্বয়হীনতা, প্রযুক্তিগত দুর্বলতা এবং চিকিৎসাসেবার অপ্রতুলতাকেই এজন্য দায়ী করছেন সংশ্লিষ্টরা। 

তারা বলছেন, বাংলাদেশে সব ধরনের রোগের চিকিৎসা সুবিধা থাকলেও চিকিৎসাসেবার ক্ষেত্রটি পুরোপুরি রোগীবান্ধব হয়ে ওঠেনি। চিকিৎসাসেবায় নিয়োজিত লোকজন এবং রোগীদের মধ্যে অনেক মানসিক দূরত্ব বিরাজ করে। দেশি চিকিৎসক ও চিকিৎসা সংক্রান্ত পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রতি রোগীদের আস্থার ঘাটতি রয়েছে। তাই বিদেশে চিকিৎসা নেওয়াটাকেই বিকল্প হিসেবে বেছে নেন অনেক বাংলাদেশি রোগী।

মাহমুদ হাসান নামে ক্যানসার আক্রান্ত এক রোগীর স্বজন জানিয়েছেন, কিছুদিন পরপরই চিকিৎসার জন্য ভারত নিয়ে যেতে হয়। দেশের ক্যানসার হাসপাতালে ১৮ বার ভর্তির চেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে ভাগ্যের হাতে ছেড়ে দিয়েছিলেন। পরে সম্পদ বিক্রি করে ভারতে গিয়ে তার ভাইয়ের চিকিৎসা করাতে হচ্ছে।

এমন একটি উদ্যোগের কথা শুনে তিনি বলেন, উদ্যোগ থাকার পরও যদি কাজের অগ্রগতি না হয়, তাহলে বুঝতে হবে প্রকল্প পরিচালকের অসৎ উদ্দেশ্য রয়েছে। কারণ স্বাভাবিকভাবে দেশে চিকিৎসা না পেলে হয় বিনা চিকিৎসায় মারা যেতে হবে নতুবা বিদেশে চিকিৎসা নিতে হবে।

প্রকল্প পরিচালক ডা. এস এম মাসুদ আলম প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, আমি নতুন দায়িত্ব নিয়েছি। প্রকল্পে ধীরগতি ছিল, এ কারণে আগের প্রকল্প পরিচালককে পরিবর্তন করে আমাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। কী কারণে এত ধীরগতি তার পুরোটা আমি এখনও জানি না। তবে যতটুকু বুঝেছি প্রকল্প অনুমোদনের পরপরই করোনা শুরু হওয়ায় কাজ করা সম্ভব হয়নি। ধীরগতির মূল কারণ ক্যানসার  হাসপাতালের জন্য ডাবল বেজমেন্ট বাঙ্কার নির্মাণের পাইলিংয়ে বেশি সময় লেগেছে। 

তিনি বলেন, এটা একটা জটিল প্রকল্প। প্রথমে শুধু ক্যানসার  হাসপাতাল ছিল। পরবর্তী সময়ে কিডনি ও হৃদরোগ যোগ হওয়ায় মাঝপথে আটকে গেছে। এ ছাড়া মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার কারণে সংশোধনীর কাজ করা লাগছে। যদি প্রথমেই তিনটি কাজ একসঙ্গে শুরু করা হতো এবং বারবার পরিবর্তন না করা লাগত, তাহলে এমন জটিলতা হতো না। একসঙ্গেই কাজ করা যেত এবং সহজ হতো। এসব প্রক্রিয়াগত কারণে অনেক সময় লেগেছে। এটার কারণে মূলত কাজে গতি পায়নি। দ্রুত কাজ শেষ করার চেষ্টা করা হচ্ছে। এখন যেহেতু বেজমেন্ট উঠে গেছে, আশা করি বর্ধিত মেয়াদের মধ্যে শেষ করা সম্ভব হবে। 

ব্যয় বাড়ার বিষয়ে প্রকল্প পরিচালক বলেন, একই প্রকল্পের আওতায় নতুন করে কিডনি ও হৃদরোগ হাসপাতাল যুক্ত হওয়ায় পরিধি বৃদ্ধি পেয়েছে। আগের ক্যানসার হাসপাতালের সঙ্গে নতুন যুক্ত হওয়া দুই হাসপাতালের যন্ত্রপাতি কিনতে হবে। এ ছাড়া পূর্ত কাজের রেট শিডিউল পরিবর্তন হওয়ার কারণে সবকিছুর দাম বেড়েছে। এ কারণে অতিরিক্ত ব্যয় প্রস্তাব করা হয়েছে। 

তিনি বলেন, সংশোধনী প্রস্তাবে প্রায় ১ হাজার ২৯০ কোটি টাকা বাড়তে পারে। এখন তিনটা হাসপাতালের কাজ করতে হবে। একটাতে ২ হাজার ২০০ কোটির টাকার মতো ছিল, আরও দুটোতে ২ হাজার ২০০ কোটি টাকা করে লাগত। সেটাকে একীভূত করে ৩ হাজার ৫৭০ কোটি টাকা হচ্ছে। এখানে তো সরকারের টাকা সাশ্রয়ী হচ্ছে।

পরিকল্পনা কমিশনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, মূল প্রকল্পটি সারা দেশে ক্যানসার রোগে আক্রান্ত বিপুল জনগোষ্ঠীকে চিকিৎসাসেবার আওতায় আনার লক্ষ্যে আটটি বিভাগীয় শহরে ১০০ শয্যাবিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ ক্যানসার চিকিৎসাকেন্দ্র স্থাপনের জন্য অনুমোদিত হলেও পরবর্তী সময়ে কিডনি ও ডায়ালাইসিস সেন্টার এবং হৃদরোগ ইউনিট সংযুক্ত করে হাসপাতালটিকে ৪৬০ শয্যায় উন্নীত করা হয়। এতে নকশা পরিবর্তন হওয়ায় ফোর এরিয়া ও শয্যাসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে নির্মাণ ও আনুষঙ্গিক ব্যয় বৃদ্ধিপূর্বক প্রকল্পটির প্রথম সংশোধন প্রস্তাব করা হয়েছে। 

পরিকল্পনা কমিশনের যুগ্ম প্রধান (স্বাস্থ্য) মাকসুদা হোসেন বলেন, বর্তমানে প্রকল্পের আওতাধীন ক্যানসার চিকিৎসাকেন্দ্রের বেডসংখ্যা ১০০ থেকে বাড়িয়ে ১৮২, কিডনি ও ডায়ালাইসিস সেন্টারের জন্য ১৫৬ এবং হৃদরোগ সেন্টারের জন্য ১১২ বেডসহ ঢাকা বিভাগের হাসপাতালে ৩৮৬টি এবং অবশিষ্ট সাতটি বিভাগের হাসপাতালে ৪৫০টি করে বেডসহ মোট ৩ হাজার ৫৩৪ বেডের সংকুলানসহ ভবনগুলোকে পুনর্বিন্যস্ত করা হবে। 

তিনি আরও বলেন, প্রকল্পের কলেবর বৃদ্ধি ও গণপূর্ত অধিদপ্তরের রেট শিডিউল পরিবর্তিত (শিডিউল-২০২২) হওয়ায় নির্মাণকাজ, যন্ত্রপাতি ও আসবাবপত্রের পরিমাণ ও ব্যয় বৃদ্ধি এবং হৃদরোগ ও কিডনি সেন্টারের অন্তর্ভুক্তিতে প্রকল্পের নাম পরিবর্তন করে মোট ৩ হাজার ৫৭১ কোটি টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে প্রকল্পটির প্রথম সংশোধন প্রস্তাব করা হয়েছে। সংশোধিত প্রকল্পের ব্যয় মূল অনুমোদিত ব্যয়ের চেয়ে ১ হাজার ১৮২ কোটি টাকা বা ৪৮ দশমিক ৫১ শতাংশ বেশি। মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত।

যুগ্ম প্রধান আরও জানান, প্রকল্পের ক্রমপুঞ্জিত আর্থিক অগ্রগতি ১১৭ কোটি টাকা বা ৪ দশমিক ৯০ শতাংশ এবং মোট ভৌত অগ্রগতি প্রায় ২০ শতাংশ। 

প্রকল্পটির পিইসি সভায় প্রকল্প পরিচালক বলেন, আটটি বিভাগেই ভবন নির্মাণকাজ ইতোমধ্যে শুরু করা হয়েছে। নকশা পরিবর্তন হওয়ায় প্রতিটি হাসপাতাল ভবনে প্রায় ৪২ হাজার বর্গফুট ফ্লোর এরিয়া বৃদ্ধি পাওয়ায় আরডিপিপিতে মোট ফ্লোর এরিয়া মূল প্রকল্পের চেয়ে ২০ শতাংশ এবং নির্মাণ ব্যয় ২০ শতাংশ বেড়েছে। 

প্রকল্প পরিচালক আরও বলেন, বাস্তব অগ্রগতির মধ্যে সব হাসপাতালের পাইল ড্রাইভিং সম্পন্ন হয়েছে এবং বর্তমানে বেজমেন্ট-১/২-এর ছাদ ঢালাই, লিনাক রুমের ছাদ ঢালাই, স্টিল ব্রেসিং ও মাটি কাটার কাজ চলমান আছে। এ ছাড়া রাজস্ব খাতের কিছু অঙ্গের বাস্তবায়ন কাজও শুরু করা হয়েছে। 

প্রকল্পের কাজে সন্তুষ্ট নয় পরিকল্পনা কমিশনও। পিইসি সভায় কমিশন থেকে জানানো হয় , প্রকল্প অনুমোদনের পর প্রায় চার বছর সময় অতিক্রান্ত হলেও আশাব্যঞ্জক অগ্রগতি অর্জিত হয়নি।


শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা