প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৭ ডিসেম্বর ২০২৩ ২১:৩৭ পিএম
রাজধানীর লেকশোর হোটেলে ‘অ্যানুয়াল বিআইডিএস কনফারেন্স অন ডেভেলপমেন্ট’ শীর্ষক সম্মেলনের উদ্বোধ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন পরিকল্পামন্ত্রী এম এ মান্নান। প্রবা ফটো
মানুষের কষ্ট হলেও জাতীয় নির্বাচনের পর রাজস্ব আদায়ে কঠোর উদ্যোগ নেওয়ার তাগিদ দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, বাংলাদেশের জিডিপির তুলনায় রাজস্ব আদায় অত্যন্ত কম। জিডিপির মাত্র ৭ থেকে ৮ শতাংশ রাজস্ব আদায়ের হার নিয়ে বাংলাদেশ কীভাবে উন্নত দেশে যাওয়ার স্বপ্ন দেখে, সেটিও বড় প্রশ্ন। সেই সঙ্গে দেশের অর্থনীতিতে চ্যালেঞ্জ, অনিশ্চয়তা এবং শঙ্কাও আছে। কেননা স্যাংশনের মতো ঘটনা ঘটলে রপ্তানিতে বড় ধরনের শঙ্কার সৃষ্টি হবে। এসব বিষয় মাথায় রেখেই ভবিষ্যতে যে সরকারই আসুক না কেন কার্যকর পদক্ষেপের তাগিদ দেওয়া হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৭ ডিসেম্বর) রাজধানীর লেকশোর হোটেলে ‘অ্যানুয়াল বিআইডিএস কনফারেন্স অন ডেভেলপমেন্ট’ শীর্ষক সম্মেলনে বক্তারা এ তাগিদ দেন। এ সম্মেলনের আয়োজন করে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বিআইডিএস)। আগামী শনিবার পর্যন্ত তিন দিনের এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে।
সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পামন্ত্রী এম এ মান্নান। বিশেষ অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর সাবেক অর্থনৈতিক বিষয়ক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান। বিআইডিএসের মহাপরিচালক ড. বিনায়ক সেনের সভাপতিত্বে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ইউকের অলস্টার ইউনিভার্সিটির প্রফেসর এস আর ওসমানি। এ ছাড়া দিনব্যাপী ছয়টি সেশনে আটটি পেপার উপস্থাপন করা হয়।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, গরিব মানুষ সুশাসন ও ভোটের অধিকার নিয়ে চিন্তিত নয়। তারা চায় উন্নয়ন ও ভাতের নিশ্চয়তা। সুশাসন ও ভোটাধিকার সুশীল সমাজের মাথাব্যথার কারণ হলেও সাধারণ মানুষের নয়। তারা টিউবওয়েল চায়, ভালো টয়লেট চায়, কমিউনিটি ক্লিনিকে ভালো ভালো ওষুধ চায়। ছেলেমেয়েরা স্কুলে যাতে যেতে পারে, তারা সেগুলোই চায়। তাদের চাওয়া আর নাগরিক সমাজের চাওয়ার মধ্যে ব্যাপক ফারাক।
তিনি আরও বলেন, মাহাথির মোহাম্মদ ও সিঙ্গাপুরের লিকুয়ান ইউ দীর্ঘদিন ক্ষমতায় ছিলেন। তারা উন্নয়নের ক্ষেত্রে রোল মডেল তৈরি করে গেছেন। সেখানে তো কোনো প্রশ্ন নেই। কিন্তু বাংলাদেশে বেশি দিন ক্ষমতায় থাকলে বলা হয় স্বৈরশাসক। কিন্তু প্রশ্ন হলো, উন্নয়নের দরকার আছে কি না। দীর্ঘদিন একটি রাজনৈাতক দল সরকারে থাকায় মানুষের উন্নয়নে কাজ করছে কি না।
প্রধানমন্ত্রীর সাবেক অর্থনৈতিক উপদেষ্টা মসিউর রহমান বলেন, ‘নির্বাচন দিয়ে একটি দেশের সবকিছুই বিচার করা যায় না। বিষয়টি হলো সমাজের একটি বড় পরিবর্তনের জন্য কিছু করলে সেটি মেনে নেওয়ার মানসিকতা থাকতে হবে। উন্নত দেশে সবাই পরিবর্তনকে সাদরে গ্রহণ করে। আমাদের মতো দেশে পরিবর্তনকে মেনে নিতে কষ্ট হয়। ফলে সহিংস ঘটনা ঘটে। অর্থনীতিতে নানা পরিবর্তন আসে, যা সমাজ বা জনগণকে মেনে নিতে হয়। যখনই সমাজ এ পরিবর্তন মানতে চায় না তখন অস্থিতিশীল অবস্থা তৈরি হয়। অথচ পরিবর্তন ছাড়া উন্নয়ন সম্ভব নয়।’
প্রফেসর এস আর ওসমানি বলেন, ‘বিচার ব্যবস্থা ও স্বাধীনতা একে অপরের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। একটিকে বাদ দিয়ে আরেরকটি নিশ্চিত করা অসম্ভব। আমরা যেহেতু দরিদ্র দেশ। তাই আমরা উন্নয়নকে বেশি প্রাধান্য দিচ্ছি। বিচার ও স্বাধীনতাকে পরের জন্য রেখে দিচ্ছি। সব মানুষকে সমানভাবে মূল্যায়ন করতে হবে। আমরা যদি সব মানুষকে সমানভাবে মূল্যায়ন না করি তাহলে সমাজে বৈষম্য বাড়বে। যা অর্থনৈতিক বৈষম্যও বাড়াবে। এই বৈষম্য কমাতে আমাদের কাঠামোগত ও মানবসম্পদ উন্নয়নে বিনিয়োগ দরকার।’
বিআইডিএসের মহাপরিচালক ড. বিনায়ক সেন বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেছিলেন গণতন্ত্র না থাকলে মানুষের মন পাথরের মতো হয়ে যায়। এজন্য গণতন্ত্র গুরুত্বপূর্ণ। এখন বিশ্বব্যাপী আয় বৈষম্য বাড়ছে। এখন ভাবা দরকার অর্থনৈতিক, সামাজিক ও নৈতিক বিষয়ে। জনগণ আগে উন্নয়ন চায় নাকি গণতন্ত্র চায় সেটির মতামত নেওয়া দরকার।’
অপর একটি অধিবেশনে পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেছেন, সামষ্টিক অর্থনীতির ক্ষেত্রে বাংলাদেশ বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করছে। এগুলো হলোÑ মুদ্রাস্ফীতি কমিয়ে আনা, বিনিময়হারের স্থিতিশীলতা পুনরুদ্ধার করা, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভকে অনেক উচ্চস্তরে সংরক্ষণ এবং পুনর্গঠন করা, রাজস্ব আদায় বাড়ানো এবং ব্যাংকিং খাতের সংস্কার করা।
তিনি বলেন, স্বল্পমেয়াদি সমস্যাগুলো দীর্ঘমেয়াদি কাঠামোগত সমস্যা তৈরি করছে। যেমন অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ ব্যাংকিং খাত এবং রাজস্ব প্রশাসনের দুর্বল অবস্থার কারণে জটিল হচ্ছে আর্থিক খাতের সমস্য। আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের আগে খুব বেশি কিছু করা না গেলেও প্রস্তুতি নিতে হবে। মানুষের কষ্ট হলেও রাজস্ব আদায় বাড়াতে কঠোর উদ্যোগ নিতে হবে। এ ছাড়া বাজারভিত্তিক সুদের হার নিশ্চিত করতে হবে। এ অধিবেশনের সভাপতি বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ব্যাংকিং খাত উল্টো রথে আছে। যেমন ব্যাংকের পরিচালক একই পরিবারের একাধিক ব্যক্তি হতে পারবেন, এটি ঠিক নয়। এ ছাড়া সার্বিক অর্থনীতিতে চ্যালেঞ্জ, অনিশ্চয়তা ও শঙ্কাও আছে। শঙ্কার অন্যতম কারণ হলো যদি স্যাংশনের মতো ঘটনা ঘটে তাহলে রপ্তানিতে ব্যাপক শঙ্কা তৈরি হবে।’