× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

দ্রব্যমূল্য

বাজারের উত্তাপ থেকে স্বস্তি চায় ভোক্তারা

প্রবা প্রতিবেদক

প্রকাশ : ০১ জানুয়ারি ২০২৪ ১৪:৫৫ পিএম

আপডেট : ০১ জানুয়ারি ২০২৪ ১৬:২৩ পিএম

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

সদ্যসমাপ্ত ২০২৩ সালের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সাধারণ মানুষকে নাকানিচুবানি খাইয়েছে পণ্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি। বাড়তি দামের চাপে দেশের জনগোষ্ঠীর বিশাল অংশ কষ্টের মধ্যে পড়েছে, যাদের বেশিরভাগই সীমিত আয়ের মানুষ। বছরজুড়ে দাম বাড়ার পরিধিটা বেশ বড় হওয়ায় জীবনযাপন কঠিন থেকে কঠিনতর হয়। খাদ্য মূল্যস্ফীতি ১২ বছরের রেকর্ড ভেঙেছে। 

বছরটি শুরু হয়েছিল ব্রয়লার মুরগি, ফার্মের ডিম ও আলুর দাম বাড়ার মধ্য দিয়ে। শেষ হয় আলুর দাম চড়া নিয়ে। সারা বছরই পেঁয়াজ, কাঁচামরিচ, ডাব, গরুর মাংস, মসুর ডাল, তেল ও চিনিসহ প্রায় সব পণ্যের দাম ছিল চড়া। ফলে সারা বছরই ক্রেতাদের অভিযোগের তীর ছিল বাজার সিন্ডিকেটের দিকে। তবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব নয় বলে বক্তব্য দিয়ে জাতীয় সংসদের তোপের মুখে পড়েন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। আর দাম কমায় বছরের শেষে গরুর মাংসের বাজারে কিছুটা স্বস্তি ফিরে আসে। 

এদিকে বাজার বিশ্লেষকরা বিগত বছরের নানামুখী সংকটের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে সংশ্লিষ্ট সবাইকে নতুন বছরে যাতে তার পুনরাবৃত্তি না হয়, সে বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদেক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তারা ভোক্তাদের মাঝে স্বস্তি ফিরিয়ে আনতে বাজার ব্যবস্থাপনায় আরও মনোযোগের তাগিদ দিয়েছেন। 

সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘পণ্যের দাম বৃদ্ধির ক্ষেত্রে ২০২৩ সাল ছিল সাম্প্রতিক বছরগুলোর মধ্যে সবচেয়ে ব্যয়বহুল। অব্যাহত মূল্যবৃদ্ধির কারণে সাধারণ মানুষের আয় কমার সঙ্গে কমেছে ক্রয়ক্ষমতা। নিম্ন ও নির্দিষ্ট আয়ের মানুষকে চাল-ডাল থেকে শুরু করে সব পণ্য কেনার ক্ষেত্রে কাটছাঁট করতে হয়েছে। ডিমের দাম বেড়ে যাওয়ায় দরিদ্র মানুষকে আমিষ খাওয়া ছেড়ে দিতে হয়েছে বা হচ্ছে। গরু ও ব্রয়লার মুরগির দাম বেশি থাকায় তারা আমিষের বদলে শর্করাজাতীয় খাদ্যের দিকে ঝুঁকেছে।’ 

তিনি বলেন, ‘বিশ্ব পরিস্থিতির কারণে খাদ্যমূল্য বেশি ছিল এ বাস্তবতা মেনে নিলেও সরকারের বাজার অব্যবস্থাপনা বিশেষভাবে দায়ী। কেননা সরকার বড় বড় ব্যবসায়ীদের নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি। সবচেয়ে বেশি বেড়েছে আমদানি করা পণ্যের দাম। পণ্য আমদানি করে যথাসময়ে তারা বাজারজাত করেনি। সরকার এসব সিন্ডিকেটে হাত দেয়নি। যদিও নিম্নবিত্ত মানুষের জন্য তেল, পেঁয়াজ, মসুর ডাল কম মূল্যে দেওয়া হয়েছে। তারপরও সেগুলো শুধু ঢাকা শহরকেন্দ্রিক ছিল। গ্রামপর্যায়ে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) পণ্য সরবরাহ করা হয়েছে। সেখানে এসব বণ্টনে রাজনৈতিক বিবেচনা থাকায় প্রকৃত লোকেরা খুব কমই পেয়েছে।’ 

তাই নতুন বছরের করণীয় জানিয়ে ড. গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, ‘নতুন বছরে সরকারের বাজার ব্যবস্থাপনায় আরও মনোযোগ দিতে হবে। আর অভ্যন্তরীণ উৎপাদন বৃদ্ধিতে রাজনৈতিক অঙ্গীকারকে সুচারুভাবে দেখতে হবে। তাছাড়া উৎপাদন বাড়াতে সার্বিকভাবে সহায়তা করতে হবে।’ 

পণ্যমূল্য বেশি থাকায় পুরো বছরটিই ভোক্তার খুব কষ্টে কেটেছে বলে মন্তব্য করেছেন কনজ্যুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান। তিনি প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘নিম্ন ও মধ্যবিত্ত মানুষ ধার-কর্জ করে কোনোমতে জীবনযাপন করেছে। তারা প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে অর্থ ব্যয় করতে পারেনি। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পোশাক-পরিচ্ছদসহ যেখানে সম্ভব কাটছাঁট করে খাবারের পেছনে ব্যয় করে কোনোভাবে বেঁচে থাকার সংগ্রাম করেছে। বাজারে যেখানে মানুষ কেনাকাটা করেছে, সেখানে মূল্যস্ফীতি আরও বেশি ছিল।’ 

তিনি বলেন, ‘মূল্যস্ফীতি কমাতে এক কোটি পরিবারকে সাশ্রয়মূল্যে কিছু পণ্য সরবরাহ, ট্রাকসেল ও কিছু পণ্যের মূল্য নির্ধারণ ও বাজার অভিযানসহ বেশকিছু পদক্ষেপ নিলেও লাগাম টানা কার্যকর হয়নি। মূল্যস্ফীতির বর্তমান অবস্থা নিউমোনিয়ার সঙ্গে তুলনীয়, আর সরকারের পদক্ষেপ সর্দি-জ্বরের ওষুধ। মুদ্রানীতি, সরকারের আয়-ব্যয় ব্যবস্থাপনা করে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা হলেও আমাদের দেশে তা করা হয়নি। বছর শেষে সুদের যে রেট করা হয়েছে, তা বাজারভিত্তিক করা হয়নি।’ 

বছরের উল্লেখযোগ্য ঘটনা রেকর্ড খাদ্য মূল্যস্ফীতি

চলতি বছরে খাদ্যদ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধিতে গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে শুরু হওয়া রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণকে সামনে নিয়ে আসা হয় বারবার। তবে এ বছরের ৭ অক্টোবর থেকে ইসরায়েল-গাজার (ফিলিস্তিন) সংঘাতও স্থান পায়। এসব যুদ্ধের ফলে তেলের দাম বেড়ে যাওয়ার অজুহাত দাঁড় করানো হয়। এ বছর খাদ্য মূল্যস্ফীতি গত প্রায় ১২ বছরের ইতিহাসকে ভেঙে দেয়। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) জানুয়ারিতে জানিয়েছিল দেশে সার্বিক মূল্যস্ফীতি ৮ দশমিক ৫৭ শতাংশ ও খাদ্যের মূল্যস্ফীতি ৯ দশমিক ৮৪ শতাংশ। অক্টোবরে ৩ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে খাদ্য মূল্যস্ফীতি বেড়ে দাঁড়ায় ১২ দশমিক ৫৬ শতাংশ, যা গত ১১ বছর ৯ মাসের মধ্যে ছিল সর্বোচ্চ। তবে সারা বছরই প্রায় সময় সার্বিক মূল্যস্ফীতি ৯ শতাংশের বেশি ছিল। মে মাসের সার্বিক মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক ৯৪ শতাংশ, যা ইতঃপূর্বে ১৩৪ মাস বা ১১ বছর ২ মাসের মধ্যে ছিল সর্বোচ্চ। 

অস্থির ছিল ডিম ও মুরগির বাজার

গেল বছর মুরগির দামের সঙ্গে দৌড় প্রতিযোগিতায় নামে ফার্মের মুরগির ডিম। বছরের শুরুতে হালিপ্রতি ডিমের দাম ৩৫-৩৬ টাকা থাকলেও এটি আগস্টে গিয়ে ঠেকে ৬৫ থেকে ৭০ টাকায়। ডিমের সঙ্গে দাম বাড়ে আলু ও পেঁয়াজের। আলুর কেজি ৫০ টাকা ও পেঁয়াজের ৬০ টাকা উঠে গেলে ডিম, আলু, পেঁয়াজ, চিনি ও সয়াবিন তেলের দাম বেঁধে দেয় সরকার। গত ১৪ সেপ্টেম্বর প্রতি পিস ডিম খামারে সাড়ে ১০ টাকা ও খুচরায় ১২ টাকা, প্রতি কেজি হল্যান্ড আলু হিমাগার পর্যায়ে ২৬-২৭ টাকা ও খুচরায় ৩৫-৩৬ টাকা ও দেশি পেঁয়াজ খুচরায় ৬৪-৬৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়। পাশাপাশি খোলা চিনি ১৩০ টাকা কেজি ও সয়াবিন তেল প্রতি লিটার ১৬৯ টাকা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। কিন্তু সরকারের বেঁধে দেওয়া দামে দেশের কোথাও আলু, পেঁয়াজ ও ডিমসহ কোনো পণ্যই বিক্রি হয়নি। 

ডিমের বাজার নিয়ন্ত্রণে আনতে ১৮ ও ২১ সেপ্টেম্বর এবং ৮ অক্টোবর তিন দফায় ১৫টি প্রতিষ্ঠানকে ১৫ কোটি ডিম আমদানির অনুমতি দেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। ডিমের বাজার কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রণে না আসায় ১৬ অক্টোবর থেকে রাজধানীর ৩০টি পয়েন্টে ৪৮ টাকা হালিতে প্রতিদিন ডিম বিক্রি শুরু করে বাংলাদেশ পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশন (বিপিএ)। তাদের কার্যক্রমের কারণে অল্প কয়েকদিনের মধ্যে ডিমের দাম কমে আসে ৪০ টাকা হালিতে। এরই মধ্যে অনুমতি পাওয়া মাত্র একটি প্রতিষ্ঠান ৬২ হাজার ডিম আমদানি করে। বাকি কোনো প্রতিষ্ঠান ডিম আমদানি করেনি। এ ব্যাপারে বিপিএ সভাপতি সুমন হাওলাদার বলেন, আমরা সরাসরি প্রান্তিক খামারিদের কাছ থেকে দৈনিক ৪০-৪৫ হাজার ডিম এনে ট্রাকের মাধ্যমে পর্যায়ক্রমে ৩০টি পয়েন্টে বিক্রি করেছি। এতে দাম কমেছে। 

এলোমেলো আলুর বাজার

দেশে ভাতের পরে সবচেয়ে বেশি খাওয়া হয় আলু। ২০২২ সালের ডিসেম্বরে আলুর কেজি ছিল ১৬-২২ টাকা। সেটি জানুয়ারিতে ২৫-৩০ টাকা হয়ে যায়। জুলাই আগস্টে দাম ওঠে ৫০ টাকা কেজি। আলুর বাজারের এলোমেলো দামের কারণে মহাবিপদে পড়ে নিম্ন আয়ের মানুষ। আলুর বাজার ঠিক রাখতে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর হিমাগার মালিক ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠকসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় গিয়ে হিমাগার পরিদর্শন ও আলু বিক্রির উদ্যোগ নিলেও বাজারের অবস্থা অস্থিরই থাকে। বেশি দামে আলু বিক্রি করায় কয়েকশ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করা হয় অর্ধকোটি টাকার বেশি। তবু বাজার অস্থিরই থাকে। বাধ্য হয়ে সরকার ৩০ অক্টোবর আলু আমদানির অনুমতি দেয়। ২ নভেম্বর দেশে আমদানির আলু আসতে শুরু করায় দাম কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আসে। তবে বছরের শেষ মাস ডিসেম্বরে পুরোনো আলুর দাম আবার বেড়ে ৮০ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়। বাজারে নতুন আলুর সরবরাহ ঘাটতি দামের আগুনে ঘি ঢেলে দেয়।

পেঁয়াজের ঝাঁজে চোখে জল

জানুয়ারি মাসে দেশি পেঁয়াজের দাম ছিল ৩৫ থেকে ৪০ টাকা ও আমদানি করা ভারতীয় পেঁয়াজ ৪০ থেকে ৪৫ টাকা কেজি। ফেব্রুয়ারিতে কমে দেশি পেঁয়াজ ২৫ থেকে ৩৫ ও ভারতীয় পেঁয়াজ ৩০ থেকে ৪০ টাকায় নেমে আসে। এপ্রিলে দেশি পেঁয়াজ ৪৫ থেকে ৫৫ ও ভারতীয় ৪৫ থেকে ৫৫ টাকা হয়। মে মাসে সেই পেঁয়াজ ৭০ থেকে ৭৫ ও ৭৫ থেকে ৮০ টাকায় উঠে যায়। ভারত ২৮ অক্টোবর থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রতি টন পেঁয়াজের রপ্তানিমূল্য ন্যূনতম ৮০০ ডলারে বেঁধে দেওয়া ও ৮ ডিসেম্বর থেকে ২০২৪ সালের মার্চ পর্যন্ত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ ঘোষণা করায় এক দিনের ব্যবধানে পণ্যটির দাম বেড়ে দাঁড়ায় ২২০ থেকে ২৫০ টাকা কেজি। পেঁয়াজের এ অস্বাভাবিক ঝাঁজে চোখে জল ঝরে ক্রেতাদের। অবশ্য বছর শেষ হয়েছে দেশি পেঁয়াজের কেজি ১২০ টাকায় নেমে। 

বেড়েছিল কাঁচা মরিচের দাম

গত জানুযারিতে যে কাঁচা মরিচের কেজি ছিল ৪০ থেকে ৫০ টাকা কেজি। মে মাসে তা ৮০ থেকে ১০০ টাকায় ওঠে। এমনকি জুনে সেই মরিচের দাম সবকিছু ছাড়িয়ে ৭০০ টাকা কেজি পর্যন্ত দামে কিনতে হয় ক্রেতাদের। এসব পণ্যের পাশাপাশি মাছের বাজারও ছিল অস্থির। তেলাপিয়া ও পাঙাশের মতো মাছের দামও ২২০ টাকা কেজির বেশি। অন্যান্য মাছের দাম ছিল আরও চড়া। হাত দেওয়া যায়নি ইলিশের গায়ে। প্রতি কেজি ইলিশের দাম ছিল ৯০০ থেকে ২ হাজার টাকার ওপরে।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা