× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

সুফল নেই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনার

হুমায়ুন মাসুদ, চট্টগ্রাম

প্রকাশ : ২৬ জানুয়ারি ২০২৪ ০০:৩৪ এএম

আপডেট : ২৬ জানুয়ারি ২০২৪ ১০:৫৬ এএম

বাংলাদেশ ব্যাংক। ফাইল ফটো

বাংলাদেশ ব্যাংক। ফাইল ফটো

রমজানে পণ্য সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে খেজুর, ছোলা, চিনি, মসলাসহ আটটি পণ্য বাকিতে আমদানি করার সুযোগ দিয়ে সার্কুলার জারি করে বাংলাদেশ ব্যাংক। গত ১১ জানুয়ারি সার্কুলারটি জারি করলেও এর সুযোগ নিতে পারছে না আমদানিকারকরা। উল্টো আগের মতো শতভাগ মার্জিন পরিশোধ করেই ব্যবসায়ীদের পণ্য আমদানি করতে হচ্ছে। 

আমদানিকারকরা জানিয়েছেন, ডলার সংকটের কারণে এখনও তারা চাহিদা অনুযায়ী এলসি বা ঋণপত্র খুলতে পারছেন না। এখন যেসব এলসি খোলা হচ্ছে সেগুলো শতভাগ মার্জিন দিয়েই খুলতে হচ্ছে। তাই রমজান সামনে রেখে তার দুই মাস আগে যে পরিমাণ পণ্য অমদানি হয়, এবার তা হচ্ছে না। তাই বাজারে রমজানের পণ্য বিশেষ করে খেজুর, মসলার সংকট তৈরি হতে পারে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে খাতুনগঞ্জের মসলা আমদানিকারক আরাফাত রুবাই প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘রমজানের পণ্য সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে ছোলা, তেল, মসলা আমদানিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক একটি নির্দেশনা জারি করে। কিন্তু আমরা ওই নির্দেশনার কোনো সুফল পাচ্ছি না। আমাদেরকে শতভাগ মার্জিন দিয়ে এলসি করতে হচ্ছে। শতভাগ মার্জিন দিয়ে এলসি খোলার কারণে রমজান ঘিরে পণ্য আমদানিও বাড়ছে না। পণ্য আমদানি আগের মতোই রয়েছে।’

মার্চ মাসের মাঝামাঝিতে শুরু হতে যাচ্ছে মুসলিমদের গুরুত্বপূর্ণ মাস রমজান। এ সময়ে ছোলা, চিনি, তেল, ডাল, খেজুর, মসলাসহ কিছু নির্দিষ্ট পণ্যের চাহিদা বেড়ে যায়। চাহিদা অনুযায়ী ওইসব পণ্য আমদানি করা হলে তখন বাজারে এসব নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সরবরাহে ঘাটতি দেখা দেয়। যে কারণে রমজানে এসব পণ্যের বাজার অস্থির হয়ে ওঠে, বেড়ে যায় দাম। রমজানে যাতে নিত্য প্রয়োজনীয় এসব পণ্যের সরবরাহ ঘাটতি দেখা না দেয় সেজন্য গত ১১ জানুয়ারি বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রা ও নীতি বিভাগ থেকে একটি সার্কুলার জারি করা হয়। 

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনায় বলা হয়েছে, ৯০ দিনের সাপ্লায়ার্স বা বায়ার্স ক্রেডিটের আওতায় ভোজ্য তেল, ছোলা, ডাল, মশুর ডাল, পেঁয়াজ, মসলা, খেজুর আমদানি করা যাবে। এই সুবিধা আগামী ৩১ মার্চ পর্যন্ত থাকবে।

কিন্তু বাস্তবে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, রমজানের পণ্য সরবরাহ বাড়াতে বাংলাদেশ ব্যাংক যেই নির্দেশনা দিয়েছে সেটি পাচ্ছেন না আমদানিকারকরা। শতভাগ মার্জিন দিয়ে তাদের এলসি খুলতে হচ্ছে। শুধু তাই নয়, এলসির পেমেন্ট দেওয়ার সময় ব্যাংকভেদে ডলারের বেশি মূল্য পরিশোধ করতে হচ্ছে। পেমেন্টের সময় নির্ধারিত রেটের চেয়ে সর্বোচ্চ ১০ টাকা পর্যন্ত বেশি নিচ্ছে কিছু কিছু ব্যাংক। অন্যদিকে ডলার সংকটে চাহিদামতো এলসি খুলতে পারছেন না ব্যবসায়ীরা। চাহিদা অনুযায়ী এলসি খুলতে না পারলে রমজানের পণ্য আমদানি কমে যাবে। এতে বাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, রমজানের বাকি আর দেড় মাস। অন্যান্য সময় এই সময়ে রমজানের প্রচুর পণ্য আমদানি হয় কিন্তু এবার সে অনুযায়ী আমদানি হচ্ছে না। তাই বাজারে এসব পণ্যের সংকট তৈরি হতে পারে। 

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, দেশে খেজুরের বার্ষিক চাহিদা ৯০ হাজার থেকে এক লাখ মেট্রিক টন। যার পুরোটাই বিদেশ থেকে আমদানি করা হয়। এর মধ্যে রমজানে খেজুরের চাহিদা থাকে ৪০ থেকে ৫০ হাজার মেট্রিক টন। আগে রমজানকে ঘিরে আগেই চাহিদা অনুযায়ী খেজুর আমদানি করতেন ব্যবসায়ীরা। কিন্তু এবার তার তিন ভাগের এক ভাগও আমদানি করা হয়নি। 

খেজুর আমদানির তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে খেজুর আমদানি হয়েছে মাত্র ৬ হাজার ৩৬৪ মেট্রিক টন। সর্বশেষ ডিসেম্বর মাসে খেজুর আমদানি বেড়েছে। ওই মাসে খেজুর আমদানি হয়েছে ৬ হাজার ১৬ মেট্রিক টন। চলতি মাসের গত ২০ দিনে আমদানি হয়েছে ৬১০ মেট্রিক টন। 

গত অর্থবছরের তুলনায় মশুর ডাল আমদানিও কমেছে। চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে গত বছর মশুর ডাল আমদানি হয়েছিল ৪ লাখ ৯৫ হাজার ৫৬৯ মেট্রিক টন। সেখানে এবার গত ছয় মাসে মশুর ডাল আমদানি হয়েছে এক লাখ ১৪ হাজার ৮৪০ মেট্রিক টন। গত অর্থবছর চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে এলাচ আমদানি হয়েছে ৪ হাজার ৮৪৪ মেট্রিক টন। সেখানে এবার ডিসেম্বর পর্যন্ত ছয় মাসে এলাচ আমদানি হয়েছে ২ হাজার ৪১৯ মেট্রিক টন। গত অর্থবছর দারুচিনি আমদানি হয়েছে ১৫ হাজার ৭৫২ মেট্রিক টন, সেখানে এবার গত ছয় মাসে দারুচিনি আমদানি হয়েছে ৪ হাজার ৪৭০ মেট্রিক টন। 

তবে এবার জিরা আমদানি বেড়েছে। গত অর্থবছর চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে যেখানে ৩ হাজার ৬৫৯ মেট্রিক টন আমদানি হয়, সেখানে এবার ছয় মাসেই জিরা আমদানি হয়েছে ৬ হাজার ৩০ মেট্রিক টন। যা আগের অর্থবছরের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ। জিরা আমদানি বাড়লেও খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর দিয়ে এবার অধিকাংশ মসলাজাতীয় পণ্য কম আমদানি হয়েছে। 

কেন আমদানি কম হচ্ছে জানতে চাইলে মসলা আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান ইউনিভার্সেল অ্যাগ্রো করপোরেশনের কর্ণধার টিপু সুলতান প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘ডলার সংকটের কারণে এখন এলসি করা খুব কঠিন। শতভাগ মার্জিন দিয়ে এলসি খুলতে হয়। এই ক্ষেত্রে এক চালান পণ্য আনতে এখন যেই পরিমাণ টাকা খরচ হয়, তাতে আগে সমপরিমাণ পণ্যেও চার থেকে পাঁচটি এলসি খোলা যেত। কিন্তু এখন আমরা সেটি পারছি না। তাই এলসি কম হচ্ছে, পণ্য আমদানিও কমছে। এলসির মার্জিন যদি কমিয়ে দেওয়া যেত তাহলে পণ্য আমদানি বাড়ত। না হয়, এভাবে চলতে থাকলে রমজানে কিছু কিছু পণ্যের সংকট তৈরি হতে পারে।’

এ ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মেজবাউল হক প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘সাধারণত বাংলাদেশ ব্যাংক কোনো নির্দেশনা দিলে তফসিলি ব্যাংকগুলো সেই অনুযায়ী কাজ করে। আমদানিকারকদের কাছ থেকে আমরা এখন পর্যন্ত কোনো অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখব।’

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা