ভাণ্ডারিয়া (পিরোজপুর) প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২৭ জানুয়ারি ২০২৪ ১০:০৫ এএম
আপডেট : ২৭ জানুয়ারি ২০২৪ ১৮:২৭ পিএম
ঘনকুয়াশায় হলুদ বর্ণ হয়ে ঝড়ে পড়ছে পানের পাতা। ভাণ্ডারিয়া উপজলার লক্ষ্মীপুর মহলায়। প্রবা ফটো
পিরোজপুরের ভাণ্ডারিয়ার সম্ভাবনাময়ী ফসল পান। এ এলাকার পান রসালো আর মিষ্টিÑ এ কারণে এখানকার পানের চাহিদাও অনেক বেশি। গত কয়েক দিনের ঘন কুয়াশা আর তীব্র শীতের প্রভাব পড়তে শুরু করেছে পান চাষে। ঘন কুয়াশায় পানপাতা হলুদ বর্ণ হয়ে পচন ধরে তা ঝরে পড়ছে, আর তীব্র শীতের কারণে বরজে দেখা দিয়েছে বিভিন্ন ছত্রাকজাতীয় রোগের। এতে ক্ষতির মুখে পড়েছেন উপজেলার সহস্রাধিক পান চাষি।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, উপজেলার ৭ ইউনিয়নে ২৪০ হেক্টর জমিতে সহস্রাধিক বরজ রয়েছে এবং প্রায় দুই হাজার চাষি পান চাষের সঙ্গে যুক্ত। বারি-১ ও বারি-২ জাতের বরজে উৎপাদিত পান উপজেলার চাহিদা মিটিয়ে ঢাকায় নিয়ে বিক্রি করা হয়। এ উপজেলার মাটিও পান চাষের জন্য বেশ উপযোগী ও পান চাষ লাভজনক হওয়ায় এলাকার মানুষ পান চাষের দিকে ঝুঁকে পড়েছে।
ভাণ্ডারিয়ায় দিন দিন পান চাষের আয়তনও বেড়ে চলছে। গত বছর ২০০ হেক্টর জমিতে পান চাষ হলেও এ বছর বেড়ে তা ২৪০ হেক্টর হয়েছে। কিন্তু সেই পান চাষিরাই এখন বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে।
সরেজমিনে উপজেলার পৌর শহরের লক্ষ্মীপুরা মহলা, কানুয়া ও নদমূলা শিয়ালকাঠী ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের বেশ কয়েকটি বরজে ঘুরে দেখা গেছে, ঘন কুয়াশায় প্রতিটি বরজে লতার সঙ্গে পানপাতা হলুদ বর্ণ হয়ে শুকিয়ে তা পচে মাটিতে ঝরে পড়ছে। বরজের ওপরে ঘন ছাউনি আর চারপাশে পলিথিন দিয়ে ঘিরে রেখেও পানপাতা রক্ষা করতে পারছেন না চাষিরা। একই চিত্র প্রায় প্রতিটি বরজে। পানপাতা ঝরে পড়ার কারণে বাজারে পানের ন্যায্যমূল্য না পাওয়ায় চাষিরা আর্থিকভাবে ক্ষতির মুখে পড়ছে।
স্থানীয় পরিমল হাওলাদার, মনোরঞ্জন বিশ্বাসসহ একাধিক পান চাষি জানায়, বছরজুড়ে বরজের লাগানো লতায় পানপাতা ধরতে থাকে। অধিক লাভের আশায় শীতের দুই মাস আগে বরজ থেকে তারা পান তোলে না। কিন্তু এ বছর তীব্র শীতের কারণে বরজে পানপাতা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। লাভ তো দূরের কথা, চাষিরা আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ছে।
লক্ষ্মীপুরা মহল্লার পানচাষি অমল রায় জানান, এ রোগের কারণে তার ৩শ বরজে প্রায় ৫০ হাজার টাকার ক্ষতি হয়েছে। লক্ষ্মীপুরা মহল্লায় একসময় শতাধিক পানচাষি ছিল। লোকসানের কারণে তিনি ছাড়া সকলেই বাপ-দাদার এ পেশা ছেড়ে দিয়েছে।
পান ব্যবসায়ী মনিন্দ্রনাথ বিশ্বাস ও তনয় সেন জানান, পান পাতা হলুদ বর্ণের হয়ে যাওয়ার কারণে পাইকাররা পান ক্রয় করতে চান না। এ কারণে বাধ্য হয়ে চাষিরা কম দামে পান বিক্রি করছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. নজরুল ইসলাম জানান, ঘন কুয়াশা ও তীব্র শীতের কারণে বরজে এক প্রকার ছত্রাক রোগ দেখা দিয়েছে। এতে ক্ষতির মুখে পড়ছে পানচাষিরা। পানের এ রোগ দূর করতে ছত্রাকনাশক ব্যবহার করতে হবে। এবং বরজের চারদিক থেকে পলিথিন দিয়ে বেষ্টনী তৈরি করতে হবে ছত্রাকের আক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে।