× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

ইসলামি ব্যাংকগুলোর জন্য আলাদা নীতিমালা দরকার

জোনায়েদ মানসুর

প্রকাশ : ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ২২:১৩ পিএম

সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক পিএলসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক জাফর আলম। প্রবা ফটো

সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক পিএলসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক জাফর আলম। প্রবা ফটো

দেশের শরিয়াহভিত্তিক ইসলামি ব্যাংকিংয়ের জনপ্রিয়তা বাড়ছে। বাংলাদেশ ব্যাংক চেষ্টা করছে আলাদা গাইডলাইন তৈরি করার। ইসলামি ব্যাংকগুলোর শেয়ার বাড়ছে, সেই সঙ্গে গ্রাহকসংখ্যাও বাড়ছে। তাই ইসলামি ব্যাংকগুলোর জন্য আলাদা নীতিমালা দরকার। সম্প্রতি প্রতিদিনের বাংলাদেশকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক পিএলসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী  জাফর আলম। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন জোনায়েদ মানসুর

প্রবা : দেশে ইসলামি ব্যাংকিং কেমন চলছে এবং এর সম্ভাবনাকে কীভাবে ব্যাখ্যা করবেন? 

জাফর আলম : দেশে ইসলামি ব্যাংকিংয়ের ইতিহাস ৪২ বছরের। ১৯৮২ সালে প্রথমে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা হয়। বর্তমানে দেশে ১০টি পূর্ণাঙ্গ ইসলামি ব্যাংক রয়েছে এবং এর পাশাপাশি অনেক ব্যাংক ইসলামি ব্যাংকিং উইন্ডো খুলে সেবা দিচ্ছে। দেশের বাইরেও শরিয়াহভিত্তিক ইসলামি ব্যাংকিংয়ের জনপ্রিয়তা বাড়ছে। সিকিউরিটি এক্সচেঞ্জ কমিশনেও ইসলামি ব্যাংকের আলাদা সুপারভাইজরি কমিটি আছে। বাংলাদেশ ব্যাংক চেষ্টা করছে আলাদা গাইডলাইন তৈরি করার। ইসলামি ব্যাংকগুলোর শেয়ার বাড়ছে, গ্রাহকসংখ্যাও বাড়ছে। এজন্য আলাদা নীতিমালা দরকার। আমাদের যে ডিপোজিট আছে তার মধ্যে সাড়ে চার লাখ কোটি ইসলামি ব্যাংকগুলো হোল্ড করে। যে রেমিট্যান্স আসে, এর ৫২ শতাংশ আসে ইসলামি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে। এটা মানুষের আস্থার কারণেই আসে। 


প্রবা : ২৯ বছরের পথচলায় আপনাদের ব্যাংকের উল্লেখযোগ্য অর্জনগুলো কী কী?

জাফর আলম : ১৯৯৫ সালের ২২ নভেম্বর ‘সোশ্যাল ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক লিমিটেড’ যাত্রা শুরু করে। পরে এটির নাম সংশোধন হয়ে বর্তমান নাম ‘সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক পিএলসি’ রাখা হয়। দীর্ঘ পথযাত্রার প্রতিটি মুহূর্তই ছিল সমৃদ্ধির। দ্বিতীয় প্রজন্মের ব্যাংক হয়েও এটি প্রথম প্রজন্মের অনেক ব্যাংককে পেছনে ফেলেছে। গণমুখী ব্যাংকিংয়ের ফলে সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের গ্রাহকসংখ্যা ১৫ লাখ ছাড়িয়েছে। এ বিপুলসংখ্যক গ্রাহকই আমাদের মূল শক্তি। এটি এখন প্রায় ৩৭ হাজার কোটি টাকা সম্পদের একটি ব্যাংক। গ্রাহকদের প্রায় ৩১ হাজার কোটি টাকা আমানত হিসেবে জমা আছে। বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগ রয়েছে ২৯ হাজার কোটি টাকা। 


প্রবা : ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ বাড়ছে, এটি উত্তরণের উপায় কী?

জাফর আলম : খেলাপি ঋণ আমাদের ব্যাংকিং সেক্টরে একটা বড় সমস্যা। খেলাপি ঋণ নিয়ন্ত্রণে সরকার বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে। আমরাও এ ব্যাপারে শক্ত অবস্থানে আছি। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি যতই শক্তিশালী ব্যক্তি হোক ব্যাংকের টাকা ব্যাংকে, জনগণের টাকা জনগণকে ফেরত দিতে হবে। এই মোটিভ নিয়ে আমরা নেমেছি। ২০২১-২২ সালে আমরা খেলাপি বিনিয়োগ থেকে অনেক টাকা আদায় করেছি। বর্তমানে আমাদের খেলাপির হার ৪ দশমিক ৮ শতাংশ। ২০২৩ সালে আমানত বেড়েছে ৮ হাজার কোটি টাকা। বৈদেশিক বাণিজ্য বেড়েছে ২৩ শতাংশ। 


প্রবা : রেমিট্যান্স বাড়াতে কী ধরনের উদ্যোগ নিয়েছেন?

জাফর আলম : রেমিট্যান্স আহরণে গতি আনার লক্ষ্যে ‘প্রায়োরিটি ও বিশেষ রেমিট্যান্স’ চালু করা হয়েছে। এখন ৩৫টা দেশ থেকে আমাদের অ্যাকাউন্ট করা যায়। রেমিট্যান্স বাড়াতে মানিগ্রাম, ওয়েস্টার্ন ইউনিয়নসহ নতুন অনেক রেমিট্যান্স কোম্পানির সঙ্গে অ্যাগ্রিমেন্ট হয়েছে। এর পাশাপাশি এসআইবিএল ইনস্ট্রা ফ্যামিলি রেমিট, ইনস্ট্রা এডু এবং ইনস্ট্রা মেডি রেমিট নামে তিনটি আউটবাউন্ড রেমিট্যান্স সেবা চালু করা হয়েছে। ২০২২ সালে রেমিট্যান্সে আহরণকারী ব্যাংকের তালিকায় সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক ছিল ১৮তম। ২০২৩ সালে আমাদের অবস্থান হয়েছে ষষ্ঠ। ২০২৩ সালে রেমিট্যান্স এসেছে ১১ হাজার কোটি টাকার বেশি। 


প্রবা : প্রযুক্তিগত ব্যবহারের ক্ষেত্রে আপনাদের অবস্থান কেমন?

জাফর আলম : প্রযুক্তিগত উন্নয়নে আমরা কোনোভাবেই পিছিয়ে নেই। আমরাই এ দেশে প্রথম ক্যাশ ওয়াকফ চালু করেছি। পেপারলেস ব্যাংকিংকে উৎসাহিত করতে আমরা শাখা পর্যায় থেকে সব প্রস্তাব অনলাইনে প্রেরণ এবং অনলাইনেই অনুমোদন দিচ্ছি। ২৪ ঘণ্টা ব্যাংকিং সেবা দেওয়ার জন্য আমরা একটি পূর্ণাঙ্গ কল সেন্টার চালু করেছি। ইন্টারনেট ব্যাংকিং, অনলাইন ব্যাংকিং ও মোবাইল অ্যাপের সুবিধা যুগোপযোগী করার পাশাপাশি সেবাগুলোর আওতা বাড়ানো হয়েছে। আমরা ই-অ্যাকাউন্ট সেবা চালু করেছি। আমাদের মোবাইল অ্যাপ ‘এসআইবিএল নাউ’-এর মাধ্যমে যেকোনো ব্যাংক ও মোবাইল ব্যাংক হিসাবে অর্থ স্থানান্তর, ইউটিলিটি বিল পরিশোধ, ক্রেডিট কার্ডের বিল পরিশোধ, মোবাইল রিচার্জসহ বিভিন্ন ধরনের ব্যাংকিং সেবা খুব সহজেই করা যায়। ই-অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে গ্রাহকরা ডিপিএস হিসাবও খুলতে পারছেন এবং টাকা জমা দিচ্ছেন। 


প্রবা : তৃণমূল পর্যায়ে ব্যাংকিংয়ে সেবা কতটা পৌঁছাতে পেরেছেন?

জাফর আলম : দেশের বিশাল জনগোষ্ঠী ব্যাংকিং সেবার বাইরে আছে। তাদের ব্যাংকিং সেবার আওতায় আনার জন্য আমরা ‘ফ্যামিলি এমপাওয়ারমেন্ট ইসলামিক মাইক্রো ফাইন্যান্স’ কর্মসূচি চালু করেছিলাম। এ কর্মসূচির আওতায় গ্রামীণ ও স্থানীয় পর্যায়ের প্রান্তিক চাষি, ক্ষুদ্র কারিগর, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী এবং শিক্ষিত বেকারদের অর্থায়ন করা হচ্ছে। এ কর্মসূচির আওতায় ৩৫ হাজার গ্রাহককে ২০০ কোটি টাকা ঋণ দিয়েছি। এ কর্মসূচির আওতায় ২০ হাজার থেকে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ দেওয়া হয়। এ প্রকল্পে আদায়ের হার ৯৯ শতাংশেরও বেশি। বর্তমানে ব্যাংকের ৭০টি শাখায় ১০৮ জন সোশ্যাল অফিসার মাঠপর্যায়ে ইসলামিক মাইক্রোফাইন্যান্স কর্মসূচি বাস্তবায়নে নিয়োজিত আছেন। দেশব্যাপী বিস্তৃত ১৭৯টি শাখা, ২০৩টি উপশাখা, ৩৭৪টি এজেন্ট ব্যাংকিং আউটলেট, ২০২টি এটিএম বুথ এবং ৪১টি কালেকশন বুথের মাধ্যমে ব্যাংকিং সেবা পৌঁছে দিচ্ছে সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক। 


প্রবা : গ্রাহকের জন্য নতুন কী কী সেবা যুক্ত করেছেন?

জাফর আলম : ২০২৩ সালের ১ নভেম্বর নতুন তিনটি সঞ্চয় স্কিম চালু করেছি। স্কিমগুলো হলোÑ মুদারাবা অগ্রিম মুনাফা সঞ্চয় হিসাব, মুদারাবা সর্বোচ্চ মুনাফা হিসাব এবং মুদারাবা ঐচ্ছিক হিসাব। গত দুই বছরে সেবাসহ শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও শরিয়াভিত্তিক প্রায় ১২টি সেবা চালু করেছে এসআইবিএল। রিকন্ডিশন গাড়ির ওপরে ইনভেস্ট, অবসরপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের জন্য রয়েছে ‘এসআইবিএল রিটায়ার্ড সিটিজেন মাসিক বেনিফিট স্কিম’ নামে একটি বিশেষ সঞ্চয়ী হিসাব। এ ছাড়াও রয়েছে হকারদের জন্য পুনর্বাসনের ব্যবস্থা, একের ভেতর তিন সেবা (শিক্ষা সঞ্চয় স্কিম, চিকিৎসা সঞ্চয় স্কিম ও বিবাহ সঞ্চয় স্কিম), প্রবাসী ডিপোজিট স্কিম, মুদারাবা ঐচ্ছিক ডিপোজিট অ্যাকাউন্ট, ছাদকৃষিতে ঋণ উল্লেখযোগ্য। এর পাশাপাশি রয়েছে ২৫ ধরনের বিনিয়োগ সেবা, ১১ ধরনের এসএমই বিনিয়োগ, তিন ধরনের কৃষি বিনিয়োগ এবং ছয় ধরনের ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ড এবং আমদানি, রপ্তানি, রেমিট্যান্সসহ সব বৈদেশিক বাণিজ্য-সংক্রান্ত সেবা। কনজ্যুমার বিনিয়োগের আওতায় শিক্ষার্থীদের অতিপ্রয়োজনীয় ডিজিটাল ডিভাইস যেমনÑ কম্পিউটার, ল্যাপটপ, মোবাইল ইত্যাদি শিক্ষা উপকরণ কেনার জন্য বিনা জামানতে বিনিয়োগ সুবিধা চালু করেছি।


শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা