× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

ডলারের ‘কৃত্রিম স্বস্তি’ ফেরানোর চেষ্টা

রেদওয়ানুল হক

প্রকাশ : ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১২:১৫ পিএম

আপডেট : ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১২:১৭ পিএম

ফাইল ফটো

ফাইল ফটো

ডলারের বাজারে ‘কৃত্রিম স্বস্তি’ ফেরানোর চেষ্টা করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। দীর্ঘদিন ধরে চলতে থাকা এই সংকট মোকাবিলায় ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের কাছে জমা থাকা ডলার বাজারে টেনে আনার লক্ষ্যে ইতিবাচক কিছু বার্তা দেওয়ার কৌশল অবলম্বন করা হয়েছে। তবে এ ধরনের উদ্যোগ সুফল বয়ে না এনে উল্টো দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতির কারণ হতে পারে- এমন আশঙ্কাও করছেন অর্থনীতি বিশ্লেষকরা।

জানা যায়, বাজারে স্বস্তি ফেরাতে ডলারের দাম তিন দফায় এক টাকা কমানো হয়েছে। একটা ইতিবাচক বার্তা দিতেই এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ (এবিবি) ও বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাফেদা)। অবশ্য সংগঠন দুটির এমন সিদ্ধান্ত নেওয়ার পেছনে রয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরামর্শ। এর মাধ্যমে বিভিন্ন জনের হাতে জমা থাকা ডলার বাজারে ফিরিয়ে এনে সরবরাহ বাড়ানোর চেষ্টা রয়েছে। কিন্তু বাস্তবে এর সুফল পাওয়া যাচ্ছে না। উল্টো দেখা যাচ্ছে, নির্ধারিত দামের চেয়ে ১০ থেকে ১৫ টাকা পর্যন্ত বেশি দরে ডলার সংগ্রহ করতে হচ্ছে আমদানিকারকদের। 

এদিকে সম্প্রতি সোয়াপ পদ্ধতিতে (মুদ্রা বিনিময়) ব্যাংকগুলোকে তারল্য সহায়তা দেওয়ার ঘোষণা এসেছে। এর আওতায় যেসব ব্যাংকে অতিরিক্ত বৈদেশিক মুদ্রা জমা রয়েছে তারা চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকে ডলার জমা দিয়ে টাকা ধার করতে পারবে। কোনো এক সময় ওই ডলার ফেরতও নিতে পারবে। তবে ব্যাংকগুলোর কাছে সোয়াপ করার মতো ডলার আছে কি না তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। বিশ্লেষকরা মনে করেন, যদি বৈদেশিক মুদ্রার তারল্য ভালোই থাকত তাহলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ওপর নির্ভরতা বাদ দিয়ে ব্যাংকগুলো আন্তঃব্যাংকে ডলার কিনত। কিন্তু পরিসংখ্যান বলছে, আন্তঃব্যাংক লেনদেনের বেশিরভাগেরই বিক্রেতা কেন্দ্রীয় ব্যাংক। 

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘ডলার সংকট এখনই কেটে গেছে কিংবা উত্তরণ হচ্ছে সেটি মোটা দাগে বলার সুযোগ নেই। কারণ সংকট সামাল দেওয়ার জন্য আমদানিতে শর্ত আরোপের মতো যেসব পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, সেগুলো এখনও চালু রয়েছে। এসব পদক্ষেপ থেকে পিছু হটলেই কেবল বলা যেতে পারে সংকট কমেছে।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘এখনও ব্যবসায়ীরা এলসি (ঋণপত্র) খুলতে ডলার পাচ্ছেন না। তাহলে সংকট কমল কীভাবে? তাছাড়া আন্তঃব্যাংক ডলার কেনাবেচার চিত্রও এমন কোনো ইঙ্গিত বহন করে না। আগে দৈনিক ৩০০ থেকে ৪০০ মিলিয়ন ডলার কেনাবেচা হতো। এখন বাংলাদেশ ব্যাংক বিক্রি না করলে সে অঙ্ক ৫০ মিলিয়নের নিচে অবস্থান করে। তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, বাজারে ডলার সরবরাহ বাড়াতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাম্প্রতিক উদ্যোগগুলোকে কৃত্রিম স্বস্তি তৈরির চেষ্টা হিসেবে দেখা হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, বিভিন্ন নিয়ন্ত্রণমূলক ব্যবস্থার ফলে চলতি অর্থবছরেও আমদানি কমছে। অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে বিভিন্ন পণ্য আমদানির জন্য এলসি নিষ্পত্তি ১৮ শতাংশের বেশি কমে ৩ হাজার ৩৬৮ কোটি ডলারে নেমেছে। সবচেয়ে বেশি কমেছে শিল্পের কাঁচামাল ও মূলধনি যন্ত্রপাতির আমদানি। ডিসেম্বর পর্যন্ত শিল্পের কাঁচামালের এলসি ৩১ শতাংশের বেশি কমে ১ হাজার ৫৪ কোটি ডলারে নেমেছে। মূলধনি যন্ত্রপাতির এলসি নিষ্পত্তি প্রায় ২৭ শতাংশ কমে ১৪৩ কোটি ডলারে নেমেছে। গত অর্থবছর আমদানি ১৬ শতাংশের মতো কমে ৬ হাজার ৯৫০ কোটি ডলারে নেমেছিল। এর মধ্যে মূলধনি পণ্যের আমদানি ২৪ শতাংশের বেশি এবং মধ্যবর্তী পণ্যের আমদানি প্রায় ২২ শতাংশ কমেছিল। একটি দেশের উৎপাদন ও কর্মসংস্থান বাড়ছে কি না, তা বোঝার সহজ উপায় বিবেচনা করা হয় মূলধনি যন্ত্রপাতি ও শিল্পে ব্যবহৃত কাঁচামাল আমদানি কেমন হচ্ছে, তার ওপর। সাম্প্রতিক সময়ে বিলাসী পণ্যের চেয়ে এ দুটি পণ্যের আমদানি বেশি হারে কমছে।

ডলারের বাজারে স্বস্তি ফিরেছে কি না জানতে চাইলে মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘ডলার বাজার তখনই ঠিক হয়েছে বলা যাবে, যখন আন্তঃব্যাংক কার্যকর হবে। তবে এখনও আন্তঃব্যাংকে ডলার বেচাকেনা হচ্ছে না। যে যার প্রয়োজন অনুযায়ী রেমিট্যান্স কিনছে বা রপ্তানি আয় দেশে আনছে।’

গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘কেন্দ্রীয় ব্যাংক ডলার বাজার ঠিক করতে একেক সময় একেক রকম সিদ্ধান্ত নিয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে এসব সিদ্ধান্ত বাজারকে আরও অস্থিতিশীল করেছে। একবার ব্যাংকের মাধ্যমে দর ঠিক করে দেওয়া হচ্ছে। আবার বলা হচ্ছে, রেমিটার থেকে ব্যাংক যে দরে ডলার কিনবে, আমদানিকারকের কাছে তার চেয়ে কম দরে বিক্রি করতে পারবে। ব্যাংক কেন লোকসানে বিক্রি করবে? এটি অবাস্তব।’ 

তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মো. মেজবাউল হক মনে করেন, ডলারের বাজারে চাপ অনেক কমেছে। তিনি বলেন, ‘অনেক ব্যাংকের এখন বৈদেশিক মুদ্রার অতিরিক্ত তারল্য আছে। তাদের জন্য সোয়াপ পদ্ধতি চালু করা হয়েছে। হাতে থাকা ডলার বাজারে আসতে শুরু করেছে। তাছাড়া রমজানে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের আমদানি আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ১০ থেকে ১৫ শতাংশ বেড়েছে।’ 

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা