× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

অল্প সময়েই ঘুরে দাঁড়াবে পদ্মা ব্যাংক

জোনায়েদ মানসুর

প্রকাশ : ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ২২:৪৬ পিএম

পদ্মা ব্যাংক পিএলসির এমডি ও সিইও তারেক রিয়াজ খান। প্রবা ফটো

পদ্মা ব্যাংক পিএলসির এমডি ও সিইও তারেক রিয়াজ খান। প্রবা ফটো

আপাতত ছোট আকারে কৃষিঋণ এবং এসএমই ঋণ বিতরণের পরিকল্পনা করছে পদ্মা ব্যাংক। আমানত গ্রহণ, খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনাসহ বিভিন্ন সূচকে নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে কাজ করছে ব্যাংকটি। এ লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারলে ২০২৫ সালে পদ্মা ব্যাংক লোকসান কাটিয়ে উঠতে পারবে বলে আশা করছেন ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা তারেক রিয়াজ খান। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন জোনায়েদ মানসুর

প্রবা : নানা সংকটে জর্জরিত পদ্মা ব্যাংকের বর্তমান অবস্থা জানতে চাই?

তারেক রিয়াজ খান : পদ্মা ব্যাংক পিএলসি নানান প্রতিকূলতা সামলে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টায় অবিরত। ২০১৩ সালে অনুমোদন পাওয়া ব্যাংকের একটি ছিল ফারমার্স ব্যাংক। চার বছর না পেরোতেই সংকটে পড়ে ব্যাংকটি। ২০১৮ সাল থেকে একটা সংস্কারের মধ্য দিয়ে কাজ শুরু করে। ২০১৯ সালের ২৯ জানুয়ারি ফারমার্স ব্যাংকের নাম বদলে রাখা হয় পদ্মা ব্যাংক। অবৈধ ও অন্যায়ভাবে দেওয়া ঋণের কারণে ব্যাংকটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আগে এখানে কোনো ব্যাংকিং হয়নি। যেসব ঋণ দেওয়া হয়েছে তা ছিল চ্যারিটি। কেননা ঋণ দিলে তা ফেরত আনা যায়, দান করলে তা আনা কষ্টকর। তবে রেকর্ড আছে টাকা কার কাছে গেছে। ২০২২ সালের মার্চে পদ্মা ব্যাংকে এমডি হিসেবে যোগদান করেই ব্যাংক কর্মকর্তাদের নিয়ে আমি টাকা ফেরত আনার চেষ্টা করছি। বর্তমানে দেড় লাখ অ্যাকটিভ কাস্টমার আমাদের আছে। আমাদের ছেড়ে যায়নি। ১৮ কোটি টাকা নতুন ডিপোজিট হয়েছে। বর্তমানে আমাদের পরিচালনা পর্ষদে যুক্ত হয়েছেন নতুন চেয়ারম্যান। শক্তিশালী পরিচালনা পর্ষদ ও একদল প্রতিভাবান, দক্ষ এবং সৎ কর্মী দল একসঙ্গে কাজ করলে খুব অল্প সময়েই আর্থিক খাতের অন্যতম শক্তিশালী ব্যাংক হবে পদ্মা ব্যাংক। সেই পথেই এগিয়ে চলেছে পদ্মা ব্যাংক।

প্রবা : পদ্মা ব্যাংকের আমানত শেয়ারে রূপান্তরের কথা শোনা যাচ্ছে। এ সিদ্ধান্ত কোন পর্যায়ে আছে?

তারেক রিয়াজ খান : বাংলাদেশ ব্যাংক প্রাতিষ্ঠানিক আমানতকে অগ্রাধিকারমূলক শেয়ারে রূপান্তরের নির্দেশনা দিয়েছে। এরপর আমাদের পরিচালনা পর্ষদে এ-সংক্রান্ত প্রস্তাবনা অনুমোদন হয়েছে। আমরা প্রাতিষ্ঠানিক আমানতকারীদের প্রস্তাব পাঠানো শুরু করেছি। তারা রাজি হলে তাদের আমানত শেয়ারে রূপান্তর হবে। এতে ব্যাংকের সূচকগুলো ভালো হয়ে যাবে। বড় আমানতকারীরা হবে ব্যাংকের বড় শেয়ারধারী। প্রায় তিন হাজার কোটি টাকার প্রাতিষ্ঠানিক আমানতকে প্রিফারেন্সিয়াল বা অগ্রাধিকারমূলক শেয়ারে রূপান্তরের উদ্যোগ নিয়েছে পদ্মা ব্যাংক। এ আমানতের ১ হাজার ৮২০ কোটি টাকা সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও তহবিলের। বাকি ১ হাজার কোটির বেশি আমানত রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর। সব মিলিয়ে ২ হাজার ৮৯২ কোটি টাকার আমানতকে শেয়ারে রূপান্তর করতে চাইছে বহুল আলোচিত বেসরকারি ব্যাংকটি। তা ছাড়া ৬০টি শাখা ও ১৪টি উপশাখার মাধ্যমে গ্রাহকদের সব ধরনের ব্যাংকিং সেবা দিয়ে আসছি।

প্রবা : ব্যাংকের আয় বাড়াতে আপনারা কী কী কার্যক্রম হাতে নিয়েছেন?

তারেক রিয়াজ খান : আমরা মুনাফা করার জন্য সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজে নন-ফান্ডেড গ্যারান্টির মাধ্যমে ব্যবসা বাড়ানোর চেষ্টা করছি। ব্যাংকের আয় বাড়াতে আমরা কস্ট রেশনালাইজ এবং অপটিমাইজেশনের চেষ্টা করছি। এ দুটোর জন্য কিছু স্টেপস আছে। তার মধ্যে একটি হলো ডিপোজিট কস্ট কমিয়ে ফেলা। মার্কেটে ইতোমধ্যেই ইন্টারেস্ট রেট কমিয়ে ফেলা হয়েছে। কিন্তু ব্যাংকের দিকে গ্রাহকদের আস্থা ফেরাতে আমরা ভালো রকমের ইন্টারেস্ট এখনও দিয়ে যাচ্ছি। এ ছাড়াও আমরা আমাদের অপারেটিং কস্ট কমিয়ে আনার ব্যাপারে সচেষ্ট রয়েছি।

প্রবা : বর্তমানে ব্যংকের আমানতের পরিমাণ কেমন?

তারেক রিয়াজ খান : বর্তমানে পদ্মা ব্যাংকের পরিশোধিত মূলধন ১ হাজার ১১৬ কোটি টাকা। এ মূলধনের ৬৮ শতাংশ জোগান দিয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী, জনতা, অগ্রণী ও রূপালী ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠান ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি)। ২০২৩ সালের ডিসেম্বর শেষে আমাদের আমানত ৬ হাজার ১৪১ কোটি টাকা দাঁড়ায়। এর মধ্যে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর আমানত ২ হাজার ৮৫০ কোটি টাকা। এ ক্ষেত্রে রাষ্ট্রমালিকানাধীন সোনালী, অগ্রণী, জনতা, রূপালী ব্যাংক ও ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশের (আইসিবি) ১ হাজার কোটি টাকা এবং জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ড ও জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্টের ৭৬০ কোটি টাকা। এ ছাড়া বাকি ১ হাজার কোটি টাকার কিছু বেশি আমানত হচ্ছে জীবন বীমা করপোরেশন, সাধারণ বীমা করপোরেশন, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড, তিতাস গ্যাস, বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি), মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ, বাংলাদেশ অবকাঠামো ফিন্যান্স ফান্ড লিমিটেড (বিআইএফএফএল), ইসলামিক ফাউন্ডেশন, নারায়ণগঞ্জ ডকইয়ার্ড অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কসসহ আরও কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের।

প্রবা : ব্যাংকটির ঋণের পরমিাণ কেমন। এর মধ্যে খেলাপি কত?

তারেক রিয়াজ খান : ২০২৩ সালের শেষে ব্যাংকটির ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৭৪০ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি ঋণই ৩ হাজার ৫৪৫ কোটি টাকা।

প্রবা : পদ্মা ব্যাংকের কতগুলো স্কিম আছে?

তারেক রিয়াজ খান : চতুর্থ প্রজন্মের পদ্মা ব্যাংক ২০২৩ সালে নিয়ে এসেছে মাত্র ১২৫ দিন বা চার মাসের স্থায়ী আমানত প্রোডাক্ট। সুদহারও পাওয়া যাচ্ছে সর্বোচ্চ ৯ দশমিক ৫০ শতাংশ পর্যন্ত। স্কিমগুলো হলো পদ্মা এলিগেন্ট ও পদ্মা প্রফেশনাল। এ ছাড়া খাদ্য উৎপাদন খাতে যারা অবদান রাখছে তাদের জন্য রয়েছে পদ্মা মৌসুম স্কিম ডিপোজিট। যেখানে মাত্র ৫০ টাকা মাসিক কিস্তিতে সঞ্চয়ী হিসাব পরিচালনা করতে পারবেন গ্রাহকরা। ২০২২ সালের অক্টোবরে নিয়ে এসেছে চারটি পণ্য। এগুলো হচ্ছেÑএনআরবি হোম লোন, গ্রামীণ গৃহঋণ, আধাপাকা বাড়ি এবং অ্যাপার্টমেন্ট ক্রয় বা বাড়ি বানানোর নিয়মিত ঋণ। এ ছাড়া অ্যাপার্টমেন্ট বা বাড়ি আধুনিকায়নের জন্যও পাওয়া যাবে ঋণ। এ ছাড়া চারটি প্রডাক্ট নিয়ে কাজ করছে পদ্মা ব্যাংকের স্টুডেন্ট ব্যাংকিং ডিভিশন। পদ্মা নেক্সটজেন অ্যাকাউন্ট, পদ্মা মাস্টার মাইন্ড অ্যাকাউন্ট, পদ্মা স্পিরিট মান্থলি ডিপোজিট প্ল্যান এবং পদ্মা ব্যাংক স্টুডেন্ট ফাইলসহ সব মিলিয়ে বিভিন্ন মেয়াদ ও আকর্ষণীয় রেটে ১৮টি স্কিম আছে পদ্মা ব্যাংক লিমিটেডের।

প্রবা : পদ্মা ব্যাংক গ্রাহকের আস্থা ফেরাতে কী কী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে?

তারেক রিয়াজ খান : একটি ব্যাংক চলে তার গ্রাহকের আস্থা দিয়ে। গ্রাহক ডিপোজিট না বাড়লে ব্যাংক তার স্বাভাবিক কার্যক্রম চালাতে পারবে না। তাই আমরা আমাদের গ্রাহকদের আশ্বস্ত করতে চাই যে তারা যেকোনো ধরনের ক্যাশ উইথড্র করতে পারবে যেকোনো সময়ে। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী যেকোনো ডিমান্ড সর্বোচ্চ এক সপ্তাহের মধ্যে ক্লিয়ার করতে হয়। এ নির্দেশনা বাস্তবায়ন করছি আমরা। আমাদের কোনো গ্রাহক এখন বলতে পারবে না যে তারা টাকা তুলতে পারেনি। কেউ বলতে পারবে না যে আমরা আমাদের কোনো কথার খেলাপ করেছি।

প্রবা : ভার্চুয়াল ব্যাংক হওয়ার প্রক্রিয়ায় কতখানি এগিয়েছে পদ্মা ব্যাংক?

তারেক রিয়াজ খান : আমাদের দুটি স্বপ্ন। ব্যাংকটিকে সম্পূর্ণ ডিজিটালাইজ করা। আগামীর ব্যাংক হবে শাখাবিহীন, টাচলেস এবং ক্যাশলেস। সেজন্য পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছি। ইতোমধ্যে একটা ভার্চুয়াল ব্যাংক করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। ভার্চুয়াল মানে আমাদের পরিশোধ ব্যবস্থা হবে মোবাইলে অ্যাপ এবং অনলাইনে। সে পরিকল্পনার বাস্তবায়ন হিসেবে পদ্মা ব্যাংক এরই মধ্যে ‘পদ্মা ওয়ালেট’ নামে মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন নিয়ে এসেছে। যার মাধ্যমে ফান্ড ট্রান্সফার, মোবাইল রিচার্জ, ইউটিলিটি বিল পরিশোধসহ বিভিন্ন ব্যাংকিং সেবা সহজেই পাওয়া যাচ্ছে। এ ছাড়া গ্রাহকেরা পদ্মা ওয়ালেটের মাধ্যমে কিউআর কোড ব্যবহার করে সহজেই চেকবিহীন টাকা উত্তোলন করতে পারছে। ডিজিটাল আপগ্রেডেশনের অংশ হিসেবে পদ্মা ব্যাংক স্ট্যাট অব দ্য আর্ট কোর ব্যাংকিং সিস্টেমে মাইগ্রেট করেছে। যা পদ্মা ব্যাংকের দৈনন্দিন লেনদেন ব্যবস্থাকে ডিজিটালি আরও উন্নততর ও নিরাপদ করেছে।

প্রবা : ব্যাংকটির ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?

তারেক রিয়াজ খান : বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী সব সময় আমরা কাজ করছি। রিস্ক ফ্রি প্রফিট গ্রোথ আমাদের অন্যতম কোর এজেন্ডা। আমাদের কোর এজেন্ডা হলো আমাদের ব্যাংকের যে নন-পারফর্মিং লোন ছিল তা রিকভার করা। দ্বিতীয়ত, আমরা নজর দিচ্ছি লায়াবিলিটি গ্রোথের দিকে। একটি ব্যাংক চলে ঋণ দেওয়া এবং ডিপোজিটের মাধ্যমে। যেহেতু আমাদের এখন ঋণ দেওয়ার মতো অবস্থা নেই তাই আমাদের লক্ষ্য গ্রাহকের আস্থা ফিরিয়ে এনে লায়াবিলিটি গ্রোথ করা। আমাদের কম্পোনেন্ট আছে। যখন আমরা লায়াবিলিটি গ্রোথ বাড়াব তখন আমাদের লোনেবল ফান্ড বাড়বে। লোনেবল ফান্ড বাড়লে আমাদের ইনকাম লাইন খুব স্মোথ হবে।


শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা