× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

‘জীবন বীমা আস্থার সংকটে ভুগছে’

জোনায়েদ মানসুর

প্রকাশ : ০২ মার্চ ২০২৪ ২২:১৬ পিএম

প্রগতি লাইফ ইনস্যুরেন্স কোম্পানির এমডি ও সিইও জালালুল আজিম। প্রবা ফটো

প্রগতি লাইফ ইনস্যুরেন্স কোম্পানির এমডি ও সিইও জালালুল আজিম। প্রবা ফটো

বীমা তো আস্থার জায়গা। একটা লিখিত চুক্তি। আস্থার মাধ্যমেই কোম্পানি গ্রাহকের টাকাটা নিচ্ছে, মেয়াদপূর্তিতে গ্রাহকের টাকা ফেরত দেবে। সেই আস্থাটা থাকছে না বীমা কোম্পানিতে। দেশের বীমা খাতে এখনও আস্থার সংকটে ভুগছে। সবচেয়ে বেশি জীবন বীমা খাতে। এসব কথা বলেছেন প্রগতি লাইফ ইনস্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) জালালুল আজিম। সম্প্রতি প্রতিদিনের বাংলাদেশের সঙ্গে আলাপে তিনি এসব কথা জানান। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক জোনায়েদ মানসুর

প্রবা : জীবন বীমার কোম্পানির সংখ্যা কত?

জালালুল আজিম : দেশে জীবন বীমা কোম্পানির সংখ্যা ক্রমেই বেড়েছে। বর্তমানে দেশে ৩৬টি জীবন বীমা কোম্পানি রয়েছে। 


প্রবা : জীবন বীমা খাতের আস্থা সংকট কেন এবং এটি দূর করার উপায়টা কী?

জালালুল আজিম : আস্থাহীনতা আসলে কেন ঘটে, যখন আপনি কোনো কমিটমেন্ট করে ফেল করবেন তখনই কিন্তু আস্থাহীনতা আসে। এটা যদি রিপিটেডলি হতে থাকে তখন এই আস্থাহীনতা একটা স্থায়ী রূপে চলে যায়। আমাদের জীবন বীমা সেক্টরে আমরা কিছু কমিটমেন্ট করি গ্রাহকের কাছে; সেই কমিটমেন্টের ভেতরে একটা থাকে যেমন ধরেন, কোনো গ্রাহকের মৃত্যু হলে তার নমিনিকে আমরা টাকা দেব। উনি যদি কোনো দুর্ঘটনায় পড়েন, তার চিকিৎসার জন্য বা পঙ্গু হয়ে গেলে তাকে টাকা দেব। অথবা সন্তানের লেখা পড়ার জন্য শিক্ষা বীমা করে থাকে তার সন্তানের লেখাপড়াটার নিশ্চয়তা বিধান করব। মেয়াদ শেষে আমরা একটা ভালো বোনাসসহ তাকে মেয়াদ উত্তীর্ণ দাবিটা পরিশোধ করব। যখন গ্রাহক সময়মতো এই সেবা পায় না তখনই আস্থা সংকট তৈরি হয়। এখন আস্থা সংকট দূর করার উপায়টা কী? উপায় হচ্ছে গড়িমসি না করে গ্রাহককে তার প্রাপ্য দ্রুততার সঙ্গে পরিশোধ করে দিতে হবে।


প্রবা : অভিযোগ আছে, জীবন বীমা ইমেজ সংকটে ভুগছে। এ সংকট কাটাতে কী কী করা দরকার?

জালালুল আজিম : এটা নিয়ে বিভিন্নভাবে আমরা কথা বলছি। আমাদের প্রথম কাজ হলোÑ আমাদের ইমেজ সংকটটা কাটাতে হবে। ইমেজ সংকট কাটাতে হলে গ্রাহকের দাবি পরিশোধ করতে হবে। এটা মৃত্যুদাবি হোক, মেয়াদ উত্তীর্ণ দাবি হোক। কিন্তু গ্রাহকদের বীমা দাবি কিছু কোম্পানি দিচ্ছেন না, আরেকটা হলো বীমার টাকা দেরি করে দিচ্ছেন; সময়ক্ষেপণ করে দিচ্ছেন। দুটিই কিন্তু আমাদের ইমেজের ক্ষতিকর। প্রগতি লাইফে আমরা যে মটো বা আদর্শ নিয়ে কাজ করি, আমাদের কথা হচ্ছে, গ্রাহকের পলিসির মেয়াদ যেদিন উত্তীর্ণ হবে, তার পরের দিন গ্রাহকের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে গিয়ে তার টাকা জমা হবে। 


প্রবা : বীমা খাতে অসুস্থ চর্চা বা প্রতিযোগিতার কথা শোনা যায়। এ বিষয়ে কিছু বলুন। 

জালালুল আজিম : আমি যেটা বলব, বিভিন্ন কোম্পানিতে মার্কেটিংয়ে লোকজনের অসুস্থ চর্চা যেটা আছে; খারাপ চর্চা যেটা আমরা বলি, প্রতিযোগিতা করে কে কত বেশি পয়সা খরচ করে প্রিমিয়াম আনতে পারে। এ কারণে আমরা প্রতিনিয়ত আইডিআরএর যে ব্যবস্থাপনা ব্যয়ের লিমিট দেওয়া আছে, এই লিমিট কিন্তু আমরা ক্রস করে যাই। এই লিমিটের মধ্যে হাতেগোনা চার থেকে পাঁচটি কোম্পানি থাকতে পারে; আর কোনো কোম্পানি লিমিটের মধ্যে থাকতে পারছে না এই ব্যয়ের জন্য। অর্থাৎ তারা বিভিন্নভাবে অর্থ খরচ করছে এবং অতিরিক্ত ব্যয়ে চলে যাচ্ছে। কমিশন বাবদ যাচ্ছে এবং আরও বিভিন্ন উপায়ে বিভিন্ন কোম্পানি থেকে টাকা বের হয়ে যাচ্ছে।


প্রবা : জীবন বীমায় কী ধরনের পলিসি আছে এবং কত দিনের মধ্যে বীমার দাবির টাকার পাওয়া যায়?

জালালুল আজিম : জীবন বীমায় ৫, ১০, ১২, ১৫, ১৮ এবং ২০ বছর মেয়াদে পলিসি আছে। বীমা আইনে আছে সর্বোচ্চ ৯০ দিন। মেয়াদপূর্তি দাবি হোক আর মৃত্যু দাবি হোক; যে দাবি হোক না কেন সর্বোচ্চ ৯০ দিনের মধ্যে বীমা কোম্পানিকে গ্রাহকের টাকা পরিশোধ করতে হবে। যদি ৯০ দিনের মধ্যে পরিশোধ করতে না পারে তাহলে নিদিষ্ট হারে গ্রাহক বা তার নমিনিকে ইন্টারেস্টসহকারে তাকে দাবি প্রদান করতে হবে। 


প্রবা : বীমা খাতে বেশি খরচ করার প্রবণতা লক্ষ করা গেছে। এ বিষয়ে যদি কিছু বলতেন।

জালালুল আজিম : অনেক কোম্পানি আয়ের চেয়ে বেশি ব্যয় করে। যার ফলে প্রকিউরমেন্ট কস্ট হাই; প্রকিউরমেন্ট কস্টের কারণে অ্যালাউঅ্যাবল ম্যানেজমেন্ট এক্সপেন্সের ভেতরে না থাকার কারণে তার কাছে টাকা নেই। এটা হলো একটা কারণ। দ্বিতীয় কারণ হলোÑ কিছু কিছু কোম্পানিতে ব্যাড ইনভেস্টমেন্ট। এই ব্যাড ইনভেস্টমেন্ট যে জায়গাগুলোÑ আপনার পাঁচ লাখ টাকার একটা জমি কিনছে ৫০ লাখ টাকা দিয়ে। আবার সেই জমি ডেভেলপমেন্টের নামে আরও কয়েকশ কোটি টাকা খরচ করছে। এখন প্র্যাকটিক্যালি কাগজে-কলমে লাইফ ফান্ড দেখাচ্ছেন যে, ধরেন- এই কোম্পানির লাইফ ফান্ড দুই হাজার কোটি টাকা। তার মধ্যে একটা জমির ভ্যালু দেখাচ্ছেন দুশ কোটি টাকা। কোম্পানি থেকে টাকা বের করার একটা পথ হচ্ছে ব্যাড ইনভেস্টমেন্ট। এই সিচুয়েশনের কারণে এখন যেটা দেখছেন তারা টাকা দিতে পারছে না। 


প্রবা : আপনাদের কী কী পলিসি আছে বা পণ্য আছে?

জালালুল আজিম : বর্তমানে আমাদের মেয়াদি বীমা, কিস্তি বীমা, শিক্ষা বীমা, পেনশন বীমা, স্বাস্থ্য বীমা ও গ্রুপ বীমা পলিসি বা পণ্য আছে। 


প্রবা : আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?

জালালুল আজিম : আমার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা প্রগতি লাইফ ইনস্যুরেন্সকে আরও উন্নত ও বিশ্বস্ত প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলা। প্রযুক্তি, বীমা পরিকল্প, মানবসম্পদ ও সামাজিক দায়িত্ব- এই চারটি ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। প্রথমত, ডিজিটালাইজেশনের মাধ্যমে গ্রাহকসেবা আরও উন্নত করা হবে। অনলাইন পেমেন্ট, পলিসি ইস্যু ও ক্লেইম সেটেলমেন্টের মতো বিষয়গুলোতে সর্বাধুনিক প্রযুক্তি সুবিধা চালু করা হবে। অর্থাৎ, আমরা গ্রাহকদের জন্য অনন্য বীমা অভিজ্ঞতা নিশ্চিত করতে চাই। দ্বিতীয়ত, গ্রাহক চাহিদা অনুসারে নতুন ও আকর্ষণীয় বীমা পরিকল্প বাজারে আনা হবে। সময় উপযোগী করে শিক্ষা বীমা ও স্বাস্থ্য বীমা পরিকল্প বাজারে আনা হবে। দীর্ঘমেয়াদি সঞ্চয় ও বিনিয়োগের জন্য আকর্ষণীয় প্ল্যানও তৈরি করা হবে। তৃতীয়ত, কর্মীদের প্রশিক্ষণ ও দক্ষতা বৃদ্ধির দিকে গুরুত্ব দেওয়া হবে। নিয়মিত কর্মশালা ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তাদের দক্ষতা বাড়ানো হবে। এ ছাড়া কর্মীদের ক্যারিয়ার উন্নয়নে সহায়তা করা হবে। এতে তারা সার্বিকভাবে বীমা খাতের উন্নয়নে বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারবে। চতুর্থত, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পরিবেশ ও দারিদ্র্য বিমোচনে সামাজিক দায়িত্ব পালন করা হবে। এ ছাড়া আমি জাতীয় পর্যায়ে বীমা খাতের উন্নয়নেও কাজ করতে চাই। সরকার ও নিয়ন্ত্রক সংস্থার সঙ্গে সহযোগিতার মাধ্যমে দেশের বীমা খাতে গতিশীলতা আনতে চাই।


শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা