× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

আমদানিতে শুল্ক ফাঁকির কায়দা

কন্টেইনারে দামি খেজুর কাগজে নিম্নমানের

হুমায়ুন মাসুদ, চট্টগ্রাম

প্রকাশ : ১০ মার্চ ২০২৪ ১১:৪৯ এএম

আপডেট : ১০ মার্চ ২০২৪ ১২:৪৬ পিএম

ছবি : সংগৃহীত

ছবি : সংগৃহীত

উন্নত মানের খেজুরে প্রতি কেজির শুল্কায়ন করা হয় আমদানি মূল্য চার ডলার ধরে। একই খেজুর যদি মাঝারি মানের বলে ঘোষণা দেওয়া হয়, তাহলে শুল্কায়ন করানো যায় আড়াই ডলার হিসেবে। আর তাতে শুল্ক কমে যায় প্রায় ৭০ টাকা। 

কেজিতে ৭০ টাকার শুল্ক এড়াতে খেজুর আমদানিতে মিথ্যা ঘোষণার আশ্রয় নিচ্ছে আমদানিকারকরা। সম্প্রতি এরকম একটি চালান আটক করেছে শুল্ক গোয়েন্দারা। আরব আমিরাত থেকে আনা সাড়ে ৪৭ মেট্রিক টন খেজুরের ওই চালানটিতে উন্নত মানের খেজুর থাকলেও সেটি খালাস করা হয় কম দামি খেজুরের জন্য ধার্য আড়াই ডলার শুল্ক দিয়ে। 

অভিযোগ উঠেছে, কাস্টমস কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগসাজশেই এই অনিয়ম করছেন আমদানিকারকরা। যে কারণে আমদানি পণ্য খালাসের আগে শতভাগ কায়িক পরীক্ষা করার নিয়ম থাকলেও সেটি না করেই শুল্কায়ন করে দিচ্ছেন কাস্টমস কর্মকর্তারা। 

কাস্টমস গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, গত ৩১ ডিসেম্বর আরব আমিরাত থেকে দুই কন্টেইনারে সাড়ে ৪৭ মেট্রিক টন খেজুর আমদানি করে ঢাকার পুরানা পল্টনের মেসার্স সহিদুল্লাহ হোসেন। ওই চালানটি অসত্য ঘোষণায় আমদানি এবং শুল্কায়ন করা হয়েছেÑ এমন গোপন সংবাদ থাকায় চালানটির খালাস স্থগিত করা হয়। পরে ১১ জানুয়ারি বেসরকারি কন্টেইনার ডিপো ইস্টার্ন লজিস্টিক্স ডিপোতে শতভাগ কায়িক পরীক্ষা করে তাতে প্রিমিয়াম কোয়ালিটির মরিয়ম খেজুর পাওয়া যায়। কায়িক পরীক্ষায় ঘোষিত পণ্যের ওজন সঠিক পাওয়া গেলেও মানের ঘোষণা সঠিক ছিল না। ঘোষণা অনুযায়ী ফ্রেশ ডেটস হিসেবে প্রতি কেজির ২ দশমিক ৫ ডলার শুল্কায়ন করা হয়। কিন্তু বাস্তবে এই মানের খেজুরের শুল্কায়ন হওয়ার কথা ছিল ৪ ডলার হারে। এই হিসেবে আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানটি সাড়ে ৪৭ মেট্রিক টন খেজুরের বিপরীতে প্রায় ৪৬ লাখ টাকা শুল্ক ফাঁকির চেষ্টা করেছে। 

একই আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান গত ১০ ফেব্রুয়ারি আমিরাত থেকেই পাঁচটি কন্টেইনারে আরও ১২৫ মেট্রিক টন খেজুর আমদানি করে। ওই চালানটিতেও অসত্য ঘোষণায় পণ্য আমদানি করার গোপন সংবাদ পেয়ে খালাস স্থগিত করে দেয় শুল্ক গোয়েন্দারা। ফ্রেশ ডেটস ঘোষণা দিয়ে আনা ওই চালানটির কায়িক পরীক্ষা করা হয় গত ১৯ ফেব্রুয়ারি। কায়িক পরীক্ষায় পণ্যের ওজন ঠিক পাওয়া গেলেও তাতে সাফরি প্রিমিয়াম খেজুর পাওয়া যায়।

অন্যদিকে ঢাকার চকবাজার এলাকার মেসার্স মোহাম্মদ এন্টারপ্রাইজ গত ৪ জানুয়ারি সৌদি আরব থেকে দুই কন্টেইনারে ৫০ মেট্রিক টন খেজুর আমদানি করে। ফ্রেশ ডেটস ঘোষণা দিয়ে আনা এই চালানটিরও খালাস স্থগিত করা হয়। গত ১৭ জানুয়ারি কেডিএস ডিপোতে কন্টেইনার দুটি খুলে চালানের শতভাগ কায়িক পরীক্ষা করেন শুল্ক গোয়েন্দারা। এতে ঘোষিত পণ্যের ওজন ঠিক পাওয়া গেলেও তাতে পাওয়া যায় ঘোষণার চেয়ে উন্নত মানের আজওয়া ও মাবরুম খেজুর। 

এ সম্পর্কে কাস্টমস গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক মো. মিনহাজ উদ্দিন প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, গোপন সংবাদ থাকায় কাস্টমস গোয়েন্দারা খেজুরের তিনটি চালান আটক করেন। তিনটিতেই ঘোষণার বাইরে উন্নত মানের খেজুর পাওয়া যায়। আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বিষয়টি আমরা চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসকে অবহিত করেছি। 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসের উপকমিশনার মো. আহসান উল্লাহ প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, তিনটি চালানের বিষয়ে আমি বলতে পারব না। ৪৬ লাখ টাকা শুল্ক ফাঁকির যে চেষ্টা করা হয়ে সেই চালানটি নিয়ে আমি তদন্ত করেছি। তদন্তে আমরা পেয়েছি আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান ও সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট পরস্পর যোগসাজশে কায়িক পরীক্ষার রিপোর্ট এবং ছবি চেঞ্জ করেছে। এ কারণে আমরা তদন্ত প্রতিবেদনে আমদানিকারকের সর্বোচ্চ শাস্তি এবং সিঅ্যান্ডএফ প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স বাতিলের সুপারিশ করেছি। এর মধ্যে আমদানিকারকের বিরুদ্ধে ফাঁকি দেওয়া শুল্কের চারগুণ অর্থাৎ প্রায় ১ কোটি ৮০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। সিঅ্যান্ডএফ প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স বাতিলের জন্য কাগজপত্র লাইসেন্স শাখায় পাঠানো হয়েছে। 

বাকি দুটি চালানের বিষয়ে জানতে কাস্টমস হাউসের উপকমিশনার কাজী ইরাজ ইশতিয়াকের সঙ্গে মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তা সম্ভব হয়নি।

প্রসঙ্গত, আগে কম দামের খেজুরের দামেই শুল্কায়ন হতো উন্নত মানের খেজুরের। এতে রাজস্ব হারাত সরকার। বিষয়টি নিয়ে লেখালেখির পর খেজুরের শুল্কায়নে নতুন নিয়ম চালু করেছে চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউস। গত বছরের ৩ এপ্রিল চালু করা এ নিয়ম অনুযায়ী, এখন থেকে খেজুরের মানের ওপর ভিত্তি করে শুল্কায়ন করা হবে। এ ক্ষেত্রে প্রিমিয়াম গ্রেডের (উন্নত মানের) খেজুর প্রতি কেজি ৪ ডলার, মিডিয়াম গ্রেডের (মাঝারি মানের) খেজুর প্রতি কেজি ২ দশমিক ৫ ডলার এবং লোয়েস্ট গ্রেড (নিম্ন মানের) খেজুর প্রতি কেজি ১ ডলার করে শুল্কায়ন করা হবে।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা