× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

আর্থিক প্রতিষ্ঠান ছাড়ছেন ব্যক্তি আমানতকারীরা

রেদওয়ানুল হক

প্রকাশ : ২১ মার্চ ২০২৪ ০৯:৫৪ এএম

আপডেট : ২১ মার্চ ২০২৪ ১১:১৬ এএম

আর্থিক প্রতিষ্ঠান ছাড়ছেন ব্যক্তি আমানতকারীরা

ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানে (এনবিএফআই) ব্যক্তি আমানতকারীর সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে কমছে। স্বাভাবিক নিয়মে দিনে দিনে আমানতকারীর সংখ্যা বাড়ার কথা থাকলেও উল্টো বিদ্যমান আমানতকারীরাই প্রতিষ্ঠান ছেড়ে যাচ্ছেন। গত এক বছরে ৯০ হাজারের বেশি আমানতকারী আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে তাদের হিসাব বন্ধ করে অন্যত্র চলে গেছেন। তবে কিছু প্রাতিষ্ঠানিক আমানতকারীর ওপর ভর করে সার্বিক খাতে মোট আমানতে স্বল্প পরিমাণে প্রবৃদ্ধি হয়েছে। বিতরণকৃত ঋণের অনুপাতে এই আমানত খুবই কম। গত এক বছরে আমানতের তিন গুণ ঋণ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ব্যাপারে আস্থাহীনতা ও অব্যবস্থাপনার কারণেই উল্লিখিত পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২২ সালের ডিসেম্বর শেষে আর্থিক প্রতিষ্ঠান খাতে ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান মিলে মোট আমানতকারীর সংখ্যা ছিল ৫ লাখ ২১ হাজার ৫৫৯টি। ২০২৩ সালের ডিসেম্বর শেষে এই সংখ্যা কমে দাঁড়ায় ৪ লাখ ৩১ হাজার ২২১টি। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে আমানতকারীর সংখ্যা কমেছে প্রায় ৯০ হাজার ৩৭৮টি বা ১৭ দশমিক ৩২ শতাংশ। এর মধ্যে পুরুষদের ব্যক্তিগত হিসাব কমেছে ৭০ হাজার ৩৬৩টি। তবে এ সময় পুরুষদের প্রাতিষ্ঠানিক হিসাব বেড়েছে ৩ হাজার ৫৭৭টি। আর গত এক বছরে নারী আমানতকারীদের হিসাব কমেছে ২৫ হাজার ২০৭টি। একই সময়ে নারীদের প্রাতিষ্ঠানিক হিসাব বেড়েছে ১ হাজার ৬৫৫টি।

খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশের আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো একধরনের সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। পিপলস লিজিংসহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের পরিচালক ও কর্মকর্তাদের অনিয়ম, জালিয়াতি ও যোগসাজশের মাধ্যমে নামে-বেনামে ঋণ বের করে নেওয়ায় এ সংকট তৈরি হয়েছে। এ কারণে আগেই আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ওপর আস্থা কমেছে মানুষের। এর মধ্যেই এ খাতে আমানত ও ঋণের সুদে সর্বোচ্চ সীমা বেঁধে দেওয়া হয়। এ ছাড়া রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পর থেকে মূল্যস্ফীতির পারদ চড়তে থাকায় জীবনযাত্রার ব্যয়ও বেড়েছে মানুষের। এসব কারণে ব্যক্তি আমানতকারীর হিসাব কমে থাকতে পারে।

তবে প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ মনে করে মূল্যস্ফীতির চাপে ক্ষুদ্র আমানতকারীরা টাকা তুলে নিচ্ছেন। বিশেষ করে গ্রামের দরিদ্র মানুষের মধ্যে ক্ষুদ্র আমানত উত্তোলনের প্রবণতা বেড়েছে। তা ছাড়া হিসাব পরিচালনায় খরচ বেশি হওয়ায় অতি ক্ষুদ্র আমানত সংগ্রহে প্রচারণা কমিয়ে দিয়েছেন কেউ কেউ। ফলে সার্বিকভাবে ব্যক্তি আমানতকারীর সংখ্যা কমে গেছে। তবে প্রাতিষ্ঠানিক আমানত বৃদ্ধি পাওয়ায় সার্বিকভাবে আমানত বেড়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কায়সার হামিদ প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘উচ্চ মূল্যস্ফীতির চাপে ক্ষুদ্র আমানতকারীরা টাকা উত্তোলন করছেন। বিশেষ করে গ্রামের মানুষ সঞ্চয় ভাঙছেন। তাই ব্যক্তি খাতে আমানত কিছুটা কমলেও প্রাতিষ্ঠানিক আমানত বেড়েছে। ফলে সার্বিক আমানত প্রবৃদ্ধি ইতিবাচক রয়েছে।’ তিনি বলেন, বাংলাদেশ ফাইন্যান্স সব খাতেই ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে।

আইডিএলসি ফাইন্যান্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম জামাল উদ্দিন প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘আমানত বিবেচনায় হিসাব পরিচালনায় খরচ বেশি হওয়ায় ক্ষুদ্র আমানত সংগ্রহে প্রচারণা কমিয়ে দিয়েছি। কারণ এতে ব্র্যান্ডিং খরচের তুলনায় আমানত সংগ্রহের হার খুবই কম। তাই ক্ষুদ্র আমানত কমে গেছে।’ তিনি বলেন, ‘আমাদের সাড়ে তিন লাখ ক্ষুদ্র হিসাবের বিপরীতে আমানত এসেছে মাত্র ১৬০ কোটি টাকা। অথচ কয়েকজন বড় আমানতকারী থেকেই সমপরিমাণ আমানত সংগ্রহ সম্ভব। তা ছাড়া ক্ষুদ্র আমানতকারী সংগ্রহ এবং হিসাব পরিচালনায় যে পরিমাণ অর্থ খরচ হয় তা লাভজনক নয়।’

প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২২ সালের ডিসেম্বর শেষে আর্থিক প্রতিষ্ঠানের আমানতের পরিমাণ ছিল ৪৩ হাজার ৭৫২ কোটি টাকা। আর ২০২৩ সালের ডিসেম্বর শেষে আমানত বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৪ হাজার ৮৩০ কোটি টাকায়। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে আমানত বেড়েছে ১ হাজার ৭৮ কোটি টাকা।

তথ্য বলছে, আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মোট আমানতের বেশিরভাগই ঢাকা বিভাগে। এর পরিমাণ প্রায় ৯২ দশমিক ৪৫ শতাংশ। এরপর চট্টগ্রাম বিভাগে ৪ দশমিক ৬৭ শতাংশ, রাজশাহীতে ১ দশমিক ০৪ শতাংশ, খুলনায় শূন্য দশমিক ৭৯ শতাংশ, সিলেটে শূন্য দশমিক ৫৭ শতাংশ, ময়মনসিংহে শূন্য দশমিক ১৯ শতাংশ, রংপুরে শূন্য দশমিক ১৭ শতাংশ এবং বরিশালে শূন্য দশমিক ১২ শতাংশ রয়েছে।

অন্যদিকে গত বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো ঋণ বিতরণ করেছে ৭৩ হাজার ৭৫৯ কোটি টাকাÑ যা ২০২২ সালের ডিসেম্বর শেষে ছিল ৭০ হাজার ৩২১ কোটি টাকা। ফলে এক বছরের ব্যবধানে এ খাতে ঋণ বেড়েছে ৩ হাজার ৪৩৮ কোটি টাকা। অর্থাৎ ঋণ যেভাবে বাড়ছে গত এক বছর সেভাবে আমানত বাড়েনি।

বিভিন্ন অনিয়মে জর্জরিত এ খাতে খেলাপি ঋণও বাড়ছে লাফিয়ে। গত বছরের সেপ্টেম্বর শেষে খেলাপি ঋণ বেড়ে দাঁড়ায় ২১ হাজার ৬৫৮ কোটি ১৫ লাখ টাকা, যা বিতরণ করা ঋণের ২৯ দশমিক ৭৫ শতাংশ। আর ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এ খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ১৭ হাজার ৩২৭ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ২৪ দশমিক ৬১ শতাংশ। যদিও ডিসেম্বর প্রান্তিকের খেলাপি ঋণের তথ্য এখনও প্রকাশ করেনি বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে ডিসেম্বর শেষে এর পরিমাণ আরও বাড়তে পারে বলে মনে করছেন খাতসংশ্লিষ্টরা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, আস্থাহীনতা ও উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ব্যক্তি গ্রাহকরা আমানত তুলে নিচ্ছেন। এ কারণে হিসাব কমেছে বলে মনে হয়। তবে একই সময়ে বড় বড় করপোরেট গ্রাহকদের আমানত আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ঢুকেছে। এ কারণে সার্বিক আমানত বেড়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, এটা আর্থিক খাতের বিদ্যমান বিশৃঙ্খলা, সমস্যা ও নতুন নতুন যেসব চ্যালেঞ্জ আসছে তারই প্রতিফলন। ব্যাংকের ক্ষেত্রে যেমন খেলাপিরা টাকা ফেরত না দিলেও তাদের বিরুদ্ধে তেমন কোনো ব্যবস্থা নিতে দেখা যায় না, আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ক্ষেত্রেও একই আচরণ দেখা যাচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, এখানেও পরিচালক ও কর্মকর্তারা নিজেদের মধ্যে যোগসাজশে নামে-বেনামে ঋণের টাকা তছরুপ করে পালিয়ে গেছেন। ফলে এ খাতের প্রতি মানুষের অবিশ্বাস ও সন্দেহ বেড়েছে, টাকা রাখলে ফেরত পাওয়া যাবে কিনা এই ভয় ঢুকে গেছে। এ ছাড়া আমানতের সুদে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ক্যাপ দেওয়ায় গ্রাহকরা আরও নিরুৎসাহিত হয়ে পড়েছেন।

সিপিডির সম্মানীয় ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, “আস্থার সংকটের পাশাপাশি বর্তমানে যে বিষয়টি কাজ করছে তা হলো ‘উচ্চ মূল্যস্ফীতি’। জীবনযাত্রার ব্যয় বহন করতে গিয়ে সাধারণ মানুষ সঞ্চয় ভেঙে খাচ্ছেন। সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ পরিস্থিতি দেখলেও একই চিত্র দেখা যায়। তা ছাড়া ব্যাংক আমানতে সুদহার বেড়ে যাওয়ায় অনেকে আর্থিক প্রতিষ্ঠানের চেয়ে ব্যাংকে আমনত রাখা বেশি নিরাপদ মনে করছেন।

বর্তমানে দেশে ৩৫টি ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান চালু রয়েছে। এর মধ্যে তিনটি সরকারি, ১২টি দেশি-বিদেশি যৌথ মালিকানায় এবং বাকিগুলো দেশীয় ব্যক্তিমালিকানায় পরিচালিত। এর মধ্যে হাতে গোনা কয়েকটি বাদে বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠান রয়েছে তারল্য সংকটে। অবস্থা এমন পর্যায়ে যে, আমানতকারীদের টাকাও ফেরত দিতে পারছে না কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে অন্তত ১০টি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অবস্থা এখন নাজুক।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা