× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

শত বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গেছে বিদেশি ঋণের বোঝা

রেদওয়ানুল হক

প্রকাশ : ২২ মার্চ ২০২৪ ০০:০২ এএম

আপডেট : ২২ মার্চ ২০২৪ ০১:০৯ এএম

শত বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গেছে বিদেশি ঋণের বোঝা

বাংলাদেশের বৈদেশিক ঋণের বোঝা আরও ভারী হয়েছে। মেগা প্রজেক্টের ঋণের চাপে ২০২৩ সাল শেষে দায় ১০০ বিলিয়ন ছাড়িছে গেছে। এক বছরে এ অঙ্ক বেড়েছে ৪ বিলিয়ন ডলারের বেশি। তবে উচ্চ সুদের চাপে বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবাহ কমে যাওয়ায় নিট অঙ্ক ততটা বাড়েনি। অন্যথায় এ হিসাব অন্তত আরও সাড়ে ৪ বিলিয়ন বেশি হতো।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৩ সাল শেষে বিদেশি ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ১০০ দশমিক ৬৪ বিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে সরকার ও সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর বিদেশি ঋণের পরিমাণ ৭৯ দশমিক ৬৯ বিলিয়ন ডলার। আর দেশের বেসরকারি খাতের বিদেশি ঋণের পরিমাণ ২০ দশমিক ৯৫ বিলিয়ন ডলার। ২০২২ সাল শেষে এর পরিমাণ ছিল ৯৬ দশমিক ৫২ বিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে সরকার ও সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর বিদেশি ঋণের পরিমাণ ছিল ৭২ দশমিক ২১ বিলিয়ন ডলার। আর দেশের বেসরকারি খাতের বিদেশি ঋণের পরিমাণ ২৪ দশমিক ৩১ বিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ এক বছরে বিদেশি ঋণ বেড়েছে ৪ দশমিক ১৭ বিলিয়ন ডলার।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিদেশি ঋণ নেওয়ার ক্ষেত্রে সরকারের আরও সতকর্তা অবলম্বন করার দরকার ছিল। সক্ষমতা অনুযায়ী বিদেশি ঋণ নিতে হয়। বর্তমানে যে পরিমাণ বিদেশি ঋণ রয়েছে, তা পরিশোধে সরকার চাপ পড়বে।

তথ্য বলছেন, গত এক বছরে সরকার ও সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর বিদেশি ঋণের পরিমাণ বাড়লেও কমেছে বেসরকারি খাতের বিদেশি ঋণের পরিমাণ। ২০২৩ সালে সরকার ও সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর বিদেশি ঋণ বেড়েছে ৭ দশমিক ৪৮ বিলিয়ন ডলার। একই সময়ে বেসরকারি খাতের ঋণ কমেছে ৩ দশমিক ৩৬ বিলিয়ন ডলার। বেসরকারি খাতের বেশির ভাগ স্বল্পমেয়াদি বিদেশি ঋণ কমেছে।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৩ সাল শেষে বাংলাদেশে স্বল্পমেয়াদি বিদেশি ঋণ এসেছে ২৫ দশমিক ৮০ বিলিয়ন ডলার। তবে এ সময়ে ঋণ পরিশোধ করা হয় ৩০ দশমিক ৫০ বিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ গত বছর নিট স্বল্পমেয়াদি ঋণ শোধ করা হয়েছে চার দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার। গত বছর রেকর্ড পরিমাণ বেসরকারি খাতে স্বল্পমেয়াদি বিদেশি ঋণ কমার ফলে এ খাতের ঋণের স্থিতিও কমেছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৩ সাল শেষে স্থিতি কমে দাঁড়িয়েছে ১১ দশমিক ৭৯ বিলিয়ন ডলার। ২০২২ সালে স্থিতি ছিল ১৬ দশমিক ৪১ বিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ এক বছরে স্থিতি কমেছে ৪ দশমিক ৬২ বিলিয়ন ডলার।

বেসরকারি উদ্যোক্তারা জানিয়েছেন, গত বছরের শুরুতে প্রতি ডলারের দর ছিল ৮৫ টাকা। ডিসেম্বরের শেষে তা দাঁড়ায় ১০৭ টাকা। এর মানে, শুধু বিনিময়-হারজনিত কারণে প্রতি ডলারে খরচ বেড়েছে ২২ টাকা। সুদহারও কয়েক গুণ বেড়েছে। ২০২১ সালের শুরুতে সব ধরনের খরচসহ স্বল্পমেয়াদি বিদেশি ঋণের সুদহার ছিল ৩ শতাংশের কম। এখন সেই ঋণে সুদ গুনতে হচ্ছে ৯ শতাংশের বেশি। আবার বিনিময় হার বা সুদহার এ পর্যায়ে স্থিতিশীল থাকবে কিনা তাও কেউ বলতে পারছে না। অভ্যন্তরীণ ঋণের তুলনায় বিদেশি ঋণের খরচ বেশি হওয়ায় ব্যবসায়ীরা বিদেশি ঋণ নিতে নিরুৎসাহিত হচ্ছেন। এতে বিদেশি ঋণের প্রতি ঝোঁক কমে এসেছে।

এ প্রসঙ্গে পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, ভবিষতে যেন বড় অপরিকল্পিত প্রকল্প না নেওয়া হয়। যেকোনো বড় প্রকল্প নিলে ভেবেচিন্তে নিতে হবে। সস্তায় যদি জাপানিরা কোনো প্রকল্প করে দেয় তা নেওয়া যায়। তবে চীনের ঋণের ব্যাপারে সর্তক থাকতে হবে। তারা যদি সস্তায় ঋণ দেয় তাহলে সেটাও নেওয়া যাবে। বর্তমানে যে পরিমাণ বিদেশি ঋণ নেওয়া হয়েছে, তা পরিশোধে চাপে পড়বে দেশ। তাই আগামীতে কিভাবে রপ্তানি আয় ও রেমিট্যান্স বাড়ানো যায় সেদিকে মনযোগ দিতে হবে।

তিনি আরও বলেন, সরকার গত কয়েক বছর অপরিকল্পিতভাবে বিভিন্ন মেগা প্রকল্পের জন্য বিদেশি ঋণ নিয়েছে। বিদ্যুৎ খাতেও বিপুল পরিমাণ বিদেশি ঋণ নেওয়া হয়। এর মধ্যে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্প অন্যতম। আবার পদ্মা রেলওয়ে, কর্ণফুলী টানেলসহ বড় কিছু প্রকল্প এখনই দরকার ছিল না। কোনো প্রকার স্টাডি ছাড়া হঠাৎ করেই এসব প্রকল্প নেওয়া হয়েছে।

তবে বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, দেশের সরকারি-বেসরকারি বিদেশি ঋণ স্থিতি মোট জিডিপির প্রায় ২২ শতাংশ। তাই দেশের জিডিপির তুলনায় এ পরিমাণ ঋণ চাপ হবে না। বরং আরও ঋণ নেওয়ার সুযোগ রয়েছে বলে মনে করেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র। সম্প্রতি তিনি এমন মন্তব্য করেছে। তবে গতকাল সন্ধ্যায় এ প্রতিবেদন তৈরির সময় নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মেজবাউল হককে ফোন করা হলে তিনি সাড়া দেননি। প্রসঙ্গত, সম্প্রতি সাংবাদিকদের এড়িয়ে চলছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংক সংশ্লিষ্টরা। দেশের বেশ কয়েকটি ব্যাংক রেড জোনে চলে যাওয়ার খবর প্রতিদিনের বাংলাদেশসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশ হওয়ার পর থেকে সাংবাদিকদের ওপর কড়াকড়ি আরোপ শুরু করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। 

বাংলাদেশ ব্যাংকের বক্তব্যের সঙ্গে একমত নন অর্থনীতিবিদ ড. আহসান এইচ মনসুর। তিনি মনে করেন, বাংলাদেশের মতো দেশে বিদেশি ঋণ-জিডিপির অনুপাত হিসাব করাই অর্থহীন। কারণ বাংলাদেশের কর-জিডিপির অনুপাত মাত্র ৮ শতাংশ। এর অর্থ হলো সরকার নিজস্ব আয় দিয়ে ঋণ পরিশোধে সক্ষম না। এজন্য এখানে জিডিপির সঙ্গে ঋণের অনুপাত হিসাব করে কোনো লাভ নেই। বাংলাদেশে ঋণের অনুপাত তুলনা করতে হবে সরকারের রাজস্ব আয়ের সঙ্গে। কোনো দেশের ঋণ-রাজস্ব অনুপাত ২০০-২৫০ শতাংশ পর্যন্ত মেনে নেওয়া যায়। কিন্তু বাংলাদেশে ঋণ-রাজস্ব অনুপাত ৪০০ শতাংশের বেশি। সে হিসাবে সরকারের ঋণ বিপজ্জনকমাত্রা অনেক আগেই ছাড়িয়ে গেছে বলে মত এ অর্থনীতিবিদের। 

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, দেশের মোট বিদেশি ঋণের প্রায় ৭০ শতাংশই নেওয়া হয়েছে গত ১০ বছরে। ২০১৫-১৬ অর্থবছর শেষেও বিদেশি উৎস থেকে সরকারি ও বেসরকারি খাতের মোট ঋণ স্থিতি ছিল ৪১ দশমিক ১৭ বিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে ৩৪ দশমিক ১৯ বিলিয়ন ডলার ছিল দীর্ঘমেয়াদি ঋণ। বাকি ৬ দশমিক ৯৮ বিলিয়ন ডলার ঋণ ছিল স্বল্পমেয়াদি। ওই সময় বিদেশি ঋণ ছিল দেশের মোট জিডিপির ১৫ দশমিক ৫ শতাংশ। এর পর থেকে বিদেশি ঋণ ক্রমাগত বেড়েছে। ২০১৬-১৭ অর্থবছর শেষে বিদেশি ঋণের স্থিতি দাঁড়ায় ৪৫ দশমিক ৮১ বিলিয়ন ডলারে। ২০১৭-১৮ অর্থবছর শেষে এ ঋণের স্থিতি ৫৬ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যায়। ২০১৮-১৯ অর্থবছর শেষে বিদেশি ঋণের স্থিতি দাঁড়ায় ৬২ দশমিক ৬৩ বিলিয়ন ডলারে।

বিদেশি ঋণ সবচেয়ে বেশি বেড়েছে ২০১৮ সালের পর। ২০১৯-২০ অর্থবছর শেষে বিদেশি ঋণের স্থিতি ৬৮ দশমিক ৫৫ বিলিয়ন ডলারে গিয়ে ঠেকে। ২০২০-২১ অর্থবছরে এ প্রবৃদ্ধি ১৯ শতাংশ ছাড়িয়ে যায়। ওই অর্থবছর শেষে বিদেশি ঋণের স্থিতি দাঁড়ায় ৮১ দশমিক ৬২ বিলিয়ন ডলারে। ২০২১-২২ অর্থবছরে বিদেশি ঋণের প্রবৃদ্ধি হয় ১৬ দশমিক ৯ শতাংশ। অর্থবছর শেষে এ ঋণের স্থিতি ৯৫ দশমিক ৪৫ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যায়। এরপর আন্তর্জাতিক বাজারে সুদহার বেড়ে যাওয়ায় বাংলাদেশ থেকে বিদেশি অনেক প্রতিষ্ঠান স্বল্পমেয়াদি ঋণ প্রত্যাহার করে নেয়। এতে বিদেশি ঋণপ্রবাহের প্রবৃদ্ধিও কমে যায়। ২০২২-২৩ অর্থবছর শেষে বিদেশি ঋণের স্থিতি ৯৮ দশমিক ৯৪ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়। চলতি অর্থবছরের প্রথমার্ধ তথা ডিসেম্বর শেষে বিদেশি ঋণের স্থিতি ১০০ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করেছে।

অন্যদিকে বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার নিট রিজার্ভ এখন ১৫ বিলিয়ন ডলারের ঘরে। বিপরীতে স্বল্পমেয়াদি বিদেশি ঋণ রিজার্ভের কাছাকাছি। এদিক থেকেও বিদেশি ঋণের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবস্থান ঝুঁকিপূর্ণ। বিদেশি ঋণের কিস্তি পরিশোধের চাপ বাড়তে থাকায় ডলারের জোগান না বাড়ালে পরিস্থিতি খুবই খারাপ দিকে মোড় নিতে পারে বলে মত সংশ্লিষ্টদের।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা