× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

বাজার

‘যৌক্তিক’ মূল্যের গোড়ায় গলদ

ফারুক আহমাদ আরিফ

প্রকাশ : ২২ মার্চ ২০২৪ ০৯:১২ এএম

আপডেট : ২২ মার্চ ২০২৪ ১৪:৩৫ পিএম

‘যৌক্তিক’ মূল্যের গোড়ায় গলদ

ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলার দেলোয়ার হোসেন ১০ একর জলাশয়ে মাছ চাষ করেন। দীর্ঘ ১০ বছর এ পেশায় জড়িত দেলোয়ার জানান, এক কেজি ওজনের পাঙাশ মাছ উৎপাদনে তার খরচ হয় ১২০ টাকা। অথচ সরকারিভাবে পাঙাশের উৎপাদন খরচ নির্ধারণ করা হয়েছে ১১৪ টাকা ৭৫ পয়সা। এই হিসাব অনুযায়ী বাজারে তোলার আগেই তার আসল খরচ থেকেই কাটা পড়ে যায় ৫ টাকা ২৫ পয়সা। পাঙাশের উৎপাদক পর্যায়ে দর ধরা হয়েছে ১৩৫ টাকা ২৯ পয়সা। এই দামে কেনাবেচা হলে মাছ চাষির লাভ থাকে নামমাত্র। সরকারি হিসাবে কেজিতে ২০ টাকার মতো থাকে। পাইকারিতে ওই পাঙাশের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ১৫৩ টাকা ৩৫ পয়সা। এই ধাপে দেখা যায়, অল্প সময়ের বিনিয়োগেই পাইকারদের পকেটে ঢুকে যায় প্রায় ১৮ টাকা। খুচরা পর্যায়ে নির্ধারণ করা মূল্য ১৮০ টাকা ৮৭ পয়সা। এই ধাপে মুনাফার অঙ্ক বিশাল। প্রতি কেজিতে ২৭ টাকার মতো। তবে এই ধাপগুলোতে আনুষঙ্গিক কিছু ব্যয় আছে যা লাভ থেকে বাদ যাবে। 

গত ১৫ মার্চ কৃষি বিপণন অধিদপ্তর থেকে ২৯টি পণ্যের দাম বেঁধে দেওয়া হয়েছে। তারা এক বিজ্ঞপ্তিতে এটাকে অভিহিত করেছে, ‘নিত্যপ্রয়োজনীয় কৃষিপণ্যের উৎপাদন খরচ এবং যৌক্তিক মূল্য নির্ধারণ’ হিসাবে। কিন্তু তাদের তালিকায় বেশিরভাগ পণ্যের ক্ষেত্রেই হিসাবের নানা অসঙ্গতি চোখে পড়ে। অধিদপ্তর মাছ, মাংস, সবজি ও ডালসহ ২৯টি কৃষিপণ্যের ক্ষেত্রে কৃষকের উৎপাদন ব্যয়, যৌক্তিক মূল্যে কৃষকের বিক্রি, পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে বিক্রির জন্য দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে। এই দাম নির্ধারণের ফলে কৃষক প্রকৃত অর্থে কতটা লাভবান হবে তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। সংশ্লিষ্টরা এর যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।

মাছ চাষি দেলোয়ার হোসেন নিজের আয়-ব্যয়ের হিসাব তুলে ধরে জানান, ১০ একর জলাশয়ের লিজ বাবদ তাকে ব্যয় করতে হয়েছে ৫ লাখ ২৫ হাজার টাকা। ৫ থেকে ৬ ইঞ্চি সাইজের প্রতিটি পাঙাশের পোনা ১০ টাকা করে কিনতে হয়। পাঙাশের ওজন এক কেজি হতে ৮ থেকে ৯ মাস সময় লাগে। এক কেজি ওজনের পাঙাশের জন্য ১৫০০ গ্রাম খাবার লাগে। ১০ একর খামারে ৯০ হাজার মাছে কমবেশি ১২০০ গ্রাম ওজন ধরে প্রায় ১ লাখ ১০ হাজার কেজি মাছের জন্য তার খাদ্য দরকার হয় ১ লাখ ৬০ হাজার কেজি খাদ্য। খামার দেখাশোনার জন্য দুজন শ্রমিকের মাসিক বেতন ২০ হাজার টাকা ধরে ৯ মাসে ব্যয় ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা। এর সঙ্গে নিজেসহ পরিবারের দুজনের পারিশ্রমিক হিসাব করলে যোগ হয় আরও ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা। খামারে প্রতি মাসে চুন, লবণ ও জিওলাইটসহ মেডিসিনে ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা খরচ হয়। সব হিসাব করলে দেখা যায়, এক কেজি ওজনের পাঙাশে পরিণত হতে ১২০ টাকার ওপরে ব্যয় হয়। 

কৃষি বিপণন অধিদপ্তর কোন প্রক্রিয়ায় দাম নির্ধারণ করেছে তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন খামারি ও চাষিরা। গত বছরের সেপ্টেম্বরেও দেশি পেঁয়াজ, আলু ও ডিমের দাম বেঁধে দেওয়া হয়েছিল। তা ছাড়া প্রতি মাসেই এলপিজি, চিনি ও সয়াবিন তেলের দাম নির্ধারণ করে দেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। কিন্তু গত ছয় মাসে কোনো পণ্যই সরকারি দামে বিক্রি হয়নি। বরং বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। ফলে ২৯ পণ্যের দাম নির্ধারণ করে দিলেও সেটা কতখানি বাস্তবায়ন হবে এমন প্রশ্নও দেখা দিয়েছে।

ফরিদপুর সদর উপজেলার অম্বিকাপুর এলাকার চাষি আব্দুল লতিফ জানান, এক কেজি পেঁয়াজ উৎপাদনে এবার তার ব্যয় ৫০ টাকার বেশি। অন্যদিকে সরকার ব্যয় ধরেছে ৩৪ টাকা। বগুড়ায় মাঠপর্যায়ের হিসাবে দেখা যায় এবার প্রতি কেজি আলু উৎপাদনে ব্যয় হয়েছে ১৮ টাকা ৫৭ পয়সা। সরকারিভাবে উৎপাদন ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে ১৩ টাকা ৯০ পয়সা। তেমনি করে মুগ ডাল, মাসকলাই, মসুর ডাল, খেসারি ডাল, কাতল মাছ, ছাগলের মাংস, সোনালি মুরগি, বাঁধাকপি, ফুলকপি, শিম উৎপাদনে অধিদপ্তর যে ব্যয় ধরেছে তার থেকে প্রকৃত ব্যয় অনেকটাই বেশি। 

ব্রয়লার মুরগির উৎপাদন ব্যয় কত

অধিদপ্তরের হিসাবে এক কেজি ব্রয়লারে উৎপাদন ব্যয় ১৪৫ টাকা ৭৮ পয়সা, সেখানে ৬ টাকা ৩ পয়সা মুনাফায় খামারি বিক্রি করবে ১৫১ টাকা ৮১ পয়সায়, পাইকার ১০ টাকা ৮৮ পয়সা মুনাফায় বিক্রি করবে ১৬২ টাকা ৬৯ পয়সা এবং খুচরা পর্যায়ে ১২ টাকা ৬১ পয়সা মুনাফায় বিক্রি করবে ১৭৫ টাকা ৩০ পয়সায়। কিন্তু বাস্তবের সঙ্গে এই হিসাব মেলে না।

বাংলাদেশ পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশনের (বিপিএ) সভাপতি সুমন হাওলাদার বলেন, একটি খামারে প্রতিটি বাচ্চা ৫২ টাকা দরে ১০৫০টি বাচ্চা কিনতে ব্যয় হয় ৫৪ হাজার ৫০০ টাকা। প্রতি কেজি খাবার ৭০ টাকা ধরলে প্রয়োজন ১ লাখ ৮৩ হাজার ৭৫০ টাকা, ঘর ভাড়া ৬ হাজার ৫০০ টাকা, ভ্যাকসিন ও মেডিসিন বাবদ ১২ হাজার টাকা, শ্রমিক ব্যয় ১২ হাজার টাকা, ধানের কুঁড়া বাবদ ৪ হাজার ৫০০ টাকা, বিদ্যুতে ৩ হাজার ৫০০ টাকা, অন্যান্য ব্যয় ২ হাজার ৫০০ টাকা, ৫ শতাংশ ক্ষতিসহ মোট ব্যয় হবে ২ লাখ ৭৯ হাজার ৩৫০ টাকা। সেখানে মোট ১ হাজার ৫৬০ কেজি ওজনের মুরগি হবে। তাতে করে উৎপাদন ব্যয় হয় ১৭৮ টাকা ৪০ পয়সা। 

তিনি বলেন, কৃষি বিপণন অধিদপ্তর যৌক্তিক দাম নির্ধারণ করতে গিয়ে অযৌক্তিক কাজ করেছে। কেননা বর্তমানে মুরগির বাচ্চা ও ফিডের দাম বেড়েছে। বাচ্চার দাম ৫০ টাকা হলে প্রতি কেজি মুরগির উৎপাদন ব্যয় হবে ১৬৫ টাকা। বাচ্চার দাম ৬০ টাকা হলে ব্যয় হবে ১৭০ থেকে ১৭৫ টাকা এবং বাচ্চার দাম ১০০ টাকা হলে উৎপাদন ব্যয় হবে ২০০ টাকা কেজি। তবে করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোর ক্ষেত্রে উৎপাদন ব্যয় হবে কেজিতে ১৩০ টাকা। তারা নিজেরা বাচ্চা উৎপাদন করে ও ফিড তৈরি করে এবং নিজেদের মধ্যে কম দামে সরবরাহ করে থাকে। সেখানে প্রান্তিক খামারিদের ব্যয় কেজিতে ৪০ টাকা বেশি হয়। তাই সরকারের নির্ধারণ করা দাম সম্পূর্ণ অযৌক্তিক। তাই আমরা এটি বাদ দিয়ে সকলের সঙ্গে আলোচনা করে দাম নির্ধারণের দাবি জানাচ্ছি।

গরু পালনে ব্যয় কত

উৎপাদক পর্যায়ে এক কেজি গরুর মাংসের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ৫৮৭ টাকা ৫০ পয়সা। হিসাবের জন্য অধিদপ্তর ১৫০ কেজির (লাইভওয়েট প্রতি কেজি ৩৫০ টাকা) একটি গরুর দাম ধরেছে ৫২ হাজার ৫০০ টাকা। খামারির ঘরে গরু পালনের জন্য ৩ মাস সময় ধরা হয়েছে। এ সময়ে খাদ্য বাবদ ১৩ হাজার ৫০০ টাকা, ওষুধ ও টিকায় ৪ হাজার ৫০০ টাকাসহ ব্যয় ধরা হয়েছে ৭০ হাজার ৫০০ টাকা। উৎপাদকের ৩ শতাংশ হিসাবে কেজিতে ১৭ টাকা ৬৩ পয়সা লাভ ধরে বিক্রয় মূল্য ঠিক করা হয়েছে ৬০৫ টাকা ১৩ পয়সা। সে হিসাবে ৭০ হাজার ৫০০ টাকা বিনিয়োগ করে ২ হাজার ১১৫ টাকা ৬ পয়সা মুনাফা পাবেন খামারি। সেখানে খামারির ব্যক্তিগত পারিশ্রমিক, ঘর তৈরি ও বিদ্যুতের ব্যয় অন্তর্ভুক্ত হয়নি। 

আবার পাইকারের একই মূলধনে ২ শতাংশ লাভ ধরে ১ হাজার ৪৮৬ টাকা ৮ পয়সা মুনাফার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। তা ছাড়া একটি গরু পরিবহনের জন্য প্রতি কেজিতে ৪ টাকা ১৭ পয়সা ধরা হয়েছে। অথচ এই টাকায় পরিবহন করার সুযোগ বর্তমানে নেই। অন্যদিকে খুচরা পর্যায়ে ৩ শতাংশ লাভ ধরে ২ হাজার ৩২২ টাকা মুনাফার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। পরিবহন ব্যয় ধরা হয়েছে ৩ টাকা ১০ পয়সা কেজি। 

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিপার্টমেন্ট অব ডেইরি অ্যান্ড পোল্ট্রি সায়েন্সের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ড. মো. মোরশেদুর রহমান বলেন, কৃষি বিপণন অধিদপ্তর দামের বিষয়টি একটি আইডিয়া সামনে এনেছে, এজন্য ধন্যবাদ। এটা নিয়ে আরও কাজ করতে হবে, যাতে প্রান্তিক চাষি ও ব্যবসায়িক খামারি উভয়েই লাভের মুখ দেখতে পারে। ১৫০ কেজি ওজনের গরু ৫২ হাজার ৫০০ টাকায় পাওয়া যাবে এটা সব সময় হবে না। গরু পালনে ঘর ও ব্যক্তির পারিশ্রমিক ধরা হয়নি। একটি বাছুর ১৫০ কেজি ওজনের গরুতে পরিণত হতে কী পরিমাণ ব্যয় হয় তার হিসাব সাধারণত থাকে না প্রান্তিক চাষিদের কাছে। সেই হিসাবটা এলাকাভিত্তিক করে দিতে হবে। গরুর মাংসের দাম যেভাবে নির্ধারণ করা হয়েছে তা যৌক্তিক মনে হচ্ছে না। 

খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ফসল উৎপাদনের উপকরণের মধ্যে সরকারি তত্ত্বাবধানে বিতরণ হওয়া ইউরিয়া, ডিএপি, টিএসপি ও এমওপি সারের দাম এক বছরে বেড়েছে কেজিতে পাঁচ টাকা। তা ছাড়া কীটনাশক, সেচ, বিদ্যুতের দাম এক বছরে অনেক বেড়েছে। আবার ব্রয়লার মুরগির ফিডের দাম দুই বছরে বস্তাপ্রতি ১৫০০ টাকা ও মেডিসিনের দাম দ্বিগুণ বেড়েছে। এ অবস্থায় উপকরণের দাম না কমালে পণ্যের দাম কমানো সম্ভব হবে না। 

কী আছে বিধিমালায়

কৃষি বিপণন আইনের বিধিমালা ২০২১-এ বলা হয়েছে, মাছ, ডিম, দুধ ও দুগ্ধজাত পণ্য এবং ডালজাতীয় পণ্যের ক্ষেত্রে উৎপাদক ৩০ শতাংশ লাভ করতে পারবে। আর পাইকারি ক্ষেত্রে ১৫ শতাংশ ও খুচরা পর্যায়ে ২৫ শতাংশ লাভ করতে পারবে। শাক-সবজির ক্ষেত্রে উৎপাদক ৪০ শতাংশ, পাইকার ২৫ শতাংশ ও খুচরা পর্যায়ে ৩০ শতাংশ লাভ করতে পারবে।

অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা যা বলছেন

কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, যৌক্তিক দাম নির্ধারণের ক্ষেত্রে জমি, বীজ, সার, শ্রম, প্রক্রিয়াজাতে ব্যয়সহ সবকিছু অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। সেখানে কৃষকের নিজস্ব জমিকেও লিজ হিসেবে ব্যয় ধরা হয়েছে। 

কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের সিনিয়র কৃষি বিপণন কর্মকর্তা ও যৌক্তিক বাজারমূল্য নির্ধারণ কার্যক্রমের সমন্বয়ক মো. জাহিদুল ইসলাম বলেন, ২৯টি কৃষিপণ্যের উৎপাদন, উৎপাদক পর্যায়ে যৌক্তিক মূল্য, পাইকারি ও খুচরায় মূল্য নির্ধারণে এক বছরের হিসাব ধরা হয়েছে। এখানে কিছু পণ্য হয়তো কৃষক পর্যায়ে কম ধরা হয়েছে, কোনো ক্ষেত্রে বেশিও ধরা হয়েছে। কেননা একটি পণ্য কৃষক কখনও অনেক লাভে বা কম লাভেও বিক্রি করে। দেশের সব অঞ্চলের ব্যয়ও একরকম না। কিন্তু প্রতিবেদনে তা এক রাখতে হয়েছে। মূলত বাস্তবতার পরিপ্রেক্ষিতে কৃষক, ব্যবসায়ী ও ভোক্তা সবার কথা বিবেচনা করেই এবং প্রকৃত তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করেই মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে।

বিশেষজ্ঞদের অভিমত

শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. রিপন কুমার মণ্ডল বলেন, উৎপাদক পর্যায়ে যে দাম নির্ধারণ করা হয়েছে তা কিছুটা কাছাকাছি। কিন্তু ভোক্তা পর্যায়ে যে দাম নির্ধারণ করা হয়েছে বাস্তবে তা কোথাও নেই। কৃষককেও অন্যান্য পণ্য কিনতে হয়। যখন নিজের পণ্য বিক্রি করে অন্য পণ্য বেশি দামে কিনতে যাবে তখন তাকে অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় করতে হবে। এজন্য উৎপাদক ও খচরা পর্যায়ে যে দূরত্বটা আছে তা পূরণ করা জরুরি। ফড়িয়া ব্যবসায়ীদেরও নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। বিশেষ করে হাত বদল কমাতে হবে। চাঁদাবাজি বন্ধ করতে হবে। তাই কৃষক, ভোক্তা ও সরকারি প্রতিষ্ঠান একসঙ্গে বসে সমন্বিতভাবে দাম নির্ধারণ করলেই কাজটি সঠিকভাবে হবে। 

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি ব্যবসা ও বিপণন বিভাগের অধ্যাপক ড. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, মুগ ডালের ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে উৎপাদনের চেয়ে বিক্রিতে ২০ টাকা ৯২ পয়সা লাভ দেওয়া হয়েছে। পাইকারিতে লাভ দেওয়া হয়েছে ১৪ টাকা ৩৬ পয়সা। আলুর ক্ষেত্রে কৃষককে ৫ টাকা ৫৮ পয়সা লাভ দেওয়া হয়েছে। এটি কতটা বাস্তবসম্মত তা নীতিনির্ধারকদের চিন্তা করা দরকার। কেননা চার মাস পরিশ্রম ও ১৩ টাকা ৯০ পয়সা বিনিয়োগ করে এই সামান্য লাভ ধরা হচ্ছে। অথচ অন্য জায়গায় শ্রমিক হিসেবে কাজ করলেও সে বেশি আয় করতে পারত।

তিনি আরও বলেন, দাম নির্ধারণের ব্যাপারে কৃষক ও তার পরিবারের শ্রমব্যয় ধরা না হলে তাদের ওপর সুবিচার করা হবে না। আর কৃষক এই অর্থ দিয়ে অন্য কোথাও কাজে লাগালে কতটা লাভবান হতো সেটিও বিবেচনায় নিতে হবে। 

সরকারের বেঁধে দেওয়া দামকে অযৌক্তিক ও অগ্রহণযোগ্য আখ্যায়িত করে বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি মো. হেলাল উদ্দীন বলেন, পণ্যের যে দাম নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে তা উৎপাদক থেকে শুরু করে ভোক্তা পর্যন্ত কোনো পর্যায়েই সঠিক হয়নি। তারা যে দাম নির্ধারণ করেছে পারলে নিজেরা সেসব পণ্য এনে এই দামে বিক্রি করুক। আমরা বাজারে তাদের জায়গা দেব। তারা কয়েক মাস নিজেদের বেতন নেবে না। এসব বিক্রি করে চলবে।

দাম কমাতে করণীয় কী?

পণ্যের দাম কমাতে কী করণীয় এ সম্পর্কে বিপিএ সহসভাপতি মুরগি খামারি বাপ্পা সাহা বলেন, প্রথমেই বাচ্চার দাম কমাতে হবে ও আমদানির অনুমতি দিতে হবে। ফিড ও মেডিসিনের দাম কমাতে হবে। সাভারের গরু খামারি মো. আজহার উদ্দীন বলেন, গো-খাদ্যের দাম কমাতে হবে। পশু চিকিৎসা সহজলভ্য করতে হবে। 

কৃষিপণ্যের দাম কমানোর ক্ষেত্রে উপকরণ ব্যয় কমানোর দাবি বগুড়ার চাষি বেলাল হোসেনের। তিনি বলেন, আমাদেরকে সময় মতো ও কমমূল্যে সার, বীজ, কীটনাশক দিতে হবে। সেচের জন্য বিদ্যুৎ বিল কমাতে হবে। 

পণ্যের দাম কমাতে গোড়ায় হাত দিতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন সাবেক কৃষি সচিব আনোয়ার ফারুক। তিনি বলেন, উৎপাদনের উপকরণ তথা সার, বীজ, সেচ, বিদ্যুৎ, কীটনাশকের দাম তো কমাতেই হবে, সেই সঙ্গে যথাসময়ে কৃষকের হাতে উপকরণ পৌঁছে দিতে হবে। আবার গরু, ছাগল ও মুরগির ক্ষেত্রে ফিড ও মেডিসিনের দাম কমিয়ে প্রাপ্যতা নিশ্চিত করতে হবে। 

তিনি আরও বলেন, কৃষি বিপণন অধিদপ্তর গোড়ায় গলদ রেখে দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে। এটি কীভাবে বাস্তবায়ন হবে? কেননা কিছু পণ্যের দাম তো এখন কম। আবার কিছু পণ্যের বেশি। তাই চাপ দিয়ে, জরিমানা করে বাজার নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না। বাজারে চাহিদা অনুযায়ী জোগান নিশ্চিত করতে হবে। পরিবহন ব্যয় কমাতে হবে। চাঁদাবাজি বন্ধ করতে হবে।  

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা