দিনাজপুর প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২৪ মার্চ ২০২৪ ২১:৫০ পিএম
আপডেট : ২৪ মার্চ ২০২৪ ২১:৫১ পিএম
প্রবা ফটো
দিনাজপুরে ফের চালের বাজার অস্থির হয়ে উঠেছে। সব ধরনের চালের দাম কেজিতে বেড়েছে ৪ থেকে ৫ টাকা। এক সপ্তাহ আগে মিনিকেট চাল ৬৫-৬৬ টাকা কেজি বিক্রি হয়েছে। বর্তমানে ৬৮-৭০ টাকা। ৪৫ টাকা কেজির গুটি স্বর্ণা দাম বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা। বিআর-২৮ এক সপ্তাহ আগে ছিল ৫৪ টাকা। বর্তমানে ৫৮ টাকা। বিআর-২৯ গত সপ্তাহে ছিল ৫২ টাকা, বর্তমানে ৫৬ টাকা। গতকাল দিনাজপুরের সবচেয়ে বড় চালের বাজার বাহাদুর বাজার এনএ মার্কেটে বাজার ঘরে দেখা গেছে, প্রতি কেজি চালের দাম বেড়েছে ৪ থেকে ৫ টাকা। ২৫ কেজির বস্তায় বেড়েছে ১০০ থেকে ১২৫ টাকা এবং ৫০ কেজির বস্তায় ২০০ থেকে ২৫০ টাকা।
পাইকারি চাল ব্যবসায়ী এরশাদ আলী জানান, মিলগেট থেকে বেশি দামে চাল কিনতে হচ্ছে তাদের। মিল মালিকরা সিন্ডিকেট করে দাম নিয়ন্ত্রণ করছে। আরেক পাইকারি ব্যবসায়ী আশরাফ আলী জানান, দিনাজপুরে চালের দাম একবার বাড়লে আর কমে না। হঠাৎ বেশি দামে চাল কিনতে হচ্ছে। তাই বিক্রি করতে হচ্ছে বেশি দামে। আমাদের করার কিছু নেই।
পাইকারি ব্যবসায়ী মোর্শেদ বলেন, হঠাৎ দাম বেড়ে যাওয়ায় তার দোকানে চালের বিক্রি কমে গেছে। আরেক চাল বিক্রেতা রঞ্জিত কুণ্ডু জানান, সুগন্ধি জাতের ব্যতীত সব ধরনের চালের দাম মিলগেটেই বেশি। বাজারে ধানের সংকটে সব মিল চাহিদামতো চালও দিতে পারছে না। দাম বেড়েছে বলে বাজারে চালের ক্রেতা কম।
বাজার মনিটরিং না থাকায় চালের দাম নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হচ্ছে না, এমন অভিযোগ ক্রেতাদের। চাল কিনতে আসা মোজাম্মেল জানান, ৫ দিন আগে যে চাল কিনেছি ৬৫ টাকা কেজি, আজ (গতকাল) তা কিনলাম ৭০ টাকায়। মানুষের বাঁচার দরকার নেই। না খেয়ে মরাই ভালো।
হঠাৎ চালের দাম বৃদ্ধিতে বিপাকে পড়েছেন শ্রমিক, দিনমজুর ও খেটে খাওয়া মানুষ। চাল কিনতে আসা ইউসুফ আলী জানালেন, সারা দিন অটো চালিয়ে যা আয় হয় তা চাল আর সামান্য তরিতরকারি কিনতেই চলে যায়। ভালো কিছু মুখে জোটে না। রমজান মাসে আবার বেড়ে গেল চালের দাম। আমাদের আর কী করণীয় আছে। বেঁচে থাকাটাই এখন যেন কষ্টের।
এ বিষয়ে দিনাজপুর চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি ও আছিয়া অটো রাইস মিলের স্বত্বাধিকারী রেজা হুমায়ুন ফারুক চৌধুরী শামিম বলেন, দিনাজপুরের হাটবাজারে ধানের সরবরাহ নেই। মিল মালিকরা ধান কিনতে পারছেন না। সামনে ইরি ধান উঠলে চালের দাম কমবে। সে পর্যন্ত দাম কমার সম্ভাবনা নেই।
বাংলাদেশ হাসকিং মিল মালিক সমিতির সিনিয়র সহসভাপতি সহিদুল রহমান পাটোয়ারী মোহন বলেন, ধানের সংকট এবং বেশি দামে তাদের ধান কিনতে হচ্ছে। ধানের অভাবে অনেক মিলে উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেছে। ধানের বাজার কম হলে চালের দামও কমবে। চালের দাম নির্ভর করে ধানের দামের ওপর। দিনাজপুর জেলায় যে পরিমাণ ধান উৎপাদন হয় তা জেলার চাহিদা মিটিয়ে ঢাকাসহ সারা দেশে সরবরাহ হয়ে থাকে। বেশ কিছুদিন চালের বাজার স্থিতিশীল থাকার পর ফের দাম বেড়ে যাওয়ায় খেটে খাওয়া মানুষ বিপাকে পড়েছে। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ ও ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা গেলে চালের দাম কমতে পারে, এমন অভিমত খুচরা ব্যবসায়ীদের। জেলার যে সমস্ত মিল মালিক ও মজুদার রয়েছেন, তাদের গুদামে অভিযান চালালে বাজার স্থিতিশীল হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, এমনটাই মন্তব্য ভোক্তাদের।