ভল্ট থেকে টাকা উধাও
সিরাজগঞ্জ প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২৭ মার্চ ২০২৪ ১৮:৪৯ পিএম
আপডেট : ২৭ মার্চ ২০২৪ ১৯:৪৮ পিএম
জনতা ব্যাংকের তামাই শাখায় ব্যাংক স্টেটমেন্ট হাতে দাঁড়িয়ে আছে গ্রাহকরা। প্রবা ফটো
ব্যাংকিং নিয়মকে ধর্তব্যের মধ্যে না এনে নিজের নিয়মে ব্যাংক চালাতেন সিরাজগঞ্জের বেলকুচির জনতা ব্যাংকের তামাই শাখার ব্যবস্থাপক (সাবেক) আল আমিন। ইচ্ছামতো গ্রাহকের হিসাব থেকে টাকা উত্তোলন ও জমা দিতেন তিনি। এ অবস্থায় ব্যাংক থেকে ঠিক কতজনের কী পরিমাণ টাকার হিসাবে গরমিল হয়েছে, তা বের করার চেষ্টা করছেন সংশ্লিষ্টরা। গ্রাহকদের মধ্যে যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তাদের আবেদন করতে বলেছেন জনতা ব্যাংক গঠিত তদন্ত কমিটির প্রধান।
বুধবার (২৭ মার্চ) সকালে ব্যাংকের গ্রাহক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা প্রতিদিনের বাংলাদেশকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেন।
তামাই শাখার কেজুয়াল পিয়ন শহিদুল ইসলাম বলেন, সাত-আট মাস ধরে শাখা ব্যবস্থাপক আল আমিনে কথা অনুসারে তিনি বিভিন্ন গ্রাহকের চেকে নিজে সই করে টাকা উত্তোলন করেছেন। ব্যবস্থাপকের কথায় অনেক জমা ভাউচারে তিনি স্বাক্ষর করেছেন।
কেন সই করেছেন, এমন প্রশ্ন তিনি বলেন, ‘আমরা তাদের চাকরি করি। তিনি যা অর্ডার করতেন আমাদের তাই করতে হতো। আমি তো শুধু স্বাক্ষর দিয়েছি। ব্যাংকের অন্যান্য কর্মকর্তার আইডির মাধ্যমে টাকাগুলো দেওয়া হতো।’
তিনি আরও বলেন, ‘অনেক সি সি লোন গ্রাহকের হিসাবে টাকা না থাকলেও ম্যানেজার নিজে এসে তাদের টাকা দিতেন।’
২৪ মার্চ জনতা ব্যাংকের এই শাখায় ৫ কোটি ২২ লাখ ৫০ হাজার টাকার গরমিল ধরা পরে। পরে ব্যাংকটির সিরাজগঞ্জের এরিয়া অফিসের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার মো. নজরুল ইসলাম তামাই শাখার ব্যবস্থাপকসহ চারজনের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ করেন এবং ব্যবস্থাপকসহ তিনজনকে পুলিশের হাতে তুলে দেন। পুলিশ তাদের কারাগারে পাঠায়। সেই সঙ্গে অভিযোগটি পাঠায় দুর্নীতি দমন কমিশনে।
এ ঘটনার পর থেকেই ব্যাংকটিতে ভিড় করছেন গ্রাহকরা। বুধবার সকালে শাখাটিতে গিয়ে কথা হয় তামাই বাজারের মেসার্স মুসলিম ইউবিং ফ্যাক্টরির প্রোপাইটার আব্দুল মোতালেব জোয়ারদারের সঙ্গে। তিনি প্রতিদিনের বাংলাদেশকে জানান, তার ৪৮ লাখ টাকার সি সি লোন করা ছিল। তবে তিনি এখনও লোনটি তোলেননি। কিন্তু ব্যাংক হিসাবে দেখা যায়, তিনি পুরো টাকা উত্তোলন করেছেন। এই টাকা তোলার ক্ষেত্রে তার সিরিয়ালের চেক ব্যবহার করা হয়নি। অন্য একটি থেকে টাকাটি উত্তোলন করা হয়েছে।
শুধু আব্দুল মোতালেবই নন, এমন ঘটনা ঘটেছে অনেকের সঙ্গে। একই এলাকার ব্যবসায়ী চান টেক্সটাইলের আকন্দ দাবি করেছেন, তার অজান্তেই ১০ লাখ টাকা হিসাব থেকে উত্তোলন করা হয়েছে। আল ফারুক স্টোরের শহিদুল ইসলামের ভাষ্য, ২৪ লাখ টাকার সিসি লোনের মধ্যে তার অজান্তেই চেক জালিয়াতে করে ৫ লাখ টাকা উত্তোলন করা হয়েছে।
শুধু সিসি লোন হিসাবে নয়, ব্যক্তিগত সঞ্চয় হিসাবেও এমন জালিয়াতি করা হয়েছে।
ঝিন্না মোল্লার ব্যক্তিগত হিসাবে ৪ লাখ ৩৫ হাজার ৯১০ টাকা থাকার কথা থাকলেও তিনি দাবি করছেন, সেখানে আছে মাত্র ১ লাখ ৫ হাজার ১১২ টাকা।
ভল্ট থেকে আমানত উধাওয়ের ঘটনায় বাংলাদেশ ব্যাংকের পাশাপাশি কাজ করছে জনতা ব্যাংকের তদন্ত কমিটি। জনতা ব্যাংক হেড অফিসের এজিএম সাদিকুর রহমানকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের এই কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিতে আরও রয়েছেন ব্যাংকের এসপিও মোস্তফা কামাল, সিনিয়র অফিসার মাসুদুর রহমান, প্রিন্সিপাল অফিসার শরীফ মোহাম্মদ ইশতিয়াক, এরিয়া ম্যানেজার সঞ্জিত কুমার।
তামাই শাখার নতুন ব্যবস্থাপক কামরুল হাসান বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে তদন্ত চলছে। এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করা সম্ভব নয়। তদন্ত শেষে স্যাররাই ব্যবস্থা নেবেন।’
তদন্ত কমিটির প্রধান সাদিকুর রহমান বলেন, ‘ঠিক কত টাকা গরমিল হয়েছে, তার তদন্ত চলছে। গ্রাহকদের টাকার বিষয়ে হেড অফিস সিদ্ধান্ত নেবে। যেসব গ্রাহকের ঝামেলা হয়েছে, তাদের দরখাস্ত দিতে বলা হয়েছে। তদন্তের স্বার্থে এর বাইরে কিছু বলা যাচ্ছে না।’
হিসাব অনুসারে তামাই শাখার ভল্টে মোট ৭ কোটি ১১ লাখ ২৪০ টাকা থাকার কথা থাকলেও সেখানে বর্তমানে ১ কোটি ৭৭ লাখ ৬১ হাজার ২৪০ টাকা রয়েছে।