× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

বঙ্গবাজারে আগুনের ১ বছর

সহায়তার টাকা ব্যাংকে, বাঁচার লড়াই চৌকিতে

ফয়সাল খান

প্রকাশ : ০৪ এপ্রিল ২০২৪ ০৯:২৫ এএম

আপডেট : ০৪ এপ্রিল ২০২৪ ১৭:১৮ পিএম

ছবি : সংগৃহীত

ছবি : সংগৃহীত

আদর্শ সুপার মার্কেটের দুটি দোকান ভাড়া নিয়ে ব্যবসা করতেন বিক্রমপুরের হাসেম মোল্লা। গত বছর বঙ্গবাজার অগ্নিকাণ্ডে তার দুটি দোকান এবং সেখানে থাকা সুতা, নগদ টাকাসহ প্রায় ১০ লাখ টাকার মালামাল পুড়ে যায়। এক রাতের আগুনে তার সব স্বপ্ন পুড়ে ছাই হয়ে যায়। ইসলামিয়া মার্কেটের শহিদুলের ভাড়া নেওয়া দোকান পুড়ে যাওয়ায় তার পথে বসার উপক্রম। পুড়ে যাওয়া মালামালের ছাই পরিষ্কার করে সেখানেই চৌকি পেতে ঘুরে দাঁড়ানোর সংগ্রাম শুরু করেন তারা।

শুধু এই দুজন নয়, এক বছর ধরে এভাবেই চৌকিতে বসে নতুন দিনের স্বপ্ন বুনছেন রাজধানীর বঙ্গবাজারের কয়েক হাজার ব্যবসায়ী। মালামাল ও নগদ টাকাসহ সহায়-সম্বল পুড়ে যখন পথে বসার উপক্রম, তখন সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়ে তাদের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ। সেই সহায়তার পরিমাণ দাঁড়ায় ৬ কোটি টাকা। সেই টাকায় নতুন করে ব্যবসা শুরুর কথা ছিল। কিন্তু এক বছর পেরিয়ে গেলেও ব্যাংকেই পড়ে আছে সহায়তার টাকা। আর ব্যবসায়ীদের অনেকেই উচ্চ সুদে বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা থেকে ঋণ নিয়ে এখন কিস্তি পরিশোধ করা নিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন।

প্রসঙ্গত, গত বছর ৪ এপ্রিল ঈদের ঠিক আগ মুহূর্তে ভয়াবহ আগুনে পুড়ে যায় বঙ্গবাজার। এরপর দেশের তারকা ক্রীড়াবিদ, অভিনেতা, শিল্পী থেকে শুরু করে সর্বস্তরের মানুষ তাদের সাধ্য অনুযায়ী অর্থ সহায়তা দেনÑ দুর্গত ব্যবসায়ীরা যাতে ঘুরে দাঁড়াতে পারেন। এসব টাকার সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করতে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলে সেখানে জমা রাখার সিদ্ধান্ত হয়। সেই অ্যাকাউন্টে ৬ কোটি টাকার বেশি জমা হয়। কিন্তু গত এক বছর ধরে এই বিপুল অঙ্কের টাকা ব্যাংকে অলস পড়ে আছে। এখন পর্যন্ত তা ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের কোনো কাজেই লাগেনি।

বিষয়টি নিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের কয়েকজনের সঙ্গে কথা হয় এ প্রতিবেদকের। কিন্তু টাকার বিষয়ে কেউ নাম-পরিচয় প্রকাশ করতে রাজি হননি। ব্যবসায়ীরা বলছেন, যখন আমাদের সব পুড়ে নিঃস্ব হয়ে গেছি, টাকাটা তখন দরকার ছিল। কখন তারা ফান্ড বানিয়ে টাকা দেবে, সেই আশায় থাকলে আমাদের না খেয়ে মরতে হবে। আমাদের টাকা এক বছর ব্যাংকে পড়ে রইল আর আমরা কিস্তির সুদ দিয়ে যাচ্ছি।

এক ব্যবসায়ীর ভাষ্য, পুড়ে যাওয়ার আগের রাতে পকেটে সাড়ে ৫ হাজার টাকা নিয়ে বের হয়েছিলেন। তখন সেই টাকা ছাড়া আর কিছুই ছিল না তার কাছে। তিনি বলেন, ছাই পরিষ্কার করে যখন চৌকিতে বসার ব্যবস্থা হলো তখন আত্মীয় ও বন্ধুদের কাছ থেকে সামান্য কিছু টাকা ‍ঋণ নিয়েছি আর একটা এনজিও থেকে কিস্তিতে ঋণ তুলেছি। এই পুঁজি নিয়ে এক বছর ধরে ব্যবসা করে যাচ্ছি।

তিনি আরও বলেন, সহায়তার যে টাকার কথা শুনেছি। সেই টাকা পেলে হয়তো ঋণ করা লাগত না। মাসে মাসে কিস্তি আর সুদের টাকা দেওয়া লাগত না।

আরেক ব্যবসায়ী বলেন, ক্ষতিপূরণ শুধু কথার কথা। এই দুনিয়ায় কেউ কারও ক্ষতিপূরণ দেয় না। আগুনে আমার কপাল পুড়েছে, তাই লড়াইটা আমাকেই করতে হচ্ছে।

সহায়তার টাকা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে যে টাকা দেওয়া হয়েছে তা আমরা পাইনি। তখন ভিড়ের মধ্যে ব্যবসায়ীরা নিজেদের দোকান নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন। সেলসম্যান কিছু টাকা পেয়েছে। বাকি টাকা কারা পেয়েছে জানি না।

আগুন লাগার পর পুনর্বাসন কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন। প্রতিদিনের বাংলাদেশকে তিনি বলেন, ব্যক্তিগত কোনো সহযোগিতা নগদে নেওয়া হয়নি। যারা অনুদান দিয়েছিলেন তাদের কাছ থেকে চেক নেওয়া হয়েছে। সব মিলেয়ে অ্যাকাউন্টে ৬ কোটি টাকার মতো আছে। এই টাকা কীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের কল্যাণে কাজে লাগানো যায় তা ডিএসসিসি মেয়র এবং মার্কেট সমিতির নেতারা ঠিক করবেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে মার্কেট সমিতির এক নেতা বলেন, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র আশ্বাস দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে আরও অনুদান এনে দেবেন। যে কারণে টাকাটা এখনও বিতরণ করা হয়নি।

বঙ্গবাজার কমপ্লেক্স দোকান মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জহিরুল ইসলাম প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, সহায়তার ৬ কোটি ২৭ লাখ টাকা অ্যাকাউন্টে আছে। প্রধানমন্ত্রী ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য আরও ১৫ কোটি টাকা দেবেন। সিটি করপোরেশন ২ হাজার ৯৬১ জনের তালিকা প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে পাঠিয়েছে। সহায়তার টাকা ক্ষতিগ্রস্ত দোকান মালিক ও ক্ষতিগ্রস্ত ভাড়াটিয়া ব্যবসায়ীদের দেওয়া হবে।

নতুন ভবনে যা থাকবে

এরই মধ্যে ১০৬ দশমিক ২৮ কাঠা জমির ওপর একটি ১০ তলা ভবনের নকশা প্রস্তুত করা হয়েছে। টেন্ডার প্রক্রিয়া শেষে ঠিকাদার নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। ঈদের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মার্কেটের ভিত্তিপ্রস্তর উদ্বোধন করবেন। ৩৮৭ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণকাজ শেষ হবে ২০২৮ সালে।

ডিএসসিসি সূত্রে জানা গেছে, ভবনটিতে বেজমেন্টসহ মোট ১০টি ফ্লোর থাকবে। গ্রাউন্ড ফ্লোর থেকে নবম তলা পর্যন্ত থাকবে ৩ হাজার ২১৩টি দোকান। বঙ্গবাজার হকার্স মার্কেট, গুলিস্তান হকার্স মার্কেট, মহানগর হকার্স মার্কেট, আদর্শ হকার্স মার্কেট নামে চারটি ব্লক থাকবে। ভবনে ৫টি সাধারণ সিঁড়ি, ৬টি অগ্নিপ্রস্থান সিঁড়ি ও ৮টি লিফট থাকবে। প্রথম তলায় প্রতিটি ব্লকের জন্য আলাদা প্রবেশ ও বের হওয়ার পথ থাকবে। বেজমেন্টে থাকবে গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা। রিজার্ভ পানির জন্য থাকবে কয়েকটি ট্যাঙ্ক।

গ্রাউন্ড ফ্লোর থেকে সপ্তম তলা পর্যন্ত দোকান থাকবে ৩ হাজার ৪২টি। এর মধ্যে গ্রাউন্ড ফ্লোরে ৩৮৪টি, প্রথম তলায় ৩৬৬টি, দ্বিতীয় তলায় ৩৯৭টি, তৃতীয় তলায় ৩৮৭টি, চতুর্থ তলায় ৪০৪টি, পঞ্চম তলায় ৩৮৭টি, ষষ্ঠ তলায় ৪০৪টি, সপ্তম তলায় ৩১৩টি। প্রতিটি দোকানের আয়তন হবে ৮০-১০০ স্কয়ার ফুট। অষ্টম তলায় দোকান মালিক সমিতির অফিস, কর্মচারী, নিরাপত্তাকর্মীদের আবাস ও অন্য কক্ষ রাখা হয়েছে। নকশায় রাখা হয়েছে ২২টি খাবারের দোকানের জায়গা।

ডিএসসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মিজানুর রহমান প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, পুড়ে যাওয়া বঙ্গবাজারে আমরা ১০ তলা মার্কেট বানাচ্ছি। যেখানে পুরোনো দোকান মালিকরাই সালামির মাধ্যমে দোকান বরাদ্দ পাবেন। মার্কেটে অগ্নিপ্রতিরোধের সব ব্যবস্থা রাখা হচ্ছে।

ছাড়তে হবে চৌকিও

মার্কেট পুড়ে যাওয়ার পর চৌকিতে বেচাকেনা করে আসছেন ব্যবসায়ীরা। ঈদের পর ‘বঙ্গবাজার পাইকারি নগর বিপণিবিতান’ নির্মাণকাজ শুরু করার ঘোষণা দিয়েছেন ডিএসসিসি মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস। এর জন্য মার্কেটগুলোতে দোকান খালি করে দেওয়ার নির্দেশনা সংবলিত ব্যানার টাঙিয়ে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন সমিতির নেতারা। তা ছাড়া বঙ্গবাজারে অগ্নিকাণ্ডের এক বছর উপলক্ষে দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে।

বঙ্গবাজার কমপ্লেক্স দোকান মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জহিরুল ইসলাম জানান, সবাই যাতে দোকান ছেড়ে দেয় এজন্য বৃহস্পতিবার সকালে আমরা ব্যানার টাঙিয়ে দেব। মার্কেট খালি করলে সংশ্লিষ্টরা দ্রুত বিল্ডিংয়ের কাজ শুরু করতে পারবে।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমাদের ২ হাজার ৯৬১ ব্যবসায়ীর তালিকা আছে সিটি করপোরেশনে। সেই তালিকার সবাই দোকান পাবেন।

ডিএসসিসির তদন্ত কমিটির রিপোর্ট বলছে, গত বছর ৪ এপ্রিল ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের সময় বঙ্গবাজার কমপ্লেক্সের চারটি ইউনিট (বঙ্গ, গুলিস্তান, মহানগর ও আদর্শ) মিলে মোট দোকান ছিল ২ হাজার ৯৬১টি। এ ছাড়া মহানগর শপিং কমপ্লেক্সে ৭৯১টি, বঙ্গ ইসলামিয়া মার্কেটে ৫৯টি ও বঙ্গ হোমিও কমপ্লেক্সে ৩৪টি দোকান আগুনে পুড়েছে। সব মিলিয়ে ৩ হাজার ৮৪৫টি দোকান পুড়ে গেছে। এতে প্রায় ৩০৩ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়।

তা ছাড়া এনেক্সকো টাওয়ারের প্রায় ১০০টি দোকান আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এসব দোকানের বীমা করা থাকায় সরকারি ক্ষতির তালিকায় আসেনি। 

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা