জবি সংবাদদাতা
প্রকাশ : ২১ ডিসেম্বর ২০২২ ১৭:১১ পিএম
পুরান ঢাকার ঐতিহাসিক বাহাদুর শাহ পার্কের ভেতরে স্থাপনা নির্মাণ এবং রেস্তোরাঁ চালুর প্রতিবাদে বুধবার কালো পতাকা মিছিল করেছেন স্থানীয়রা। ছবি: প্রবা
রাজধানীর পুরান ঢাকার ঐতিহাসিক বাহাদুর শাহ পার্কের ভেতরে স্থাপনা নির্মাণ এবং গ্যাসের চুলা জ্বালিয়ে রেস্তোরাঁ চালুর প্রতিবাদে সমাবেশ ও কালো পতাকা মিছিল করেছে পার্কের ঐতিহ্য সংরক্ষণ সংগ্রাম পরিষদ। সংগঠনটির দাবি, এসব কর্মকাণ্ডের কারণে গাছ ও প্রাকৃতিক পরিবেশ ধ্বংস হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে পার্কে চলাফেরার পরিবেশ। এসময় পুলিশ বাধা দিয়ে ব্যানার কেড়ে নিয়েছে বলেও অভিযোগ তুলেছেন প্রতিবাদকারীরা।
বুধবার (২১ ডিসেম্বর) দুপুরে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন আরামবাগ হোটেলের সামনে প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। প্রতিবাদ সমাবেশ শেষে একটি কালো পতাকা মিছিল আরামবাগ হোটেলের সামনে থেকে ঐতিহাসিক বাহাদুর শাহ পার্কের সড়ক প্রদক্ষিণ করে কবি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের ফটকে আসলে পুলিশ মিছিলে বাধা দেয়।
সমাবেশে বক্তব্য রাখেন ঐতিহাসিক বাহাদুর শাহ্ পার্ক ও পার্কের ঐতিহ্য সংরক্ষণ সংগ্রাম পরিষদের সদস্য সচিব আক্তারুজ্জামান খান, সদস্য রক্তিম হাসানসহ অনেকে।
সংরক্ষণ সংগ্রাম পরিষদের সদস্য সচিব আক্তারুজ্জামান খান বলেন, ‘বাহাদুর শাহ পার্কে রেস্তোরাঁ নির্মাণ করে চুলা জ্বালিয়ে প্রাণ, প্রকৃতি, পরিবেশ ও শহীদ বেদির মর্যাদাহানি করা হচ্ছে। এটি রক্ষা করতে হবে সকল সচেতন নাগরিককে। এ পার্ক সংলগ্ন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়সহ ১৪টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও লক্ষাধিক ছাত্রছাত্রীসহ এলাকার জনগণের শরীর চর্চা ও সাংস্কৃতিক কার্যক্রমের একমাত্র স্থান। এটি শুধু পার্ক নয়, ১৮৫৭ সালের ব্রিটিশ বিরোধী সিপাহি জনতার সংগ্রামের শহীদ বেদী। এই পার্ক রক্ষা করা সকল দেশ প্রেমিক জনতার নৈতিক দায়িত্ব।’
সংগ্রাম পরিষদের সদস্য উজ্জ্বল বিশ্বাস বলেন, ‘জনস্বার্থবিরোধী এই সর্বনাশা সিদ্ধান্ত বাতিল করার জন্য ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়রের প্রতি অনুরোধ জানানো হয়েছে। গত ৩১ অক্টোবর স্থানীয় কাউন্সিলরদের মাধ্যমে মেয়রকে, ৩ নভেম্বর ঢাকা জেলা প্রশাসককে, ৫ নভেম্বর ঢাকা-৬ আসনের সংসদ সদস্য, ৮ নভেম্বর ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র মহোদয় ও প্রধান সম্পদ কর্মকর্তার কাছে গণস্বাক্ষরের ফটোকপিসহ স্মারকলিপি পেশ করা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘এর ধারাবাহিকতায় ১০ নভেম্বর দুই মেয়রের আমন্ত্রণে সংগ্রাম পরিষদ ও জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট ঢাকা মহানগরের ১৬ জন প্রতিনিধি তার সাথে সাক্ষাৎ করেন। প্রতিনিধিবৃন্দের পক্ষ থেকে পার্কের অভ্যন্তরে রেস্তোরাঁ নির্মাণ কাজ বন্ধ, '১৮৫৭ সালের শহীদদের স্মরণে' লেখাটি পুনঃস্থাপন ও পার্কের নিরাপত্তার প্রয়োজনে পার্কের সীমানা বেষ্টনি দেওয়ার দাবি করা হয়। মেয়র ন্যায়সঙ্গত দাবিসমূহের যৌক্তিকতা স্বীকার করে সেগুলি বাস্তবায়নে জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন বলে আশ্বাস দেন। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে ইজারাপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান স্বাধীনতা সংগ্রামের শহীদ বেদীর মর্যাদা বিনষ্ট করে স্মৃতিস্তম্ভের সামনেই চুলা জ্বালিয়ে খাদ্যদ্রব্য তৈরি করে তা বিক্রি শুরু করেছে।’
সংগ্রাম পরিষদের সদস্য আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘এমন কর্মকাণ্ডে পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে এবং পার্কের গাছের পাতা শুকিয়ে যাচ্ছে। পার্কে প্রাতঃ ও সান্ধ্য ভ্রমণকারীদের শরীরচর্চার স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাপকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। এই অবস্থায় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়রের ১৮৫৭ সালের ভারতবর্ষের ব্রিটিশ বিরোধী প্রথম স্বাধীনতা যুদ্ধের শহীদদের স্মৃতি বিজড়িত এবং জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, কবি নজরুল কলেজ, সোহরাওয়ার্দি কলেজসহ অনেকগুলো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্রছাত্রীসহ পুরান ঢাকার মানুষের অবসর বিনোদন, অক্সিজেন গ্রহণ ও প্রাতঃভ্রমণ, সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের একমাত্র স্থান ঐতিহাসিক বাহাদুর শাহ পার্কের অভ্যন্তরে রেস্তোরাঁ উদ্বোধন করা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না।’
বক্তারা তাদের বক্তব্যে ঐতিহাসিক বাহাদুর শাহ পার্কের মর্যাদাহানিকর এবং জনস্বার্থ বিরোধী এই সর্বনাশা প্রকল্প বাতিলের জোর দাবি জানিয়ে বলেন, ‘অনতিবিলম্বে বাহাদুর শাহ পার্কের অভ্যন্তর থেকে রেস্তোরাঁ ও তার অবকাঠামো অপসারণ, ইতোমধ্যে স্মৃতিস্তম্ভ থেকে মুছে ফেলা ‘১৮৫৭ সালের শহীদদের স্মরণে’ লেখাটি পুনঃস্থাপন ও নিরাপত্তার স্বার্থে পার্কের চারপাশে সীমানাবেষ্টনী নির্মাণ করতে হবে। নাহলে উদ্ভুত পরিস্থিতির জন্য যদি কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে, তার দায় কোনোভাবেই সংগ্রাম পরিষদের ওপর চাপানো যাবে না।’