ঢাবি সংবাদদাতা
প্রকাশ : ১৭ জানুয়ারি ২০২৩ ১৫:৪৬ পিএম
লাল কার্ড সমাবেশের ব্যানার ছিনিয়ে নেন পুলিশ সদস্যরা। ছবি: প্রবা
পাঠ্যক্রমে ইতিহাস বিকৃতি ও সাম্প্রদায়িক উসকানিমূলক তথ্য প্রত্যাখ্যান চেয়ে আয়োজিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ‘লাল কার্ড সমাবেশ’ পুলিশ ও ছাত্রলীগের বাধায় পণ্ড হয়েছে।
মঙ্গলবার (১৭ জানুয়ারি) দুপুর ১২টায় রাজধানীর শাহবাগে এ কর্মসূচির আয়োজন করা হয়। এ সময় সাংবাদিকদের সঙ্গেও খারাপ ব্যবহার করার অভিযোগ উঠেছে ছাত্রলীদের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে।
সরেজমিনে দেখা যায়, আজ নতুন বছরের পাঠ্যক্রমে ইতিহাস বিকৃতি ও সাম্প্রদায়িক উসকানিমূলক বিষয়বস্তু প্রত্যাখ্যান চেয়ে লাল কার্ড সমাবেশের ডাক দেয় ঢাবির শিক্ষার্থীরা। সমাবেশ সফল করতে দুপুরের আগে থেকেই শাহবাগে জড়ো হতে শুরু করেন তারা। এদিকে পুলিশ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা সেখানে আগে থেকেই অবস্থান নেন। এ সময় আয়োজকদের তাড়িয়ে দেওয়ার পাশাপাশি সংবাদমাধ্যমকর্মীদের ক্যামেরা ও মোবাইল ফোন কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করা হয়। আয়োজকদের কাছ থেকে পুলিশ ব্যানার ছিনিয়ে নেয়। সমাবেশস্থলে কাউকে অবস্থান করতেও দেওয়া হয়নি।
এ সময় মাহমুদুল হাসান নামের এক শিক্ষার্থীকে ছাত্রলীগের কর্মীরা মারধর করেছেন বলে জানান এ সমাবেশের অন্যতম আয়োজক ইসলামি ছাত্র আন্দোলন ঢাবি শাখার সাবেক সভাপতি জামালুদ্দীন মুহাম্মদ খালিদ।
তিনি প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘আমরা শান্তিপূর্ণভাবে শাহবাগে লাল কার্ড কর্মসূচিতে অংশ নিলে পুলিশ ও ছাত্রলীগকর্মীরা বাধা দেন। আমরা কয়েকজন জাদুঘরের গেইট সোজা চত্বরের মাঝে দাঁড়িয়েছিলাম এবং সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলছিলাম। এ সময় তারা সাংবাদিকদের ক্যামেরা অফ করতে বলেন। অনেককে লাঞ্চিত করেন। এর মধ্যে হুট করে পুলিশের এক কর্মকর্তা এসে ব্যানার ছিনিয়ে নিয়ে যান।’
তিনি বলেন, ‘আমরা জিজ্ঞেস করলে ধমক দিয়ে বললেন, এখান থেকে চলে যাও। মাইকসহ রিকশাওয়ালাকে থানায় নিয়ে যায় তারা। এক পর্যায়ে পুলিশের সঙ্গে আমাদের শিক্ষার্থীদের হাতাহাতি হয়। তবে কেউ গুরুতর আহত হয়নি। এরপর আমরা সেখান থেকে চলে আসলে ছাত্রলীগের কর্মীরা আমাকে না পেয়ে আমাদের মাহমুদুল হাসান নামের এক শিক্ষার্থীকে টিএসসিতে মারধর করেন।’
ছাত্রলীগের হাতে লাঞ্ছিত আরটিভির ঢাবি রিপোর্টার জাফর আলী প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘লালকার্ড সমাবেশ ভেঙে যাওয়ার পর আমিসহ কয়েকজন সংবাদকর্মী সমাবেশের অন্যতম আয়োজক জামাল উদ্দিন খালিদের ভিডিও বক্তব্য নিচ্ছিলাম। এই মুহুর্তে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জসীমউদ্দিন হল ছাত্রলীগের কিছু কর্মী আমাদের মোবাইল ফোন/ক্যামেরা বন্ধ করতে এবং ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন। এরপর তারা ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন। কিছুক্ষণ পর আমার পরিচয় জানার পর তারা সবাই এসে সরি বলেন এবং ক্ষমা চান।’
এ বিষয়ে ছাত্রলীগের ঢাবি শাখার সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকত প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘আমি এ বিষয়ে কিছু জানি না।’
সাংবাদিকদের পেশাগত দায়িত্ব পালনে বাধা দেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এটা কোনো ভুল বোঝাবুঝির জায়গা থেকে হতে পারে। আমাদের কেউ এরকম কাজ করতে পারে না। বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংবাদিকরা যাতে সুষ্ঠুভাবে তাদের দায়িত্ব পালন করতে পারে, এ ব্যাপারে আমরা সবসময় দায়িত্বশীল আচরণ করি।’
এ বিষয়ে শাহবাগ থানার উপ-পরিদর্শক আশরাফুজ্জামান বলেন, ‘আমরা এখানে কাউকে আন্দোলন করতে দেখিনি। ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা এখানে তাদের কর্মসূচি পালন করছে, আমরা এতটুকুই জানি।’ পুলিশ আন্দোলনকারীদের ব্যানার কেড়ে নিয়েছে কি-না এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এমন কিছুই হয়নি।’