প্রবা প্রতিবেদন
প্রকাশ : ২৪ আগস্ট ২০২২ ১৪:৪৮ পিএম
আপডেট : ২৫ আগস্ট ২০২২ ১৮:৪১ পিএম
ব্যবস্থাপনা পরিচালক বন্যা আক্তারসহ গ্রেপ্তার ছয়জন। ছবি : প্রবা
‘ভুল চিকিৎসায়’ প্রসূতির মৃত্যুর অভিযোগে গাজীপুরের কালীগঞ্জে জনসেবা জেনারেল হাসপাতাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বন্যা আক্তারসহ ছয়জনকে গ্রেপ্তারের কথা জানিয়েছে র্যাব।
গ্রেপ্তার অন্যরা হলো--আশিকুর রহমান, সংগীতা তেরেজা কস্তা, মেরী গমেজ, সীমা আক্তার ও শামীমা আক্তার। এ সময় তাদের কাছ থেকে রোগীর চিকিৎসা সংক্রান্ত ও হাসপাতাল পরিচালনার মেয়াদোত্তীর্ণ নথিপত্র উদ্ধার করা হয় বলে জানায় র্যাব।
বুধবার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সংস্থাটির আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন এসব কথা বলেন।
তিনি জানান, জনসেবা হাসপাতালের নিয়মিত কোনো ডাক্তার ছিল না। রোগী পাওয়া সাপেক্ষে অনকলে থাকা বিভিন্ন ডাক্তার দিয়ে চলত চিকিৎসা। হাসপাতালটির লাইসেন্সের মেয়াদ নেই। এ ছাড়া ট্রেড লাইসেন্সেরও মেয়াদ শেষ হয়েছে চলতি বছরের ৩০ জুন। হাসপাতালে কোনো পরিবেশগত ছাড়পত্র ছিল না। ফায়ার লাইসেন্স ও শিল্প প্রতিষ্ঠান লাইসেন্স মেয়াদোত্তীর্ণ।
রোগীর বরাতে তিনি আরও জানান, কালীগঞ্জের তুমুলিয়া ইউনিয়নের আব্দুর রাজ্জাকের স্ত্রী শিরিন বেগম গত ২১ আগস্ট শনিবার সকালে ওই ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ভর্তি হন। পরবর্তীতে ওটি বয় আশিকের তত্ত্বাবধানে রোগীর প্রাথমিক চিকিৎসা ও আল্টাসনোগ্রাম করে সিজারের জন্য রোগীকে ওটিতে নেওয়া হয়।
চিকিৎসক মাসুদ গাইনোকোলজিস্ট না হয়েও রোগীর সিজার করেন। ওটি শেষে ব্লিডিং হওয়ায় ডাক্তার মাসুদের পরামর্শে আশিক এবং বন্যা রোগীর পরিবারকে এবি পজিটিভ রক্ত সংগ্রহের কথা বলেন। এক ব্যাগ এবি পজিটিভি রক্ত দেওয়ার পর নার্সরা শিরিনের শরীরে বি পজিটিভ গ্রুপের রক্ত পুশ করেন।
এতে রোগীর খিঁচুনি শুরু হয়। এ সময় কোনো ডাক্তার না থাকায় আশিকের তত্ত্বাবধানে রোগীর চিকিৎসা চলতে থাকে। একপর্যায়ে রোগীর শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে সন্ধ্যার দিকে রোগীকে ঢাকায় নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। পরে রাজধানীর উত্তরার একটি হাসপাতালে চিকিৎসক রোগীকে মৃত ঘোষণা করেন।
কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, প্রসূতির মৃত্যুর ঘটনা সংবাদমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। এ ঘটনায় উপজেলা স্বাস্থ্য অফিসের নির্দেশে একটি ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। পরে জড়িতদেরকে আইনের আওতায় নিয়ে আসতে গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় মঙ্গলবার কালীগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করে র্যাব।
তিনি বলেন, মেয়াদোত্তীর্ণ কাগজে চিকিৎসাসেবা চালিয়ে যাচ্ছিল হাসপাতালটি। সেখানে গড়ে প্রতি মাসে ২৫ থেকে ৩০টি সিজারিয়ান অপারেশনসহ ৫০টির বেশি বিভিন্ন অপারেশন করা হতো। বন্যা আক্তারকে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, সে ডিগ্রি পাস। সে হাসপাতালের অন্যতম অংশীদার ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক। তার কোনো নার্সিং ডিগ্রি নেই। তবে সে স্থানীয় একটি হাসপাতালে ৭ বছর নার্সিং ও আড়াই বছর ম্যানেজার হিসেবে কাজ করেছিল। পরবর্তীতে সে ২০১৮ সালে ৮ জনের যৌথ মালিকানায় জনসেবা জেনারেল হাসপাতাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার হাসপাতালটি চালু করে। বর্তমানে হাসপাতালটির মালিক তিনজন বলে জানা গেছে।
প্রবা/ইউরি/জেআই