× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

পুরোনো ঘটনায় নতুন মোড়

একটি ছিনতাই মামলা ও ডিবির তদন্ত নাটক!

জামশেদ নাজিম

প্রকাশ : ২৬ মার্চ ২০২৩ ১৩:১৭ পিএম

আপডেট : ২৬ মার্চ ২০২৩ ১৩:১৮ পিএম

ফাইল ফটো

ফাইল ফটো

প্রবাসী রোমান মিয়ার ছিনতাই হওয়া টাকার রহস্য জটিল রূপ নিয়েছে। তার করা ছিনতাইয়ের মামলার তদন্ত করতে গিয়ে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) এসআই আকসাদুদ জামানের নাম আসে। সেই আকসাদুদই পরে অভিযোগ করেছেন, ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) তাকে অপহরণ করে মুক্তিপণ বাবদ ১ কোটি ৪২ লাখ টাকা আদায় করেছে। 

অভিযোগের বিষয়টি পুলিশ সদর দপ্তর থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পর্যন্ত গড়ায়। যার পরিপ্রেক্ষিতে গঠন করা হয় তদন্ত কমিটি। সেই কমিটির প্রতিবেদনে আকসাদুদের অভিযোগের সত্যতা রয়েছে বলে জানানো হয়। তাতে বলা হয়, ওই ঘটনায় ডিবির তদন্তে অনিয়ম ছিল।

মামলার এজাহার থেকে জানা যায়, ঘটনা ২০২০ সালের ১৯ অক্টোবরের। বিমানবন্দর সড়কে ছিনতাইকার‌ীর কবলে পড়েন রোমান মিয়া ও তার ফুফাতো ভাই মো. মনির হোসেন। এ ঘটনায় পরদিন বিমানবন্দর থানায় মামলা করেন রোমান। এজাহারে উল্লেখ করেন, ডিবি পুলিশ পরিচয়ে চারজন তার কাছ থেকে ৪ লাখ ৭৮ হাজার টাকা ছিনিয়ে নিয়ে যায়। এ ঘটনা তদন্তের দায়িত্ব পায় ডিবি পুলিশ। মামলাটির তদারকির দায়িত্ব পান অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (এডিসি) কায়সার রিজভী কুরাইশী। তদন্ত দলে ছিলেন পরিদর্শক জাহিদুল ইসলামসহ পাঁচজন। 

রোমানের ছিনতাই মামলার তদন্তে উঠে আসে পুলিশ কর্মকর্তা আকসাদুদের নাম। আরও জানা যায়, তিনি বিমানবন্দরকেন্দ্রিক একটি ছিনতাই চক্রের মূল হোতা। আকসাদুদ ছাড়া এই চক্রে রয়েছেন আরও ছয়জন। তার বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন থানায় ছিনতাই ও ডাকাতির মামলা রয়েছে। চক্রের সদস্য মো. সেলিমের নামে বিমানবন্দর থানার ১৬ নম্বর (২০/১০/২০) মামলা রয়েছে। এর আগে মাদারীপুর জেলার শিবচর থানায় ২০১০ সালের ৪ মার্চ তার বিরুদ্ধে ছিনতাইয়ের মামলা দায়ের হয়। একই থানায় ওই বছরের আগস্ট মাসে আরেক মামলার আসামি হন তিনি। আরেক সদস্য আমির হোসেন ডিএমপির মতিঝিল থানায় ২০১৮ সালের ১৪ জানুয়ারি দায়ের হওয়া মামলার আসামি। চক্রের সব সদস্যই কোথাও না কোথাও কোনো না কোনো মামলার আসামি। এরা সবাই রোমানের ছিনতাই মামলার আসামি। 

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, রোমানের মামলা নিয়ে ডিবির তদন্তে সিআইডির আকসাদুদের নাম উঠে এলে তাকে গ্রেপ্তার করে ডিবি কার্যালয়ে আনা হয়। এ সময় তিনি অন্য একটি ঘটনায় সাময়িক বরখাস্ত ছিলেন। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি ছিনতাইয়ের কথা স্বীকার করেন এবং টাকা ফেরত দেওয়ার কথা বলেন। এ সময় ডিবি কার্যালয় থেকে কয়েকজন তার বাসায় গিয়ে একটি টাকার ব্যাগ উদ্ধার করেন। সেটিতে ডলারসহ বিভিন্ন দেশের মুদ্রা ছিল, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৩ কোটি টাকা। এই টাকা পেয়ে ডিবি কর্মকর্তারা তাকে ছেড়ে দেন। তার আগে ছিনতাইয়ের বাকি টাকা দ্রুত সময়ের মধ্যে ফেরত দেওয়ার মুচলেকা নেওয়া হয় আকসাদুদের কাছ থেকে। তবে আকসাদুদও এই প্রতিশ্রুতি আদায় করেন যে, তাকে ফৌজদারি মামলায় আসামি দেখানো হবে না। পরে আকসাদুদ ডিবিকে আরও ১৪ লাখ টাকা দেওয়ার কথা জানান। কিন্তু এরপরও ডিবি পুলিশ তাকে রোমানের মামলায় আসামি করে এবং জেলহাজতে পাঠায়। কয়েক মাস পর জামিনে মুক্তি পেয়ে আকসাদুদ ডিবির এডিসি কায়সার রিজভী কুরাইশীসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে পুলিশ সদর দপ্তরে অভিযোগ করেন। ওই অভিযোগের ভিত্তিতে একটি তদন্ত কমিটি করা হলেও সেই তদন্ত আলোর মুখ দেখেনি। ওই সময় সিআইডি আকসাদুদের বিরুদ্ধে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে তার প্রতিবেদন পুলিশ সদর দপ্তরে জমা দেয়। এর ভিত্তিতে আকসাদুদ চাকরিচ্যুত হন। ওই অবস্থায় আকসাদুদ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ডিবির বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন।

হিসাব মিলছে না ১ কোটি ৪২ লাখ টাকার

প্রবাসী রোমানের দায়ের করা ছিনতাই মামলা ঘিরে মূল রহস্যের সূত্রপাত ঘটে আকসাদুদের কাছ থেকে ডিবির ১ কোটি ৪২ লাখ টাকা উদ্ধার করা নিয়ে। যেখানে ভুক্তভোগী মামলা করেছিলেন তার কাছ থেকে ৪ লাখ ৭৮ হাজার টাকা ছিনতাই হওয়ার কথা উল্লেখ করে। বিমানবন্দর থানার ছিনতাই মামলায় গত বছর আকসাদুদসহ ৯ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দেয় ডিবি। কিন্তু আদালতে ১ কোটি ৪২ লাখ টাকার হিসাব দেওয়া হয়নি। টাকা বাদীকে ফেরত দিয়েছে কি না তাও জানানো হয়নি। আবার সিআইডির বরখাস্তকৃত আকসাদুদ জামান ১ কোটি ৪২ লাখ টাকা কোথায় পেলেন সে হিসাবও মিলিয়ে দেখায়নি পুলিশ সদর দপ্তর বা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটি। কেউ তার কাছে জানতে চায়নি একজন এসআইয়ের সহধর্মিণীর কাছ থেকে চাওয়া মাত্র ১ কোটি ৪২ লাখ টাকা কীভাবে পাওয়া সম্ভব? কী-ই বা সেই টাকার উৎস? 

এ ঘটনা সম্পর্কে রাজশাহী রেঞ্জের ডিআইজি (সাবেক ডিবিপ্রধান) আব্দুল বাতেন বলেন, ঘটনাটি নিয়ে একসময় পুলিশ সদর দপ্তর থেকে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছিল। তখন এত কথা শোনা যায়নি। গত কয়েক দিন হলো ঘটনা সম্পর্কে অনেক কিছু শুনছি। 

ছিনতাইয়ের তথ্যে শুভঙ্করের ফাঁকি

সম্প্রতি আলোচনায় ওঠা ১ কোটি ৪২ লাখ টাকায় মুক্তিপণ আদায়ের ঘটনা ঘটার নেপথ্য মূল কারণই দেখা যাচ্ছে তথ্যের গরমিল। হয় মামলার বাদী রোমান টাকার পরিমাণ নিয়ে সঠিক তথ্য এজাহারে উল্লেখ করেননি। অথবা গ্রেপ্তারের পর ছিনতাইকারীরা জিজ্ঞাসাবাদে সঠিক তথ্য দেয়নি। ডিবির তদন্ত কর্মকর্তারা উদ্ধার করা টাকার সঠিক হিসাবও আদালতে দেননি। 

জানা গেছে, ছিনতাই হওয়া টাকা ছিল মাদারীপুর, শরীয়তপুর ও ঢাকার মতিঝিলভিত্তিক একাধিক সংঘবদ্ধ হুন্ডি ব্যবসায়ীর। হুন্ডির মাধ্যমে বিদেশে অর্থ পাচারকারীদের কেরিয়ার হিসেবে রোমানসহ বেশ কয়েকজন কাজ করতেন। আকসাদুদ সিআইডিতে কর্মরত থাকায় রোমান মিয়ার গতিবিধি সম্পর্কে জানতেন। ঘটনার দিন রোমানকে আটক করে টাকা নিয়ে আকসাদুদ চলে যান সিআইডি অফিসে। এ কাজে সহায়তা করে তার সংঘবদ্ধ চক্রের সদস্যরা। 

জানতে চাইলে মামলার তদারকি কর্মকর্তা কায়সার রিজভী কুরাইশী গতকাল শনিবার প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, আকসাদুদ একটি ছিনতাইকারী চক্রের মূল হোতা ছিলেন। বিমানবন্দর এলাকায় ছিনতাইয়ের ঘটনায় তথ্য ও প্রযুক্তির মাধ্যমে তাকে শনাক্ত করা হয়। তবে তাকে ডিবি কার্যালয়ে আটক করে মুক্তিপণ আদায়ের কোনো ঘটনাই ঘটেনি। যে টাকা ছিনতাই হয়েছে, তা উদ্ধার করে অফিসে আনা হয়েছে। এর বাইরে অনৈতিক কিছু ঘটেনি বলে দাবি করেন এই কর্মকর্তা।

এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি আরও জানান, রোমান ছাড়াও তার সঙ্গীদের কাছে বিদেশি মুদ্রায় যে অর্থ ছিল সেগুলোও উদ্ধার করা হয়। সব মিলিয়ে টাকার পরিমাণ মামলায় উল্লেখ করা পরিমাণের চেয়ে বেশি। বাদী ও বিবাদীদের উপস্থিতিতেই যার যার টাকা তাকে তাকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়।

এ বিষয়ে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার (অ্যাডমিন) প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, আকসাদুদ জামান একজন পেশাদার ছিনতাইকারী। ওই সময় তার কাছ থেকে টাকা উদ্ধার করে বাদীকে ফেরত দেওয়া হয়েছে। তবে ফেরত দেওয়ার কৌশলটি ঠিক ছিল না। যদি আদালতের মাধ্যমে দেওয়া হতো তাহলে আজ এত কথা উঠত না। 

এ ঘটনা সম্পর্কে আকসাদুদ জামান শনিবার প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন,  মামলার বাদী রোমান ডিবির এডিসি কায়সার রিজভী কুরাইশীর ঘনিষ্ঠজন। তার ছত্রছায়ায় রোমান হুন্ডির ব্যবসা ও বৈদেশিক মুদ্রা চোরাচালান করে।

ছিনতাইয়ের ঘটনায় জড়িত নন বলে দাবি করেন আকসাদুদ। একজন পুলিশ অফিসার হওয়ার পর কেন ডিবি তাকে অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায় করেছে এবং তিনি সিআইডিতে কেন আইনি সহায়তা পাননি- এমন প্রশ্নের জবাবে আকসাদুদ বলেন, পেশাগত কারণে বিভিন্ন সোর্সের সঙ্গে যোগাযোগ রখতে হয়। এমন এক সোর্সের জন্যই তাকে আটক করা হয়েছিল। মিথ্যা মামলা থেকে রক্ষা পেতে তিনি টাকা দিয়েছিলেন।

অনুসন্ধানে যা জানা গেছে 

বিভিন্ন সূত্রে খোঁজ নিয়ে ও অনুসন্ধান চালিয়ে জানা যায়, ওই সময় মাদারীপুর-শরীয়তপুরভিত্তিক চক্রটি হুন্ডির মাধ্যমে বিদেশে অর্থ পাচার করছিল। রোমান মিয়াসহ আরও কয়েকজন হুন্ডির টাকা বিদেশে পাচার করে আর্থিকভাবে লাভবান হন। হুন্ডির টাকা ছিনতাই হয়েছে বলেই মামলায় মাত্র ৪ লাখ ৭৮ হাজার টাকা দেখানো হয়। ঘটনার তদন্তে নেমে ডিবি প্রায় ৩ কোটি টাকা উদ্ধার করে।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: protidinerbangladesh.pb@gmail.com

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: pbad2022@gmail.com

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: pbonlinead@gmail.com

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: pbcirculation@gmail.com

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা