× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

তীব্র গরমে রাজধানীতে পানি সংকট

প্রবা প্রতিবেদক

প্রকাশ : ১৯ এপ্রিল ২০২৩ ১২:১৮ পিএম

আপডেট : ১৯ এপ্রিল ২০২৩ ১৩:৫৩ পিএম

রাজধানীর লালবাগে পানি সংগ্রহের জন্য লাইন ধরেছেন এলাকাবাসী। প্রবা ফটো

রাজধানীর লালবাগে পানি সংগ্রহের জন্য লাইন ধরেছেন এলাকাবাসী। প্রবা ফটো

গত ১২ এপ্রিল থেকে পানি নেই ধানমন্ডির চেয়ারম্যানের গলিতে। রমজান মাসে তীব্র গরমের মধ্যে অসহনীয় এই পানি সংকটে শেষমেশ বাসা ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়েছেন সাংবাদিক রাসেল পারভেজ। তবে তিনি বাসা ছেড়ে দিতে পারলেও এই দাবদাহের মধ্যে পানি ছাড়াই দুর্বিষহ জীবনযাপন করতে হচ্ছে ওই গলির নিরুপায় কয়েকশ বাসিন্দাকে।

এদিকে শেখেরটেক এলাকায় পানি সংকটের কারণে ভাড়াটিয়া খুঁজে পাচ্ছেন না বাসার মালিকরা। পানি সংকটে একই অবস্থা দেখা দিয়েছে মহাখালীর আমতলী, কাঁচাবাজার ও মসজিদের পেছনের এলাকাতেও।

শুধু এসব এলাকায়ই নয়, রাজধানীর বেশিরভাগ জায়গায়ই চলছে পানির সংকট। ৫৮ বছর পর এবার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ঢাকায়। একদিকে প্রচণ্ড গরম, অন্যদিকে রোজা, তার ওপর নেই পানি! ফলে নাগরিকরা না পাচ্ছেন খাবার পানি, না পারছেন নিত্যপ্রয়োজনীয় কাজ করতে। রান্নাবান্নাসহ ঘরের কাজ করতে বেগ পেতে হচ্ছে গৃহিণীদের। কোনো কোনো এলাকায় এমনিতেই কয়েক বছর ধরে রয়েছে পানির সমস্যা। এবার সে সমস্যা অসহনীয় হয়ে উঠেছে। 

রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, পশ্চিম ধানমন্ডির মধুবাজার এলাকায় গত ৭ এপ্রিল থেকে পানি নেই। বনশ্রীর ডি ব্লকের রেডিয়ান কৃষ্ণচূড়া হাউজিং ও এর আশপাশের এলাকা এবং গুলশানের শাহজাদপুর ও এর আশপাশের এলাকায় তিন দিন ধরে পানি নেই। এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে পানির সংকট চলছে জুরাইনে।

যা বলছেন স্থানীয় নাগরিকরা

বনশ্রীর বাসিন্দা মির আব্দুল আলীম জানান, বনশ্রীর ডি ব্লকের ৮ নম্বর রোডের বাড়িগুলোতে গত তিন দিন ধরে পানি নেই। তারা স্থানীয় অফিসে যোগাযোগ করেছেন। কিন্তু সেখান থেকে সাড়া মিলছে না।

শাহজাদপুরের বাসিন্দা রওনক রায়হান জানান, ‘রোজার মধ্যে গরমে সবাই অতিষ্ঠ। এর মধ্যে পানিই যদি না থাকে, তাহলে মানুষ বাঁচবে কী করে? বাচ্চাদের নিয়ে খুবই সমস্যায় পড়েছি। বাইরে থেকে পানি এনে কতক্ষণ চলা যায়! আমরা পানি পাচ্ছি না। অথচ বিল কিন্তু ঠিকই নেওয়া হবে আমাদের কাছ থেকে।’

ধানমন্ডি ১৯ নম্বর সড়কের বাসিন্দা শিমু আক্তার জানান, এই রোজার দিনে পানি ছাড়া কীভাবে যে বেঁচে আছি, আল্লাহই ভালো জানেন। বাচ্চারা, বড়রা কেউই ভালো নেই। সেহরিতেও অনেক সময় পানি থাকে না। গত কয়েক দিন আগে আমার শাশুড়িকে অজুর পানি দিতে পারিনি।

শেখেরটেক এলাকার বাসিন্দা শাহিন হাওলাদার বলেন, আমাদের পানির সমস্যা দীর্ঘদিনের। ওয়াসার কাছে অভিযোগ করেও সমাধান পাচ্ছি না। বাসায় ভাড়াটিয়া থাকে না। যদি পর্যাপ্ত পানি সরবরাহ না থাকে, তাহলে আমরা বসবাস করব কেমন করে?

নিরাপদ পানির দাবিতে আন্দোলন করে আসছেন ঢাকার জুরাইন এলাকার বাসিন্দা মিজানুর রহমান। প্রায় চার বছর আগে ওয়াসার এমডিকে শরবত খাওয়ানোর কর্মসূচি দিয়ে আলোচনায় আসেন তিনি। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে কথা হয় মিজানুর রহমানের সঙ্গে।

তিনি প্রতিদিনের বাংলাদেশকে জানান, ‘জুরাইনের ঋষিপাড়া, কুসুমবাগ, কলেজ রোডে এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে পানির সংকট চলছে। যেসব এলাকায় পানি পাওয়া যাচ্ছে, তাও খুব নোংরা ও দুর্গন্ধযুক্ত। যারা পানি পাচ্ছেন তাদের মাত্র ২০ ভাগই তা কোনোমতে কাজে লাগাতে পারছেন। কিন্তু ৮০ ভাগ নাগরিকই এ পানি দিয়ে কোনো কাজ করতে পারছেন না।’

তিনি বলেন, ‘পানির দুরবস্থার কারণে নারী-শিশুসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ রোগাক্রান্ত হচ্ছে। ডাক্তাররাও বিশুদ্ধ পানি পান ও ব্যবহারের পরামর্শ দিচ্ছেন। কিন্তু আমরা সেই বিশুদ্ধ পানি পাব কই? কে দেবে সেই বিশুদ্ধ পানি?’

তা ছাড়া রাজধানীর আদাবর, শেখেরটেক, মেহেদীবাগ, মনসুরাবাদ, মিরপুর, কাজীপাড়া, রায়ের বাজার, মান্ডা, শনির আখড়া, দনিয়া, যাত্রাবাড়ী, মোহাম্মদপুর, ভাষানটেক, মাটিকাটা, উত্তরা, আফতাবনগর, বাড্ডা, ভাটারাসহ বেশকিছু এলাকায়ও পানির সংকটের খবর পাওয়া গেছে।

বাড়তি দামে কিনতে হচ্ছে ওয়াসার গাড়ির পানি

পানি না পেয়ে অনেকেই ঢাকা ওয়াসার স্থানীয় কার্যালয়ে যোগাযোগ করছেন। কিন্তু মিলছে না সমাধান। বাধ্য হয়ে যারা ওয়াসার গাড়ি থেকে পানি কিনছেন, তাদের দিতে হচ্ছে বাড়তি দাম। পানির দাম গাড়িপ্রতি ৪০০ টাকা নির্ধারিত থাকলেও দিতে হচ্ছে ৬০০ থেকে ১০০০ টাকা পর্যন্ত।

এ প্রসঙ্গে বক্তব্য জানতে ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) তাকসিম এ খানের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করা হয়। কিন্তু তার সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। হোয়াটসঅ্যাপে বার্তা পাঠিয়েও তার বক্তব্য জানা যায়নি।

তবে রোজার আগেই সংবাদ সম্মেলন করে এবার পানির সংকট হবে না বলে জানিয়েছিলেন তাকসিম এ খান। তখন তিনি বলেছিলেন, ‘গরম আসার সঙ্গে সঙ্গে পনির চাহিদাও বাড়ছে, আরও বাড়বে। সেটা সামাল দেওয়ার মতো সামর্থ্য আমাদের আছে। বিদ্যুৎ বিভ্রাট হলে বিকল্প ব্যবস্থার মাধ্যমে পাম্পগুলো চালু থাকবে।’

তার ভাষ্যমতে, ঢাকায় পানির চাহিদা প্রচুর ওঠানামা করে। বর্ষা ও শীতকালে পানির চাহিদা কম থাকে। এ সময় চাহিদা ২০০ থেকে ২১০ কোটি লিটারের মধ্যে নেমে আসে। শুষ্ক মৌসুমে পানির চাহিদা থাকে ২৬০ থেকে ২৬৫ কোটি লিটার। এর বিপরীতে ওয়াসার সক্ষমতা ২৯৫ কোটি লিটার।

ঢাকা ওয়াসার উপব্যবস্থাপনা পরিচালক একেএম সহিদ উদ্দিন বলেন, ‘সার্বিকভাবে ওয়াসার পানি সরবরাহে কোনো সমস্যা নেই, ঘাটতিও নেই। তবে রাজধানীর বেশকিছু এলাকায় স্থানীয় পর্যায়ে কিছুটা সমস্যা হচ্ছে। এগুলো আমরা চিহ্নিত করেছি, এর সমাধানে কাজ চলছে। আশা করা যায়, খুব দ্রুতই এ সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।’

তিনি বলেন, ‘আদাবর, শেখেরটেক এলাকাসহ বেশকিছু এলাকায় ঢাকা ওয়াসার পানি সরবরাহের কিছুটা সমস্যা আছে। এই সমস্যা সমাধানে ওই এলাকাসহ আশপাশের এলাকায় নতুন করে পাম্প বসানো হচ্ছে। এতে ওই এলাকার পানি সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘ওয়াসার পানির গাড়িতে যারা বেশি টাকা দাবি করছে, তাদের বিষয়ে আমাদের কাছে সুনির্দিষ্টভাবে অভিযোগ জানালে তাৎক্ষণিকভাবে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা