শুক্রবার সকালের দিকে সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে তোলা। প্রবা ফটো
পবিত্র ঈদুল ফিতরের দরজা কড়া নেড়েছে। আজ শুক্রবার চাঁদ দেখা গেলে আগামীকাল শনিবার ঈদ অনুষ্ঠিত হবে। শেষ মুহূর্তে সকাল থেকে রাজধানীর প্রধান নদীবন্দর সদরঘাট নৌ টার্মিনালে চাপ থাকলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে চাপ কমে গেছে। এখন আর কোনো সময়সূচি মেনে ছাড়ছে না লঞ্চ। যাত্রী পূর্ণ হয়ে গেলেই লঞ্চ ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে। পর্যাপ্ত যাত্রীসমাগমে খুশি লঞ্চ-সংশ্লিষ্টরা। ভিড় হলেও লঞ্চের কমতি নেই। তাই আরাম ও স্বস্তিতেই যাত্রা করতে পারছেন বলে জানিয়েছেন যাত্রীরা।
শুক্রবার (২১ এপ্রিল) সদরঘাটে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে দেখা গেছে, যাত্রীদের চাপ তেমন একটা নেই।
বিআইডব্লিউটির কর্মকর্তা ও লঞ্চ-সংশ্লিষ্টরা জানান, ঈদের আগের দিন সদরঘাটের অবস্থা এমন থাকে না। এ সময়ে পা ফেলার জায়গা থাকে না। সেখানে টার্মিনালের অনেক স্থানই খাঁ খাঁ করছে। অনেক লঞ্চ খালি পড়ে আছে।
পদ্মা সেতু হওয়ার পর লঞ্চের যাত্রী ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ কমে গেছে বলে দাবি করছেন লঞ্চ-সংশ্লিষ্টরা। তবে বিকালে যাত্রীদের চাপ বাড়তে থাকায় খুশি তারা। বিশেষ করে জুমার নামাজের পর থেকে সদরঘাট টার্মিনালে বাড়তে শুরু করে ভিড়।
তার আগে সকাল সাড়ে ১০টা পর্যন্ত সদরঘাটে যাত্রীদের পর্যাপ্ত চাপ ছিল। দেশের বিভিন্ন গন্তব্যে ৩১টি লঞ্চ ছেড়ে গেছে। সাড়ে ১১টার পর থেকে যাত্রীর চাপ আস্তে আস্তে কমতে থাকে। আজ দেশের বিভিন্ন গন্তব্যে ১০০টির মতো লঞ্চ সদরঘাট ত্যাগ করতে পারে। এর আগে বুধবার ১০৭ এবং বৃহস্পতিবার ১৪৪টি লঞ্চ সদরঘাট থেকে বিভিন্ন গন্তব্যে ছেড়ে গেছে।
আজ ভোরে ছেড়ে গেছে বরিশাল, ভোলা, বরগুনাসহ দূরপাল্লার লঞ্চ। সকাল থেকে ছাড়তে শুরু করে চাঁদপুর, মাদারীপুরসহ স্বল্প দূরত্বের লঞ্চগুলো। উভয় ধরনের দূরত্বেই যাত্রীসমাগম ছিল উল্লেখযোগ্য।
তবে ভোলা, চরফ্যাশন, বরগুনা রুটে যাত্রীর চাপ রয়েছে। প্রচণ্ড গরমের মধ্যেও বরগুনা ও ভোলা রুটের কোনো কোনো লঞ্চের ছাদেও যাত্রীদের অবস্থান করতে দেখা গেছে। তবে যাত্রী কম বরিশাল রুটে।
কয়েকটি লঞ্চের স্টাফ ও কেরানির সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তাদের অনেক কেবিন খালি আছে। যাত্রীর সংখ্যা আগের চেয়ে অনেক কমে গেছে। পদ্মা সেতুতে মোটরসাইকেল ছেড়ে দেওয়ার পর যাত্রীর চাপ আরেকটু কমে গেছে।
বেলা ১১টার দিকে বরিশাল রুটে চলাচলকারী পারাবত-১২ লঞ্চে গিয়ে দেখা গেছে, লঞ্চ প্রায় খালি। লঞ্চের ম্যানেজার সুমন খান বলেন, ‘যাত্রী খুবই কম। আমরা প্রতিদিনই লস দিচ্ছি। আমরা মনে করি ৬০ শতাংশ যাত্রী কমে গেছে। আমার লঞ্চে মোট কেবিন রয়েছে ২৬১টি, ভিআইপি কেবিন সাতটি। এখন পর্যন্ত ১৫টি সিট বুকিং হয়েছে। মূলত পদ্মা সেতু হওয়ার পর আমাদের ব্যবসা শেষ হয়ে গেছে।’
ভোলাগামী পারাবত-১৩ লঞ্চের পরিচালক শাহিন হোসেন জানান, যাত্রী উপস্থিতি বৃহস্পতিবার অনেক বেশি ছিল। বিকাল থেকে ঘাটে মানুষের পা ফেলার জায়গা ছিল না। আমরা অতিরিক্ত যাত্রী নিচ্ছি না। লঞ্চ ভরে গেলে সময়ের আগেই ছেড়ে দিচ্ছি। শুক্রবার সকালেও এমনই ভিড় ছিল কিন্তু বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে যাত্রীর চাপ কমে গেছে।
ঢাকা-বেতুয়া (চরফ্যাশন) রুটে চলাচল করা এমভি টিপু-১৪ লঞ্চের ডেক যাত্রীতে পূর্ণ হয়ে যায় সকাল ১০টার মধ্যেই। এ লঞ্চের যাত্রী তোফাজ্জল হোসেন বলেন, এই গরমের মধ্যে সকাল থেকে পরিবার ও ছোট ছোট বাচ্চা নিয়ে লঞ্চে বসে আছি, ছাড়ার নাম নাই। কখন ছাড়বে সেটাও তারা বলছে না। এতে যাত্রীরা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছেন।
এমভি পূরবী-১০ লঞ্চের টিকিট বিক্রেতা সোহানুর রহমান বলেন, কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা টিকিট বিক্রি করছি। ভাড়া বেশি নেওয়া হচ্ছে না। আমাদের যে ভাড়া নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে তা-ই নিচ্ছি। ঈদে স্পেশাল সার্ভিসের টিকিট লঞ্চ ছাড়ার পূর্বে দেওয়া হচ্ছে।
কমলাপুর থেকে আসা বরগুনাগামী যাত্রী বোরহান উদ্দিন দৈনিক প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, অতিরিক্ত দাবদাহে সড়কপথে ঝুঁকি নিতে চাইনি। আর ঘাটে এসেই লঞ্চের টিকিট পেতে ভোগান্তি হচ্ছে না। সহজে কেবিন পাওয়া যাচ্ছে। তাই ঈদযাত্রা সহজ ও আনন্দময় করতে লঞ্চে যাচ্ছি।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-চলাচল যাত্রী পরিবহন সংস্থার মহাসচিব সিদ্দিকুর রহমান পাটোয়ারী বলেন, বরিশাল ও পটুয়াখালী রুটে আটটি করে লঞ্চ ও অন্যান্য রুটে দুই-তিনটি করে লঞ্চ যাবে। যাত্রীর চাপ আছে, তবে আশানুরূপ নয়। অন্যান্য সময়ের তুলনায় চার ভাগের এক ভাগ। শুক্রবার চাপ বাড়বে বলে আশা করছি। ভাড়া না বাড়ানোর নির্দেশ রয়েছে আমাদের। এরপরও কেউ অতিরিক্ত ভাড়া বা টিকিট কালোবাজারির অভিযোগ করলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
নৌপুলিশের ঢাকা অঞ্চলের পুলিশ সুপার গৌতম কুমার বিশ্বাস বলেন, লঞ্চে ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে গত ১৭ এপ্রিল থেকে আমরা তৎপর রয়েছি। সার্বক্ষণিক টহল দেওয়া হচ্ছে। কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটছে না।
সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি
প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু
রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯
যোগাযোগ
প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]
বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]
বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯, +৮৮০১৮১৫৫৫২৯৯৭ । ই-মেইল: [email protected]
সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]
2023 Protidiner Bangladesh All Rights Reserved. Developed By Protidiner Bangladesh Team.