প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২৩ এপ্রিল ২০২৩ ১৭:৩৪ পিএম
আপডেট : ২৩ এপ্রিল ২০২৩ ১৮:২৭ পিএম
দর্শনার্থীদের কোনো সমস্যা হচ্ছে কি না- সর্বক্ষণিক খোঁজ নিতে দেখা যায় ট্যুরিস্ট পুলিশের একটি দলকে। হাতিরঝিলের চারপাশে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে, যাতে কেউ হয়রানির শিকার না হয়। ছবি : আলী হোসেন মিন্টু
ঈদুল ফিতরের দ্বিতীয় দিনেও রাজধানীর জাতীয় চিড়িয়াখানা ও হাতিরঝিলে ঢল নেমেছে মানুষের। রবিবার (২৩ এপ্রিল) সকালে জাতীয় চিড়িয়াখানার প্রধান ফটক খুলে দেওয়ার পর দর্শনার্থীদের ভিড় উপচে পড়ে। অন্যদিকে বেলা গড়ার সঙ্গে সঙ্গে মুখরিত হয়ে ওঠে হাতিরঝিলের মগবাজার ও রামপুরা প্রান্ত।
ঈদের পরদিন সারা দেশের মতো রাজধানী ঢাকাতেও বৃষ্টি আর ঝড়ের পূর্বাভাস জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। রবিবার সকাল থেকেই আকাশ গুমোট। বৃষ্টির উৎপাত উপেক্ষা করেই রাজধানীবাসী এদিন ঈদ আনন্দ উদযাপন করতে ছুটে এসেছেন বিনোদনকেন্দ্রগুলোতে।
জাতীয় চিড়িয়াখানা ও হাতিরঝিল ছাড়াও রাজধানীর রমনা পার্ক, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি, বোটানিক্যাল গার্ডেন, ডিএনসিসি ওয়ান্ডারল্যান্ড, চন্দ্রিমা উদ্যান, সংসদ ভবনের সামনে, মেট্রোরেল, উত্তরার দিয়াবাড়ীতেও মানুষের ঢল নেমেছে।
রবিবার সকাল ১০টার দিকে জাতীয় চিড়িয়াখানার মূল ফটক খুলে দেওয়ার আগেই সেখানে মানুষের ভিড় বাড়তে থাকে। চিড়িয়াখানাগামী বাসগুলো যাত্রী নামিয়ে দেয় মিরপুর বিসিআইসি কলেজ গেটে। চিড়িয়াখানার আধা কিলোমিটার এলাকাজুড়ে দেখা দেয় যানজট। দর্শনার্থীর চাপ সামলাতে চিড়িয়াখানার প্রধান ফটকের পাশাপাশি সবকটি ফটক খুলে দেওয়া হয়। তবুও চিড়িয়াখানার ভেতরে প্রবেশ করতে বেশ বেগ পোহাতে হয়েছে সাধারণ মানুষকে।
ভিড় ঠেলে ভেতরে প্রবেশ করেও ভিড়ের মধ্যেই পড়তে হয়েছে দর্শনার্থীদের। বরাবরের মতো বানর, ময়ূর, বাঘ, সিংহ, হরিণ ও জেব্রার খাঁচার সামনে ছিল উপচে পড়া ভিড়। এবার দর্শনার্থীদের আগ্রহ ছিল জলহস্তী আর জেব্রার ঘরে জন্ম নেওয়া নতুন দুই অতিথি এবং বছরজুড়ে চিড়িয়াখানায় জন্ম নেওয়া অসংখ্য হরিণ শাবকের দিকে। এ ছাড়া চিড়িয়াখানায় সম্প্রতি আনা পেলিকেন্ট, লামা, ক্যাঙ্গারু, আফ্রিকান সিংহ, হাতি, চিতা, উল্লুকের খাঁচাগুলোর সামনেও ছিল প্রচণ্ড ভিড়।
নারায়ণগঞ্জের গোদনাইল এলাকা থেকে বাবা কাউসার আলমকে সঙ্গে নিয়ে চিড়িয়াখানায় ঘুরতে এসেছে পঞ্চম শ্রেণি পড়ুয়া মাইশা ও তার ভাই রূপম। মাইশা বলেন, ‘রাইনখোলা বাজারের কাছে আমার ফুপুর বাসা। ঈদের দিন রাতে আমরা সেখানে বেড়াতে আসি। আর পরদিন সকালে আব্বু আমাদের এখানে নিয়ে আসে। চিড়িয়াখানা বেড়াতে এসে আমাদের খুব ভালো লাগে।’
কিশোরগঞ্জ থেকে স্ত্রী-সন্তানকে নিয়ে ঘুরতে এসেছিলেন দন্তচিকিৎসক এনামুল হাসান মাছুম। তিনি বলেন, ‘মেয়ে বহুদিন থেকেই আবদার করছে, ঈদের দিন যেন তাকে নিয়ে চিড়িয়াখানায় ঘুরতে আসি। তার আবদার রাখতে সপরিবারে চলে এসেছি আজ (রবিবার)। পশুপাখি দেখে মেয়ে ভীষণ খুশি।’
এবার ঈদে চিড়িয়াখানার নিরাপত্তা ছিল অন্যবারের তুলনার কঠোর। দর্শনার্থীদের নিরাপত্তায় ছিল ট্যুরিস্ট পুলিশ।
ট্যুরিস্ট পুলিশের ঢাকা জোনের পরিদর্শক মো. কাউসার আলী বলেন, ‘দর্শনার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য আমরা এখানে কাজ করছি। সকাল ৯টা থেকে আমরা এখানে আছি। এখন পর্যন্ত কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। এরকম কিছু হলে আমরা আইনানুগ ব্যবস্থা নেব।’
বাংলাদেশ জাতীয় চিড়িয়াখানার পরিচালক ড. মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম তালুকদার বলেন, ‘ঈদের দিন প্রায় এক লাখ দর্শনার্থী চিড়িয়াখানায় এসেছেন। সেটি আজ দেড় লাখ ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করছি।’
ঈদের দ্বিতীয় দিন বিকালে ছেলেমেয়ে ও স্ত্রীকে নিয়ে হাতিরঝিলে বেড়াতে এসেছিলেন আমুলিয়া মডেল টাউনের বাসিন্দা ইব্রাহীম খলিল। হাতিরঝিলে ঘুরতে এসে প্রথমে তারা চড়ে বসেন ওয়াটার ট্যাক্সিতে।
সাধারণত হাতিরঝিলের সঙ্গে যুক্ত থাকা তেজগাঁও, রামপুরা, বাড্ডা ও গুলশান রুটে যাত্রী পরিবহন করে ওয়াটার ট্যাক্সি। তবে ঈদ উপলক্ষে তিন দিন কেবল ঘোরাঘুরির জন্য ব্যবহার হচ্ছে।
ইব্রাহীম খলিল বলেন, ‘বোটের ভাড়া জনপ্রতি ৮০ টাকা। সেটা খুব একটা বেশি নিচ্ছে বলে মনে হয়নি। পরিবারের সবাইকে নিয়ে বিকালটা উপভোগ করছি সেটাই বেশ লাগছে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সুফিয়ান তার বন্ধুমহল নিয়ে এসেছেন আড্ডা দিতে। তিনি বলেন, ‘ঢাকায় আড্ডা দেওয়ার মতো উন্মুক্ত স্থান খুব কম। আমার বাসা রামপুরা মহানগর প্রজেক্টে। তার পাশেই এমন খোলামেলা জায়গা থাকতে দূরে কোথাও যেতে চায়নি বন্ধুরা। এখানেই চলে এসেছে সবাই।’
ঈদুল ফিতরের ছুটিতেও বন্ধ নেই মেট্রোরেল চলাচল। ঈদের দিন থেকেই মেট্রোরেলে ভ্রমণ করতে দর্শনার্থীদের উপচে পড়া ভিড় ছিল উত্তরা ও আগারগাঁও প্রান্তে। ঈদের ছুটিতে নরসিংদী থেকে ঢাকায় ঘুরতে আসা রিয়া তালুকদার বলেন, ‘প্রথমবারের মতো ঢাকায় ঈদ উদযাপন করতে এসেছি মামার বাসায়। মামা-মামিকে নিয়ে আমরা সবাই আজ মেট্রোরেলে চড়ে বসলাম।’
ঈদ উপলক্ষে রাজধানীর উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত সকাল ৮টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত মেট্রোরেল চলাচল করেছে। ডিএমপির মোবাইল টিম, টহল টিম ও হোন্ডা মোবাইল টিমসহ বিপুলসংখ্যক পুলিশ নিরাপত্তার স্বার্থে কাজ করে যাচ্ছে।