প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২৬ মে ২০২৩ ১৪:৪১ পিএম
আপডেট : ২৬ মে ২০২৩ ১৬:৩৬ পিএম
সংবাদ সম্মেলনে হিন্দু আইন সংস্কার পরিষদ হিন্দু নারীদের সম্পত্তির অধিকার দেওয়াসহ ছয় দফা দাবি জানায়। প্রবা ফটো
হিন্দু নারীদের সম্পত্তির অধিকার দেওয়াসহ ছয় দফা দাবি জানিয়েছে হিন্দু আইন সংস্কার পরিষদ। সেই সঙ্গে সংগঠনটির নারী কর্মীদের হুমকি ও হেনস্থার প্রতিবাদও করা হয়েছে।
শুক্রবার (২৬ মে) সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবের জহুর হোসেন মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলন করে এসব দাবি জানায় সংগঠনটি।
তাদের ছয় দফা দাবি হলোÑ নারী, প্রতিবন্ধী ও লিঙ্গবৈচিত্র্যময় জনগোষ্ঠীকে সম্পত্তিতে সমঅধিকার দেওয়া, স্ত্রী থাকা সত্ত্বেও পুরুষের যথেষ্ট বহুবিবাহের সুযোগ বাতিল করা, বিশেষ প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে বিবাহবিচ্ছেদের বিধান করা, সন্তানের ওপর পুরুষের মতো নারীরও অভিভাবকত্বের স্বীকৃতি দেওয়া, নারীর সন্তান দত্তক নেওয়ার অধিকার এবং কন্যাসন্তান দত্তক নেওয়ার অধিকার দেওয়া এবং বিবাহ নিবন্ধন বাধ্যতামূলক করা।
হিন্দু আইন সংস্কার পরিষদের সভাপতি ড. ময়না তালুকদার বলেন, ‘৬ হাজার বছর আগের বেদ, রামায়ণ আছে সেখানেও নারীর অধিকারের কথা আছে। সম্পত্তির কথা আছে। সেগুলো যদি ভালোভাবে পড়তেন তবে বুঝতেন আমাদের দাবি অযৌক্তিক না।’
তিনি আরও বলেন, ‘হিন্দুপ্রধান ভারত, নেপাল ও মরিশাসের হিন্দু আইনে লিঙ্গবৈষম্য না থাকলেও বাংলাদেশে প্রচলিত হিন্দু পারিবারিক আইনে নারী, প্রতিবন্ধী, দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত ব্যক্তি (নারী-পুরুষ উভয়ে) এবং লিঙ্গবৈচিত্র্যময় জনগোষ্ঠী সম্পত্তির উত্তরাধিকার থেকে বঞ্চিত হয়। অনেকেই বলেন হিন্দু নারীদের অধিকার দিলে তারা সনাতনধর্মে থাকবে না। তারা সবাই ধর্মান্তরিত হবে। এ ধরনের প্রচারণা হিন্দু নারীদের প্রতি ঘৃণাবাচক, অসম্মানজনক ও নিন্দনীয়।
দুষ্টচক্রটি হিন্দু ও বৌদ্ধ নারীদের অধিকার প্রদান প্রতিহত করার ঘোষণা দিয়ে রাজপথে অবৈধ ও বেআইনি কর্মসূচি পালন করছে। একই সঙ্গে কয়েক দিন ধরে ইন্টারনেটভিত্তিক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তারা সাম্প্রদায়িক উস্কানিমূলক কথাবার্তা ছড়িয়ে সংখ্যালঘুদের মনে ভয় সঞ্চার ও পরিস্থিতি ঘোলাটে করার পাঁয়তারা করছে। তারা যেকোনো মূল্যে নারীর অধিকার প্রতিহত করতে চায়। ধর্মের নামে এসব করা হলেও এগুলো মূলত অধর্ম। এগুলো কোনো স্বাভাবিক গণতান্ত্রিক সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড নয়। এগুলো অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড। কারও অধিকার হরণ করার দাবি গণতান্ত্রিক ও আইনসম্মত হতে পারে না। কেউ তার নিজের অধিকার চাইতে পারে, কিন্তু অন্যের অধিকার হরণ করার দাবি করতে পারে না। অথচ তারা সেটাই করছে।’
ময়না তালুকদার বলেন, ‘প্রতিবাদ করায় আমাদের আন্দোলনের সমর্থক ও সহকর্মী বিশেষ করে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদককে এবং নারীদের নানাভাবে হুমকি, ভয়ভীতি প্রদর্শন, অনলাইনে উত্ত্যক্ত করা, অশ্লীল গালাগাল, মিথ্যা প্রচারণা, কুৎসা রটনা এবং ধর্মীয় ও বংশ পরিচয় তুলে মন্তব্য ও ঘৃণা ছড়িয়ে চলেছে। আমাদের সংগঠনের সঙ্গে কোনোভাবে সম্পৃক্ত নন এমন কয়েকজন নারীর ব্যক্তিজীবন সম্পর্কে কদর্য কথাবার্তা তারা ইন্টারনেটে ছড়িয়েছে এবং তাদের ছবি ফটোশপ করে অশ্লীল প্রচারণায় লিপ্ত হয়েছে। অহেতুক মিথ্যা প্রচারণা যারা চালাচ্ছে তারাই নাকি আমাদের সংগঠনের প্রধান নেতা। হিন্দু নারীদের সম্পর্কে ঢালাওভাবে নেতিবাচক কথা বলা হচ্ছে।'
এসব অপরাধকর্মের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে সরকারের কাছে দাবি জানায় সংগঠনটি। সেই সঙ্গে পুলিশসহ সরকারের সংশ্লিষ্ট সব সংস্থাকে তাদের এসব উস্কানিমূলক প্রোপাগান্ডা তদন্ত করে দোষীদের শাস্তি নিশ্চিত করার অনুরোধ জানানো হয়।
সম্মেলনে আরও বক্তব্য দেন সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক পুলক ঘটক, সদস্য ভানুলাল দাস, সুবাস সাহাসহ প্রমুখ।