× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

নিমতলি ট্র্যাজেডির ১৩ বছর

এক যুগেও সরেনি পুরান ঢাকার রাসায়নিক গুদাম

প্রবা প্রতিবেদক

প্রকাশ : ০৩ জুন ২০২৩ ১০:১৭ এএম

আপডেট : ০৩ জুন ২০২৩ ১০:৫৭ এএম

ছোট ছেলের নাম ছিল বৈশাখ। নিমতলীর ভয়াবহ আগুনে প্রিয় সেই সন্তানকে হারিয়েছিলেন মা। মনে পড়লেই ছবি ছুঁয়ে দেখেন। শুক্রবার পুরান ঢাকার নবাব কাটারা এলাকার বাসায়-আলী হোসেন মিন্টু

ছোট ছেলের নাম ছিল বৈশাখ। নিমতলীর ভয়াবহ আগুনে প্রিয় সেই সন্তানকে হারিয়েছিলেন মা। মনে পড়লেই ছবি ছুঁয়ে দেখেন। শুক্রবার পুরান ঢাকার নবাব কাটারা এলাকার বাসায়-আলী হোসেন মিন্টু

নিমতলি ট্র্যাজেডির এক যুগ পেরিয়ে গেলেও পুরান ঢাকা থেকে রাসায়নিক গুদাম সরাতে পারেনি সরকার। এ সংক্রান্ত দেড় বছর মেয়াদি একটি প্রকল্প চার বছর ধরে চলছে। তবু পুরান ঢাকা থেকে রাসায়নিক গুদাম সরানো যায়নি। তার ওপর আরও দেড় বছর সময় বাড়ানোর আবেদন করেছে প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা বাংলাদেশ ইস্পাত ও প্রকৌশল করপোরেশ (বিএসইসি)। 

রাসায়নিক গুদাম সরানোর সময় বৃদ্ধির এমন টালবাহানার মধ্যেই নিমতলি ট্র্যাজেডির ১৩ বছর পূর্ণ হচ্ছে আজ। ২০১০ সালের ৩ জুন রাতে পুরান ঢাকার নিমতলির নবাব কাটরার ৪৩ নম্বর বাড়ির নিচতলায় রাসায়নিকের গুদাম থেকে আগুন প্রায় আধা কিলোমিটার এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। সেই আগুনে পুড়ে অঙ্গার হয়েছিল ১২৪টি তাজা প্রাণ। আহত হন অর্ধশতাধিক। পুড়ে যায় ২৩টি বসতবাড়ি, দোকানপাট ও কারখানা। চোখের সামনে নিজের বাড়ি, আপনজনদের পুড়তে দেখেছেন অনেকে।

গুদামে থাকা দাহ্য পদার্থের কারণেই নিমতলির আগুন ছড়িয়ে পড়ে বলে তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছিল। ওই সময়ই পুরান ঢাকা থেকে রাসায়নিক গুদামগুলো সরানোর বিষয়ে জোর দাবি ওঠে। এর পরিপ্রেক্ষিতে রাসায়নিকের গুদাম-কারখানা সরিয়ে নিতে দুটি কমিটি গঠন করা হয়। সেই কমিটি কেরানীগঞ্জ ও নারায়ণগঞ্জে জায়গা ঠিক করার সুপারিশ করে প্রতিবেদন জমা দেয় শিল্প মন্ত্রণালয়ে। কিন্তু এসব কাগুজে সুপারিশ আর পরিকল্পনার কিছুই বাস্তবায়ন হয়নি। যার ফলে ২০১৯ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি দেখতে হয় আরেকটি ট্র্যাজেডি। ওই দিন চুড়িহাট্টায় রাসায়নিক গুদামের অগ্নিকাণ্ডে ৭১ জন প্রাণ হারান। এরপরও বিভিন্ন সময় পুরান ঢাকার রাসায়নিকের গুদামে ছোটখাটো অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটছে। কিন্তু কর্তৃপক্ষের টনক নড়ছে না। এতে আরও বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। 

এ প্রসঙ্গে সম্প্রতি প্রতিদিনের বাংলাদেশকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন, শিল্পমন্ত্রী বলেছিলেন ২০২২ সালের জুলাইয়ের মধ্যে রাসায়নিকের গুদাম সরিয়ে নেবেন। কিন্তু এখনও তো নিলেন না। তিনি বলেন, আমরা ঢাকায় রাসায়নিক গুদামের ট্রেড লাইসেন্স নবায়ন ও হালনাগাদ বন্ধ করে দিয়েছি। কোনোভাবেই আবাসিক এলাকায় রাসায়নিকের ব্যবসা চলতে পারে না। 

বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন, পুরান ঢাকায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা রাসায়নিক কারখানা ও গুদামগুলো নিরাপদ জায়গায় স্থানান্তরের জন্য ‘অস্থায়ী ভিত্তিতে রাসায়নিক দ্রব্য সংরক্ষণের জন্য গুদাম নির্মাণ’ শীর্ষক প্রকল্পের অধীনে ৫৪টি গুদাম নির্মাণ করা হয়েছে। 

এদিকে প্রিয়জন হারানোর স্মৃতি নিয়ে এখনও চোখের পানি ফেলছেন স্বজনরা। শুক্রবার প্রিয়জনের স্মরণে অনেকেই নিমতলিতে এসেছেন। নিহতদের স্মরণে নির্মিত স্মৃতিস্তম্ভে ফুল দিয়ে, স্মৃতিময় ব্যানার লিখে প্রিয়জনদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাচ্ছেন কেউ কেউ। নিহত সাত বছর বয়সি ছেলে বৈশাখের স্মরণে বাবা মো. মামুন মিয়া লেখেন ‘৩রা জুন নিমতলি অগ্নিকাণ্ডে আমার চোখের সামনে আব্বু ডাক দিয়ে চিরতরে আমার আদরের ছোট ছেলে বৈশাখ। পারিনি বাঁচাতে তাকে এই হিংস্র লেলিহান আগুন থেকে। কী যে বুক ভরা কষ্ট নিয়ে, আজও এই স্মৃতিমাখা বেদনা নিয়ে এই ছোট্ট দোকানে তার সকল স্মৃতি সঙ্গে নিয়ে ফলের দোকান করছি হতদরিদ্র এই হতভাগা বাবা।’

শুক্রবার কথা হয় মা-বোনসহ ছয় স্বজন হারানো রিপন মিয়ার সঙ্গে। তিনি জানান, চোখের সামনে মা-বোনসহ পরিবারের ছয় সদস্যকে পুড়তে দেখেছি। কী যে কষ্ট তা কাউকে বোঝানো যাবে না। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তখন প্রধানমন্ত্রী গণভবনে ডেকে নিয়ে ১ লাখ টাকা দিয়েছিলেন। এরপর আর কোনো অনুদান পাইনি। তবে এই ট্র্যাজেডির নামে অনেক জায়গা থেকে অনুদান এসেছে বলে দাবি করেন তিনি। 

অন্যদিকে ভয়াবহ দুটি দুর্ঘটনার পরও রাসায়নিক ঝুঁকিমুক্ত হতে পারেনি এলাকাবাসী। চুড়িহাট্টা ট্র্যাজেডির পর ১৫ দিনের অভিযান চালায় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। সিলগালা করা হয়েছিল কয়েকটি গুদামও। কিন্তু ব্যবসায়ীদের একটি শীর্ষ সংগঠনের চাপে সেই অভিযানও বন্ধ হয়ে যায় বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তা। এমনকি ট্রেড লাইসেন্স নবায়ন ও হালনাগাদ বন্ধ থাকার পরও প্রশাসনের চোখের সামনে অবৈধভাবে রাসায়নিকের কেনাবেচা হচ্ছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, রাসায়নিকের গুদাম সরানোর প্রকল্পটি ২০১৯ সালের জুলাই থেকে ২০২০ সালের জুলাই মেয়াদে বাস্তবায়নের জন্য জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় ৯১ কোটি ৭৪ লাখ টাকা ব্যয়ে অনুমোদন দেওয়া হয়। এরপর নির্দিষ্ট সময়ে বাস্তবায়ন করতে না পারায় প্রকল্পের মেয়াদ আরও এক বছর বাড়িয়ে ডিসেম্বর ২০২১ পর্যন্ত করা হয়। কিন্তু এই সময়েও কাজ শেষ করতে পারেনি বিএসইসি। পরে আরও এক বছর বৃদ্ধি করে প্রকল্পের মেয়াদ ২০২২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত করা হয়। দুই দফা সময় বাড়ানোর পরেও কাজ শেষ করতে পারেনি বিএসইসি।

সম্প্রতি প্রকল্পের মেয়াদ আরও দেড় বছর বাড়িয়ে প্রথম সংশোধিত প্রস্তাব পরিকল্পনা কমিশনে পাঠায় সংস্থাটি। পাশাপাশি প্রকল্পের ব্যয় ৮ কোটি ৮১ লাখ টাকা বাড়ানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। 

অপরদিকে নিমতলির ঘটনায় একটি জিডি হয়েছিল। তবে সেটির তদন্ত বিষয়ে আর কোনো অগ্রগতি হয়নি। এমনকি বংশাল থানায় হওয়া সেই জিডির কপিও থানায় মেলেনি। যদিও ওই ঘটনার পর সরকারের করা তদন্ত কমিটির সঙ্গে জিডির তদন্ত সমন্বয় করা হয়েছিল বলে পুলিশের ভাষ্য।

বংশাল থানা পুলিশের একটি সূত্র জানায়, নিমতলির ঘটনায় হওয়া জিডির সূত্র ধরে ১২৪ জনের মরদেহ ঢাকা জেলা প্রশাসকের নির্দেশে ময়নাতদন্ত ছাড়াই দাফনের জন্য স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছিল। আগুনের ঘটনায় করা সেই জিডির কপি এখন খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। জিডির বিষয়ে আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছিল কি না, সে বিষয়ে পুলিশের কাছে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। 

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা