× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

সব ‘কামান’ ব্যর্থ, কাজে আসবে কি ব্যাকটেরিয়া

ফয়সাল খান

প্রকাশ : ০৩ আগস্ট ২০২৩ ০৮:৫৯ এএম

আপডেট : ০৩ আগস্ট ২০২৩ ০৯:০৩ এএম

সব ‘কামান’ ব্যর্থ, কাজে আসবে কি ব্যাকটেরিয়া

ছোট কীট ‘মশা’ দমনের মহাযজ্ঞ যেন ‘মশা মারতে কামা দাগা’ প্রচলিত প্রবাদটির কথা মনে করিয়ে দেয়। অনেকেই হাস্যরস করে মশা মারার বড় বড় প্রকল্পকে ‘কামান’ বলে থাকেন। তবে এখন পর্যন্ত ঢাকার মশা মারার কোনো প্রকল্পই পুরোপুরি সফল হয়নি। মশক নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতার ফলে প্রতি বছর হাজার হাজার মানুষ ডেঙ্গু আক্রান্ত হচ্ছে। ডেঙ্গুতে মৃতের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। 

ডেঙ্গু আক্রান্ত ও মৃত্যু বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মশকনিধন কার্যক্রম নিয়ে নানা ধরনের চিন্তাভাবনা শুরু করে নগর কর্তৃপক্ষ। প্রতি বছরই ডেঙ্গু মৌসুমে মশকনিধনের নতুন প্রকল্প নেওয়া হয়। মশা নিয়ন্ত্রণে প্রশিক্ষণের জন্য বিদেশেও যাচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা। গত জানুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রের মিয়ামি শহরে থেকে ঢাকার এত দিনের মশকনিধন পদ্ধতিকে ‘ভুল’ বলে আখ্যায়িত করেছিলেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) মেয়র আতিকুল ইসলাম। এরপর থেকে সেই ‘ভুল’ থেকে বের হয়ে কাজ করার চেষ্টা করছেন তিনি। এরই অংশ হিসেবে বিটিআইয়ের মাধ্যমে লার্ভিসাইড প্রয়োগ শুরু করবে ডিএনসিসি। 

এরই মধ্যে গত মঙ্গলবার সিঙ্গাপুর থেকে আমদানি করা ব্যাসিলাল থুরিনজেনসিস ইসরায়েলেনসিস (বিটিআই) নামক ব্যাকটেরিয়া ডিএনসিসির কাছে এসে পৌঁছেছে। ঢাকার এডিস মশা নিয়ন্ত্রণের জন্য বিটিআই আজ বৃহস্পতিবার থেকে কাজ শুরু করবে। আজ গুলশানে স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম এবং ডিএনসিসি মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম এ কার্যক্রমের উদ্বোধন করবেন।

জানা গেছে, ঢাকার মশা মারতে প্রতি বছরই নতুন নতুন পদ্ধতি আর প্রকল্প নিচ্ছে দুই সিটি করপোরেশন। এক প্রকল্প ব্যর্থ হলে পরের বছর মশা মারতে নেওয়া হচ্ছে নতুন প্রকল্প। এরই মধ্যে মশা মারতে কামান না দাগালেও ড্রোন ব্যবহার করেছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) মশা মারতে জলাশয়ে হাঁস এবং ড্রেনে ব্যাঙ, তেলাপিয়া ও গাপ্পি মাছ ছেড়েছে। এসব প্রকল্পে সুফল না পেয়ে এবার বিটিআইয়ের মাধ্যমে এ কাজে সফল হওয়ার প্রত্যাশা করছে ডিএনসিসি।

বিটিআই কী

বিটিআই প্রাকৃতিক, সাশ্রয়ী এবং টেকসই। এটি প্রধানত অণুজীব থেকে সৃষ্ট কম-বিষাক্ত কীটনাশক হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এ ব্যাকটেরিয়া প্রচুর পরিমাণে টক্সিন তৈরি করতে পারে, যার প্রভাবে কীটপতঙ্গের খাদ্যগ্রহণ বন্ধ হয়ে যায়।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিটিআই এক ধরনের ব্যাকটেরিয়া। মশা মারতে এটি অনেকটা লার্ভিসাইডের মতো স্প্রে করতে হয়। জলজ আবাসস্থলে এ কীটনাশক প্রয়োগ করলে এটি মশা-মাছির বংশবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ করে। বিটিআই ব্যবহারে মানুষ, পোষা প্রাণী, গবাদিপশু এবং উপকারী পোকামাকড়ের ক্ষতি হয় না। তবে চোখে লাগলে দৃষ্টিশক্তি এবং ত্বকের ক্ষতি হতে পারে।

নদী-নালা, পুকুর ও খালের মতো জলাশয়ে বিটিআই স্প্রে করা যায়। বদ্ধ পানিতে বিটিআই প্রয়োগ করলে এটি মশার লার্ভাকে মেরে ফেলে। তা ছাড়া ফুলের টব, খালি পাত্র ও টায়ারে জমে থাকা পানিতেও ব্যবহার করা যায়। ১০০ লিটার পানিতে ১৫ গ্রাম বিটিআই মিশিয়ে দেড় বর্গকিলোমিটার এলাকায় ছিটিয়ে দিলে ভালো ফল পাওয়া যায়। ওষুধটির কার্যকারিতা থাকে ৩০ দিন।

যা বলছেন বিশেষজ্ঞরা

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক এবং ডিএনসিসি মেয়রের উপদেষ্টা কবিরুল বাশার প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, বিটিআই মশা দমনে খুবই কার্যকরী। আমি গবেষণা করে দেখেছিÑ বিটিআই প্রয়োগের ফলে দুই ঘণ্টার মধ্যে মশা মারা যায়। বিটিআই সঠিক সময়, সঠিক মাত্রা, সঠিক জায়গা ও সঠিক সময়ের ব্যবধানে প্রয়োগ করতে পারলে সফলতা আসবে। কীটতত্ত্ববিদ মনজুর আহমেদ চৌধুরীও বিটিআই আমদানি করাকে কার্যকর উদ্যোগ বলেছেন।

তবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক পরিচালক এবং জনস্বাস্থ্যবিদ ডা. বে-নজীর আহমেদ ভিন্ন মত পোষণ করেছেন। তিনি বলেন, বিটিআই সঠিকভাবে প্রয়োগ করা হলে মশা নিয়ন্ত্রণ সম্ভব। কিন্তু এই পরিস্থিতিতে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে বিটিআই খুব একটা কার্যকর হবে না। এটি কিউলেক্স মশার বিরুদ্ধে বেশি কার্যকর। লার্ভিসাইড যদি এডিস মশার উৎপত্তিস্থলে না পৌঁছায়, তবে তা কার্যকর হবে না। 

ঢাকা উত্তরের উপপ্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা মো. গোলাম মোস্তফা সারওয়ার বলেন, সিঙ্গাপুর, ভারতের বিভিন্ন শহর, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড এবং ফিলিপাইন বিটিআই ব্যবহার করে মশা নিয়ন্ত্রণে সফলতা পেয়েছে। বাংলাদেশের জলবায়ুও এসব দেশের মতোই।

মশকনিধনের ব্যর্থ কর্মসূচি

ঢাকায় এডিস ও কিউলিক্স মশা নিয়ন্ত্রণে প্রায় সারা বছরই সকাল-বিকাল ওষুধ ছিটানোর কার্যক্রম পরিচালনা করে দুই সিটি করপোরেশন। সকালে নালা, ডোবা, লেক ও ময়লা-আবর্জনায় (মশার বংশবিস্তার করার জায়গায়) লার্ভিসাইড প্রয়োগ করা হয়। বিকালে উড়ন্ত মশার জন্য ওষুধ ছিটানো হয়। তা ছাড়া বিশেষ পরিস্থিতিতে ক্রাশ প্রোগ্রাম পরিচালনা করা হয়।

সম্প্রতি ড্রোন ব্যবহার করে লেক ও জলাশয়ে মশকনিধনের উদ্যোগ নিয়েছিল ডিএনসিসি। এতে সুফল না পাওয়ায় প্রকল্পটি বাদ দেওয়া হয়। তবে এরপর ড্রোন ব্যবহার করে ভবনের ছাদে মশার উৎস অনুসন্ধানে কাজ করছে সংস্থাটি। 

কয়েক বছর ধরে ড্রেনে তেলাপিয়া ও গাপ্পি মাছ, জলাশয়ে হাঁস ও ব্যাঙ অবমুক্ত করে মশা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে ডিএসসিসি। এসব কার্যক্রমও হালে পানি পায়নি। জলাশয়ে ছাড়ার কিছুদিন পরই হাঁসগুলো আর খুঁজে পাওয়া যায়নি। সম্প্রতি পরিচালিত মশকনিধন অভিযানে সচেতনতামূলক গান পরিবেশন, পোস্টার ও লিফলেট বিতরণ করতে দেখা গেছে। তা ছাড়া চিরুনি অভিযান, লার্ভা পাওয়া গেলে জেল-জরিমানাও করছে সংস্থা দুটি। কাঙ্ক্ষিত সফলতা না পাওয়ায় এরই মধ্যে বেশ কয়েকবার ওষুধও পরিবর্তন করেছে সিটি করপোরেশন।

ডেঙ্গু প্রতিরোধে জাদুকরি কোনো সমাধান নেই : মেয়র তাপস

গতকাল ধানমন্ডি রিকশা স্ট্যান্ড পরিদর্শনে গিয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন, ডেঙ্গু প্রতিরোধে জাদুকরি কোনো সমাধান নেই। সুনির্দিষ্ট একটি কাজ করলে এডিস মশা পুরোটা বিলুপ্ত হবে, এ ধরনের কোনো সমাধান নেই। আজ পর্যন্ত এ ধরনের কোনো সমাধান সারা বিশ্বে কেউ দিতে পারেনি। সুতরাং এডিস মশার প্রজননস্থল ধ্বংসের মাধ্যমে ডেঙ্গু রোগ প্রতিরোধের যে স্বীকৃত পদ্ধতি, সেটিই আমাদের অনুসরণ করতে হচ্ছে। 

মেয়র আরও বলেন, উৎস নিধনে সফল হতে এবং কার্যক্রম আরও কার্যকর ও ফলপ্রসূ করতে হলে জনসচেতনতা বাড়াতে হবে। নাগরিকরা যদি দায়িত্বশীল না হয় এবং যদি উৎসগুলো চিহ্নিত করে না দেয়, তাহলে সিটি করপোরেশন সেই জায়গায় গিয়ে এডিস মশার উৎসস্থল ধ্বংস করতে পারবে না। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে আমাদের যে তথ্য দেওয়া হয় এবং আমাদের নিয়ন্ত্রণ কক্ষে যারা তথ্য দেন, সে তথ্যের ভিত্তিতে আমরা নিয়মিত এডিস মশার উৎসস্থল ধ্বংস করছি।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা