প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৬ নভেম্বর ২০২৩ ১৬:০৯ পিএম
আপডেট : ০৬ নভেম্বর ২০২৩ ১৬:৪৪ পিএম
রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। প্রবা ফটো
রাজধানীতে বিএনপির ডাকা অবরোধে যাত্রী সেজে বাসে উঠে আগুনের ঘটনায় নির্দেশনায় জড়িত এক কেন্দ্রীয় ছাত্রদল নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। রাজধানীতে প্রতিটি বাসে আগুন দিলে পুরস্কার হিসেবে দেওয়া হতো টাকা। এমন অভিযোগে ছাত্রদলের এক নেতাকে সহযোগীসহ গ্রেপ্তার করেছে ডিএমপির কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ইউনিট (সিটিটিসি)।
সোমবার (৬ নভেম্বর) দুপুরে রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান সংস্থাটির প্রধান অতিরিক্ত কমিশনার মো. আসাদুজ্জামান। তিনি জানান, রবিবার মধ্যরাতে বাবুবাজার ব্রিজ এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় তাদের কাছ থেকে বোতল ভর্তি পেট্রোল উদ্ধার করা হয়।
গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন- ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সূত্রাপুর থানা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক আমির হোসেন রকি এবং তার সহযোগী সাকিব ওরফে আরোহান।
সিটিটিসি প্রধান আসাদুজ্জামান জানান, ১ নভেম্বর রাজধানীর মুগদাপাড়া আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের সামনে মিডলাইন বাসে কতিপয় রাজনৈতিক দুর্বৃত্ত যাত্রীবেশে আগুন দিয়ে পালানোর সময় আল-আমিন নামে একজনকে হাতেনাতে আটক করে। পরে তিনি আগুন দেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেছেন। এ ঘটনায় যারা নেতৃত্ব দিয়েছেন তাদের বেশকিছু তথ্য পাওয়া গেছে।
সিটিটিসির প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আল আমিন বলেন, তার নেতা মিজানুর রহমান। এই মিজানুরের নেতৃত্বে আরও দুজন কমলাপুর টিটিপাড়া থেকে বাসে উঠে পেছনের সিটে গিয়ে বসে। এরপর সঙ্গে থাকা পেট্রোল ঢেলে বাসে আগুন দিয়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। মিজানসহ তিনজন পালিয়ে যেতে পারলেও স্থানীয়রা আল আমিনকে ধরে ফেলে। পরবর্তীতে মিজানকে গাজীপুর থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
এরপর মিজানকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে সিটিটিসিকে জানায়, মহানগর ছাত্রদলের একজন নেতা আমির হোসেন রকি নেতৃত্বে মিজান রাজনীতি করে। এই রকির নির্দেশনায় ও তত্ত্বাবধানে প্রথম দফা মিডলাইন বাসসহ বেশ কয়েকটি বাসে আগুন দেওয়া হয়। এর বাইরেও আরও বেশ কয়েকটি বাসে আগুন দিয়েছে তারা।
প্রথম দিনের অবরোধে মিজান এসে আল আমিনের কাছে বোতলে পেট্রোল ও টাকা দেয়। এ সময় মিজান তাদের আশ্বস্ত করে যে, দল ক্ষমতায় আসতেছে, কোনো সমস্যা হবে না। বাস পোড়ানোর নির্দেশনা দেয়। কমলাপুরের টিটিপাড়া থেকে খিলগাঁও সড়কে চলাচল করা বাসে আগুন দেওয়ার দায়িত্ব দেওয়া হয় তাকে। প্রতিটি বাসে আগুন দেওয়ার জন্য তিন হাজার টাকা বোনাস বিকাশ করে দেয়। পরবর্তীতে দ্বিতীয় দফা অবরোধে বাসে আগুন দেওয়ার জন্য ডাবল বোনাস ঘোষণা করা হয়।
দ্বিতীয় দফা অবরোধে গতকাল রবিবার রাজধানীতে ১০টি গাড়িতে আগুন দেওয়া হয়েছে। গতকালও রকির নির্দেশনায় দুটি বাসে আগুন দেওয়া হয়েছে। রকির নির্দেশে যাত্রাবাড়ীর দয়াগঞ্জে আগুন দেওয়ার সময়ে হাতেনাতে দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আমাদের গোয়েন্দাদের তৎপরতায় আগুন ঠেকিয়ে দেওয়া হয়। এটাতে ব্যর্থ হওয়া রকি তার সহযোগী সাকিবকে নিয়ে কেরানীগঞ্জে এলাকায় বাসে আগুন দেওয়ার উদ্দেশ্যে বিএনপির এক নেতার কাছে যাচ্ছিলেন। পরবর্তীতে আমরা তার পিছু নিয়ে বাবুবাজার ব্রিজ থেকে পেট্রোলসহ তাকে গ্রেপ্তার করি।
সে কী কী কাজ করেছে এই দুই দফা অবরোধে তার কাছ থেকে আমরা বেশ তথ্য প্রমাণ পেয়েছি। কারা কারা নির্দেশনায় ছিল এবং কারা টাকা দিয়েছে সব তথ্য আমরা পেয়েছি।
প্রথম দিনের অবরোধে কী পরিমাণ জ্বালাও-পোড়াও করেছে। এই ফুটেজ আমরা তার মোবাইলে পেয়েছি। অবরোধ কর্মসূচিতে বাসে আগুন দিতে কার কার সঙ্গে যোগাযোগ করেছে এবং কারা কারা সহযোগিতা করেছে আমরা সবার নাম পেয়েছি।
আরও একটি ভয়ঙ্কর তথ্য দিয়েছে, প্রথম অবরোধে একটি বাসে আগুন দিলে যা পুরস্কার দিতো, দ্বিতীয় অবরোধে সেটি ডাবল করার ঘোষণা দিয়েছে। আগুন দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তারা পুরস্কার পাঠাতো। আমরা রকির কাছ থেকে নির্দেশ দাতাদের তথ্য পেয়েছি। রকির নেতৃত্বে আরও কয়েকটি দল সক্রিয় রয়েছে।
পুরস্কারের অর্থদাতা কারা জানতে চাইলে সিটিটিসি প্রধান বলেন, ‘আমরা সবার তথ্য পেয়েছি। কিন্তু তদন্তের স্বার্থে কারও নাম প্রকাশ করছি না। তবে একে একে সবাইকে আইনের আওতায় আনা হবে এবং গণমাধ্যমের সামনে হাজির করা হবে।’