× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

আজ পুরান ঢাকার আকাশ দখলে নেবে নানা রঙের ঘুড়ি

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক

প্রকাশ : ১৪ জানুয়ারি ২০২৪ ১২:৪৩ পিএম

আপডেট : ১৪ জানুয়ারি ২০২৪ ১৩:৩৩ পিএম

দোকানে বিভিন্ন রঙের ঘুড়ি সাজিয়ে রাখা হয়েছে। প্রবা ফটো

দোকানে বিভিন্ন রঙের ঘুড়ি সাজিয়ে রাখা হয়েছে। প্রবা ফটো

রাজধানী ঢাকার উৎসবের নগরী হিসেবে খ্যাত পুরান ঢাকা। নানা উৎসবে নগরীকে নানা রঙে ও বর্ণে রাঙিয়ে তোলা হয়। বায়ান্ন বাজার তেপ্পান্ন গলির শহরে অন্যান্য উৎসবের মধ্যে অন্যতম সাকরাইন। যাকে ঘিরে রীতিমতো আনন্দ-উল্লাস হয় ঈদের মতো। সেই সাকরাইনকে বরণ করতে প্রস্তুত পুরান ঢাকা। এই উৎসবকে ঘিরে পুরান ঢাকার চারপাশ ছেয়ে গেছে বাহারী রঙ এবং আলোকসজ্জায়। নগরবাসী শেষ করেছেন ঘুড়ি উড়ানোর প্রস্তুতি। বাড়ির ছাদগুলো সাজানো হয়েছে লাল-নীল কাপড় দিয়ে। সাইণ্ড সিস্টেমে বাজানো হচ্ছে ডিজে গান। 

সাকরাইন মূলত ঘুড়ি উৎসব। সংস্কৃত শব্দ সংক্রান্তি ঢাকাইয়া অপভ্রংশে সাকরাইনে রূপ নিয়েছে। পৌষ ও মাঘ মাসের সন্ধিক্ষণে, পৌষ মাসের শেষ দিন ভারতবর্ষের অনেক জায়গায় সংক্রান্তি উদযাপিত হয়। সাকরাইন পুরান ঢাকায় পালিত হয় জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে।  বাংলা বর্ষপঞ্জিকার নবম মাস অর্থাৎ পৌষ মাসের শেষ দিন এই উৎসবের আয়োজন করা হয়। ভারতীয় উপমহাদেশে দিনটি ‘মকর সংক্রান্তি’ নামেও পরিচিত।

সাকরাইনের ইতিহাস থেকে জানা যায়, ১৭৪০ সালের পৌষ মাসের শেষ এবং মাঘ মাস শুরুর সন্ধিক্ষণে মোঘল আমলে নায়েব-ই-নাজিম নওয়াজেশ মোহাম্মদ খানের আমলে ঘুড়ি উৎসবের প্রচলন হয়। সেই থেকেই এই উৎসবকে পালন করে আসছে পুরান ঢাকার স্থানীয়রা। 

শনিবার (১৩ জানুয়ারি) বিকালে পুরান ঢাকার সূত্রাপুর, গেন্ডারিয়া, নারিন্দা, কুলুটোলা, সুরিটোলা, নবাবপুর, শ্যামবাজার, শাঁখারি বাজার, বাংলাবাজার, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা, তাঁতীবাজার, ধোলাইখাল, শিংটোলা, মালিটোলা, ডালপট্টি মোড়, লক্ষ্মীবাজার, ফরাশগঞ্জ, সদরঘাট, গেন্ডারিয়া, নারিন্দা, লালবাগ, চকবাজার, মুরগিটোলাসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায় ঘুড়ি উড়ানোর প্রস্তুতি। কেউ ঘুড়ি প্রস্তুত করছেন, কেউ সুতায় মাঞ্জা দিচ্ছেন, কেউ নাটাই কিনছেন। সাকরাইন উপলক্ষে ঘুড়ি, নাটাই, সুতা বিক্রির ধুম পড়েছিল শাঁখারী বাজারে। কয়েক দিন ব্যস্ত সময় পার করেছেন সেখানকার দোকানিরা।

শাঁখারী বাজারে যেসব ঘুড়ি পাওয়া যায় তার মধ্যে অন্যতম চোখদার, রকদার, গরুদার, ভোমাদার, কাউঠাদার, মাছলেঞ্জা, ফিতালেঞ্জা, প্রজাপতি ঘুড়ি, পেঁচা ঘুড়ি, বাক্স ঘুড়ি, সাপ ঘুড়ি, দাবা ঘুড়ি, চিল ঘুড়ি, এংরি বার্ড ঘুড়ি, চারকোনা ঘুড়িসহ বাহারী রকমের ঘুড়ি। ঘুড়ির আকার ও ডিজাইন বুঝে দাম রাখা হচ্ছে ১০-৮০০ টাকা পর্যন্ত। 

সাকরাইন উপলক্ষে দুই ধরনের সুতো পাওয়া যায়। একধরনের সুতো মাঞ্জা দেওয়া অন্যটি মাঞ্জা দেওয়া ছাড়া। এর মধ্যে অন্যতম ড্রাগন সুতা, ঈগল সুতা, টাইগার সুতা, বিলাই সুতা ইত্যাদি। সুতার মান বুঝে দাম চাওয়া  হচ্ছে ২০-১০০০ টাকা পর্যন্ত। 

সাকরাইন উপলক্ষে নানা ধরনের নাটাই পাওয়া যায়। তার মধ্যে বাঁশের নাটাইয়ের চাহিদা বেশি। এ ছাড়াও আছে মুখবন্ধ নাটাই, বাটিওয়ালা নাটাই, লোহার এবং কাঠের নাটাই। এসবের দাম রাখা হচ্ছে ১০০-১০০০ টাকা পর্যন্ত। 

শুধুমাত্র ঘুড়ির অনুসঙ্গই নয়। বাহারি রঙে আকাশকে জানান দিতে পুরান ঢাকাবাসী কিনছেন ফানুস এবং আতশবাজি। আতশবাজিগুলোর মধ্যে অন্যতম  তারা শট, দেড়শ শট, কদম ফুল,  ঝরনা, ব্যাটারি বোম, চকলেট বোম, রকেট বোম, পাতা বোম, ২৮ বোম, ফ্লেম টর্চ, পাঁচ শট, শলতা বোম, বারো শট, বত্রিশ শট, আশি শট, একুশ শট, একশ বিশ শট ইত্যাদি। এসবের দাম রাখা হচ্ছে ২০০-৬০০০ টাকা পর্যন্ত। এ ছাড়াও বাহারি রঙ ও ডিজাইনের ফানুস পাওয়া যাচ্ছে। যেমন : গোল ফানুস, রঙিন ফানুস, বক্স ফানুস, লাভ ফানুস ইত্যাদি। এসবের দাম রাখা হচ্ছে ১০০-৩০০ টাকা পর্যন্ত । 

আতশবাজিতে পাখির মৃত্যু এবং ফানুস থেকে আগুন লাগানোর ঘটনা ঘটায় এসব উড়ানো নিষেধ থাকলেও সেসব মানছে না কেউ। তবে পুরান ঢাকার অনেক সচেতন মহল ঘুড়ি উড়ানো এবং আনন্দ করলেও পরিহার করছেন আতশবাজি এবং ফানুসের আনন্দ।

বিক্রির বিষয়ে শাঁখারি বাজারের বিক্রেতা নিমাই শীল প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘আজই বিক্রি বেশি হবে। দুই দিন ভালোই বিক্রি হয়েছে। আশা করছি আগামীকাল পর্যন্ত বেশ ভালো ব্যবসা হবে। করোনার সময়ের লস এখন তুলতেছি।’

এ বিষয়ে পুরান ঢাকার স্থানীয় বাসিন্দা হুসেন মন্ডল বলেন, ‘এইটা আমাগো বাপ-দাদারা পালন করে আসছে। অহন আমগো পোলাপানরা করতাছে। এইভাবেই চলতাছে অনেক বছর থেইকা। পোলাপান মজ-মাস্তি করে, গান টান বাজার। ভালোই লাগে সব মিইল্লা।’

সাকরাইন উপলক্ষে পুরান ঢাকায় বেড়েছে মিষ্টিজাতীয় খাবার বিক্রির ধুম। এই উৎসবে পুরান ঢাকার অনেকের আত্মীয় আসেন এবং তাদের সবার সকাল শুরু হয় বাকরখনি দিয়ে। বাকরখনিসহ নানা ধরনের খাবারে মেতে ওঠে পুরান ঢাকাবাসী। 

বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পুরান ঢাকার আকাশ ছেয়ে যাবে বাহারি রঙের ঘুড়িতে। চলবে ঘুড়ির সুতো কাটার খেলা। দিনের শেষে সন্ধ্যা নামলে শুরু হবে আতশবাজি ও ফানুস উড়ানো। রাতে ডিজে গানের সঙ্গে নাচবেন অনেকেই, কেউবা আবার করবেন বারবিকিউ পার্টি। এ ছাড়াও আগুন নিয়ে খেলা এ উৎসবের অন্যতম অনুষঙ্গ। তবে সকালের তুলনায় বিকালে এবং রাতে এ উৎসব বেশি মুখরিত হয়।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা