প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১৮:৪৭ পিএম
আপডেট : ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১৯:১৪ পিএম
ভিডিও থেকে নেওয়া ছবি।
ট্রাফিক পুলিশের মামলার প্রতিবাদে মোটরসাইকেল পুড়িয়ে ফেলেন রাসেল মিয়া নামের এক যুবক। ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। ঘটনার তদন্তে নামে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি)। বাহিনীর তদন্তে উঠে এসেছে– সামাজিকমাধ্যমে ভাইরাল হওয়ার জন্য সেদিন নিজের মোটরসাইকেল পুড়িয়ে ফেলেন রাসেল। তিনি ভিডিওতে একটি মামলার অনুলিপি দেখিয়েছেন। সেটি অন্য আরেকজনের মোটরসাইকেলের বিরুদ্ধে করা ট্রাফিক পুলিশের মামলার অনুলিপি।
ডিবি জানায়, এ ঘটনা ছাড়াও বিভিন্ন সময় বেপরোয়া গতিতে মোটরসাইকেল চালানো, উচ্চশব্দে একাধিক মোটরসাইকেলের রেসিংয়ের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে টাকা আয় করতে গিয়ে আইনের তোয়াক্কা করতেন না এই যুবক।
ডিবিপ্রধান ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার হারুন-অর-রশীদ জানান, রাসেল মিয়া মোটরসাইকেলে আগুন দিয়ে ভিডিওটি তৈরি করেন আফতাবনগর হাউসিংয়ের ভেতর একটি রাস্তার ওপর। সঙ্গে ছিল তার বন্ধু ফুয়াদ হাসান রাকিব। মোটরসাইকেলটি কেটিএম ১২৫ সিসি মডেলের। মোটরসাইকেল পোড়ানোর ভিডিওটি ভাইরাল হওয়ায় পুলিশের বিরুদ্ধে নেতিবাচক মনোভাব তৈরি হয়। তদন্তে নেমে ডিবির লালবাগ বিভাগের গাড়ি চুরি প্রতিরোধ টিমের সদস্যরা ধানমন্ডি এলাকা থেকে শনিবার রাসেলকে গ্রেপ্তার করে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে বেরিয়ে আসে আসল তথ্য।
রাসেলের বাড়ি মানিকগঞ্জের দৌলতপুর থানায়। তার বাবা ও মা দুজনে বিদেশে থাকেন। তার আরেক ভাইও বাবা-মায়ের সঙ্গে থাকেন। রাসেল একাই দেশে থাকেন।
ডিবির লালবাগ বিভাগের উপকমিশনার মশিউর রহমান জানান, রাসেল সচ্ছল পরিবারের সন্তান। তিনি ২০২০ সালে এসএসসি পাস করার পর পড়াশোনা করেননি। তিনি মোটরসাইকেল কিনে রেসিং করতেন বিভিন্ন সময়। একপর্যায়ে ভারতে গিয়ে কিছু দিন মার্শাল আর্ট প্রশিক্ষণ নেন। এরপর জুনিয়র টাইকার সর্প রাসেল জেটিএস নাম ধারণ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি পেজ খুলেন। এই পেজে তিনি নিজের মোটরসাইকেল রেসিংয়ের নানা রকম ভিডিও, ছবি পোস্ট করতেন। ধীরে ধীরে তিনি পেজে জনপ্রিয়তা পেতে থাকেন। তরুণ-তরুণীরা তার পেজের ফলোয়ার হতে শুরু করে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে আরও জানা যায়, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জনপ্রিয়তা বাড়তে থাকায় সেখান থেকে আয় করতে থাকেন রাসেল। বেশি আয়ের আশায় রেসিংয়ের নামে নানা রকম অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি, তরুণীদের পেছনে বসিয়ে রেসিংয়ের ভিডিও তৈরি করে সেগুলো তার পেজে আপলোড করতেন। মোটরসাইকেল স্পিডিং স্টানিংসহ বিভিন্ন ভিডিও বানিয়ে ইউটিউবে শেয়ার করতেন তিনি। এতে কোনো মাসে ১০, কোনো মাসে ২০ ডলার তার উপার্জন হতো। রাসেল দলবেঁধে ছেলেমেয়েদের নিয়ে ভিডিও তৈরি করতেন পূর্বাচলে ৩০০ ফিট সড়ক, মাওয়া সড়ক ও আফতাবনগরের সড়কে। মোটরসাইকেল দিয়ে বিকট শব্দের খেলা, হাই স্পিডিং ও স্ট্যানিং– এগুলো ছিল তার ভিডিও তৈরির কনসেপ্ট।
এসব করার জন্য মোটরযান আইন ভেঙে নিজের মোটরসাইকেলে একটি অতিরিক্ত সাইলেন্সার (একজস্ট পাইপ) লাগিয়েছেন রাসেল। আরও বেশি জনপ্রিয়তা পাওয়ার জন্য উঠতি বয়সি যুবক-যুবতীদের নিয়ে ফানি ভিডিও তৈরির নামে বিপজ্জনক ও অশ্লীল ভিডিও তৈরি করে ভিউ বাড়ানো তার একটি উদ্দেশ্য ছিল। একটি গোষ্ঠীর কাছে তার এসব কাজ জনপ্রিয়তা পায়। তার কোনো কোনো ভিডিওতে ৯ থেকে ১০ মিলিয়ন ভিউ হওয়ায় বিদেশি বিভিন্ন অনলাইন জুয়াড়ি তাকে দিয়ে অনলাইন জুয়ার প্রমোশনাল বিজ্ঞাপন দিয়েছে। তিনি যেসব অনলাইন জুয়ার সাইটকে প্রমোট করেন তার কয়েকটি হলো, ওয়ান এক্স বেট, ভি ২৪ বেট, এফএক্স বেট ও সি এক্স ক্রিকেক্স।
সম্প্রতি মোটরসাইকেল পুড়িয়ে ফেলার ঘটনা প্রসঙ্গে ডিবিপ্রধান হারুন-অর-রশীদ জানান, প্রকৃতপক্ষে সেদিন রাসেলের মোটরসাইকেলের বিরুদ্ধে ট্রাফিক পুলিশ কোনো মামলাই দেয়নি। যে কেস স্লিপটি ভিডিওতে তিনি নিজের বলে দাবি করেছেন– সেটি ছিল তার বন্ধু ফুয়াদের। বিপজ্জনকভাবে মোটরসাইকেল চালানো, সিগন্যাল অমান্য করা এবং বেআইনি সংযোজনের কারণে তার বন্ধুকে মামলা দিয়েছিল ট্রাফিক পুলিশ। শুধু ভাইরাল হওয়ার জন্য ও হিরোইজম দেখাতে গিয়ে রাসেল কাজটি করেছেন বলে ডিবির কাছে স্বীকার করেছে। বিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ ও ঘৃণা ছড়ানো, উশৃঙ্খল ও হঠকারী কাজের মাধ্যমে আইনভঙ্গ করার প্রচারণা ও প্রতারণার অভিযোগে রাসেলকে আটক করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।