প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ০০:০৯ এএম
আপডেট : ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১০:৪৯ এএম
প্রয়াত জাতীয় অধ্যাপক কবীর চৌধুরী স্মারক বক্তৃতা ও আলোচনা অনুষ্ঠানে অতিথিরা। ছবি : সংগৃহীত
অধ্যাপক কবীর চৌধুরী স্মারক বক্তৃতায় প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান বলেছেন, ‘কবীর চৌধুরী আজীবন ধর্মনিরপেক্ষ ও অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছেন। ধর্ম নিয়ে যারা রাজনীতি করে, সাম্প্রদায়িকতা ছড়ায় তারা অধ্যাপক কবীর চৌধুরীকে নিয়ে গুজব ছড়াত। তাকে নাস্তিক আখ্যা দিয়ে হুমকি দিত। তারা ধর্মকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে রাজনীতি করে। সমাজে সাধারণ মানুষের মাঝে বিভ্রান্তি ছড়ায়। অথচ বঙ্গবন্ধু তার দল থেকে মুসলিম শব্দটি ১৯৫৫ সালে বাদ দিয়ে একটি অসাম্প্রদায়িক দল গঠন করেছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের পর ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ করেছেন। এখন দায়িত্ব আমাদের নতুন প্রজন্মের। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ নির্মাণ করার জন্য তরুণদের কাজ করে যেতে হবে।’
প্রয়াত জাতীয় অধ্যাপক কবীর চৌধুরী স্মারক বক্তৃতা ও আলোচনা অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। শুক্রবার (৯ ফেব্রুয়ারি) কবীর চৌধুরীর জন্মদিন উপলক্ষে জাতীয় জাদুঘরের কবি সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি। সংগঠনের সভাপতি লেখক সাংবাদিক শাহরিয়ার কবিরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্মারক বক্তৃতা করেন বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর ব্যারিস্টার তাপসকান্তি বল। সঞ্চালনা করেন কমিটির আইটি সেলের সভাপতি শহীদসন্তান নাট্যজন আসিফ মুনীর।
অনুষ্ঠানে আলোচক ছিলেন ইন্টারন্যাশনাল থিয়েটার ইনস্টিটিউটের সাম্মানিক সভাপতি নাট্যজন রামেন্দু মজুমদার, শহীদজায়া শ্যামলী নাসরিন চৌধুরী, গণহত্যা-নির্যাতন আর্কাইভ ও জাদুঘর ট্রাস্টের সভাপতি ইতিহাসবিদ অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন ও একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির আইন সম্পাদক ব্যারিস্টার নাদিয়া চৌধুরী।
ওবায়দুল হাসান বলেন, ‘বাংলাদেশের ভূখণ্ডে ১৯৭১ সালে কি মাত্রায় জেনোসাইড হয়েছে সেই নির্মম সত্যটি বের করে আনতে হবে। আমরা খুলনার চুকনগর, গল্লামারি, বটিয়াঘাটার নানা বধ্যভূমির কথা জেনেছি। আজও দেশের অনেক বধ্যভূমি অনাবিষ্কৃত। বধ্যভূমিগুলোর সংরক্ষণ ও সুরক্ষা নির্মম সত্যের প্রতীক হয়ে রইবে। আর এ সত্য জাতিকে ও নতুন প্রজন্মকে মহান মুক্তিযুদ্ধে আত্মত্যাগকারীদের প্রতি সদা শ্রদ্ধাবনত রাখবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘যে নির্মম সত্য ট্রাইব্যুনালের বিচারের মাধ্যমে বেরিয়ে এসেছে এবং আসছে তা তরুণ প্রজন্মকে জানতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বুকে ধারণ করতে হবে। তরুণরা যেন সুরক্ষিত মানবগোষ্ঠী ও মানবিক এক বিশ্বের জন্য এ উচ্চারণে সদা উচ্চকণ্ঠ থাকে যে ‘নেভার অ্যাগেইন’।
রামেন্দু মজুমদার বলেন, ‘অধ্যাপক কবীর চৌধুরীর মতো এত অনুবাদ বোধহয় আমাদের দেশে কেউ করেননি। তার বাংলা থেকে ইংরেজি অনুবাদগ্রন্থের সংখ্যা অর্ধশতাধিক এবং ইংরেজি থেকে বাংলা গ্রন্থ ৭৫-এর কম নয়। একদিকে যেমন তিনি বাংলাদেশের সহিত্য অনুবাদের মাধ্যমে বিদেশে পরিচিত করিয়েছেন, অন্যদিকে বিশ্বসাহিত্য বাঙালি পাঠকের কাছে নিয়ে এসেছেন।’
অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন বলেন, ‘নির্মূল কমিটির সঙ্গে যুক্ত হওয়ার পর মৌলবাদ ও ঘাতক বিরোধী আন্দোলনে অধ্যাপক কবীর চৌধুরী প্রধান ভূমিকা পালন করেন। বিএনপি-জামায়াত আমলে যখন জঙ্গি মৌলবাদকে প্রণোদনা দেওয়া হচ্ছিল তখন অধ্যাপক কবীর চৌধুরীর নেতৃতে নির্মূল কমিটি জঙ্গি মৌলবাদ রোধে বিশিষ্ট ভূমিকা পালন করেছে। এখনও মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী শক্তি অধ্যাপক কবীর চৌধুরীর বিরুদ্ধে অনলাইনে অনেক বিদ্বেষমূলক ভিডিও ছড়াচ্ছে। বিটিসিএলের উচিত এসব ভিডিও সরিয়ে গুজব রটনাকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা।’
শাহরিয়ার কবির বলেন, ’৭১-এর যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এবং জামায়াতে ইসলামীর মৌলবাদী-সাম্প্রদায়িক রাজনীতি নিষিদ্ধকরণের দাবিতে ৩২ বছর আগে শহীদজননী জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে যে অভূতপূর্ব নাগরিক আন্দোলন সূচিত হয়েছিল এর প্রধান নেতাদের অন্যতম অধ্যাপক কবীর চৌধুরী।’
তিনি আরও বলেন, ‘জঙ্গি মৌলবাদের পূর্ণগ্রহণ আজ গ্রাস করেছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সূর্য। এ সময় আমরা বারবার শুনতে চাই অধ্যাপক কবীর চৌধুরীর অতিপরিচিত উচ্চারণ—অন্ধকার কখনও স্থায়ী হয় না, সত্যের জয় অনিবার্য, আমরা লড়ছি সত্য ও ন্যায়ের জন্য, আমরা অবশ্যই জয়ী হব...। তিনি কায়িকভাবে আমাদের সঙ্গে না থাকলেও মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে, ধর্মনিরপেক্ষ মানবতার পক্ষে তার রচনাবলি আমাদের ঝড়ের রাতে বাতিঘরের মতো আলো জ্বেলে পথ দেখাচ্ছে।’