সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ড
প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১০:৪৭ এএম
আপডেট : ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১০:৪৯ এএম
সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি। ফাইল ছবি
সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যার এক যুগে বারবার তদন্ত সংস্থা ও তদন্ত কর্মকর্তা বদলেছে। কিন্তু রহস্যের জট খোলেনি। এখনও আসামি শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। জব্দ আলামত পরীক্ষা ও নিহতদের খোয়া যাওয়া ল্যাপটপ উদ্ধারের পর্যায়েই আটকে আছে তদন্ত। যদিও র্যাবের পক্ষ থেকে বরাবরের মতো দাবি করা হচ্ছে, মামলার দৃশ্যমান অগ্রগতি হয়েছে। কিন্তু এখনও এ বিষয়ে কোনো প্রতিবেদন দিতে পারেনি সংস্থাটি। উল্টো ১০৫ বার পেছানো হয়েছে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের তারিখ। ফলে সচেতন মহলে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, ৪৮ ঘণ্টা আর কত বছরে শেষ হবে? কবে খুনিরা ধরা পড়বে? কবে রহস্যের জট খুলবে?
১২ বছর আগে ২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি রাতে রাজধানীর পশ্চিম রাজাবাজারের ৫৮/এ/২ বাড়ির ৫ তলার এ-৪ ফ্ল্যাটে নৃশংসভাবে খুন হন সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি। খুনের পর তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে খুনিদের আইনের আওতায় আনার ঘোষণা দিয়েছিলেন। পরের দিন রুনির ভাই নওশের আলী রোমান বাদী হয়ে শেরেবাংলা নগর থানায় মামলা করেন।
সর্বশেষ এ মামলার তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে দেওয়ার নির্ধারিত দিন ছিল গত ২৩ জানুয়ারি মঙ্গলবার। কিন্তু র্যাবের পক্ষ থেকে ওই দিনও আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়নি। ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালত আগামী ২৭ ফেব্রুয়ারি এ মামলার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নতুন তারিখ ধার্য করেছেন।
হত্যা মামলার তদন্ত প্রসঙ্গে র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন প্রতিদিনের বাংলাদেশকে জানান, ‘মামলাটি অত্যন্ত সংবেদনশীল। এটি অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করা হচ্ছে। এ জন্য বিদেশের বিভিন্ন সংস্থার সহযোগিতা নিয়েছি। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের ডিএনএ ল্যাবের ফলাফলে অজ্ঞাতপরিচয়ের দুজনের ডিএনএ থেকে সন্তোষজনক ফল আসেনি। ফলে এখন পর্যন্ত ওইভাবে মামলার অগ্রগতি নেই।’ তিনি বলেন, তদন্ত চলছে। তদন্তে একজন নিরপরাধ ব্যক্তি যেন দোষী না হয়। প্রকৃত দোষীদের শনাক্ত করতে সময় লাগছে।’
‘আমরা আশা ছেড়ে দিয়েছি’ : রুনির ভাই রোমান
এ প্রসঙ্গে মামলার বাদী ও রুনির ভাই নওশের আলম রোমান বলেন, ‘১২ বছরেও কোনো অগ্রগতি নেই, আর কবে হবে? আমরা আশা ছেড়ে দিয়েছি। শুধু এতটুকু বলতে পারি, তদন্ত কর্মকর্তা এ বিষয়ে কাজ করছেন না। আমাদের সঙ্গেও যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছেন। অথচ প্রতিবছর তারা বলে আসছে, দৃশ্যমান অগ্রগতি হয়েছে। কিন্তু বাস্তবে কিছুই নয়। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আদালতও যেখানে বারবার সময় দিচ্ছেন, সেখানে আমাদের আর কী বলার আছে! তবে, জট খোলার চেষ্টা না করলে জট খুলবে নাÑ এটাই স্বাভাবিক।’
প্রসঙ্গত, ২০১২ সালে নওশের আলী রোমান বাদী হয়ে মামলা করার পর প্রথমে সেটির তদন্ত করেন শেরেবাংলা নগর থানার একজন কর্মকর্তা। ১৬ ফেব্রুয়ারি মামলার তদন্ত ভার পড়ে গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) উত্তরের পুলিশ পরিদর্শক মো. রবিউল আলমের ওপর। এর দুই মাস পর হাইকোর্টের আদেশে মামলাটির তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয় র্যাবকে। র্যাব মামলার তদন্তে নেমে গ্রেপ্তারকৃত ৮ আসামি, নিহত দুজন এবং স্বজন মিলে ২১ জনের ডিঅক্সিরাইবো নিউক্লিক এসিড (ডিএনএ) নমুনা পরীক্ষার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে পাঠায়। যুক্তরাষ্ট্রের পরীক্ষাগার থেকে ডিএনএ পরীক্ষার রিপোর্টগুলো হাতেও পেয়েছে র্যাব। সে রিপোর্ট ও অপরাধচিত্রের প্রতিবেদন (ক্রাইম সিন রিপোর্ট) পর্যালোচনায় দুজনের ডিএনএর পূর্ণাঙ্গ প্রোফাইল পাওয়া গেছে। তবে সন্দেহভাজন খুনি শনাক্ত হয়নি।
আজ সকালে প্রতিবাদ সমাবেশ
এ ব্যাপারে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সভাপতি সৈয়দ শুকুর আলী বলেন, ‘১২ বছরেও প্রকৃত হত্যাকারীদের এখনও শনাক্ত ও গ্রেপ্তার করা হয়নি। বিচার প্রক্রিয়াও থমকে আছে। সাগর-রুনি হত্যার বিচার না পাওয়া পর্যন্ত ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি বিচার দাবি জানিয়ে যাবে। বিচারের দাবিতে আজ রবিবার সকালে ডিআরইউ চত্বরে প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে বলে জানান তিনি।