প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ২২:১০ পিএম
আপডেট : ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ২২:১৯ পিএম
সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরোয়ার ও মেহরুন রুনি। ফাইল ছবি
রবিবার (১১ ফেব্রুয়ারি) ছিল সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যার দিন। ১১ বছর পেরিয়ে ১২ বছরে পড়লেও এখনও বহুল আলোচিত এই হত্যার বিচার দাবিতে প্রতিবাদ-সমাবেশ করতে হচ্ছে সাংবাদিকদের। হত্যার এই দিনে সাংবাদিকরা প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করেছেন। পরিবারের সদস্যরা আজিমপুর কবরস্থানে গিয়ে কবর জিয়ারত করেছেন। মামার সঙ্গে গিয়ে বাবা-মায়ের কবর জিয়ারত করেছেন একমাত্র সন্তান মাহির সরওয়ার মেঘ। কবর জিয়ারত শেষে মাহি সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমার মা-বাবাকে নিয়ে সবাইকে বলতে শুনেছি, তারা অনেক ভালো ছিলেন, ভালো কাজ করতেন। আমরা একটি স্বাধীন দেশে বাস করি। সবার স্বাভাবিক স্বাধীনতা পাওয়া উচিত। কিন্তু স্বাধীন কিছু করতে গিয়ে আমার বাবা-মা হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন।’ তিনি বলেন, ‘আমি চাই না কারও জীবনে এমন ঘটনা ঘটুক। হত্যাকারীদের খুঁজে বের করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হোক।’
এ সময় বোনের হত্যার বিচার না পাওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন রুনির ভাই নওশের আল রোমান। তিনি বলেন, বিচার প্রক্রিয়া বা তদন্ত প্রক্রিয়া নিয়ে যত ধরনের নাটক বা সরকারের উচ্চপর্যায়ের তরফ থেকে যত ধরনের মন্তব্য করা হয় তাতে আসলে হতাশাই বাড়ে। ২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর পশ্চিম রাজাবাজারের ভাড়া বাসায় নৃশংসভাবে খুন হন সাগর-রুনি। ১২ বছর ধরে এই হত্যার বিচারের দাবিতে আন্দোলন করে আসছে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি। মামলার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার সময় ১০৫ বার পিছিয়েছে। আগামী ২৭ ফেব্রুয়ারি আবারও দিন ধার্য করেছেন আদালত।
সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যাকাণ্ডের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে আসামি গ্রেপ্তার করা হবে বলে আশ্বাস দিয়েছিলেন তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। কিন্তু যুগ পেরিয়ে গেলেও প্রকৃত খুনি গ্রেপ্তার হয়নি। হত্যারহস্যের জট খোলেনি আজও। কেন এখনও বিচার শুরু হয়নি, কেন তদন্ত প্রতিবেদন পেছানো হচ্ছে এমন প্রশ্ন সাংবাদিকদের। গতকাল রবিবার সেগুনবাগিচার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ) প্রাঙ্গণে সাগর-রুনি হত্যার বিচার দাবিতে প্রতিবাদ-সমাবেশে এসব প্রশ্ন তোলেন সাংবাদিকরা। ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি সৈয়দ শুকুর আলীর সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক মহিউদ্দিন আহমেদের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন ডিআরইউর সাবেক সভাপতি শাহেদ চৌধুরী, শফিকুল করিম সাবু, মোরসালিন নোমানী, ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি ওমর ফারুক, ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি রুহুল আমিন গাজী, মহাসচিব কাদের গনি চৌধুরী, ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব শেখ মানমুনুর রশিদ, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি শহিদুল ইসলাম, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সহসভাপতি মানিক লাল ঘোষ, সিনিয়র সাংবাদিক আশিষ কুমার দে, ক্র্যাবের সাবেক সভাপতি মধুসূদন মণ্ডল, ক্র্যাবের সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম, ডিআরইউ সহসভাপতি শফিকুল ইসলাম শামিম, সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ সাইফুল্লাহ, দপ্তর সম্পাদক রফিক রাফি, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক সুশান্ত সাহা, নির্বাহী সদস্য ফারহানা ইয়াসমিন যুথি, সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক সাইফুল ইসলাম প্রমুখ।
তারা বলেন, ২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি ভোরে তাদের দুই সহকর্মী সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি নির্মমভাবে খুন হন। দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেলেও প্রকৃত হত্যাকারী এখনও শনাক্ত কিংবা গ্রেপ্তার হয়নি। বিচার প্রক্রিয়া থমকে আছে। নিষ্ঠুর এ হত্যাকাণ্ড ও বিচারহীনতায় আজ সাংবাদিক সমাজ হতবাক। তারা বলেন, ১২ বছরেও মামলার তদন্ত শেষ না হওয়া অত্যন্ত লজ্জার। তদন্ত সংস্থা ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। পিবিআই বা অন্য সংস্থাকে তদন্তের দায়িত্ব দিয়ে অবিলম্বে দোষীদের বিচারের আওতায় আনার দাবি জানান তারা।
মাছরাঙ্গা টেলিভিশনের বার্তা সম্পাদক রাশেদ আহমেদ বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর লজ্জা হয় কি না জানি না, এতবার কেন তদন্ত প্রতিবেদন পেছানো হবে? আদালতের বিবেকের কাছে আমার প্রশ্ন, অন্য মামলার বিচার হলে এটা কেন দেরি হবে। আজ শুধু সাগর-রুনি হত্যা নয়, অন্যান্য সাংবাদিক হত্যারও বিচার হয়নি। বিপরীতে সাংবাদিক নির্যাতন আরও বেড়েছে।’ ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাবেক সভাপতি শাহেদ চৌধুরী বলেন, ‘আমরা অপেক্ষা করব, প্রয়োজনে কেয়ামত পর্যন্ত অপেক্ষা করব, তবু বিচার চাই।’ বিচারের দাবিতে ডিআরইউর পক্ষ থেকে দুই মাস পরপর কর্মসূচি ঘোষণার দাবি জানান তিনি।