× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

বইমেলায় থ্রিলারে আগ্রহ তরুণদের

সেলিম আহমেদ

প্রকাশ : ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১১:৪৩ এএম

আপডেট : ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১২:৩৭ পিএম

শিশুপ্রহরে বইমেলায় শিশুতোষ বইয়ের স্টলগুলোতে ছিল উপচে পড়া ভিড়। গত শনিবার তোলা। প্রবা ফাইল ফটো

শিশুপ্রহরে বইমেলায় শিশুতোষ বইয়ের স্টলগুলোতে ছিল উপচে পড়া ভিড়। গত শনিবার তোলা। প্রবা ফাইল ফটো

তরুণ পাঠকদের আগ্রহ বেড়েছে থ্রিলার গল্প-উপন্যাসে। প্রকাশকরা বলছেন, থ্রিলার বই সবসময়ই রোমাঞ্চকর। একটি গল্পের ভেতর তৈরি হয় অনেক গল্প। এসব গল্প মানুষের মস্তিষ্কে ঝড় তোলার ক্ষমতা রাখে। যে উপন্যাস মানুষের মস্তিষ্ক নিয়ে খেলতে পারে তা জনপ্রিয়তা পাবে এটাই তো স্বাভাবিক।

কয়েক দিন ধরে বইমেলা ঘুরে প্রকাশক ও বিক্রয়কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বইমেলায় এখন সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয় থ্রিলারধর্মী বই। তরুণরাই এর প্রধান ক্রেতা। সাম্প্রতিককালে থ্রিলারধর্মী বই কেন তরুণদের মধ্যে জনপ্রিয়তা পাচ্ছেÑ এমন প্রশ্নে একাধিক থ্রিলার লেখক-প্রকাশক বলেন, থ্রিলার উপন্যাসের পাতায় পাতায় থাকে ভয়, রহস্য, রোমাঞ্চ। কী থেকে কী হয়, কে জানে! আগে থেকে কিছুই অনুমান করা যায় না। আবার অপরাধেরও নানা ধরন আছে। এসব উপন্যাসে কী ধরনের অপরাধ দেখানো হবে, অনেক ক্ষেত্রে সেটিও আগে থেকে অনুমান করা যায় না। ফলে পাঠক যখন এ ধরনের উপন্যাস পড়েন, তখন একটি উত্তেজনাপূর্ণ ভ্রমণের মধ্য দিয়ে যান। এ ধরনের রোমাঞ্চকর ভ্রমণের লোভেই পাঠকদের আগ্রহ থ্রিলার উপন্যাস কিংবা গল্পে।

মেলায় আসা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নাহিদ হোসেন বলেন, একটা সময় সাহিত্যের বিভিন্ন শাখার বই পড়তাম। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে পড়ালেখার চাপ বেড়ে যাওয়ায় এখন খুব একটা সাহিত্য পড়ার সুযোগ হয় না। তবে নাহিদ এখন পড়তে পছন্দ করেন থ্রিলার, রহস্য এবং সায়েন্স ফিকশন।

থ্রিলার লেখক মাহবুব নাহিদের তৃতীয় থ্রিলার উপন্যাস ‘বাজিঘর’ প্রকাশ হয়েছে দাঁড়িকমা প্রকাশনী থেকে। তিনি বলেন, থ্রিলার পাঠকদের মধ্যে একটা অ্যাডবেঞ্চার তৈরি করে। কোনো পাঠক থ্রিলার পড়া শুরু করলে তার মনের মধ্যে নানা অজানা প্রশ্ন তৈরি হয়। পুরো গল্প পড়া শেষ করা না পর্যন্ত সে গল্পের পুরো রহস্য উদঘাটন করতে পারে না। তাই থ্রিলারে আগ্রহ বাড়ছে তরুণসহ সব শ্রেণির পাঠকদের। তার মতে, থ্রিলারধর্মী বই পাঠককে পড়ুয়া করতেও আগ্রহী করে।

বর্তমান সময়ের জনপ্রিয় আরেক থ্রিলার লেখক মোশতাক আহমেদ। তিনি বলেন, আসলে আমরা দেখতে পাচ্ছি সমাজ পরিবর্তন হচ্ছে, এজন্য পাঠকের মানসিকতারও পরিবর্তন হচ্ছে। থ্রিলার পছন্দের কারণ এন্টারটেইনমেন্ট মিডিয়া মানুষের হাতের মুঠোয় চলে আসছে। মোবাইলে ২০০ চ্যানেল দেখা যায়। ওখানে এন্টারটেইনমেন্ট পাওয়া যায়। আগে কবিতা, প্রেমের উপন্যাস পছন্দ করত, এখন সেখানে থ্রিলার পছন্দ করছে। থ্রিলারের মধ্যে প্রেম, সাসপেন্স পাওয়া যায়। 

তরুণ থ্রিলার লেখকদের উদ্দেশ্য তিনি বলেন, লেখার আগে প্রচুর পড়তে হবে। নিজেকে তৈরি করতে হবে। একবার পাঠক তৈরি হলে সে পাঠক ধরে রাখারও চেষ্টা থাকতে হবে। নিয়মিত লিখে যেতে হবে। অনেক সময় দেখা যায়, অল্প দিনেই কিছু লেখক হারিয়ে যান, লম্বা সময়ে না লেখার কারণে তারা পাঠক ধরে রাখতে পারছেন না।

অনিন্দ্য প্রকাশের প্রকাশক আফজাল হোসেন বলেন, গত কয়েক বছর থেকে থ্রিলারের প্রতি পাঠকদের আগ্রহ বেড়েছে। তরুণরাই এর প্রধান পাঠক। আমাদের স্টলে থ্রিলারধর্মী বই বেশি বিক্রি হচ্ছে। 

কথা প্রকাশের স্টল ব্যবস্থাপক মো. ইউনুস বলেন, কিশোর-কিশোরীরাই থ্রিলারধর্মী বই সবচেয়ে বেশি কিনছেন। তারা বাংলাদেশি লেখকদের বই ছাড়াও অনুবাদ করা বিদেশি লেখকের বইও কিনছেন। সাম্প্রতিককালে এসব বইয়ের প্রতি পাঠকদের অনেক আগ্রহ বেড়েছে। 

শেষ সময়ে জমজমাট বইমেলা

পূর্বঘোষণা অনুযায়ী আর দুই দিন পর পর্দা নামবে বাংলা একাডেমির অমর একুশে বইমেলার। এরই মধ্যে বিদায়ের সুর বাজতে শুরু করেছে। তবে শেষ সময়ে মেলায় লোকসমাগম বাড়ছে। একই সঙ্গে বইয়ের বিক্রিও বেড়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

গতকাল সোমবার শবেবরাত উপলক্ষে ছুটির দিন থাকায় বইমেলার দ্বার খুলে দুপুর ১২টায়। দুপুর থেকেই মেলার দোয়ার বন্ধ হওয়া পর্যন্ত বইমেলায় ছিল উপচে পড়া ভিড়। যারা মেলায় এসেছেন তাদের হাতে ছিল বইয়ের ব্যাগও।

সচিবালয়ে একটি মন্ত্রণালয়ে কর্মরত আরিফ হাসান বলেন, আজ ছুটির দিন থাকায় মেলায় এসে কিছু বই কিনলাম। কাল থেকে অফিস থাকবে আর আসতে পারব বলে মনে হয় না। 

প্রথমার বিক্রয়কর্মী ওয়ায়েজ আহমদ মাহিম বলেন, ভিড়ের মতো বিক্রিও ভালো। যারা আসছেন প্রায় সবাই তালিকা ধরে বই কিনছেন। নন্দনের প্রকাশক সুব্রত চৌধুরী বলেন, এবার বইমেলা খুবই ভালো হয়েছে। শুরু থেকেই বেচাকেনা ভালো ছিল। আর যারা বলছেন, মেলায় সবাই বই কিনছেন না, তাদের সঙ্গে আমি একমত নই। কারণ বইমেলা ও বাণিজ্য মেলা এক হবে না। যারা পাঠক তারা ঠিকই বই কিনছেন।

নতুন বই

রবিবার বইমেলায় নতুন বই এসেছে ২৪৬টি। উল্লেখযোগ্য বইগুলোর মধ্যে বাংলা একাডেমি এনেছে বিভূতিভূষণ মণ্ডলের গবেষণাগ্রন্থ ‘খুলনায় বঙ্গবন্ধু’। ক্রিয়েটিভ ঢাকা এনেছে আককাস মাহমুদের আলোকচিত্র ‘রমনার ছায়াছবি’। কথা প্রকাশ করেছে ইমতিয়ার শামীমের ছোট গল্প ‘সোনালু সোনালু যত স্বপ্নদাহ’। দাঁড়িকমা প্রকাশনী এনেছে তারেক মাহমুদের উপন্যাস ‘যাপিত জীবন’ ও মাহবুব নাহিদের উপন্যাস ‘বাজিঘর’। শুদ্ধপ্রকাশ এনেছে বিমল গুহের আত্মজীবনী ‘কিশোরবেলা’। আল গাজী পাবলিকেশন্স এনেছে সেলিনা হোসেনের মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক ‘বধ্যভূমিতে বসন্ত বাতাস’। শব্দশৈলী এনেছে শওকত ওসমানের মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক গ্রন্থ ‘জয় বাংলার জয়’। পুণ্ড্র প্রকাশ এনেছে সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর প্রবন্ধ ‘পুঁজিবাদের দুঃশাসন’। 

মেলা মঞ্চের আয়োজন 

বিকাল সাড়ে ৪টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় স্মরণ। আবুবকর সিদ্দিক এবং স্মরণ : আজিজুর রহমান আজিজ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন যথাক্রমে ফরিদ আহমদ দুলাল এবং কামরুল ইসলাম। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন মামুন মুস্তাফা, তৌহিদুল ইসলাম, মো. মনজুরুর রহমান এবং আনিস মুহম্মদ। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন কবি আসাদ মান্নান।

লেখক বলছি

লেখক বলছি অনুষ্ঠানে নিজেদের নতুন বই নিয়ে আলোচনা করেন প্রাবন্ধিক সরকার আবদুল মান্নান, কবি ইউসুফ রেজা, কথাসাহিত্যিক ও অনুবাদক দিলওয়ার হাসান এবং কথাসাহিত্যিক মোস্তফা তারিকুল আহসান।

সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান : সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে কবিতা পাঠ করেন কবি মুহাম্মদ সামাদ, শামীম রেজা, রহীম শাহ, নভেরা হোসেন এবং ইমরান পরশ। আবৃত্তি পরিবেশন করেন আবৃত্তিশিল্পী ম ম জুয়েল, আরিফ হাসান, আলম আরা জুঁই। সাংস্কৃতিক সংগঠনের পরিবেশনায় ছিল ‘সাহিত্য একাডেমি, ব্রাহ্মণবাড়িয়া’, ‘আমরা কুঁড়ি’ এবং ‘সম্প্রীতি সংস্কৃতি বন্ধন’। সংগীত পরিবেশন করেন শিল্পী মোস্তাক আহমেদ, বাউল আব্দুর রহমান প্রমুখ।

গুণীজন স্মৃতি পুরস্কার-২০২৪

অমর একুশে বইমেলা ২০২৪ উপলক্ষে বাংলা একাডেমি পরিচালিত চিত্তরঞ্জন সাহা, মুনীর চৌধুরী, রোকনুজ্জামান খান দাদাভাই ও শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কারের নামের তালিকা ঘোষণা করেছে বাংলা একাডেমি। গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় বাংলা একাডেমি এক অফিস নোটিসে এ নাম ঘোষণা করা হয়। এতে ২০২৩ সালে প্রকাশিত বিষয় ও গুণগত মানসম্মত সর্বাধিকসংখ্যক গ্রন্থ প্রকাশের জন্য কথা প্রকাশকে চিত্তরঞ্জন সাহা স্মৃতি পুরস্কার-২০২৪ প্রদান করা হয়। ২০২৩ সালে প্রকাশিত গ্রন্থের মধ্য থেকে গুণগতমান ও শৈল্পিক বিচারে সেরা গ্রন্থের জন্য মনজুর আহমদ রচিত ‘একুশ শতকে বাংলাদেশ : শিক্ষার রূপান্তর’ গ্রন্থের জন্য প্রথমা প্রকাশন, মঈন আহমেদ রচিত ‘যাত্রাতিহাস : বাংলার যাত্রাশিল্পের আদিঅন্ত’ গ্রন্থের জন্য ঐতিহ্য এবং আলমগীর সাত্তার রচিত ‘কিলো ফ্লাইট’ গ্রন্থের জন্য জানিম্যান বুক্সকে মুনীর চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার ২০২৪ প্রদান করা হয়। ২০২৩ সালে গুণমান বিচারে সর্বাধিকসংখ্যক শিশুতোষ গ্রন্থ প্রকাশের জন্য ময়ূরপঙ্খীকে রোকনুজ্জামান খান দাদাভাই স্মৃতি পুরস্কার-২০২৪ প্রদান করা হয়।

এ ছাড়া অমর একুশে বইমেলা-২০২৪ উপলক্ষে নান্দনিক অঙ্গসজ্জায় সেরা প্রতিষ্ঠান হিসেবে বেঙ্গল বুকস (এক ইউনিট), নিমফিয়া পাবলিকেশন (দুই-চার) ও অন্যপ্রকাশকে (প্যাভিলিয়ন) কাইয়ুম চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার-২০২৪ প্রদান করা হয়।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা