× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

ঝাঁ চকচকে, শুধু নেই নিরাপত্তায় নজর

ফয়সাল খান ও ফারহানা বহ্নি

প্রকাশ : ০৩ মার্চ ২০২৪ ১২:২৮ পিএম

আপডেট : ০৩ মার্চ ২০২৪ ১২:৪৯ পিএম

আগুন লাগারেআগে ও পরে রাজধানীর বেইলি রোডের গ্রিন কোজি কটেজ ভবন। ছবি : সংগৃহীত

আগুন লাগারেআগে ও পরে রাজধানীর বেইলি রোডের গ্রিন কোজি কটেজ ভবন। ছবি : সংগৃহীত

রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার অধিকাংশ নামিদামি রেস্টুরেন্টের মতো মিরপুর ও বনানীর অনেক রেস্তোরাঁতেও নেই যথাযথ নিরাপত্তাব্যবস্থা। নেই জরুরি ভিত্তিতে বের হওয়ার কোনো পথ। প্রবেশপথও সংকীর্ণ। নেই আগুন নেভানোর ব্যবস্থা। গতকাল শনিবার রাজধানীর মিরপুর ও বনানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে বাহারি নাম ও চমকপ্রদ খাবারের আয়োজন নিয়ে যেখানে সেখানে গড়ে ওঠা অধিকাংশ ভবনই রেস্টুরেন্টে ভরা। কোনো কোনো ভবনে রয়েছে ১০ থেকে ১৫টি রেস্টুরেন্ট! তবে এসব ভবনেও রয়েছে মারাত্মক নিরাপত্তাহীনতা, রয়েছে অগ্নিঝুঁকি। 

মিরপুর ১০ নম্বর থেকে সনি সিনেমা হল পর্যন্ত ঘুরে দেখা যায়, এখানকার বেশিরভাগ রেস্তোরাঁই একটি আরেকটির পাশে গাদাগাদি করে গড়ে উঠেছে।

মিরপুর ১ নম্বরে সনি সিনেমা হলের ভবনটিতে এখন পাঁচতলার পুরোটাই রেস্তোরাঁ। ভবনটির দ্বিতীয় তলায় রয়েছে বারসেলস, সিক্রেট রেসিপি, পিৎজা ইন নামের চারটি রেস্টুরেন্ট। রেস্তোরাঁগুলোর প্রতিটি রান্নাঘরেই ব্যবহার করা হচ্ছে সিলিন্ডার গ্যাস। বারসেলস রেস্টুরেন্টের রান্নাঘরে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে চার-পাঁচটা সিলিন্ডার রাখা আছে। যদিও নিয়ম অনুযায়ী সিলিন্ডারগুলো রাখার কথা নিরাপদ কোনো স্থানে।

বারসেলসের ব্যবস্থাপক ফয়সাল আহমেদ বলেন, ‘এখানে তিনটা রেস্টুরেন্ট আছে। কিন্তু মালিক একজন। আমাদের বের হওয়ার রাস্তা আছে। সিলিন্ডারগুলো রান্নাঘরেই রাখা হয়। এখানে ঝুঁকির কিছু নেই।’

একই ভবনের ওপরতলায় রয়েছে স্কাই লাউঞ্জ নামে আরেকটি রেস্টুরেন্ট। এই একই ভবনের পাশেই আছে কেএফসি ও পিৎজা হাট। তবে প্রবেশপথ দুটো জায়গার আলাদা। সেখানে এই একটি মাত্র সরু পথ ছাড়া প্রবেশ ও বের হওয়ার রাস্তা নেই। 

এ বিষয়ে কথা হয় কেএফসির কর্মকর্তা কাওসার আহমেদের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘এখানে ১২ বছর ধরে কাজ করি। নিরাপত্তাজনিত সব রকম ব্যবস্থা থাকলেও এক্সিট পয়েন্ট একটা হওয়ায় কিছুটা ঝুঁকি তো আছেই।’

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক কর্মচারী জানান, এই ভবনটিকে ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ বলা হয়েছিল। তবে মালিকপক্ষ কোনো ব্যবস্থা নিয়েছেন বলে তার জানা নেই।

কেএফসি লাগোয়া পিৎজা হাটের ব্যবস্থাপক ওহিদুল ইসলাম বলেন, ‘এখানে আমার জানামতে সবকিছুই মানা হয়েছে। তবে এটা ঠিক, কোনো ফায়ার এক্সিট পয়েন্ট নেই।’ 

এ বিষয়ে কথা হয় ভবনটির ব্যবস্থাপক আব্দুস সামাদের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘ভবনটি নিয়ে ঝুঁকির কোনো অভিযোগ নেই বলেই জানি। সেফটি সিকিউরিটির সবই এখানে মানা হয়েছে। এখানে ইন্টারন্যাশনাল রেস্তোরাঁগুলো আছে। তবে এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কেউ ভালো বলতে পারবেন।’

১১ নম্বর মেট্রো স্টেশনের কাছেই জরাজীর্ণ একটি ভবনের এক পাশে ডেলিসিয়াশ ও অপর পাশে রয়েছে হাজি বিরিয়ানি। প্রায় ভেঙে পড়া ভবনের ওপরে থাকেন স্টাফরা। দোতলা ভবনটির ভেতরে দুর্ঘটনা মোকাবিলায় কোনো ব্যবস্থা নেই। ভবনের সিঁড়ি এতটাই সংকীর্ণ যে পথ দিয়ে কোনো রকমে একজন যাতায়াত করতে পারা যায়। একই অবস্থা সেখানকার অন্য ছোট রেস্তোরাঁগুলোতেও।

মিরপুরের পুরোনো ও বিখ্যাত রেস্টুরেন্ট পূর্ণিমা রেস্তোরাঁ। বহুল পরিচিত পুরোনো এ রেস্তোরাঁ ভবনটির একটি প্রবেশপথ। নিচতলায় রান্নাঘর হওয়ায় ঝুঁকিটা আরও বেশি। এখানে রান্নাঘরের অপর পাশে বাবুর্চি-স্টাফদের বের হওয়ার জন্য একটি দরজা থাকলেও জরুরি বহির্গমনের কোনো পথ নেই। বরং মৃত্যুকূপ হয়ে উঠতে পারে এ জায়গাটিই। সরেজমিনে দেখা যায়, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে চলছে রান্নার কাজ। প্রতিটি জায়গায় বিশাল চুলায় রান্নার কাজ চলছে। 

তবে বিষয়টিকে খুব ঝুঁকিপূর্ণ মনে করেন না প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপক মো. লিখন রানা। তিনি বলেন, ‘যেকোনো অঘটন ঘটলে আমাদের ছাদ দিয়ে অপর পাশের ছাদে যাওয়ার ব্যবস্থা আছে। জরুরি এক্সিট পয়েন্ট না থাকলেও এ পথটিকে ব্যবহার করা যাবে।’ 

মিরপুর ১২ নম্বরের এ-ব্লকের ৭ নম্বর রোডের ৪৫ নম্বর ভবন। ৯ তলা ভবনটি কেএপসি বিল্ডিং নামে পরিচিত। ভবনটির নিচ থেকে ৯ তলা পর্যন্ত কাচ দিয়ে ঘেরা। ভবনটির প্রত্যেক ফ্লোরেই রয়েছে নামিদামি রেস্টুরেন্ট। 

এই ভবনেই রয়েছে প্রায় ১০টি রেস্টুরেন্ট। নিচতলায় কেএফসি, ডমিনোস পিৎজা ও বিএফসি। ওপরতলাগুলোতে দেখা যায় বার্গার কিং, অ্যারাবিয়ান, ফুডকোর্টসহ ছোট ছোট আরও রেস্তোরাঁ।

সরেজমিন দেখা গেছে, ভবনটি অগ্নিঝুঁকিপূর্ণ। ভবনটির নিচ থেকে ৯ তলা পর্যন্ত কোনো অগ্নিনির্বাপকযন্ত্র দেখা যায়নি। জরুরি বহির্গমনের আলাদা কোনো পথ বা সিঁড়িও নেই এ ভবনে। ৯ ও ১০ তলার রেস্টুরেন্ট পস লাউঞ্জে গিয়ে দেখা গেছে, রান্নার জন্য কিচেনে বড় দুটি গ্যাস সিলিন্ডার রাখা হয়েছে। প্রবেশপথের রাস্তা সরু। 

পস লাউঞ্জের সহকারী ম্যানেজার রাকিব বলেন, ‘আমরা রান্নার জন্য গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহার করি। নিচে সিলিন্ডার রাখার জায়গা নেই। তাই কিচেনের পাশেই গ্যাস সিলিন্ডার রাখা হয়।’ ফায়ার সেফটি লাইসেন্স আছে কি না, জানতে চাইলে এ বিষয়ে তিনি কিছু জানাতে পারেননি।

এদিকে মিরপুর ১২ নম্বরে সাফুরা ট্রেড সিটির ১০ তলায় গিয়ে দেখা গেছে, এখানে ১০টি ফুডকোর্ট রয়েছে। প্রতিটি ফুডকোর্টের কিচেনেই রয়েছে গ্যাস সিলিন্ডার। কয়েকটি রেস্টুরেন্ট এবং শোরুমও রয়েছে ভবনটিতে। 

সাফুরা ট্রেড সিটির ম্যানেজার হুমায়ুন কবির বলেন, ‘এখানে আন্ডারগ্রাউন্ডে সিলিন্ডার রাখার জায়গা নেই। সবাই কিচেনে ৩৫ কেজি ওজনের সিলিন্ডার ব্যবহার করেন। অবশ্য এই ভবনে ২-৩টি সিঁড়ি রয়েছে। আগুন লাগলে যেগুলো বহির্গমনের জন্য ব্যবহার করা যাবে।’ 

মিরপুর ১০ নম্বরে মেট্রো স্টেশনের পাশেই ছয়তলা ভবনের নিচের এক পাশে মি. বেকার ও অপর পাশে বনলতা নামের রেস্তোরাঁ। সেখানে দ্বিতীয় থেকে ওপরতলা পর্যন্ত রয়েছে কাচ্চি ভাই, কাচ্চি ভাই কনভেনশন, চিজ, ডেন্টাল হাসপাতাল। তার ওপরেই রয়েছে আবাসিক কক্ষ। একটাই মাত্র সরু সিঁড়ির পাশে আছে একটি গ্যারেজ। 

জানা গেছে, মাঝেমধ্যে এই গ্যারেজেই সিলিন্ডারের গ্যাস রাখা হয়। কোনো গাড়ি পার্ক করার ব্যবস্থা নেই সেখানে। 

চিজের কর্মকর্তা হাবিব জানান, তাদের অগ্নিনির্বাপণব্যবস্থা রয়েছে। তবে সিলিন্ডার নিচে গ্যারেজে রাখা হয়। এখানে জরুরি ভিত্তিতে বের হওয়ার জন্য আলাদা কোনো সিঁড়ি নেই।

একটি মাত্র প্রবেশপথ ও সেখানে সিলিন্ডার রাখাটা ঝুঁকিপূর্ণ বলে স্বীকার করেন এই ভবনের কেয়ারটেকার কাইয়ুম। তিনি বলেন, ‘সিঁড়িতে আলাদা অগ্নিনির্বাপণব্যবস্থা নেই। এ ছাড়া জরুরি ভিত্তিতে ওপর থেকে নিচে নামার সিঁড়ি একটাই। কাচ্চি ভাই গ্যাস সিলিন্ডার ভেতরে রাখলেও চিজ মাঝেমধ্যে নিচেও রাখে।’ প্রবেশমুখেই গ্যাস সিলিন্ডার রাখা ও একটি মাত্র প্রবেশপথ থাকার বিষয়টি ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ বলে স্বীকার করেন এখানকার কর্মকর্তারা। 

রেস্টুরেন্টে ছেয়ে গেছে বনানীও

এদিকে রাজধানীর অভিজাত এলাকা হিসেবে পরিচিত বনানীর বিভিন্ন এলাকাও রেস্টুরেন্টে ছেয়ে গেছে। আবাসিক অনেক ভবনের ছাদেও রেস্টুরেন্ট বসানো হয়েছে। নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে গড়ে ওঠা এসব রেস্টুরেন্টের নিরাপত্তাব্যবস্থা খুবই দুর্বল। ঝুঁকিপূর্ণভাবে জ্বালানি ও কয়েল দিয়ে বহুতল ভবনের আন্ডারগ্রাউন্ড ভর্তি করে রাখা হয়েছে। বছরখানেক আগে একবার আগুন লাগলেও টনক নড়েনি রেস্টুরেন্ট কর্তৃপক্ষের। 

বনানীর স্টার কাবাব রেস্টুরেন্টটি ১৭ নম্বর রোডের বহুতল ভবনের তিনতলাজুড়ে গড়ে উঠেছে। চতুর্থতলায় রয়েছে কমিউনিটি সেন্টার। সরেজমিনে দেখা যায়, রেস্টুরেন্টের কিচেনের ধোঁয়া মূল সড়কেও চলে আসছে। 

রেস্টুরেন্টের আন্ডারগ্রাউন্ডে গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা রয়েছে। গতকাল দুপুরে রেস্টুরেন্টের আন্ডারগ্রাউন্ডে গিয়ে দেখা যায়, কিছু অংশজুড়ে মোটরসাইকেল পার্কিং করা হয়েছে। এক পাশে সিকিউরিটিদের থাকার জায়গা। চারপাশে বস্তায় বস্তায় জ্বালানি কয়েল রাখা আছে। সিঁড়ির কাছে কাঠের লাকড়ি রাখা। ওপরের তিনতলায় খাবার পরিবেশন করা হচ্ছে। শুধু নিচতলার কিচেনেই নয়, সাততলায়ও রান্নাবান্নার কাজ চলে বলে জানান রেস্টুরেন্টের কর্মচারীরা। রেস্টুরেন্টটিতে রয়েছে একটি লিফট ও দুটি সিঁড়ি। 

আলাপকালে রেস্টুরেন্টের ম্যানেজার এম এ মুসলিম বলেন, ‘এখানে গ্যাসের চাপ খুবই কম। আমরা সিলিন্ডার ব্যবহার করি না।’ আন্ডারগ্রাউন্ডে লাকড়ি রাখার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘লাকড়িগুলো গাড়ি থেকে নামিয়ে আন্ডারগ্রাউন্ডে রাখা হয়। প্রতিদিনের লাকড়ি প্রতিদিনই শেষ হয়ে যায়।’

প্রসঙ্গত ২০২২ সালের অক্টোবর মাসে এই রেস্টুরেন্টে আগুন লেগেছিল। 

এই রেস্টুরেন্টের ঠিক উল্টো দিকে হাউস অব বাসমতি। এ রেস্টুরেন্টটির অবস্থান এই বহুতল ভবনটির নিচতলা ও দোতলায়। ভেতরে ঢুকতেই হাতের বাঁ পাশে রয়েছে কিচেন। যেখানে রয়েছে সিলিন্ডার গ্যাস। কিচেনটি তৈরি করা হয়েছে সিঁড়ির ঠিক নিচে। সিঁড়িটি খুব সরু। অগ্নিকাণ্ড বা কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে দ্বিতীয় তলা থেকে মানুষ নামার তেমন কোনো জায়গা নেই। যদিও রেস্টুরেন্টটির কর্মচারীরা বলছেন পশ্চিম পাশে বড় সিঁড়ি রয়েছে-সেটিই মূল সিঁড়ি। তবে ভবনটির সংস্কারকাজ চলায় আপাতত ওই সিঁড়ি বন্ধ আছে। 

প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক নূরুল হুদা মজুমদার বলেন, ‘আমরা গ্রাহক ও কর্মীদের নিরাপত্তার বিষয়টিতে গুরুত্ব দিচ্ছি। যদি কোনো ত্রুটি থাকে আলাপ-আলোচনা করে দুয়েক দিনের মধ্যে তা সমাধান করব।’ 

বনানী ১০ নম্বর সড়কে ৪৬ কামাল আতাতুর্ক অ্যাভিনিউতে একটি সাততলা ভবনে রয়েছে চারটি রেস্টুরেন্ট। নিচতলায় তাজমহল টেকওয়ে, হাজি বিরিয়ানি, তৃতীয় তলায় মেজবানি লাউঞ্জ, সপ্তম তলা ও ভবনের ছাদজুড়ে রয়েছে কফি ক্যাফে। বাণিজ্যিক এ ভবনটিতে একটি লিফট ও সরু একটি সিঁড়ি রয়েছে। রেস্টুরেন্টগুলোর মালিকপক্ষ উপস্থিত না থাকায় কর্মচারীরা কথা বলতে রাজি হননি।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা