× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

টিআইবির গবেষণা

বাস থেকে বছরে ১০৫৯ কোটি টাকা চাঁদা আদায়

প্রবা প্রতিবেদক

প্রকাশ : ০৫ মার্চ ২০২৪ ২১:০৪ পিএম

আপডেট : ০৫ মার্চ ২০২৪ ২১:৪০ পিএম

মঙ্গলবার রাজধানীর ধানমন্ডিতে টিআইবি কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। প্রবা ফটো

মঙ্গলবার রাজধানীর ধানমন্ডিতে টিআইবি কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। প্রবা ফটো

দেশে ব্যক্তিমালিকানাধীন বাস ও মিনিবাস থেকে বছরে ১ হাজার ৫৯ কোটি টাকা চাঁদা আদায় হয়। এর ভাগ পায় দলীয় পরিচয়ধারী ব্যক্তি, গোষ্ঠী, পুলিশ, বিভিন্ন সংগঠনের নেতা ও জনপ্রতিনিধিরা। তবে সবচেয়ে বেশি, ৯০০ কোটি টাকার বেশি দিতে হয় সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) কর্মকর্তা-কর্মচারীকে। মালিক-শ্রমিক উভয়কেই দিতে হয়। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) গবেষণায় এসব তথ্য এসেছে।

মঙ্গলবার (৫ মার্চ) রাজধানীর ধানমন্ডিতে টিআইবি কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে ‘ব্যক্তিমালিকানাধীন বাস পরিবহন ব্যবসায় শুদ্ধাচার’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।

টিআইবি বলছে, ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের আশীর্বাদপুষ্ট হয়ে মালিক-শ্রমিক সংগঠন ও সিন্ডিকেট এই খাতকে জিম্মি করে রেখেছে। ক্ষেত্রবিশেষে এই আঁতাতের সামনে সরকারও ক্ষমতাহীন হিসেবে প্রতীয়মান হচ্ছে। সংস্থাটি ব্যক্তিমালিকানাধীন বাস পরিবহন ব্যবসায় শুদ্ধাচার নিশ্চিত করতে ১৫ দফা সুপারিশ করেছে। 

অনুষ্ঠানে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘ব্যক্তিমালিকানাধীন বাস পরিবহন খাত আপাদমস্তক অনিয়ম-দুর্নীতিতে জর্জরিত। এর পেছনে রয়েছে রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতায় বলীয়ান মালিক ও শ্রমিকদের সংগঠনের আঁতাত। গবেষণালব্ধ তথ্য অনুযায়ী, বাস কোম্পানির প্রায় ৯২ শতাংশের মালিক ও পরিচালনা পর্ষদের রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ততা রয়েছে, ৮০ শতাংশ ক্ষমতাসীন দল আর বাকি ১২ শতাংশ অন্যান্য দলের। এর ফলে এই জনগুরুত্বপূর্ণ খাতটি যাত্রীবান্ধব গণপরিহন হয়ে উঠবে এমন প্রত্যাশা জিম্মি হয়ে গেছে তাদের কাছে।’

পরিবহন খাতের সংশ্লিষ্টদের ভূমিকার সমালোচনা করে ড. জামান বলেন, ‘বাস পরিবহন ব্যবসায় বিভিন্ন আঙ্গিকে চাঁদাবাজি ও অবৈধ লেনদেনের ঘটনা ঘটে। এ সকল ক্ষেত্রে সিটি করপোরেশন, হাইওয়ে পুলিশ, মালিক-শ্রমিক সংগঠনের যোগসাজশ রয়েছে। বিআরটিএ তার নির্ধারিত ভূমিকা পালন করতে স্পষ্টতই ব্যর্থ হয়েছে, যাত্রীসেবার ব্যর্থতা ঢাকতে লোকবল সংকটকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করছে । বিআরটিএর অনিয়ম-দুর্নীতি ও অবৈধ লেনদেনের সবই চলছে যোগসাজশের মাধ্যমে। অবস্থা প্রকটতর হয়ে ওঠার কারণ হচ্ছে, এই দুর্নীতির মাধ্যমে অর্থনৈতিক লাভের অংশীদার কমবেশি সংশ্লিষ্ট সকলে। এ খাতে অনিয়ম-দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত সকলকে বিচারের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে আহ্বান জানাই আমরা। কারণ দুর্নীতি অনিয়ন্ত্রিত থাকলে তা আরও বিকশিত হয়।’

টিআইবির গবেষণায় বলা হয়, বাস পরিবহন খাতে অনিয়ম-দুর্নীতির মচ্ছবের কেন্দ্রে রয়েছে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের সদস্য ও সমর্থনপুষ্টদের দ্বারা পরিবহন ব্যবসা নিয়ন্ত্রিত হওয়া। জরিপে অংশগ্রহণকারী ২২টি (১৩.১ শতাংশ) কোম্পানির কাছে ৮১.৪ শতাংশ বাসের মালিকানা রয়েছে এবং এ সকল বৃহৎ বাস কোম্পানির প্রায় ৯২ শতাংশের পরিচালনা পর্ষদের সদস্যদের সঙ্গে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল (৮০ শতাংশ) এবং অন্যান্য রাজনৈতিক দলের (১২ শতাংশ) প্রত্যক্ষ সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। তারা মালিক ও শ্রমিক সংগঠনে একচেটিয়া ক্ষমতা চর্চার মাধ্যমে আইন প্রণয়ন ও প্রয়োগে প্রতিবন্ধকতা তৈরির মাধ্যমে খাতটিকে জিম্মি করে রেখেছে।

টিআইবির জরিপে অংশগ্রহণকারী কর্মী-শ্রমিকদের ৪০.৯ শতাংশের মতে, তাদের সংশ্লিষ্ট কোম্পানির এক বা একাধিক বাসের নিবন্ধনসহ কোনো না কোনো সনদের ঘাটতি আছে। ২৪ শতাংশ কর্মী-শ্রমিকের মতে, তাদের সংশ্লিষ্ট কোম্পানির কোনো না কোনো বাসের ফিটনেস সনদ নেই এবং ২২ শতাংশ বলেছেন, বাসের রুট পারমিট নেই। তা ছাড়া ব্যক্তিমালিকানাধীন বাসে পেশাদার প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ও লাইসেন্সধারী চালকের সংকট আছে। এ ছাড়া জরিপে অংশগ্রহণকারী ১১.৯ শতাংশ বাসমালিক জানান, তাদের কোম্পানিতে এক বা একাধিক পেশাদার লাইসেন্সবিহীন ও মেয়াদোত্তীর্ণ লাইসেন্সধারী চালক আছেন। জরিপের ২২.২ শতাংশ কর্মী-শ্রমিকের তথ্যানুযায়ী, মদ্যপান বা নেশাজাতীয় দ্রব্য সেবন করে চালক গাড়ি চালান এবং কন্ডাক্টর-হেলপার-সুপারভাইজার বাসে দায়িত্ব পালন করেন। তা ছাড়া চলন্ত বাসে চালকেরা মোবাইল ফোন ব্যবহার করেন। ফলে অনেক সময় প্রাণহানিসহ দুর্ঘটনা ঘটে থাকে।

জরিপে অংশগ্রহণকারী সিটি সার্ভিসের ৮৯.২ শতাংশ এবং আন্তঃজেলার ৬০.৪ শতাংশ কর্মী-শ্রমিকের মতে, তাদের সংশ্লিষ্ট কোম্পানির বাসে নিয়ম অনুযায়ী টায়ার, ইঞ্জিন ওয়েল, ব্রেকসংক্রান্ত সরঞ্জামাদি ইত্যাদি পরিবর্তন ও রক্ষণাবেক্ষণ করা হয় না। বাসের রক্ষণাবেক্ষণ নিয়মিত না করায় গাড়ি থেকে কালো ধোঁয়া বের হয়। অনেক ক্ষেত্রে মালিকরা নকশা পরিবর্তন করে বাসে অতিরিক্ত আসন সংযোজন করে। সিটি সার্ভিসের কর্মী-শ্রমিকদের ৪০.৪ শতাংশ বলেছেন, তাদের গাড়িতে নকশা পরিবর্তন করে অতিরিক্ত আসন সংযোজন করা হয়েছে। 

জরিপে অংশগ্রহণকারী ৩৫.২ শতাংশ নারী বলেছেন, যাত্রাপথে তারা কোনো না কোনো সময় যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন বা হতে দেখেছেন। এ হার আন্তঃজেলা (দূরপাল্লা ও আঞ্চলিক) বাসের ক্ষেত্রে ৩১.৩ শতাংশ এবং সিটি সার্ভিসের ক্ষেত্রে ৪২.৬ শতাংশ। যৌন হয়রানির শিকার নারীদের মধ্যে ৮৩.২ শতাংশ সহযাত্রী এবং ৬৪.৩ শতাংশ হেলপার দ্বারা যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন।

গবেষণার তথ্য অনুযায়ী, বছরে প্রায় ১ হাজার ৬০ কোটি টাকা চাঁদা দিতে বাধ্য হন মালিক ও কর্মী-শ্রমিকরা। এর মধ্যে প্রায় ২৫ কোটি টাকা যায় দলীয় পরিচয়ে সড়কে চাঁদাবাজিতে। রাজনৈতিক সমাবেশ, বিভিন্ন দিবস পালন, টার্মিনালের বাইরে (রাস্তায়) পার্কিং এবং সড়কের বিভিন্ন স্থানে ট্রাফিক আইন লঙ্ঘন ও ‘টোকেন বাণিজ্যে’র জন্যও চাঁদা দিতে হয়। সবচেয়ে বড় অংশ যায় নিবন্ধন ও সনদ বাবদ ঘুষ হিসেবে। মালিক-শ্রমিকরা বিআরটিএকে বছরে ৯০০ কোটি টাকার বেশি ঘুষ দেন বলে গবেষণার তথ্য।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন টিআইবির উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. সুমাইয়া খায়ের, গবেষণা ও পলিসি বিভাগের পরিচালক মুহাম্মদ বদিউজ্জামান। সংস্থাটির আউটরিচ অ্যান্ড কমিউনিকেশন বিভাগের পরিচালক মোহাম্মদ তৌহিদুল ইসলামের সঞ্চালনায় সংবাদ সম্মেলনে প্রতিবেদনটি উপস্থাপনা করেন রিসার্চ ফেলো ফারহানা রহমান, মোহাম্মদ নূরে আলম এবং রিসার্চ অ্যাসোসিয়েট মু. নূরুজ্জামান ফরহাদ।

১৫ দফা সুপারিশ

গবেষণার ভিত্তিতে টিআইবি ব্যক্তিমালিকানাধীন বাস পরিবহন ব্যবসায় সুশাসন নিশ্চিত করতে ১৫ দফা সুপারিশ করেছে। সুপারিশের মধ্যে রয়েছে, সকল বাস কোম্পানিকে অনানুষ্ঠানিক নিয়োগ বন্ধ করে শ্রম আইন ২০০৬ অনুযায়ী কর্মী-শ্রমিকদের নিয়োগপত্র প্রদান; প্রয়োজনীয় নীতিমালা (অর্থ ও প্রশাসন, মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা, জেন্ডার, অভিযোগ গ্রহণ ও নিরসন, তথ্য উন্মুক্তকরণ, ক্রয়, টিকিট ইত্যাদি সংক্রান্ত) প্রণয়ন এবং তা তদারকির আওতায় আনা; জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশলের সুষ্ঠু বাস্তবায়ন, বিশেষ করে মালিক ও শ্রমিকদের দায়িত্ব ও কর্তব্য নির্দিষ্টকরণসহ নৈতিক আচরণবিধি প্রণয়ন ও তার প্রয়োগ নিশ্চিত করা; সকল প্রকার প্রভাবমুক্ত হয়ে সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮ পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ ইত্যাদি।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা