প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১০ মার্চ ২০২৪ ২১:১০ পিএম
আপডেট : ১০ মার্চ ২০২৪ ২১:৩৩ পিএম
সুলভমূল্যে দুধ, ডিম, মাংস ও মাছ বিক্রি কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী মো. আব্দুর রহমান। ছবি : সংগৃহীত
পবিত্র রমজান মাসে রাজধানীর ৩০টি স্থানে কম দামে দুধ, ডিম, গরুর মাংস, মুরগির মাংস ও মাছ বিক্রির কার্যক্রম চালু করছে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়। রবিবার (১০ মার্চ) প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের সম্মেলন কক্ষে প্রধান অতিথি থেকে এ কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী মো. আব্দুর রহমান।
অনুষ্ঠানে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডা. মোহাম্মদ রেয়াজুল হকের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি ছিলেন, মন্ত্রণালয়ের সচিব মোহাং সেলিম উদ্দিন। বক্তব্য দেন, মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব এটিএম মোস্তফা কামাল, মৎস্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সৈয়দ মো. আলমগীর, বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মারস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ইমরান হোসেন, প্রাণিসম্পদ ও ডেইরি উন্নয়ন প্রকল্পের পরিচালক আব্দুর রহিম, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের প্রাণিসম্পদ ও ডেইরি উন্নয়ন প্রকল্পের (এলডিডিপি) চিফ টেকনিক্যাল কো-অর্ডিনেটর ড. মো. গোলাম রব্বানী, পোলট্রি ইন্ডাস্ট্রি সেন্ট্রাল কাউন্সিলের সভাপতি মশিউর রহমান প্রমুখ।
ভ্রাম্যমাণ বিক্রয় কেন্দ্র
রমজান মাসজুড়ে রাজধানীর ২৫টি স্থানে ডিম, দুধ ও মাংস বিক্রি করা হবে। তা ছাড়া পাঁচটি মার্কেটে বিক্রি করা হবে। স্থানগুলো হলো- নতুনবাজার (বাড্ডা), কড়াইল বস্তি (বনানী), খামারবাড়ি (ফার্মগেট), আজিমপুর মাতৃসদন (আজিমপুর), গাবতলী, দিয়াবাড়ি (উত্তরা), জাপান গার্ডেন সিটি (মোহাম্মদপুর), ষাটফুট রোড (মিরপুর), খিলগাঁও (রেল ক্রসিংয়ের দক্ষিণে), সচিবালয়ের পাশে (আব্দুল গনি রোড), সেগুনবাগিচা (কাঁচাবাজার), আরামবাগ (মতিঝিল), রামপুরা, কালশী (মিরপুর), যাত্রাবাড়ী (মানিকনগর গলির মুখে), বসিলা (মোহাম্মদপুর), হাজারীবাগ (শিকশন), লুকাস (নাখালপাড়া), আরামবাগ (মতিঝিল), কামরাঙ্গীরচর, মিরপুর ১০, কল্যানপুর (ঝিলপাড়া), তেজগাঁও, পুরান ঢাকা (বঙ্গবাজার), কাকরাইল।
স্থায়ী বাজার
মিরপুর শাহ আলি বাজার, মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেট, নতুন বাজার (১০০ ফুট), কমলাপুর, কাজি আলাউদ্দিন রোড (আনন্দবাজার)।
মাছ পাওয়া যাবে যেখানে
রমজান মাসে বাজারে মাছের পর্যাপ্ত সরবরাহ নিশ্চিত করতে মৎস্য অধিদপ্তরের উদ্যোগে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের চারটি ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের চারটি নির্ধারিত স্থানে মাছ বিক্রয়ের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন সৈয়দ মো. আলমগীর।
তিনি বলেন, ‘ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের আওতাধীন বঙ্গবন্ধু চত্বর, খামারবাড়ি (ফার্মগেট), মিরপুর-১ (ঈদগাহ মাঠ); সেগুনবাগিচা বাজার ও মেরুল বাড্ডা বাজার এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের আওতাধীন মুগদাপাড়া (মদিনাবাগ বাজার), যাত্রাবাড়ী (দয়াল ভরসা মার্কেট), মতিঝিল (বাংলাদেশ ব্যাংকের দক্ষিণ-পূর্ব কর্নার) ও পলাশী মোড়ে এই কর্মসূচি পরিচালিত হবে। সোমবার শুরু হয়ে রমজান মাসের ১৫ দিন পর্যন্ত প্রতিদিন এসব স্পটে মাছ বিক্রয় করা হবে। প্রতিদিন সকাল ১০টা হতে বেলা ৩টা পর্যন্ত মাছ বিক্রয় কার্যক্রম চলমান থাকবে।
যে দামে বিক্রি হবে
প্রতি লিটার দুধ ৮০ টাকা, গরুর মাংস ৬০০ টাকা কেজি, খাসির মাংস ৯০০ টাকা কেজি, ড্রেসড ব্রয়লার মুরগি ২৫০ টাকা কেজি ও প্রতি ডজন ডিম ১১০ টাকা। তা ছাড়া পাঁচটি স্থায়ী বাজারে গরুর মাংস ৬৫০ টাকা কেজিতে বিক্রি করা হবে। এ ছাড়া রুই মাছ প্রতি কেজি ২৪০ টাকা, পাঙাশ প্রতি কেজি ১৩০ টাকা, তেলাপিয়া মাছ প্রতি কেজি ১৩০ টাকা এবং পাবদা মাছ প্রতি কেজি ৩৩০ টাকা করে বিক্রয় করা হবে।
মোহাম্মদ রেয়াজাল হক বলেন, ‘এসব দুধ, ডিম ও মাংস খামারিদের থেকে কেনা হয়েছে। তাই অন্যান্য খামারি ইচ্ছা করলে কম দামে বিক্রি করতে পারে। তাতে দামও কিছুটা কম থাকবে।’
পণ্যগুলো বিক্রয়ের জন্য সুসজ্জিত পিকআপ কুলভ্যান ব্যবহার করা হচ্ছে বলে জানান মোহাম্মদ রেয়াজুল হক। তিনি বলেন, ‘প্রতিটি বিক্রয় কেন্দ্রে সকাল নয়টার মধ্যে পণ্যগুলো নিয়ে ভ্যানগুলো পৌঁছে যাবে এবং সকাল ১০টা থেকে বিপণন শুরু হবে।’
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী বলেন, ‘শেখ হাসিনার দেশে কেউ ভাত ও মাছে কষ্ট পাবে, এটি মেনে নেওয়া যায় না। রমজান উপলক্ষে ন্যায্যমূল্যে ডিম, দুধ, গরুর ও মুরগির মাংস কিনতে পারবে রাজধানীবাসী। এতে তাদের আর্থিক ব্যয় কম হবে।’
মন্ত্রী বলেন, ‘কার্যক্রমটি তদারকি ও মনিটরিং করার জন্য মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিবের নেতৃত্বে একটি উচ্চ পর্যায়ের কমিটি সার্বক্ষণিক মাঠে থাকবে। পাশাপাশি প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর, প্রাণিসম্পদ ও ডেইরি উন্নয়ন প্রকল্প, বাংলাদেশ পোল্ট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ সেন্ট্রাল কাউন্সিল, বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মারস অ্যাসোসিয়েশনের এবং দুগ্ধ প্রক্রিয়াজাত প্রতিষ্ঠানগুলোর দায়িত্বশীল কর্মকর্তা ও প্রতিনিধিবৃন্দ মনিটরিং কার্যক্রম পরিচালনা করবেন।’
যা বললেন ক্রেতা
খামারবাড়িতে বিক্রয় কেন্দ্র থেকে এক কেজি গরুর মাংস, এক কেজি মুরগির মাংস, এক ডজন ডিম ও এক লিটার দুধ ১ হাজার ৪০ টাকায় কিনেছেন মো. সবুজ খান। তিনি বলেন, ‘আমাদের মতো স্বল্প আয়ের মানুষের জন্য অনেক অর্থ বেঁচে গেল।’
অপর ক্রেতা মো. মোফাজ্জল হোসেন বলেন, ‘মাংসের পরিমাণটা একটু বাড়িয়ে দিলে প্রতিদিন আসতে হতো না। বাজারে ৭৫০ থেকে ৭৮০ টাকায় প্রতি কেজি গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে, সেখানে ৬০০ টাকায় মাংস পাওয়ায় দেড়শ টাকা কমে পেয়েছি।’
বর্তমান বাজার পরিস্থিতি
কারওয়ান বাজারে দেখা যায়, ফার্মের মুরগির ডিম ১৩০ টাকা ডজন, ব্রয়লার মুরগি ২২০ টাকা কেজি, গরুর মাংসের কেজি ৭৫০ টাকা, খাসির মাংস ১১০০ টাকা কেজি ও গরুর দুধ ৯০ টাকা লিটার। তেলাপিয়া মাছ ২০০ থেকে ২২০ টাকা কেজি, পাঙাশ ১৯০ থেকে ২০০ টাকা কেজি, রুই মাছ ২৫০ থেকে ৩৫০ টাকা কেজি ও পাবদা ৩৫০ থেকে ৪৫০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।